ঢাকা ১০:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে হুমকির মুখে কলেজ

  • আপডেট সময় : ১২:২১:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ অগাস্ট ২০২২
  • ৭৩ বার পড়া হয়েছে

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা : কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে যে কোনো মুহূর্তে বিলীন হতে পারে দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজটি। জেলার চিলমারী উপজেলার নদী বেষ্টিত নয়ারহাট ইউনিয়নের এ স্কুলটি এখন হুমকির মুখে। ইতোমধ্যে মূল ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলানো হলেও থামছে না ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন। স্থানীয়রা বলেন, প্রতিষ্ঠানটি রক্ষা করা না গেলে ওই ইউনিয়নের প্রায় ৭ শতাধিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানসহ ওই এলাকার কয়েকশ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়বে এবং সরকারি স্থাপনা বিলীন হবে। বিদ্যালয়টির জন্য একই এলাকায় জায়গা কিনে একটি টিনশেড ঘর করা হয়েছিল। কিন্তু আকস্মিক ঝড়ে সেটিও দুমড়ে-মুচড়ে যায়। নদী ভাঙনরোধে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও ভাঙনের ঠিক সামনেই ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলোন করে আসছেন কিছু অসাধু বালু ব্যাসায়ী। সম্প্রতি ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধির ফলে আরও একটি টিনশেড ভবনও নদীতে বিলীন হয়ে যায়।এখন ভাঙনের দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে প্রতিষ্ঠানের আরেকটি ভবন। ভাঙন ঠেকানো না গেলে যেকোনো সময় অবশিষ্ট সেই ভবনটিও নদীতে যে কোনো মুহূর্তে বিলীন হতে পারে। প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষাথীরা কক্ষের অভাবে ঠিক মতো হচ্ছে না পাঠদান কার্যক্রম। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে লেখাপড়ার মান। দেখা দিয়েছে বাল্যবিয়ের প্রবণতা ও শিক্ষাথী মো. আকিবুল ইসলাম, মো. রাসেল মিয়া জানান, গতবছর থেকে ভাঙছে আমাদের স্কুল অ্যান্ড কলেজটি। প্রতিবার বন্যার আগে এবং পরে ভাঙন দেখা দেয়। যার ফলে দুইটি ভবন নদীতে গেছে। এই জন্যে আমাদের ক্লাস করতে সমস্যা হচ্ছে। স্কুলসহ আশপাশের বাড়িগুলোকে রক্ষা করা জরুরি। নয়ারহাট ইউনিয়নের বাসিন্দা শিক্ষাথীর অভিভাবক মো. শাহ্আলম মিয়া বলেন, নদীতে ভবন ভেঙে যাওয়ার ফলে স্কুলটিতে ক্লাস ঠিকভাবে হচ্ছে না। যার ফলে দেখা যায় ছেলে-মেয়েরা স্কুল যেতে চায় না। যদি ভাঙন না ঠেকানো না যায় তাহলে এ বছরই একমাত্র ভবনটি বিলীন হয়ে যাবে। দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, এখানে ক্লাস নেয়া সমস্যা হচ্ছে। আর যেকোনো সময় এই ভবনটিও নদীতে চলে যেতে পারে আমি প্রতিষ্ঠানটির জন্য জায়গা কিনে ঘর বানাচ্ছি আগামী সপ্তাহের মধ্যে হয়তো সেখানে ক্লাস নেওয়া যাবে। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমান যে ভবনটি আছে সেটি নদীর ওপরে আছে। তবে জিও ব্যাগ ফেলানোয় কিছুটা কমেছে ভাঙন। প্রতিষ্ঠানটি স্থানন্তর করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এর আগে ওই ইউনিয়নেই জায়গা কিনে ক্লাসরুম করা হয়েছিল কিন্তু ঝড়ের কারণে সবকিছু ভেঙে যায়। এরপর আবারো সেখানে পাঠদানের জন্য ক্লাস রুম করা হচ্ছে। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে নতুন সেই টিনশেডে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবো। এখানে যদি আরো কিছু জিও ব্যাগ ফেলানো হতো তাহলে ভাঙন থাকতো না। তবে ভাঙন হুমকিতে থাকা সেই ভবনটি নিলামের বিষয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। নিলামের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কথা বলবো। নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, বর্তমানে ভাঙন কমেছে। তবে এরপর ভাঙন শুরু হলে ভবনটি রক্ষা করা যাবে না । সাথে ওই এলাকার বাড়িঘরও রক্ষা হবে না। তবে বিদ্যালয়ের ভবনটি যদি নিলামে না দেওয়া হয় তাহলে একটি কমিটি করে ভবনটি ভেঙে মালামালগুলো যেন ওই কমিটি কাছে রেখে বিদ্যালয়টি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া যেতে পারে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবু তাহের বলেন, আপাতত অবশিষ্ট ভবনটির জানালা খুলে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। নিলামের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠান রক্ষা করার চেষ্টা চলছে। ভাঙন ঠেকাতে ইতোমধ্যে জিও ব্যাগ ফেলানো হয়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি নির্দেশ না মেনে বালু উত্তোলন করে তাহলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দু’একদিনের মধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে হুমকির মুখে কলেজ

আপডেট সময় : ১২:২১:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ অগাস্ট ২০২২

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা : কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে যে কোনো মুহূর্তে বিলীন হতে পারে দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজটি। জেলার চিলমারী উপজেলার নদী বেষ্টিত নয়ারহাট ইউনিয়নের এ স্কুলটি এখন হুমকির মুখে। ইতোমধ্যে মূল ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলানো হলেও থামছে না ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন। স্থানীয়রা বলেন, প্রতিষ্ঠানটি রক্ষা করা না গেলে ওই ইউনিয়নের প্রায় ৭ শতাধিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানসহ ওই এলাকার কয়েকশ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়বে এবং সরকারি স্থাপনা বিলীন হবে। বিদ্যালয়টির জন্য একই এলাকায় জায়গা কিনে একটি টিনশেড ঘর করা হয়েছিল। কিন্তু আকস্মিক ঝড়ে সেটিও দুমড়ে-মুচড়ে যায়। নদী ভাঙনরোধে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও ভাঙনের ঠিক সামনেই ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলোন করে আসছেন কিছু অসাধু বালু ব্যাসায়ী। সম্প্রতি ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধির ফলে আরও একটি টিনশেড ভবনও নদীতে বিলীন হয়ে যায়।এখন ভাঙনের দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে প্রতিষ্ঠানের আরেকটি ভবন। ভাঙন ঠেকানো না গেলে যেকোনো সময় অবশিষ্ট সেই ভবনটিও নদীতে যে কোনো মুহূর্তে বিলীন হতে পারে। প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষাথীরা কক্ষের অভাবে ঠিক মতো হচ্ছে না পাঠদান কার্যক্রম। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে লেখাপড়ার মান। দেখা দিয়েছে বাল্যবিয়ের প্রবণতা ও শিক্ষাথী মো. আকিবুল ইসলাম, মো. রাসেল মিয়া জানান, গতবছর থেকে ভাঙছে আমাদের স্কুল অ্যান্ড কলেজটি। প্রতিবার বন্যার আগে এবং পরে ভাঙন দেখা দেয়। যার ফলে দুইটি ভবন নদীতে গেছে। এই জন্যে আমাদের ক্লাস করতে সমস্যা হচ্ছে। স্কুলসহ আশপাশের বাড়িগুলোকে রক্ষা করা জরুরি। নয়ারহাট ইউনিয়নের বাসিন্দা শিক্ষাথীর অভিভাবক মো. শাহ্আলম মিয়া বলেন, নদীতে ভবন ভেঙে যাওয়ার ফলে স্কুলটিতে ক্লাস ঠিকভাবে হচ্ছে না। যার ফলে দেখা যায় ছেলে-মেয়েরা স্কুল যেতে চায় না। যদি ভাঙন না ঠেকানো না যায় তাহলে এ বছরই একমাত্র ভবনটি বিলীন হয়ে যাবে। দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, এখানে ক্লাস নেয়া সমস্যা হচ্ছে। আর যেকোনো সময় এই ভবনটিও নদীতে চলে যেতে পারে আমি প্রতিষ্ঠানটির জন্য জায়গা কিনে ঘর বানাচ্ছি আগামী সপ্তাহের মধ্যে হয়তো সেখানে ক্লাস নেওয়া যাবে। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমান যে ভবনটি আছে সেটি নদীর ওপরে আছে। তবে জিও ব্যাগ ফেলানোয় কিছুটা কমেছে ভাঙন। প্রতিষ্ঠানটি স্থানন্তর করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এর আগে ওই ইউনিয়নেই জায়গা কিনে ক্লাসরুম করা হয়েছিল কিন্তু ঝড়ের কারণে সবকিছু ভেঙে যায়। এরপর আবারো সেখানে পাঠদানের জন্য ক্লাস রুম করা হচ্ছে। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে নতুন সেই টিনশেডে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবো। এখানে যদি আরো কিছু জিও ব্যাগ ফেলানো হতো তাহলে ভাঙন থাকতো না। তবে ভাঙন হুমকিতে থাকা সেই ভবনটি নিলামের বিষয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। নিলামের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কথা বলবো। নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, বর্তমানে ভাঙন কমেছে। তবে এরপর ভাঙন শুরু হলে ভবনটি রক্ষা করা যাবে না । সাথে ওই এলাকার বাড়িঘরও রক্ষা হবে না। তবে বিদ্যালয়ের ভবনটি যদি নিলামে না দেওয়া হয় তাহলে একটি কমিটি করে ভবনটি ভেঙে মালামালগুলো যেন ওই কমিটি কাছে রেখে বিদ্যালয়টি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া যেতে পারে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবু তাহের বলেন, আপাতত অবশিষ্ট ভবনটির জানালা খুলে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। নিলামের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠান রক্ষা করার চেষ্টা চলছে। ভাঙন ঠেকাতে ইতোমধ্যে জিও ব্যাগ ফেলানো হয়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি নির্দেশ না মেনে বালু উত্তোলন করে তাহলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দু’একদিনের মধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।