ঢাকা ০৪:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫

ব্যবসায় ‘লাল বাতি’, বিপদগ্রস্ত চাকরিজীবীরাও

  • আপডেট সময় : ১২:২৪:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ জুলাই ২০২৪
  • ৭৫ বার পড়া হয়েছে

গাজীপুর সংবাদদাতা : কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে প্রায় দুই শতাধিক ছাত্র-জনতার মৃত্যু, সংহিসতার প্রভাব পড়েছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে। কমে গেছে বেচা-কেনা। কারফিউয়ের কারণেও ক্ষতির মুখে পড়েছে গাজীপুরের ব্যবসায়ীরা। শুধু ব্যবসায়ীরাই নয়, চাকরিজীবীরাও হয়েছেন অনেকটা বিপদগ্রস্ত। গতকাল বুধবার দুপুরে গাজীপুরে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এখনও আতঙ্কে সময় পার করছেন ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীরা। মার্কেটগুলোতেও নেই ক্রেতার চাপ, বিক্রি কমে যাওয়ার লোকসানের আশঙ্কা করছেন অনেকে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া বিক্রি বন্ধ হয়েছে অন্যান্য পণ্যের। যার ফলে ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে, বলছেন ব্যবসায় ‘লালবাতি’। কথা হয় অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিএসটি টেকনোলজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রিয়াজুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, কোটা আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় তার ব্যবসায় প্রায় ২০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির দায়ভার কেউই নেবে না। তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে, বিদ্যুৎ বিল দিতে হবে কিন্তু আমি তো ব্যবসা করতে পারিনি। আমার প্রতিষ্ঠানটি অনলাইনভিত্তিক। ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার ফলে আমার বিক্রিও বন্ধ হয়ে যায়।’
সরকার ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট সংযোগ স্বাভাবিক করার ব্যবস্থা করবে এমন প্রত্যাশা এই অনলাইন ব্যসায়ীর। তিনি বলেন, ‘ঢাকার বাইরের জেলা থেকে কিছু অর্ডার থাকলেও ক্ষতির শঙ্কায় তা গাড়িতে ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে ক্রেতারা অসন্তোষ হওয়ার ফলে প্রতিষ্ঠানের সুনামও ক্ষুন্ন হচ্ছে।’
টঙ্গীর কলেজ গেট এলাকার ‘হাড়ির বাড়ি’ রেস্টুরেন্টের মালিক রনি হোসেন। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে বেচাকেনা বলতে গেলে শূন্যের কোঠায় নেমেছে। এখানে অধিকাংশ সময় রাস্তা অবরোধ, ভয়েও বাসা থেকে বের হচ্ছেন না অনেকে। যার ফলে আমার রেস্টুরেন্ট বন্ধ ছিলো কয়েকদিন। এখন চালু করতে পারলেও নির্দিষ্ট সময়ে চালাতে হচ্ছে। কাস্টমার কমে যাওয়ার বিক্রিও কমে গেছে। অনেকসময় খাবারও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সেগুলো ফেলে দিতে হচ্ছে। এতে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমার এই ব্যবসা ছাড়া আয়ের কোনো উৎস নেই। আমার রেস্টুরেন্টে যারা কাজ করছে তাদের বেতন দিবো কিভাবে সেটা নিয়ে এখন চিন্তায় আছি।’
পূবাইল হারবাইদ থেকে উত্তরায় এসে অফিস করেন সাইফুল ইসলাম। তার সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। সাইফুল ইসলাম বলেন,‘ আমি চাকরি করি। কোটা আন্দোলনে কারফিউ থাকায় গণপরিবহন বন্ধ ছিলো। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে অফিসে যেতে হয়েছে। কিন্তু এই অতিরিক্ত খরচ তো অফিস দিবে না, অফিসে না গেলে বেতন থেকে মজুরি কাটা যাবে। আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। অফিসে যাওয়ার এবং আসা সবসময়ই আতঙ্কে থাকি কখন ঝামেলায় পড়ে যাই।’
টঙ্গী বাজারে পোশাক বিক্রেতা সোবাহান করিম বলেন, ‘আগে প্রতিদিন মিনিমাম পাঁচ হাজার টাকা বিক্রি হতো। গত কয়েকদিনে পাঁচ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারিনি। কোটা আন্দোলন সেই সাথে কারফিউর কারণে ক্রেতা একেবারে নেই বললেই চলে। বিক্রি কমেছে। যে পরিস্থিতি তাতে ব্যবসায় লালবাতি জ্বলতে বাকি নেই।’ শুধু রিয়াজুল ইসলাম ও রনি হোসেনই নয়। এমন বিপাকে পড়েছেন হাজারো ব্যবসায়ী। তারা বলেন, চলমান আন্দোলন ও কারফিউতে বিক্রি একেবারেই কমে গেছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে খুবই বাজে অবস্থা যাচ্ছে। ক্রেতা একেবারে নেই বললেই চলে। কয়েকদিন দোকান পুরোপুরি বন্ধ ছিল, তার আগে আন্দোলনের কারণে রাস্তা বন্ধ ছিল। এই সময়ে কাস্টমার একেবারেই ছিল না। ঢাকার সন্নিকটে হওয়ায় গাজীপুরে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্কও বেশি। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না অনেকেই। এতে জনজীবন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে।

