নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের শিল্প খাতে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে কারখানাকেন্দ্রিক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় শ্রমিকদের ব্যবহার করে পরিস্থিতি অস্থিশীল করার চেষ্টা করছে একটি মহল। এতে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন ও শৃঙ্খলা। দেশের রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গার্মেন্টস শিল্পমালিক ও শ্রমিক নেতারা।
জানা গেছে, অব্যাহত শ্রমিক আন্দোলনের মুখে সাভার ও আশুলিয়ায় বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে মালিকপক্ষ। এ নিয়ে ওই এলাকায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জেও। গতকাল রোববার বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পলাশবাড়ী এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। অন্যদিকে গতকাল চাকরি স্থায়ীকরণ, বকেয়া বেতন পরিশোধ ও পুরুষ শ্রমিক নিয়োগের দাবিতে গাজীপুরে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। এদিন সকাল থেকে চান্দনা চৌরাস্তা, ভোগরা, নাওজোর, কোনাবাড়ী, বোর্ডবাজার ও টঙ্গীতে বিক্ষোভ করেন তারা।
শ্রমিকরা জানান, গাজীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় শুধু নারী শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন পুরুষ শ্রমিকরা। তাই কারখানাগুলোতে পুরুষ শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে সকাল থেকেই বিভিন্ন কারখানার চাকরিবঞ্চিত পুরুষরা সড়কে নেমে আসেন।
গাজীপুরের গাছা থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়।
এদিকে টঙ্গী এলাকার বাটা সু কোম্পানির শ্রমিকরা চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এছাড়া গাজীপুর চন্দনা চৌরাস্তা ও ভোগরা বাইপাস এলাকায় পোশাক কারখানার পুরুষ শ্রমিকরা তাদের দাবি জানিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। অন্যদিকে ১০ দফা দাবিতে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর শ্রমিকরা। গতকাল সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তারা নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের মোজারমেইল এলাকায় অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। এ সময় মহাসড়কটিতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
ওই কারখানার এক শ্রমিক বলেন, এলাকায় প্রভাব বিস্তার করার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের গ্রুপ থাকে। ক্ষমতার পালাবদলের পর তারা নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার জন্য শ্রমিকদের ব্যবহার করছেন। দেশে এটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে। এতদিন আওয়ামী লীগের লোকজন কাজ করতেন, এখন পরিবর্তনের পর সেটি অন্য কেউ করবেন। যেসব এলাকায় কারখানা আছে, সেখানকার লোকাল অনেক ব্যক্তি থাকেন যারা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। যেমনÑ ঝুটের ব্যবসা, খাবারসহ অন্য সামগ্রী সরবরাহ। তিনি বলেন, যেহেতু রাজনৈতিক একটা পরিবর্তন এসেছে এবং এতদিন যারা বঞ্চিত ছিলেন, তারা নতুন করে তাদের অবস্থা জানান দিতে চাচ্ছেন। ফলে শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়ে এ ধরনের আন্দোলনের ডাক দিচ্ছেন। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ গার্মেন্টস শিল্প দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় বিদেশি মুদ্রা জোগানদাতা। এখানে সমস্যা হলে অর্থনীতি সমস্যায় পড়বে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কারা এর সঙ্গে জড়িত এবং তাদের দাবি-দাওয়া যদি যৌক্তিক হয়, তাহলে এর সমাধান করা। একই সঙ্গে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, বর্তমানে যে ধরনের আন্দোলন চলছে, আমার মতে তা শ্রমিক আন্দোলন নয়। কারণ এই মুহূর্তে শ্রমিকদের তেমন কোনো আন্দোলন দাবি-দাওয়া নেই। যদি কোনো দাবি থাকেও তাহলে সেটি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। বর্তমান অবস্থায় কোনোভাবেই আন্দোলন করা শ্রমিক এবং শিল্পের জন্য সমীচীন নয়। অন্য কেউ যেন কোনো ধরনের সুযোগ না নিতে পারে, এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসনকে ত্বরিত গতিতে পদক্ষেপ নিয়ে এর সমাধান করতে হবে।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ ১-এর এসপি মোহাম্মদ সারোয়ার আলম জানান, এ মুহূর্তে সেখানে জিএবি লিমিটেডসহ স্নোটেক্স, স্টারলিং গ্রুপ, নাসা অ্যাপারেলস ও একমি অ্যাগ্রোভেট অ্যান্ড কনজ্যুমারস লিমিটেডের কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছেন।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহাম্মেদ বলেন, শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।
শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়ে কথা বলেন শ্রমিক নেতা ও সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার। তিনি বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে শ্রমিকের কিছু যৌক্তিক দাবি থাকে এবং সেগুলো পূরণ করা উচিত। কিন্তু এই সময়ের বিষয় (আন্দোলন) ক্লিয়ার নয়। আমি মনে করি, দাবি থাকলে সেটি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। তিনি বলেন, অনেক জায়গায়ই দেখা যায়, স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে শ্রমিকদের সম্পর্ক থাকে, তাহলে তারা শ্রমিকদের ভুলভাবে ব্যবহার করছে কি না সেটি দেখতে হবে। যেহেতু বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ, অনেকে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের সেক্টর যেন ধ্বংস না হয়, শ্রমিকরা যেন বেকার না হয়, এদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে এবং সত্যটা সামনে এনে পরিস্থিতি মোকাবিলা ও সমাধান করতে হবে।
এ বিষয়ে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিজিএমইএর সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহিল রাকিব বলেন, এ আন্দোলন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ক্ষমতার লড়াই। এর একটা হলো ঝুটের ব্যবসা দখল, অন্যটি আওয়ামী লীগের শোডাউন দেখানো যে তারা মাঠে আছে। এখানে সাধারণ শ্রমিকদের তেমন কোনো দাবি-দাওয়া নেই। তবে এক জায়গায় বলা হচ্ছে শ্রমিক ছেলে-মেয়ে ফিফটি ফিফটি করতে হবে। আন্দোলনকারীদের একটা অংশ কারখানায় গিয়ে বলছেন ছেলেরা বসে আছে আর মেয়েদের কাজ দিচ্ছেন, এটা হতে পারে না। কিন্তু তারা জানেনই না যে, মেয়েদের হাতের টেইলারিং কাজ পুরুষরা করতে পারবেন না। তিনি বলেন, আন্দোলনে দুটি গ্রুপ আসছে। এর একটি হলো যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে তারা আন্দোলনে আসছে, অন্য গ্রুপটি হলো রাজনৈতিকভাবে মোটিভেটেট হয়ে আসছে। আমার কারখানায়ও দেখেছি কিছু লোক আসছে যারা হেলমেট পরা, লুঙ্গি পরা, স্যান্ডো গেঞ্জি পরা। কিশোর গ্যাং টাইপের কিছু লোক দেখা গেছে। লোকাল নেতার আহ্বানে তারা এসেছে, প্রভাব বিস্তার করতে চান তারা।
সাভারে ৩৫টি কারখানা ছুটি ঘোষণা
ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, হাজিরা বোনাস প্রদান, শ্রমিক নিয়োগ, আন্দোলনকারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়াসহ ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল সকালে কারখানার শ্রমিক ও চাকরিপ্রত্যাশীরা এ কর্মসূচি শুরু করেন। এ অবস্থায় আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকার অন্তত ৩৫টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সকাল ৯টার দিকে পলাশবাড়ী এলাকায় নবীনগর থেকে চন্দ্রাগামী মহাসড়কের এক পাশে বিক্ষোভ শুরু করেন গিল্ডান বাংলাদেশ নামের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এছাড়া ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। নরসিংহপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা আবদুল্লাহপুর থেকে বাইপাইলের সড়কে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। তারা শ্রমিকদের আশ্বস্ত করে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়ক থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে দেন এবং যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে আশুলিয়ার ডিইপিজেড সামনের নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক অবরোধ করে রাখেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।
গিল্ডান বাংলাদেশের একজন শ্রমিক জানান, তারা ১১ দফা দাবি জানিয়েছেন। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে যারা আন্দোলন করছেন, তাদের যেন চাকুরিচ্যুত করা না হয়; যারা চাকরি করছেন, তাদের অন্তত ১০ বছরের চাকরির নিশ্চয়তা; হাজিরা বোনাস ৩০০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকা করতে হবে; প্রমোশনের ক্ষেত্রে চাকরির বয়স কমপক্ষে ৩ বছর ও যোগ্যতা অনুসারে হতে হবে।
এদিকে গিল্ডান বাংলাদেশ কারখানার সামনের ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে, ‘সাম্প্রতিক অনাকাক্সিক্ষত ও অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণে বাংলাদেশে আমাদের (গিল্ডান বাংলাদেশ) সকল কারখানা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।’
সাভার ও ধামরাইয়ে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ
পার্ল গার্মেন্টস কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ ফটকে গতকাল ‘কারখানা সবেতন ছুটি থাকবে’ নোটিশ টানিয়ে দেয়।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ ১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, হাজিরা বোনাসসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। ডিইপিজেডের সামনে চাকরির দাবিতে বিক্ষোভ করে সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ৩৫ থেকে ৪০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে।
শিল্প-কারখানায় যৌথ অভিযান
দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল অস্থিশীল করার চেষ্টা করছে একটি মহল। এ অবস্থায় তৈরি পোশাকশিল্পের নিরাপত্তায় সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরে আজ রাত থেকে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও শিল্পাঞ্চল পুলিশের যৌথ অভিযান শুরুর নির্দেশনা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল বিকেলে সচিবালয়ে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সঙ্গে বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন তিনি। বৈঠক শেষে বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
জানা গেছে, অব্যাহত শ্রমিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিত বিশৃঙ্খলায় জড়িত বহিরাগতদের আজ (গতকাল) রাতের মধ্যে আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেন। এছাড়া অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে আজ মঙ্গলবার থেকে সব কারখানা চালু রাখতে মালিকদের অনুরোধ করেন।
ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ শ্রমিকদের
বিকেএমইএর সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, আমরা বিজিএম ও বিকিএমএর পক্ষ থেকে আজ (গতকাল) শ্রম ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে আমাদের বিষয়গুলো তুলে ধরেছি। শ্রম উপদেষ্টা এ বিষয়ে আমাদের বলেছেন, যৌক্তিক দাবি হলে সেগুলো মেনে নেওয়া হবে। কিন্তু কোনো পক্ষ যদি অন্য কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এই আন্দোলনের পেছন থেকে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং খতিয়ে দেখা হবে। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আমাদের নিশ্চিত করেছেন, যারা এর সঙ্গে জড়িত এবং অন্যায়ভাবে এ ধরনের আন্দোলনকে উসকে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। আজ (গতকাল) থেকেই পুলিশ ও যৌথ বাহিনী শিল্পাঞ্চল এলাকায় মোতায়ন করা হবে। তারা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবেন।
সচিবালয়ে বৈঠকে বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট রফিকুল ইসলাম, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহিল রাকিব, বিকেএমইএর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম এবং বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান উপস্থিত ছিলেন।
টঙ্গীতে বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের কারণে ১১ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন সময়ে ওইসব কারখানা থেকে যারা চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন তারা এ ভাঙচুরে অংশ নেন বলে অভিযোগ শ্রমিক ও কারখানার কর্মকর্তাদের।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকালে কাজে যোগ দেন টঙ্গীর বিসিক এলাকার সব পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এরপর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চাকরিচ্যুত কয়েকশ শ্রমিক কয়েক ধাপে ১১টি পোশাক কারখানার গেটে অবস্থান নেন। তারা কর্মরত শ্রমিকদের আন্দোলনে যোগ দিতে আহ্বান জানান। এ সময় কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা তাদের ডাকে সাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা ওই ১১টি কারখানায় ভাঙচুর চালান। নিজ কারখানার ভাঙচুর ঠেকানের চেষ্টা করেন শ্রমিকরা। এতে চাকরিচ্যুতদের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে ভাঙচুর এড়াতে ওই কারখানাগুলোতে ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এসময় চাকরিচ্যুত অন্তত দুজন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া যায়।
ছুটি ঘোষণা করা কারখানাগুলো হলো টঙ্গীর বিসিক এলাকার টসি নিট ফেব্রিক্স লিমিটেড, ন্যাশনাল কম্পোজিট লিমিটেড, পেট্রিয়ট ইকো অ্যাপারেলস লিমিটেড, বেলিসিমা অ্যাপারেলস লিমিটেড, জিনস অ্যান্ড পোলো লিমিটেড, টেঙ্গন গার্মেন্টস লিমিটেড, রেডিসন গার্মেন্টস লিমিটেড, সুমি অ্যাপারেলস লিমিটেড, আরবিএস গার্মেন্টস লিমিটেড, গার্ডেন টেক্সটাইল লিমিটেড ও তাজকিয়া অ্যাপারেলস লিমিটেড।
এদিকে দুপুর ২টার দিকে কারখানাগুলোতে ছুটি ঘোষণা করলে চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা টঙ্গীর বিসিক এলাকার পানির ট্যাঙ্কির শাখা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। বেলা ৩টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান নেন তারা।
চাকরিচ্যুত শ্রমিক মো. রমজান হোসেন বলেন, কারখানাগুলোতে চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। কারখানায় থাকা শ্রমিকদের আমাদের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানালে তারা যোগ দেয়নি। ফলে আমরা সড়কে অবস্থান করি। দাবি না মেনে নিলে কোনো শ্রমিকদের গার্মেন্টসে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
তাজকিয়া অ্যাপারেলস লিমিটেডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (মানবসম্পদ) হেমায়েত উদ্দিন বলেন, সকালে বহিরাগতরা কারখানার সামনে জড়ো হয়ে প্রধান ফটকে ভাঙচুর চালায়। ভাঙচুর ও ক্ষতি এড়াতে ছুটি ঘোষণা করেছি।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মোশারফ হোসেন বলেন, চাকরিতে বৈষম্য ও পুরুষ শ্রমিকদের নিয়োগে অগ্রাধিকারের দাবি জানিয়ে কয়েকশ শ্রমিক ১১টি কারখানায় ভাঙচুর চালায়। বিক্ষুব্ধরা টঙ্গীর বিসিকের একটি সড়কে অবস্থান নেন। তাদের বুঝিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।