ঢাকা ০৮:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

ব্রিটেনে স্থায়ী হওয়ার পথে নতুন শর্তারোপ

  • আপডেট সময় : ০৮:৩৮:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
  • ৩৬ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক: যুক্তরাজ্য সরকার সম্প্রতি তাদের অভিবাসন নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে, যা ‘ইনডেফিনিট লিভ টু রিমেইন’ (আইএলআর) এবং স্পাউস ভিসার নিয়মাবলিতে সরাসরি প্রভাব ফেলবে। সোমবার (১২ মে) প্রকাশিত এই নীতিমালার হালনাগাদ সংস্করণ যুক্তরাজ্যে বসবাস ও স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপনের প্রক্রিয়াকে আরো কঠিন করে তুলবে। এতে ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটিতে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

আইএলআর-এর ক্ষেত্রে পরিবর্তন: নতুন নীতিমালায় আইএলআর-এর জন্য যোগ্যতার মানদ- আরো কঠোর করা হয়েছে। বিশেষ করে, আর্থিক যোগ্যতার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর ফলে স্থায়ী বসবাসের অনুমতির জন্য আবেদন করতে হলে আগের তুলনায় অনেক বেশি আয় প্রমাণ করতে হবে।

আর্থিক শর্ত কঠোর করা হয়েছে: আইএলআর-এর জন্য ন্যূনতম আয়ের সীমা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হয়েছে, যা নি¤œ আয়ের মানুষ এবং নির্দিষ্ট কিছু পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের ওপর বেশি প্রভাব ফেলবে।

ইংরেজি ভাষার যোগ্যতা: ইংরেজি ভাষার দক্ষতা এতদিন একটি মৌলিক শর্ত ছিল, কিন্তু এখন আরো উচ্চতর স্তরের ইংরেজি দক্ষতা বা নির্দিষ্ট ধরনের ইংরেজি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার শর্ত আরোপ করা হতে পারে।

অবিচ্ছিন্ন বসবাসের শর্ত: ‘অবিচ্ছিন্ন বসবাস’ সম্পর্কিত নিয়মও কঠোর করা হয়েছে। আইএলআর-এর জন্য নির্ধারিত সময়কালের মধ্যে কতদিন যুক্তরাজ্যের বাইরে থাকা যাবে—সেই সীমা কমিয়ে আনা হয়েছে। এই নিয়ম ভঙ্গ করলে আইএলআর-এর যোগ্যতা হারানোর আশঙ্কা থাকবে।

কারা এই পরিবর্তনের আওতায় পড়বেন? এই পরিবর্তনগুলো মূলত নিচের ব্যক্তিদের ওপর প্রভাব ফেলবে:

দক্ষ কর্মী ভিসাধারী: যারা কর্মসংস্থানের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যে আছেন, তারা আইএলআর-এর জন্য আবেদন করতে গিয়ে বাড়তি আর্থিক চাপে পড়বেন।

পরিবারভিত্তিক ভিসাধারী: বিশেষ করে স্পাউস ভিসায় থাকা ব্যক্তিদেরও বাড়তি আয়ের শর্ত পূরণ করতে হবে।

দীর্ঘমেয়াদি বাসিন্দা: যেসব ব্যক্তি ১০ বছর বা তার অধিক সময় ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন এবং আইএলআর-এর আবেদন করছেন, তারাও নতুন শর্তের আওতায় পড়বেন।

স্পাউস ভিসার ক্ষেত্রে প্রভাব: স্পাউস ভিসার ক্ষেত্রেও অর্থনৈতিক যোগ্যতার সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর ফলে যুক্তরাজ্যের নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দারা তাদের বিদেশি জীবনসঙ্গীদের যুক্তরাজ্যে আনতে গেলে আগের তুলনায় অনেক বেশি আয় দেখাতে হবে। যারা বর্তমানে স্পাউস ভিসায় আছেন এবং মেয়াদ বাড়াতে চাইছেন, তাদেরও নতুন অর্থনৈতিক শর্ত পূরণ করতে হবে, অন্যথায় আবেদন বাতিলের ঝুঁকি রয়েছে।

বর্তমান অভিবাসীরা কীভাবে প্রভাবিত হবেন? যারা ইতোমধ্যে বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন, তাদের ক্ষেত্রেও অনিশ্চয়তা রয়েছে। সরকার জানিয়েছে, এই রূপান্তর প্রক্রিয়ায় কিছু সাময়িক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তবে তার বিস্তারিত এখনো স্পষ্ট নয়। ধারণা করা হচ্ছে, আইএলআর বা ভিসা নবায়নের সময় এদের নতুন কঠোর নীতিমালার অধীনেই মূল্যায়ন করা হবে।

ফলে অনেকেই যারা পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করেছিলেন, তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতামতধ বাংলাদেশি কমিউনিটির সুপরিচিত আইনজীবী ব্যারিস্টার সালাহ উদ্দিন সুমন সোমবার এই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ‘নতুন শর্ত আরোপ নিঃসন্দেহে ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বড় প্রভাব ফেলবে।

প্রস্তাবের পূর্ণাঙ্গ রূপ এখনও প্রকাশিত হয়নি। মানুষ উদ্বিগ্ন। সরকার অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এখন বৈধ অভিবাসীদের নতুন নতুন শর্তের ফাঁদে ফেলছে।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ব্রিটেনে স্থায়ী হওয়ার পথে নতুন শর্তারোপ

