ক্রীড়া ডেস্ক: ৫০ রানে পতন শেষ ৯ উইকেটের। ১১ রানে শেষ ৬টি। শেষ ৬ ব্যাটার পারেননি দুই অঙ্ক ছুঁতে। শেষ ৫ ব্যাটার মিলে রান ১! বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতার খতিয়ান এসব। এই দলের বরাবরের দুর্বলতা ব্যাটিং। এই সিরিজের আগের দুই ম্যাচও ব্যতিক্রম নয়। তবু টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া দলের কাছে কিছুটা লড়াইয়ের আশা তো ছিলই। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটিতেই ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বাজে প্রদর্শনী মেলে ধরলেন নিগার সুলতানারা। খুব কাছাকাছি গিয়েও তাই চুরমার হয়ে গেল স্বপ্ন। ম্যাচ জিতলেই সরাসরি বিশ্বকাপে, এই সমীকরণে খেলতে নেমে বাংলাদেশ হেরে গেল বাজেভাবে। শেষ ওয়ানডেতে ৮ উইকেটের জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশ সময় শনিবার ভোরে শেষ হওয়া ম্যাচে সেন্ট কিটসে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ১১৮ রানেই।
ফারজানা হক ও শারমিন আক্তারের জুটির সময় এক পর্যায়ে দলের রান ছিল ১ উকেটে ৬৮। এরপর নামে ধস। শেষ দিকে তো হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ইনিংস। সহজ রান তাড়ায় ক্যারিবিয়ানরা জিতে যায় ২৭.৩ ওভারেই। স্বাগতিক ভারতসহ আইসিসি উইমেন’স চ্যাম্পিয়নশিপের শীর্ষ ছয় দল সরাসরি খেলবে এবারের ওয়ানডে বিশ্বকাপে। এই ম্যাচটি জিতলে পাঁচ নম্বরে থেকে বিশ্বকাপ খেলতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু হেরে যাওয়ায় তারা রয়ে গেল সাত নম্বরে। সমান (২১) পয়েন্ট নিয়েও জয় একটি বেশি থাকায় সরাসরি বিশ্বকাপে জায়গা করে নিল নিউ জিল্যান্ড। নিগার সুলতানার দলকে এখন বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে হলে উতরাতে হবে বাছাইপর্ব। এই সিরিজ জিতলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাছাইয়ে খেলা নিশ্চিত ছিল আগেই।
সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে ১৮৪ রানের পুঁজি নিয়েও ৬০ রানের জয় ধরা দিয়েছিল দারুণ বোলিং পারফরম্যান্সে। সেটিই হয়তো ভাবনায় ছিল বাংলাদেশ অধিনায়কের। কিন্তু তিনি ও অন্য ব্যাটাররা এবার বোলারদের লড়াইয়ের রসদই দিতে পারলেন না। দ্বিতীয় ওভারেই মুর্শিদা খাতুনকে (১) হারায় বাংলাদেশ। চেরি-অ্যান ফ্রেজারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করে কিপারের হাতে ধরা পড়েন বাঁহাতি ওপেনার। বড় ভরসা ফারজানা হক ও সাম্প্রতিক সময়ে সেরা ব্যাটার শারমিন আক্তার এরপর দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ফারজানা স্বভাবজাত ব্যাটিংয়ে উইকেট আঁকড়ে রাখেন।
শারমিন উইকেট আগলে রাখার পাশাপাশি খেলেন দারুণ কিছু শট। তবে ১০ ওভারের পর দুজনের ব্যাট থেকেই বাউন্ডারি উধাও হয়ে যায়। ক্যারিবিয়ানদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে রানই বের করতে পারছিলেন না থিতু হওয়া দুই ব্যাটারও। সেই জাল ছিঁড়ে আর বের হতে পারেননি কেউই। ২০তম ওভারে লেগ স্পিনার অ্যাফি ফ্লেচার এলবিডব্লিউ করে দেন ফারজানাকে। ৬৫ বল খেলে কেবল একটি চারে ২২ রান করতে পারেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।
অধিনায়ক নিগার নামার পরও রানের গতি বাড়েনি। একটু পর বাউন্ডারির চেষ্টাতেই নিজের পতন ডেকে আনেন শারমনি। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক হেইলি ম্যাথিউসের ঝুলিয়ে দেওয়া বলে ক্রিজে ছেড়ে বেরিয়ে ক্যাচ দেন তিনি মিড অফে। পাঁচটি চারে ৫৮ বলে ৩৭ রান আসে তার ব্যাট থেকে। আগের ম্যাচে এরকম অবস্থা থেকেই দলকে টেনে নিয়ে ফিফটি করেছিলেন নিগার। কিন্তু অধিনায়কও ব্যর্থ এ দিন (২৯ বলে ১১)। এরপর তো একের পর এক ব্যাটারের আসা-যাওয়ার মিছিল। অভিজ্ঞ ফাহিমা খাতুন (৭) পারেননি দলের প্রয়োজনে দাঁড়াতে। আগের দুই ম্যাচে ২৯ ও ২১ রান করা স্বর্ণা আক্তার এবার ফেরেন শূন্যতে।
লোয়ার অর্ডারে যাদের ব্যাটে একটু তাকিয়ে থাকে দল, সেই রাবেয়া খান ও নাহিদা আক্তারও কাটা পড়েন শূন্যতে। লেগ স্পিনার ফ্লেচারের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের পর বাঁহাতি স্পিনার জাইদা জেমস ও অফ স্পিনার কারিশ্মা রামহারাক মিলে বিধ্বস্ত করেন বাংলাদেশের ব্যাটিং। আগের ম্যাচে ক্যারিয়ারে প্রথমবার চার উইকেট (৪/৩৩) পাওয়া রামহারাক এবার নিজেকে আরেকবার ছাড়িয়ে যান (৪/১২)। ম্যাচের ফয়সালা একরকম হয়ে যায় প্রথম ইনিংসেই। ১১৮ রানের পুঁজি নিয়ে বাংলাদেশের বোলাররাও পারেননি বেশি লড়াই করতে। প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান হেইলি ম্যাথিউসকে এবার ২২ রানে ফেরান নাহিদা। আরেক ওপেনার কিয়ানা জোসেফ ৩৯ রান করে আউটহন মারুফা আক্তারের বলে। বাংলাদেশের পালা শেষ সেখানেই। শিমেইন ক্যাম্পবেলকে নিয়ে দ্রুতই ম্যাচ শেষ করে দেন ডেন্ড্রা ডটিন। ৪৭ বলে ২২ রানে অপরাজিত থকেন ক্যাম্পবেল, অভিজ্ঞ ডটিন ১৯ বলে করেন ৩৩। বিশ্বকাপে খেলতে হলে এই দুই দলকেই লড়তে হবে বাছাইয়ে। এই বছর অগাস্ট-সেপ্টেম্বরে বিশ্বকাপের আগে ভারতেই হবে বাছাইপর্ব। বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়া উইমেন’স চ্যাম্পিয়নশিপের তলানির অন্য দুই দল পাকিস্তান ও আয়ারল্যান্ড থাকবে বাছাইয়ে। সঙ্গে থাকবে র্যাঙ্কিং থেকে আসা থাইল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড। ছয় দলের বাছাইপর্ব থেকে দুই দল খেলবে বিশ্বকাপে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৪৩.৫ ওভারে ১১৮ (ফারজানা ২২, মুর্শিদা ১, শারমিন ৩৭, নিগার ১১, সোবহানা ২৫, ফাহিমা ৭, স্বর্ণা ০, রাবেয়া ০, নাহিদা ১, মারুফা ০*, তৃষ্ণা ০; ডটিন ৫-০-১৬-০, ফ্রেজার ৪-০-২৪-১, অ্যালেইন ১-০-৯-০, ম্যাথিউস ১০-৩-১৯-১, ফ্লেচার ১০-০-২২-১, জাইদা ৭-২-১৫-২, রামহারাক ৬.৫-০-১২-৪।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৭.৩ ওভারে ১২২/২ (ম্যাথিউস ২২, জোসেফ ৩৯, ক্যাম্পবেল ২৫*, ডটিন ৩৯*; মারুফা ৭-১-৩৯-১, তৃষ্ণা ৩-০-১৩-০, নাহিদা ৬-০-২৫-১, ফাহিমা ৪-০-১৫-০, রাবেয়া ৭-০-২২-০, সোবহানা ০.৩-০-৭-০)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২-১ ব্যবধানে জয়ী।
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: কারিশ্মা রামহারাক।
প্লেয়ার অব দা সিরিজ: কারশ্মা রামহারাক।