ঢাকা ০২:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ব্রিটিশের আইন দিয়ে কতদিন চলবে?

  • আপডেট সময় : ০৯:৫০:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ জুলাই ২০২২
  • ১২৫ বার পড়া হয়েছে

আশিক আহমেদ : দেশের প্রচালিত ভূমি আইন সময় উপযোগী করা দরকার। দেশের সব শেষ ভূমি আইন হয়েছে ১৯০৮ সালে। এখন ২০২২ সাল। প্রায় ১১৪ বছর আগের একটি আইন দিয়ে কী দেশের ভূমি দেওয়ানি বিচার চলে? একটি মামলা শেষ করতে চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগে। আবার কখনো কখনো সেটা ২০ থেকে ৩০ বছরও লেগে যায়। তাহলে একজন মানুষ প্রকৃত বিচার পেলো কোথায়? কিভাবে? আমার বাবা অথবা দাদা একটি মামলা করেছেন একটি ভূমি নিয়ে অথচ দেখা যাচ্ছে সেই মামলা আমার আমলেও শেষ হচ্ছে না।
তাহলে এই তিন প্রজন্ম বিচার পেল কোথায়? আমাদের আদালত বিচার প্রাথীদের কি দেয়? দেয় শুধু তারিখের পর তারিখ। দেখা যায়, একটি ভূমির রেকর্ড সংশোধনের জন্য কেউ মামলা করেছেন। ওই মামলা শেষ করতে কেন ৩০ থেকে ৪০ বছর লাগবে?
আবার সহকারী জজ আদালতে একটি মামলার রায় হলো। আবার ওই রায়ের বিরুদ্ধে একটি পক্ষ একই আদালতে ছানি মামলা করছেন, আবার ডিক্রি রদের মামলা করছেন। তাহলে আমার প্রশ্ন বিচারক দীর্ঘ চার থেকে পাঁচ বছর পরে একটি রায় দিলে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আবার ছানি অথবা ডিক্রি রদ করতে হবে? তাহলে কী আগের বিচারক ভুল বিচার করেছেন? আবার সেই রায়ের বিরুদ্ধে জজ আদালত, হাইকোর্ট, আপিল বিভাগ ও রিভিউ পর্যন্ত করছেন।
তাহলে একজন বিচারপ্রাথীর ভোগান্তিটা কোথায় সেটা নিয়ে কী কেউ একবারো ভেবে দেখেছেন? একটি মামলায় অকারণেই কেউ উচ্চ আদালতে গিয়ে মামলার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে আবেদন করছেন, আর আদালত এক বছরের জন্য সেই মামলায় স্থগিত আদেশ দিচ্ছেন। এতে যে একজন বিচারপ্রাথী কতটুকু ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সেটা কী একবার আদালত চিন্তা করে দেখেছেন?
দেখা যায়, মামলায় কোনো পক্ষ জেনেও আদালতে হাজির হননা। তাহলে সেই দোষ কী মামলার বাদি পক্ষের? আবার বলেন, আমরা সমন পাইনি, জানিনা, ইত্যাদি তাহলে সমন না পাওয়া অথবা মামলার বিষয়ে জানানোর দায়িত্ব কার? বিচার প্রাথীর? না আদালতের?
একটি দেওয়ানি মামলায় যখন ফাইল করা হয়, তখন দেখা যায় বাদি পক্ষের আইনজীবী সমন খাম, নোটিশ সব কিছু আরজির সঙ্গে দিয়ে দেন তাহলে ওই সমন জারি করাটা কার কাজ? আজ থেকে ১১৪ বছর আগের মানুষের মন মানুষিকতা আর এখনকার মানুষের মন মানুষিকতা কী এক?
আদালতে গেলে বিচারপ্রাথীকে আইনজীবী, আইনজীবীর সহকারী, আদালতের পিয়ন, পেশকার বিচারক থেকে শুরু করে সবার কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে হয়। বিচারপ্রাথীর কোনো কথা বলার সুযোগও থাকেনা। শুধু বলেন, কোর্ট উঠছে, সবাই সাবধান কেউ শব্দ করবেন না? তাহলে দিনের পর দিন ধরে যে তারিখ দিয়ে যাচ্ছে আদালত সেই কথাটি কে বলবে? আইনজীবীরা তো ইচ্ছে করেই চান না যে একটি মামলা ছোট ছোট তারিখ পরে দ্রুত নিস্পত্তি হোক। তাহলে বিচাপ্রার্থী কীভাবে ন্যায় বিচার পাবেন?
দেশের অধিকাংশ নি¤œ আদালতের অধিকাংশ জায়গায় নকলখানায় লোকজন নেই। ফটোকপি করে নকল তুলতে হয়। সেখানেও নির্ধারিত ফি দিয়েও নকল তোলা যায় না। আবার ফটোকপির নকল তুললেও তা স্পষ্ট করে পড়া যায় না।
একটি মামলায় কতদিনের মধ্যে সমন জারি করতে হবে, কতদিনের মধ্যে সাক্ষী শেষ করতে হবে? কতদিনের মধ্যে মামলা শেষ করতে হবে? এর একটি নিদিষ্ট সময় থাকা দরকার। একটি মামলায় দুইপক্ষের আইনজীবীর দায় কতটুকু সেটা স্পষ্ট করে বলা দরকার। একজন আইনজীবী কত ফি নিবেন তার দায়িত্ব কী সেটাও স্পষ্ট হওয়া দরকার। দেশের বার কাউন্সিলে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করে প্রতিকার পেয়েছেন কেউ? আছে কোনো উদাহরণ?
লেখক : সাংবাদিক

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ব্রিটিশের আইন দিয়ে কতদিন চলবে?