আপডেট সময় : ০৮:৩৮:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: যুক্তরাজ্য সরকার সম্প্রতি তাদের অভিবাসন নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে, যা ‘ইনডেফিনিট লিভ টু রিমেইন’ (আইএলআর) এবং স্পাউস ভিসার নিয়মাবলিতে সরাসরি প্রভাব ফেলবে। সোমবার (১২ মে) প্রকাশিত এই নীতিমালার হালনাগাদ সংস্করণ যুক্তরাজ্যে বসবাস ও স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপনের প্রক্রিয়াকে আরো কঠিন করে তুলবে। এতে ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটিতে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

আইএলআর-এর ক্ষেত্রে পরিবর্তন: নতুন নীতিমালায় আইএলআর-এর জন্য যোগ্যতার মানদ- আরো কঠোর করা হয়েছে। বিশেষ করে, আর্থিক যোগ্যতার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর ফলে স্থায়ী বসবাসের অনুমতির জন্য আবেদন করতে হলে আগের তুলনায় অনেক বেশি আয় প্রমাণ করতে হবে।

আর্থিক শর্ত কঠোর করা হয়েছে: আইএলআর-এর জন্য ন্যূনতম আয়ের সীমা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হয়েছে, যা নি¤œ আয়ের মানুষ এবং নির্দিষ্ট কিছু পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের ওপর বেশি প্রভাব ফেলবে।

ইংরেজি ভাষার যোগ্যতা: ইংরেজি ভাষার দক্ষতা এতদিন একটি মৌলিক শর্ত ছিল, কিন্তু এখন আরো উচ্চতর স্তরের ইংরেজি দক্ষতা বা নির্দিষ্ট ধরনের ইংরেজি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার শর্ত আরোপ করা হতে পারে।

অবিচ্ছিন্ন বসবাসের শর্ত: ‘অবিচ্ছিন্ন বসবাস’ সম্পর্কিত নিয়মও কঠোর করা হয়েছে। আইএলআর-এর জন্য নির্ধারিত সময়কালের মধ্যে কতদিন যুক্তরাজ্যের বাইরে থাকা যাবে—সেই সীমা কমিয়ে আনা হয়েছে। এই নিয়ম ভঙ্গ করলে আইএলআর-এর যোগ্যতা হারানোর আশঙ্কা থাকবে।

কারা এই পরিবর্তনের আওতায় পড়বেন? এই পরিবর্তনগুলো মূলত নিচের ব্যক্তিদের ওপর প্রভাব ফেলবে:

দক্ষ কর্মী ভিসাধারী: যারা কর্মসংস্থানের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যে আছেন, তারা আইএলআর-এর জন্য আবেদন করতে গিয়ে বাড়তি আর্থিক চাপে পড়বেন।

পরিবারভিত্তিক ভিসাধারী: বিশেষ করে স্পাউস ভিসায় থাকা ব্যক্তিদেরও বাড়তি আয়ের শর্ত পূরণ করতে হবে।

দীর্ঘমেয়াদি বাসিন্দা: যেসব ব্যক্তি ১০ বছর বা তার অধিক সময় ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন এবং আইএলআর-এর আবেদন করছেন, তারাও নতুন শর্তের আওতায় পড়বেন।

স্পাউস ভিসার ক্ষেত্রে প্রভাব: স্পাউস ভিসার ক্ষেত্রেও অর্থনৈতিক যোগ্যতার সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর ফলে যুক্তরাজ্যের নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দারা তাদের বিদেশি জীবনসঙ্গীদের যুক্তরাজ্যে আনতে গেলে আগের তুলনায় অনেক বেশি আয় দেখাতে হবে। যারা বর্তমানে স্পাউস ভিসায় আছেন এবং মেয়াদ বাড়াতে চাইছেন, তাদেরও নতুন অর্থনৈতিক শর্ত পূরণ করতে হবে, অন্যথায় আবেদন বাতিলের ঝুঁকি রয়েছে।

বর্তমান অভিবাসীরা কীভাবে প্রভাবিত হবেন? যারা ইতোমধ্যে বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন, তাদের ক্ষেত্রেও অনিশ্চয়তা রয়েছে। সরকার জানিয়েছে, এই রূপান্তর প্রক্রিয়ায় কিছু সাময়িক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তবে তার বিস্তারিত এখনো স্পষ্ট নয়। ধারণা করা হচ্ছে, আইএলআর বা ভিসা নবায়নের সময় এদের নতুন কঠোর নীতিমালার অধীনেই মূল্যায়ন করা হবে।

ফলে অনেকেই যারা পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করেছিলেন, তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতামতধ বাংলাদেশি কমিউনিটির সুপরিচিত আইনজীবী ব্যারিস্টার সালাহ উদ্দিন সুমন সোমবার এই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ‘নতুন শর্ত আরোপ নিঃসন্দেহে ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বড় প্রভাব ফেলবে।

প্রস্তাবের পূর্ণাঙ্গ রূপ এখনও প্রকাশিত হয়নি। মানুষ উদ্বিগ্ন। সরকার অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এখন বৈধ অভিবাসীদের নতুন নতুন শর্তের ফাঁদে ফেলছে।’