 

 

 

 

 

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ব্যবসায় ‘লাল বাতি’, বিপদগ্রস্ত চাকরিজীবীরাও

আপডেট সময় : ১২:২৪:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ জুলাই ২০২৪

গাজীপুর সংবাদদাতা : কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে প্রায় দুই শতাধিক ছাত্র-জনতার মৃত্যু, সংহিসতার প্রভাব পড়েছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে। কমে গেছে বেচা-কেনা। কারফিউয়ের কারণেও ক্ষতির মুখে পড়েছে গাজীপুরের ব্যবসায়ীরা। শুধু ব্যবসায়ীরাই নয়, চাকরিজীবীরাও হয়েছেন অনেকটা বিপদগ্রস্ত। গতকাল বুধবার দুপুরে গাজীপুরে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এখনও আতঙ্কে সময় পার করছেন ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীরা। মার্কেটগুলোতেও নেই ক্রেতার চাপ, বিক্রি কমে যাওয়ার লোকসানের আশঙ্কা করছেন অনেকে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া বিক্রি বন্ধ হয়েছে অন্যান্য পণ্যের। যার ফলে ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে, বলছেন ব্যবসায় ‘লালবাতি’। কথা হয় অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিএসটি টেকনোলজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রিয়াজুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, কোটা আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় তার ব্যবসায় প্রায় ২০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির দায়ভার কেউই নেবে না। তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে, বিদ্যুৎ বিল দিতে হবে কিন্তু আমি তো ব্যবসা করতে পারিনি। আমার প্রতিষ্ঠানটি অনলাইনভিত্তিক। ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার ফলে আমার বিক্রিও বন্ধ হয়ে যায়।’
সরকার ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট সংযোগ স্বাভাবিক করার ব্যবস্থা করবে এমন প্রত্যাশা এই অনলাইন ব্যসায়ীর। তিনি বলেন, ‘ঢাকার বাইরের জেলা থেকে কিছু অর্ডার থাকলেও ক্ষতির শঙ্কায় তা গাড়িতে ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে ক্রেতারা অসন্তোষ হওয়ার ফলে প্রতিষ্ঠানের সুনামও ক্ষুন্ন হচ্ছে।’
টঙ্গীর কলেজ গেট এলাকার ‘হাড়ির বাড়ি’ রেস্টুরেন্টের মালিক রনি হোসেন। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে বেচাকেনা বলতে গেলে শূন্যের কোঠায় নেমেছে। এখানে অধিকাংশ সময় রাস্তা অবরোধ, ভয়েও বাসা থেকে বের হচ্ছেন না অনেকে। যার ফলে আমার রেস্টুরেন্ট বন্ধ ছিলো কয়েকদিন। এখন চালু করতে পারলেও নির্দিষ্ট সময়ে চালাতে হচ্ছে। কাস্টমার কমে যাওয়ার বিক্রিও কমে গেছে। অনেকসময় খাবারও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সেগুলো ফেলে দিতে হচ্ছে। এতে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমার এই ব্যবসা ছাড়া আয়ের কোনো উৎস নেই। আমার রেস্টুরেন্টে যারা কাজ করছে তাদের বেতন দিবো কিভাবে সেটা নিয়ে এখন চিন্তায় আছি।’
পূবাইল হারবাইদ থেকে উত্তরায় এসে অফিস করেন সাইফুল ইসলাম। তার সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। সাইফুল ইসলাম বলেন,‘ আমি চাকরি করি। কোটা আন্দোলনে কারফিউ থাকায় গণপরিবহন বন্ধ ছিলো। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে অফিসে যেতে হয়েছে। কিন্তু এই অতিরিক্ত খরচ তো অফিস দিবে না, অফিসে না গেলে বেতন থেকে মজুরি কাটা যাবে। আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। অফিসে যাওয়ার এবং আসা সবসময়ই আতঙ্কে থাকি কখন ঝামেলায় পড়ে যাই।’
টঙ্গী বাজারে পোশাক বিক্রেতা সোবাহান করিম বলেন, ‘আগে প্রতিদিন মিনিমাম পাঁচ হাজার টাকা বিক্রি হতো। গত কয়েকদিনে পাঁচ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারিনি। কোটা আন্দোলন সেই সাথে কারফিউর কারণে ক্রেতা একেবারে নেই বললেই চলে। বিক্রি কমেছে। যে পরিস্থিতি তাতে ব্যবসায় লালবাতি জ্বলতে বাকি নেই।’ শুধু রিয়াজুল ইসলাম ও রনি হোসেনই নয়। এমন বিপাকে পড়েছেন হাজারো ব্যবসায়ী। তারা বলেন, চলমান আন্দোলন ও কারফিউতে বিক্রি একেবারেই কমে গেছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে খুবই বাজে অবস্থা যাচ্ছে। ক্রেতা একেবারে নেই বললেই চলে। কয়েকদিন দোকান পুরোপুরি বন্ধ ছিল, তার আগে আন্দোলনের কারণে রাস্তা বন্ধ ছিল। এই সময়ে কাস্টমার একেবারেই ছিল না। ঢাকার সন্নিকটে হওয়ায় গাজীপুরে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্কও বেশি। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না অনেকেই। এতে জনজীবন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে।