ঢাকা ১০:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫

বড় হচ্ছে কাটারিভোগের বাজার

  • আপডেট সময় : ১২:০৭:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুন ২০২১
  • ৬৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার পাশাপাশি রফতানি বেড়ে যাওয়ায় সুগন্ধি চালের বড় বাজার সৃষ্টি হয়েছে। এই বাজারে এখন বিনিয়োগ করছে বড় বড় প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে অন্যান্য ধানের তুলনায় বিক্রয়মূল্য বেশি হওয়ায় সুগন্ধি ধানের আবাদে ঝুঁকছেন কৃষকরা। ফলে কয়েক বছরে দেশে সুগন্ধি ধানের আবাদে এসেছে বড় পরিবর্তন। এর মধ্যে নতুন সুখবর নিয়ে এসেছে দিনাজপুরের কাটারিভোগ। ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এই পণ্য। ফলে কাটারিভোগ এখন বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিনিধি। গত ১৭ জুন শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর (ডিপিডিটি) কাটারিভোগের জন্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটকে জিআই সনদ হস্তান্তর করে। দেশে এখন অভ্যন্তরীণ চাহিদার চেয়ে বেশি সুগন্ধি চালের উৎপাদন হচ্ছে। সেহেতু রফতানির ক্ষেত্রে আগাম অনুমোদন ব্যবস্থা তুলে নিলে এ খাত থেকে রফতানি আয় বাড়বে।
এদিকে, দেশে প্রতিবছর বাড়ছে কাটারিভোগ সহ অন্যান্য সুগন্ধি চালের চাহিদা। বিভিন্ন জেলায় অঞ্চলভিত্তিক প্রচুর সুগন্ধি ধানের জাত আছে। জাতগুলোর মধ্যে অধিকাংশই অতি সুগন্ধি। এ জাতগুলোর মধ্যে চিনিগুঁড়া, কালিজিরা, কাটারিভোগ অন্যতম। প্রধানত আমন মৌসুমে (খরিফ-২) সুগন্ধি ধানের চাষ করা হয়। এ মৌসুমে উৎপাদিত ধানের প্রায় ১০ শতাংশ সুগন্ধি জাত। কাটারিভোগ জাতের ধানের জেলা হিসেবে দিনাজপুরের সুনাম দীর্ঘদিনের। প্রাকৃতিক কারণে এ জেলায় কাটারিভোগের ফলন ও সুগন্ধ হয় বেশি। আর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দিনাজপুরে সুগন্ধি ধানের আবাদ সাত বছরের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কাটারিভোগের চাষ। শুধু কারিভোগের চাষাবাদ বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে দিনাজপুরে সুগন্ধি ধানের আবাদ বাড়তে শুরু করেছে। ওই অর্থবছরে জেলায় ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে সুগন্ধি ধান আবাদ হয়। উৎপাদিত হয় ৮৬ হাজার ৯৯৪ টন সুগন্ধি চাল। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবেই প্রতি বছর সুগন্ধি ধানের আবাদের আওতায় জমির পরিমাণ ও উৎপাদন বেড়েই চলেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সুগন্ধি ধানের আবাদ হয়েছে এবং উৎপাদন হয়েছে দুই লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৪ টন। এদিকে, বিদেশে বেড়েছে সুগন্ধি চালের চাহিদা। প্রধানত যেসব দেশে দক্ষিণ এশিয়ার লোকজন বেশি বাস করে সেখানে সুগন্ধি চালের চাহিদা বেশি। এছাড়া ইউরোপ ও আমেরিকার স্থানীয় লোকজনের মধ্যেও সম্প্রতি সুগন্ধি চালের চাহিদা বেড়েছে। ফাস্টফুড ও বিভিন্ন চাইনিজ খাবারের জন্যও সুগন্ধি চাল এখন খুবই জনপ্রিয়। রফতানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি সুগন্ধি চাল রফতানি হয়। এছাড়া মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সুগন্ধি চাল রফতানি হয়েছে। বর্তমানে যেভাবে আগাম অনুমোদন নিয়ে সুগন্ধি চাল রফতানি করতে হয় তার পুরোটা সুগন্ধি।’ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য বলছে, ১০ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে সুগন্ধি চালের রফতানি বেড়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৬৬৩ টন সুগন্ধি চাল রফতানি করেন ব্যবসায়ীরা। এখন প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার টন সুগন্ধি চাল বিদেশে যাচ্ছে। এর মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুমোদন নিয়ে অর্ধেকের মতো চাল যাচ্ছে। তবে প্যাকেজিং করে নিয়মিত রফতানি হয় সুগন্ধি চাল। এছাড়া, বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রায় এক কোটি প্রবাসী বাংলাদেশির মাধ্যমে প্রতিবছর প্রায় আড়াই থেকে পাঁচ হাজার টন সুগন্ধি চাল বিদেশে যায়। বাংলাদেশের কিছু কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত ১৩৬টি দেশে প্যাকেটজাত সুগন্ধি চাল রফতানি করছে। এ তালিকায় রয়েছে প্রাণ, এসিআই, ইস্পাহানি, স্কয়ারসহ বিভিন্ন কোম্পানি। দেশেও তারা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সুগন্ধি চাল বিক্রি করছে। পাশাপাশি চাল প্রক্রিয়াকরণে বড় বিনিয়োগ করেছে তারা।
তবে এ বাজার আরও বাড়ানো যেত বলে মনে করেন বাংলাদেশ রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহ আলম বাবু। জানা গেছে, বর্তমান রফতানি নীতি (২০১৮-২১) অনুযায়ী ২৫ প্রজাতির সুগন্ধি চাল রফতানির সুযোগ রয়েছে। দেশে অনেক ধরনের সুগন্ধি চাল থাকলেও রফতানিযোগ্য সুগন্ধি চালের একটি তালিকা রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। ওই তালিকার বাইরে কোনো সুগন্ধি চাল রফতানি করা যাবে না। গত কয়েক বছর চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য সাধারণ চাল বাদ দিয়ে শুধু সুগন্ধি চাল রফতানির সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের। কাটারিভোগের প্রসঙ্গ টেনে শাহ আলম বলেন, ‘এটা খুবই সুখের ব্যাপার যে আমরা একটা বাংলাদেশের নিজস্ব জাত পেয়েছি। তাতে ব্র্যান্ড হিসেবে রফতানি বাড়বে। তবে এ ক্ষেত্রে কাটারিভোগের উৎপাদন খরচ কমাতে হবে।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বড় হচ্ছে কাটারিভোগের বাজার

আপডেট সময় : ১২:০৭:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুন ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার পাশাপাশি রফতানি বেড়ে যাওয়ায় সুগন্ধি চালের বড় বাজার সৃষ্টি হয়েছে। এই বাজারে এখন বিনিয়োগ করছে বড় বড় প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে অন্যান্য ধানের তুলনায় বিক্রয়মূল্য বেশি হওয়ায় সুগন্ধি ধানের আবাদে ঝুঁকছেন কৃষকরা। ফলে কয়েক বছরে দেশে সুগন্ধি ধানের আবাদে এসেছে বড় পরিবর্তন। এর মধ্যে নতুন সুখবর নিয়ে এসেছে দিনাজপুরের কাটারিভোগ। ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এই পণ্য। ফলে কাটারিভোগ এখন বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিনিধি। গত ১৭ জুন শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর (ডিপিডিটি) কাটারিভোগের জন্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটকে জিআই সনদ হস্তান্তর করে। দেশে এখন অভ্যন্তরীণ চাহিদার চেয়ে বেশি সুগন্ধি চালের উৎপাদন হচ্ছে। সেহেতু রফতানির ক্ষেত্রে আগাম অনুমোদন ব্যবস্থা তুলে নিলে এ খাত থেকে রফতানি আয় বাড়বে।
