হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : হবিগঞ্জ-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হকের (ব্যারিস্টার সুমন) সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়ে দলীয় সভায় ‘লাঞ্ছিত’ হয়েছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। গত রোববার রাতে চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে। পরে জ্যেষ্ঠ নেতারা তাঁকে উদ্ধার করেন। এ সময় সায়েদুল হক মঞ্চেই ছিলেন।
চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগ এই মতবিনিময় ও বর্ধিত সভার আয়োজন করেছিল। উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আকবর হোসেনের সভাপতিত্বে গতকাল বিকেল ৪টায় এ সভা শুরু হয়। চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক। ‘লাঞ্ছিত’ ওই নেতা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক সাথী মুক্তাদির চৌধুরী।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কোনো পদে না থাকার পরও সায়েদুল হককে প্রধান অতিথি করা নিয়ে সভায় আপত্তি তোলেন দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে সভায় প্রথমে হট্টগোল হয়। একপর্যায়ে মঞ্চে উঠে সায়েদুল হকের সমালোচনা করে বক্তব্য শুরু করলে মুক্তাদির চৌধুরী ‘লাঞ্ছনার’ শিকার হন।
মুক্তাদির চৌধুরী গতকাল সোমবার দুপুরে বলেন, তিনি সভায় সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রজব আলীর নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছে। তাঁর গায়ে হাত তোলা হয়েছে। রজব আলী সংসদ নির্বাচনে সায়েদুল হকের পক্ষে কাজ করেছিলেন বলে জানান মুক্তাদির। তবে চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আলী বলেন, মুক্তাদির চৌধুরীকে কেউ মারধর করেননি। তবে তেড়ে গেছেন অনেকেই। যাঁরা তেড়ে গেছেন, তাঁরা আওয়ামী লীগের পদধারী কেউ না। তাঁরা ব্যারিস্টার সুমনের সমর্থক ও কর্মী। তিনিসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা তাৎক্ষণিক বিষয়টি সামাল দিতে পেরেছেন বলে পরিস্থিতি বড় আকার ধারণ করেনি। এ বিষয়ে সায়েদুল হকের সঙ্গে কথা বলতে একটি সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। পরে তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীর কাছে ফোন করা হলে তিনিও ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠিয়েও উত্তর পাওয়া যায়নি।
সভায় উপস্থিত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভা শুরুর দিকে মুক্তাদির চৌধুরী দাঁড়িয়ে সভাপতির উদ্দেশে বলেন, ‘আজকের বর্ধিত সভায় সংসদ সদস্যের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের যে মতবিনিময় সভার আহ্বান করা হয়েছে, সেটি দলীয় কোনো সভার সিদ্ধান্ত ছিল কি না? ব্যারিস্টার সুমনকে দল (আওয়ামী লীগ) গ্রহণ করেছে কি না? না হয়ে থাকলে তাঁর সঙ্গে মতবিনিময় কেন?’
সাংস্কৃতিক সম্পাদকের ওই প্রশ্নের পরপরই নেতা-কর্মীরা হট্টগোল শুরু করেন। হট্টগোল শুরুর পর সভাপতি আকবর হোসেন হাতে মাইক নিয়ে নেতা-কর্মীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। জেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তে সভা আহ্বান করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এ ছাড়া সংসদ সদস্য নিজে সবার সঙ্গে মতবিনিময় করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তখনো নেতা-কর্মীরা হট্টগোল থামাননি। একপর্যায়ে সংসদ সদস্য নিজেই মাইক নিয়ে নেতা-কর্মীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে হট্টগোল থামলে সভা শুরু হয়। তবে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সায়েদুল হকের বক্তব্যের পর পুনরায় শুরু হয় হট্টগোল।
সায়েদুল হক তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের নেত্রী যদি ব্যারিস্টার সুমনকে দলে জায়গা দেন বা স্থান করে দেন, তাহলে স্থানীয় নেতা মুক্তাদির চৌধুরীর মতো লোকজনের কোনো ক্ষমতা নেই তাঁকে আটকানোর। তিনি নির্বাচন করায় আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হিসেবে সারা বিশ্বকে দেখাতে পেরেছে। নাহলে অনেক প্রশ্ন উঠত।
সায়েদুল হকের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতা সাথী মুক্তাদির চৌধুরী মঞ্চে উঠে বলেন, ‘দলের নেত্রী যদি সিদ্ধান্ত দেন যে সায়েদুল হক সুমন সাহেবকে নিয়ে চুনারুঘাট আওয়ামী লীগের চলতে হবে, নতুবা আওয়ামী লীগ কানা হয়ে যাবে, তাহলে আমি তাঁদের সঙ্গে চলতে রাজি। আবদুল কাদির লস্কর (উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান) থাকার পরও, মো. আবু তাহের (উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক) থাকার পরও যদি চুনারুঘাট আওয়ামী লীগ কানা হয়ে যায় সায়েদুল হক সুমন ছাড়া; তাহলে সুমন সাহেবকে দরকার, এই স্বতন্ত্র এমপি মহোদয়কে দরকার।’
এরপরই সভায় উপস্থিত একদল নেতা-কর্মী মুক্তাদির চৌধুরীর দিকে তেড়ে যান। তাঁরা মাইক বন্ধ করে দিয়ে মুক্তাদির চৌধুরীকে লাঞ্ছিত করেন। পরে মঞ্চে উপস্থিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল কাদির লস্কর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তাহেরসহ অন্য নেতারা তাঁকে উদ্ধার করেন।