আপডেট সময় : ০৯:৫০:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ জুলাই ২০২২

আশিক আহমেদ : দেশের প্রচালিত ভূমি আইন সময় উপযোগী করা দরকার। দেশের সব শেষ ভূমি আইন হয়েছে ১৯০৮ সালে। এখন ২০২২ সাল। প্রায় ১১৪ বছর আগের একটি আইন দিয়ে কী দেশের ভূমি দেওয়ানি বিচার চলে? একটি মামলা শেষ করতে চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগে। আবার কখনো কখনো সেটা ২০ থেকে ৩০ বছরও লেগে যায়। তাহলে একজন মানুষ প্রকৃত বিচার পেলো কোথায়? কিভাবে? আমার বাবা অথবা দাদা একটি মামলা করেছেন একটি ভূমি নিয়ে অথচ দেখা যাচ্ছে সেই মামলা আমার আমলেও শেষ হচ্ছে না।
তাহলে এই তিন প্রজন্ম বিচার পেল কোথায়? আমাদের আদালত বিচার প্রাথীদের কি দেয়? দেয় শুধু তারিখের পর তারিখ। দেখা যায়, একটি ভূমির রেকর্ড সংশোধনের জন্য কেউ মামলা করেছেন। ওই মামলা শেষ করতে কেন ৩০ থেকে ৪০ বছর লাগবে?
আবার সহকারী জজ আদালতে একটি মামলার রায় হলো। আবার ওই রায়ের বিরুদ্ধে একটি পক্ষ একই আদালতে ছানি মামলা করছেন, আবার ডিক্রি রদের মামলা করছেন। তাহলে আমার প্রশ্ন বিচারক দীর্ঘ চার থেকে পাঁচ বছর পরে একটি রায় দিলে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আবার ছানি অথবা ডিক্রি রদ করতে হবে? তাহলে কী আগের বিচারক ভুল বিচার করেছেন? আবার সেই রায়ের বিরুদ্ধে জজ আদালত, হাইকোর্ট, আপিল বিভাগ ও রিভিউ পর্যন্ত করছেন।
তাহলে একজন বিচারপ্রাথীর ভোগান্তিটা কোথায় সেটা নিয়ে কী কেউ একবারো ভেবে দেখেছেন? একটি মামলায় অকারণেই কেউ উচ্চ আদালতে গিয়ে মামলার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে আবেদন করছেন, আর আদালত এক বছরের জন্য সেই মামলায় স্থগিত আদেশ দিচ্ছেন। এতে যে একজন বিচারপ্রাথী কতটুকু ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সেটা কী একবার আদালত চিন্তা করে দেখেছেন?
দেখা যায়, মামলায় কোনো পক্ষ জেনেও আদালতে হাজির হননা। তাহলে সেই দোষ কী মামলার বাদি পক্ষের? আবার বলেন, আমরা সমন পাইনি, জানিনা, ইত্যাদি তাহলে সমন না পাওয়া অথবা মামলার বিষয়ে জানানোর দায়িত্ব কার? বিচার প্রাথীর? না আদালতের?
একটি দেওয়ানি মামলায় যখন ফাইল করা হয়, তখন দেখা যায় বাদি পক্ষের আইনজীবী সমন খাম, নোটিশ সব কিছু আরজির সঙ্গে দিয়ে দেন তাহলে ওই সমন জারি করাটা কার কাজ? আজ থেকে ১১৪ বছর আগের মানুষের মন মানুষিকতা আর এখনকার মানুষের মন মানুষিকতা কী এক?
আদালতে গেলে বিচারপ্রাথীকে আইনজীবী, আইনজীবীর সহকারী, আদালতের পিয়ন, পেশকার বিচারক থেকে শুরু করে সবার কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে হয়। বিচারপ্রাথীর কোনো কথা বলার সুযোগও থাকেনা। শুধু বলেন, কোর্ট উঠছে, সবাই সাবধান কেউ শব্দ করবেন না? তাহলে দিনের পর দিন ধরে যে তারিখ দিয়ে যাচ্ছে আদালত সেই কথাটি কে বলবে? আইনজীবীরা তো ইচ্ছে করেই চান না যে একটি মামলা ছোট ছোট তারিখ পরে দ্রুত নিস্পত্তি হোক। তাহলে বিচাপ্রার্থী কীভাবে ন্যায় বিচার পাবেন?
দেশের অধিকাংশ নি¤œ আদালতের অধিকাংশ জায়গায় নকলখানায় লোকজন নেই। ফটোকপি করে নকল তুলতে হয়। সেখানেও নির্ধারিত ফি দিয়েও নকল তোলা যায় না। আবার ফটোকপির নকল তুললেও তা স্পষ্ট করে পড়া যায় না।
একটি মামলায় কতদিনের মধ্যে সমন জারি করতে হবে, কতদিনের মধ্যে সাক্ষী শেষ করতে হবে? কতদিনের মধ্যে মামলা শেষ করতে হবে? এর একটি নিদিষ্ট সময় থাকা দরকার। একটি মামলায় দুইপক্ষের আইনজীবীর দায় কতটুকু সেটা স্পষ্ট করে বলা দরকার। একজন আইনজীবী কত ফি নিবেন তার দায়িত্ব কী সেটাও স্পষ্ট হওয়া দরকার। দেশের বার কাউন্সিলে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করে প্রতিকার পেয়েছেন কেউ? আছে কোনো উদাহরণ?
লেখক : সাংবাদিক