এদিকে, দেশে প্রতিবছর বাড়ছে কাটারিভোগ সহ অন্যান্য সুগন্ধি চালের চাহিদা। বিভিন্ন জেলায় অঞ্চলভিত্তিক প্রচুর সুগন্ধি ধানের জাত আছে। জাতগুলোর মধ্যে অধিকাংশই অতি সুগন্ধি। এ জাতগুলোর মধ্যে চিনিগুঁড়া, কালিজিরা, কাটারিভোগ অন্যতম। প্রধানত আমন মৌসুমে (খরিফ-২) সুগন্ধি ধানের চাষ করা হয়। এ মৌসুমে উৎপাদিত ধানের প্রায় ১০ শতাংশ সুগন্ধি জাত। কাটারিভোগ জাতের ধানের জেলা হিসেবে দিনাজপুরের সুনাম দীর্ঘদিনের। প্রাকৃতিক কারণে এ জেলায় কাটারিভোগের ফলন ও সুগন্ধ হয় বেশি। আর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দিনাজপুরে সুগন্ধি ধানের আবাদ সাত বছরের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কাটারিভোগের চাষ। শুধু কারিভোগের চাষাবাদ বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে দিনাজপুরে সুগন্ধি ধানের আবাদ বাড়তে শুরু করেছে। ওই অর্থবছরে জেলায় ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে সুগন্ধি ধান আবাদ হয়। উৎপাদিত হয় ৮৬ হাজার ৯৯৪ টন সুগন্ধি চাল। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবেই প্রতি বছর সুগন্ধি ধানের আবাদের আওতায় জমির পরিমাণ ও উৎপাদন বেড়েই চলেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সুগন্ধি ধানের আবাদ হয়েছে এবং উৎপাদন হয়েছে দুই লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৪ টন। এদিকে, বিদেশে বেড়েছে সুগন্ধি চালের চাহিদা। প্রধানত যেসব দেশে দক্ষিণ এশিয়ার লোকজন বেশি বাস করে সেখানে সুগন্ধি চালের চাহিদা বেশি। এছাড়া ইউরোপ ও আমেরিকার স্থানীয় লোকজনের মধ্যেও সম্প্রতি সুগন্ধি চালের চাহিদা বেড়েছে। ফাস্টফুড ও বিভিন্ন চাইনিজ খাবারের জন্যও সুগন্ধি চাল এখন খুবই জনপ্রিয়। রফতানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি সুগন্ধি চাল রফতানি হয়। এছাড়া মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সুগন্ধি চাল রফতানি হয়েছে। বর্তমানে যেভাবে আগাম অনুমোদন নিয়ে সুগন্ধি চাল রফতানি করতে হয় তার পুরোটা সুগন্ধি।’ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য বলছে, ১০ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে সুগন্ধি চালের রফতানি বেড়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৬৬৩ টন সুগন্ধি চাল রফতানি করেন ব্যবসায়ীরা। এখন প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার টন সুগন্ধি চাল বিদেশে যাচ্ছে। এর মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুমোদন নিয়ে অর্ধেকের মতো চাল যাচ্ছে। তবে প্যাকেজিং করে নিয়মিত রফতানি হয় সুগন্ধি চাল। এছাড়া, বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রায় এক কোটি প্রবাসী বাংলাদেশির মাধ্যমে প্রতিবছর প্রায় আড়াই থেকে পাঁচ হাজার টন সুগন্ধি চাল বিদেশে যায়। বাংলাদেশের কিছু কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত ১৩৬টি দেশে প্যাকেটজাত সুগন্ধি চাল রফতানি করছে। এ তালিকায় রয়েছে প্রাণ, এসিআই, ইস্পাহানি, স্কয়ারসহ বিভিন্ন কোম্পানি। দেশেও তারা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সুগন্ধি চাল বিক্রি করছে। পাশাপাশি চাল প্রক্রিয়াকরণে বড় বিনিয়োগ করেছে তারা।
তবে এ বাজার আরও বাড়ানো যেত বলে মনে করেন বাংলাদেশ রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহ আলম বাবু। জানা গেছে, বর্তমান রফতানি নীতি (২০১৮-২১) অনুযায়ী ২৫ প্রজাতির সুগন্ধি চাল রফতানির সুযোগ রয়েছে। দেশে অনেক ধরনের সুগন্ধি চাল থাকলেও রফতানিযোগ্য সুগন্ধি চালের একটি তালিকা রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। ওই তালিকার বাইরে কোনো সুগন্ধি চাল রফতানি করা যাবে না। গত কয়েক বছর চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য সাধারণ চাল বাদ দিয়ে শুধু সুগন্ধি চাল রফতানির সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের। কাটারিভোগের প্রসঙ্গ টেনে শাহ আলম বলেন, ‘এটা খুবই সুখের ব্যাপার যে আমরা একটা বাংলাদেশের নিজস্ব জাত পেয়েছি। তাতে ব্র্যান্ড হিসেবে রফতানি বাড়বে। তবে এ ক্ষেত্রে কাটারিভোগের উৎপাদন খরচ কমাতে হবে।’