ঢাকা ০৩:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫

ব্লাডলিংক পেল আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার

  • আপডেট সময় : ০৪:৪৭:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪
  • ৭৭ বার পড়া হয়েছে

প্রযুক্তি ডেস্ক: বাংলাদেশি কিশোর তামজিদ রহমান মাত্র ১৬ বছর বয়সে তার অভাবনীয় উদ্যোগের জন্য আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের (আইসিপিপি) সেরা ৩০ জন চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। এ পুরস্কারটি নেদারল্যান্ডসভিত্তিক কিডসরাইটস ফাউন্ডেশন প্রদত্ত এবং একে শিশুদের জন্য ‘নোবেল পুরস্কার’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। তার এই অসামান্য স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের একটি বড় অধ্যায়।
তামজিদের এই সাফল্যের মূল ভিত্তি হলো তার প্রতিষ্ঠিত অ্যাপ ‘ব্লাডলিংক’। এটি দেশের প্রথম এবং বৃহত্তম পিয়ার-টু-পিয়ার রক্তদান অ্যাপ। ২০২৩ সালের শুরুর দিকে চালু হওয়া এ অ্যাপটি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে এক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। তা হলো রক্তদান সংকট, বিশেষ করে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের জন্য; যাদের নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন।
ব্লাডলিংক স্বেচ্ছায় রক্তদাতা ও রক্তপ্রাপকদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে। তা একেবারে বিনামূল্যে করা হয়। এ পদ্ধতিটি বিশেষ করে জরুরি পরিস্থিতিতে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত শিশুদের জন্য অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
ব্লাডলিংক অ্যাপটি চালু হওয়ার পর থেকে ইতোমধ্যে এক হাজার দুইশ’রও বেশি সফল রক্তদাতা প্রাপক সংযোগ তৈরি হয়েছে এবং পাঁচশ’র বেশি শিশুর জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। এটির মাধ্যমে দেশের প্রায় ৯৫০ জন সক্রিয় রক্তদাতাকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যা রক্তদান প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত এবং সহজ করেছে। এছাড়া অ্যাপটির ইমার্জেন্সি রেসপন্স ইউনিট সাম্প্রতিক ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের সময় ৩০টিরও বেশি পরিবারকে রক্তদাতার সহায়তা প্রদান করেছে।
তামজিদ এবং তার ব্লাডলিংক টিমের কার্যক্রম শুধু অ্যাপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তারা সারা দেশে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কর্মশালা, স্কুল কার্যক্রম, এবং ক্যাম্পাস অ্যাক্টিভেশন পরিচালনা করেছে। তারা ২০টিরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে; যেখানে ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
তামজিদের নেতৃত্বে ব্লাডলিংক দল রক্তদানের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন ভুল ধারণা দূর করতে কমিক বই ও পোস্টারও তৈরি করেছে; যা নতুন প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করছে।
ব্লাডলিংক শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয়; আন্তর্জাতিক পর্যায়েও স্বীকৃতি পাচ্ছে। তামজিদ ইতোমধ্যেই কিডসরাইটস ফাউন্ডেশন, আইসিটি ডিভিশন, ইউএনডিপি বাংলাদেশ, এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে ১৫ হাজার ডলারের বেশি অনুদান পেয়েছেন।
এই অনুদানের মাধ্যমে অ্যাপটির প্রযুক্তিগত অবকাঠামো আরও উন্নত করার কাজ চলছে, যাতে রক্তদাতা-প্রাপক সংযোগ প্রক্রিয়া আরও দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য হয়।
তামজিদের আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের মনোনয়ন প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের তরুণরা বৈশ্বিক অঙ্গনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম। ব্লাডলিংক একটি উদাহরণÑ কীভাবে প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও যুব নেতৃত্ব একসঙ্গে সমাজে বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারে।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ব্লাডলিংক পেল আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার

আপডেট সময় : ০৪:৪৭:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪

প্রযুক্তি ডেস্ক: বাংলাদেশি কিশোর তামজিদ রহমান মাত্র ১৬ বছর বয়সে তার অভাবনীয় উদ্যোগের জন্য আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের (আইসিপিপি) সেরা ৩০ জন চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। এ পুরস্কারটি নেদারল্যান্ডসভিত্তিক কিডসরাইটস ফাউন্ডেশন প্রদত্ত এবং একে শিশুদের জন্য ‘নোবেল পুরস্কার’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। তার এই অসামান্য স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের একটি বড় অধ্যায়।
তামজিদের এই সাফল্যের মূল ভিত্তি হলো তার প্রতিষ্ঠিত অ্যাপ ‘ব্লাডলিংক’। এটি দেশের প্রথম এবং বৃহত্তম পিয়ার-টু-পিয়ার রক্তদান অ্যাপ। ২০২৩ সালের শুরুর দিকে চালু হওয়া এ অ্যাপটি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে এক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। তা হলো রক্তদান সংকট, বিশেষ করে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের জন্য; যাদের নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন।
ব্লাডলিংক স্বেচ্ছায় রক্তদাতা ও রক্তপ্রাপকদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে। তা একেবারে বিনামূল্যে করা হয়। এ পদ্ধতিটি বিশেষ করে জরুরি পরিস্থিতিতে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত শিশুদের জন্য অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
ব্লাডলিংক অ্যাপটি চালু হওয়ার পর থেকে ইতোমধ্যে এক হাজার দুইশ’রও বেশি সফল রক্তদাতা প্রাপক সংযোগ তৈরি হয়েছে এবং পাঁচশ’র বেশি শিশুর জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। এটির মাধ্যমে দেশের প্রায় ৯৫০ জন সক্রিয় রক্তদাতাকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যা রক্তদান প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত এবং সহজ করেছে। এছাড়া অ্যাপটির ইমার্জেন্সি রেসপন্স ইউনিট সাম্প্রতিক ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের সময় ৩০টিরও বেশি পরিবারকে রক্তদাতার সহায়তা প্রদান করেছে।
তামজিদ এবং তার ব্লাডলিংক টিমের কার্যক্রম শুধু অ্যাপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তারা সারা দেশে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কর্মশালা, স্কুল কার্যক্রম, এবং ক্যাম্পাস অ্যাক্টিভেশন পরিচালনা করেছে। তারা ২০টিরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে; যেখানে ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
তামজিদের নেতৃত্বে ব্লাডলিংক দল রক্তদানের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন ভুল ধারণা দূর করতে কমিক বই ও পোস্টারও তৈরি করেছে; যা নতুন প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করছে।
ব্লাডলিংক শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয়; আন্তর্জাতিক পর্যায়েও স্বীকৃতি পাচ্ছে। তামজিদ ইতোমধ্যেই কিডসরাইটস ফাউন্ডেশন, আইসিটি ডিভিশন, ইউএনডিপি বাংলাদেশ, এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে ১৫ হাজার ডলারের বেশি অনুদান পেয়েছেন।
এই অনুদানের মাধ্যমে অ্যাপটির প্রযুক্তিগত অবকাঠামো আরও উন্নত করার কাজ চলছে, যাতে রক্তদাতা-প্রাপক সংযোগ প্রক্রিয়া আরও দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য হয়।
তামজিদের আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের মনোনয়ন প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের তরুণরা বৈশ্বিক অঙ্গনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম। ব্লাডলিংক একটি উদাহরণÑ কীভাবে প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও যুব নেতৃত্ব একসঙ্গে সমাজে বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারে।