ঢাকা ০৫:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫

ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের মধ্যে বিচ্ছেদের হার বাড়ছে

  • আপডেট সময় : ০৫:০৭:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ১ বার পড়া হয়েছে

প্রতীকী ছবি

প্রত্যাশা ডেস্ক: ব্রিটেনের দক্ষিণ এশীয় কমিউনিটিগুলোতে এক সময় যে ‘অটুট’ পারিবারিক বন্ধনের ঐতিহ্য ছিল, ২০২৫ সালের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে বিচ্ছেদের হার বৃদ্ধি পেতে দেখে গেছে। নারীরা শিক্ষিত হয়ে ওঠার কারণে মুখ বুঝে অন্যায় সহ্য না করা এবং সেখানে জন্মগ্রহণকারীদের নাগরিকত্বের জন্য বিবাহের সম্পর্কের প্রতি নির্ভরতা না থাকায় পরিস্থিতিতে এমন ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে।

সার্বিকভাবে, ব্রিটেনের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের কমিউনিটিতে পারিবারিক কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এক দশক আগেও যেখানে বিচ্ছেদকে সামাজিক ‘ট্যাবু’ বা কলঙ্ক হিসেবে দেখা হতো, বর্তমান প্রজন্মের কাছে তা এখন ব্যক্তিস্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদার প্রশ্নে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে।

ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির বর্তমান চিত্র: সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ব্রিটিশ-বাংলাদেশি মুসলিমদের মধ্যে বিচ্ছেদের হার বর্তমানে প্রায় ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যদিও ব্রিটিশ-পাকিস্তানি বা শিখ কমিউনিটির তুলনায় এই হার কিছুটা কম, যেখানে এই হার প্রায় ১০ শতাংশ, তবে গত দশ বছরের তুলনায় এটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। ব্রিটিশ-বাংলাদেশি পরিবারগুলোতে এখনও বিবাহের হার বেশ উচ্চ, যার একটি বড় কারণ ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং প্রবাস থেকে জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ধারা। তবে যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশিদের মধ্যে বিবাহের প্রতি আগ্রহ এবং বিচ্ছেদের ধরণ আগের প্রজন্মের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন। ব্রিটেনের বিভিন্ন ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীর মধ্যে জন্মহারের দিক থেকে এখনও মুসলিমরা (প্রধানত পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত) শীর্ষে রয়েছে। মুসলিম পরিবারগুলোতে প্রতি নারীর গড় সন্তান সংখ্যা ২ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ৮ এর মধ্যে, যা ব্রিটেনের জাতীয় গড়ের তুলনায় অনেক বেশি। অন্যদিকে, ব্রিটিশ-হিন্দু কমিউনিটিতে জন্মহার ১ দশমিক ৭ এর কাছাকাছি, যা ব্রিটিশ শ্বেতাঙ্গদের সমপর্যায়ভুক্ত। আবার বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে হিন্দু কমিউনিটি এখনও বেশ রক্ষণশীল, সেখানে বিচ্ছেদের হার মাত্র ৬ শতাংশ।

বিচ্ছেদের নেপথ্যে কারণ ও অভ্যন্তরীণ সংকট: ব্রিটেনে বাংলাদেশি ও দক্ষিণ এশীয় পরিবারগুলোতে বিচ্ছেদের প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে যৌথ পরিবারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং লিঙ্গবৈষম্য। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশি নারীরা এখন অনেক বেশি শিক্ষিত এবং আর্থিকভাবে স্বাধীন। এখন আর তাদের পারিবারিক নিপীড়ন বা ‘ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স’ মুখ বুজে সহ্য করার দরকার নেই। এছাড়া ব্যক্তিগত ও দাম্পত্য জীবনে শ্বশুরবাড়ির অহেতুক হস্তক্ষেপ এবং জীবনসঙ্গীর সঙ্গে প্রত্যাশার অমিল এই বিচ্ছেদের হারকে ত্বরান্বিত করছে।

অভিবাসী ও পরের প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য: গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সরাসরি বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়া থেকে বিবাহের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে আসছেন, তাদের মধ্যে বিচ্ছেদের হার তুলনামূলক কম। এর পেছনে প্রধান কারণ হলো ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস হারানো এবং সামাজিক লোকলজ্জা। কিন্তু যারা ব্রিটেনে জন্ম নিয়েছেন এবং বড় হয়েছেন, তাদের কাছে বিয়ে এখন আর কেবল একটি ‘সামাজিক চুক্তি’ নয়। তারা কথিত পারিবারিক সম্মানের চেয়ে বাস্তবসম্মত ব্যক্তিগত শান্তি ও সুরক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

পারিবারিক সহিংসতা ও আইনি সচেতনতা: ২০২৫ সালের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ব্রিটিশ-বাংলাদেশি নারীদের মধ্যে পুলিশে অভিযোগ করার প্রবণতা বেড়েছে। আগে যেখানে পরিবারের মান-সম্মানের অজুহাতে ঘরোয়া নির্যাতন লুকিয়ে রাখা হতো, এখন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি তরুণীরা বিভিন্ন সহায়তা সংস্থার মাধ্যমে নির্যাতনের আইনি প্রতিকার খুঁজছেন। ২০২২ সালে প্রবর্তিত ‘নো-ফল্ট ডিভোর্স’ আইন এই বিচ্ছেদের প্রক্রিয়াকে আরো সহজ করেছে, যা নারীদের বিষাক্ত সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে সাহস যোগাচ্ছে। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

সানা/এসি/আপ্র/২৯/১২/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের মধ্যে বিচ্ছেদের হার বাড়ছে

আপডেট সময় : ০৫:০৭:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: ব্রিটেনের দক্ষিণ এশীয় কমিউনিটিগুলোতে এক সময় যে ‘অটুট’ পারিবারিক বন্ধনের ঐতিহ্য ছিল, ২০২৫ সালের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে বিচ্ছেদের হার বৃদ্ধি পেতে দেখে গেছে। নারীরা শিক্ষিত হয়ে ওঠার কারণে মুখ বুঝে অন্যায় সহ্য না করা এবং সেখানে জন্মগ্রহণকারীদের নাগরিকত্বের জন্য বিবাহের সম্পর্কের প্রতি নির্ভরতা না থাকায় পরিস্থিতিতে এমন ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে।

সার্বিকভাবে, ব্রিটেনের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের কমিউনিটিতে পারিবারিক কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এক দশক আগেও যেখানে বিচ্ছেদকে সামাজিক ‘ট্যাবু’ বা কলঙ্ক হিসেবে দেখা হতো, বর্তমান প্রজন্মের কাছে তা এখন ব্যক্তিস্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদার প্রশ্নে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে।

ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির বর্তমান চিত্র: সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ব্রিটিশ-বাংলাদেশি মুসলিমদের মধ্যে বিচ্ছেদের হার বর্তমানে প্রায় ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যদিও ব্রিটিশ-পাকিস্তানি বা শিখ কমিউনিটির তুলনায় এই হার কিছুটা কম, যেখানে এই হার প্রায় ১০ শতাংশ, তবে গত দশ বছরের তুলনায় এটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। ব্রিটিশ-বাংলাদেশি পরিবারগুলোতে এখনও বিবাহের হার বেশ উচ্চ, যার একটি বড় কারণ ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং প্রবাস থেকে জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ধারা। তবে যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশিদের মধ্যে বিবাহের প্রতি আগ্রহ এবং বিচ্ছেদের ধরণ আগের প্রজন্মের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন। ব্রিটেনের বিভিন্ন ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীর মধ্যে জন্মহারের দিক থেকে এখনও মুসলিমরা (প্রধানত পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত) শীর্ষে রয়েছে। মুসলিম পরিবারগুলোতে প্রতি নারীর গড় সন্তান সংখ্যা ২ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ৮ এর মধ্যে, যা ব্রিটেনের জাতীয় গড়ের তুলনায় অনেক বেশি। অন্যদিকে, ব্রিটিশ-হিন্দু কমিউনিটিতে জন্মহার ১ দশমিক ৭ এর কাছাকাছি, যা ব্রিটিশ শ্বেতাঙ্গদের সমপর্যায়ভুক্ত। আবার বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে হিন্দু কমিউনিটি এখনও বেশ রক্ষণশীল, সেখানে বিচ্ছেদের হার মাত্র ৬ শতাংশ।

বিচ্ছেদের নেপথ্যে কারণ ও অভ্যন্তরীণ সংকট: ব্রিটেনে বাংলাদেশি ও দক্ষিণ এশীয় পরিবারগুলোতে বিচ্ছেদের প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে যৌথ পরিবারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং লিঙ্গবৈষম্য। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশি নারীরা এখন অনেক বেশি শিক্ষিত এবং আর্থিকভাবে স্বাধীন। এখন আর তাদের পারিবারিক নিপীড়ন বা ‘ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স’ মুখ বুজে সহ্য করার দরকার নেই। এছাড়া ব্যক্তিগত ও দাম্পত্য জীবনে শ্বশুরবাড়ির অহেতুক হস্তক্ষেপ এবং জীবনসঙ্গীর সঙ্গে প্রত্যাশার অমিল এই বিচ্ছেদের হারকে ত্বরান্বিত করছে।

অভিবাসী ও পরের প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য: গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সরাসরি বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়া থেকে বিবাহের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে আসছেন, তাদের মধ্যে বিচ্ছেদের হার তুলনামূলক কম। এর পেছনে প্রধান কারণ হলো ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস হারানো এবং সামাজিক লোকলজ্জা। কিন্তু যারা ব্রিটেনে জন্ম নিয়েছেন এবং বড় হয়েছেন, তাদের কাছে বিয়ে এখন আর কেবল একটি ‘সামাজিক চুক্তি’ নয়। তারা কথিত পারিবারিক সম্মানের চেয়ে বাস্তবসম্মত ব্যক্তিগত শান্তি ও সুরক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

পারিবারিক সহিংসতা ও আইনি সচেতনতা: ২০২৫ সালের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ব্রিটিশ-বাংলাদেশি নারীদের মধ্যে পুলিশে অভিযোগ করার প্রবণতা বেড়েছে। আগে যেখানে পরিবারের মান-সম্মানের অজুহাতে ঘরোয়া নির্যাতন লুকিয়ে রাখা হতো, এখন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি তরুণীরা বিভিন্ন সহায়তা সংস্থার মাধ্যমে নির্যাতনের আইনি প্রতিকার খুঁজছেন। ২০২২ সালে প্রবর্তিত ‘নো-ফল্ট ডিভোর্স’ আইন এই বিচ্ছেদের প্রক্রিয়াকে আরো সহজ করেছে, যা নারীদের বিষাক্ত সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে সাহস যোগাচ্ছে। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

সানা/এসি/আপ্র/২৯/১২/২০২৫