ঢাকা ১০:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকেই মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা: ডিএমপি

  • আপডেট সময় : ০৯:২৮:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
  • ১৭ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁন ওরফে সোহাগকে প্রকাশ্যে হত্যার নেপথ্যে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বই মূল কারণ বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
শনিবার (১২ জুলাই) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। ডিসি জসীম জানান, গত ৯ জুলাই বিকাল ৫টা ৪০ মিনিট থেকে ৬টার মধ্যে কোতোয়ালি থানান স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে এবং সংলগ্ন এলাকায় একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে। বহু লোক একত্রিত হয়ে মো. সোহাগকে নির্মমভাবে আঘাত করে হত্যা করে। ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং সেখান থেকেই দুজনকে গ্রেফতার করে। পরে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়। ডিএমপির তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার পেছনে ভাঙারি ব্যবসা নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কাজ করেছে। হত্যাকারীরা ও ভুক্তভোগী সোহাগ একসময় একসঙ্গে ব্যবসা করতেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে লেনদেন এবং অংশীদারত্ব নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে তা ভয়াবহ রূপ নিয়ে এ হত্যাকাণ্ডে রূপ নেয়। আমরা জানতে পেরেছি, যারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত এবং যিনি মারা গেছেন, তারা আগে একসঙ্গে কাজ করতেন। পরবর্তীকালে আলাদা হয়ে গেলে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। আর সে দ্বন্দ্বের জেরেই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে,-বলেন ডিসি জসীম।
গ্রেফতার ৫ জন, রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত নয়: সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের পরদিন ১০ জুলাই ভুক্তভোগী সোহাগের বড় বোন কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর-৭)। এরপর ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনার মাধ্যমে সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করা হয়। এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে— যাদের মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব ও তিনজনকে করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিসি বলেন, অপরাধের তদন্তে রাজনৈতিক পরিচয় মুখ্য নয়। আমরা এখন পর্যন্ত নির্ভরযোগ্যভাবে নিশ্চিত হতে পারিনি, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত কিনা।
চাঁদাবাজির কোনো তথ্য পুলিশ পায়নি বলে জানিয়েছেন ডিসি জসীম। তিনি বলেন, এটি ছিল একান্তই ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক চাঁদাবাজি বা সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রের সংশ্লিষ্টতার তথ্য নেই।
প্রকাশ্যে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডে পুলিশি টহল বা আগাম ব্যবস্থা ছিল কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে ডিসি বলেন, ঘটনার মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই পুলিশ সেখানে পৌঁছায় এবং তাৎক্ষণিকভাবে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি।
গত ১০ মার্চ একইদিন চকবাজারে একটি কোকারিজ মার্কেট দখল দিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি এবং বাবু বাজার ব্রিজের নিচে ফুটপাত দখল নিয়ে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিল। ওই ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা গেলে হয়তো মিটফোর্ডের ঘটনা ঘটতো না। এমন প্রশ্নের উত্তরে লালবাগের ডিসি জসীম উদ্দিন বলেন, ‘ওই দুইটা ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। একটি ঘটনায় চারজন ও আরেকটি ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আমরা এসব বিষয়কে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চাই না। এখন কারও যদি রাজনৈতিক পরিচয় থাকে সেটা ভিন্ন বিষয়। তবে আমরা দেখছি কারা অপরাধী, সে কি অপরাধ করেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটি আলোচনায় বলেছি, পুরান ঢাকার ব্যবসায়িক এলাকায় হয় চাঁদাবাজরা থাকবে, না হয় লালবাগের ডিসি থাকবে? আমরা কোনো চাঁদাবাজ বা সন্ত্রাসীদের ছাড় দেবো না।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ইইউ ও মেক্সিকোর ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প

ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকেই মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা: ডিএমপি

আপডেট সময় : ০৯:২৮:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁন ওরফে সোহাগকে প্রকাশ্যে হত্যার নেপথ্যে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বই মূল কারণ বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
শনিবার (১২ জুলাই) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। ডিসি জসীম জানান, গত ৯ জুলাই বিকাল ৫টা ৪০ মিনিট থেকে ৬টার মধ্যে কোতোয়ালি থানান স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে এবং সংলগ্ন এলাকায় একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে। বহু লোক একত্রিত হয়ে মো. সোহাগকে নির্মমভাবে আঘাত করে হত্যা করে। ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং সেখান থেকেই দুজনকে গ্রেফতার করে। পরে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়। ডিএমপির তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার পেছনে ভাঙারি ব্যবসা নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কাজ করেছে। হত্যাকারীরা ও ভুক্তভোগী সোহাগ একসময় একসঙ্গে ব্যবসা করতেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে লেনদেন এবং অংশীদারত্ব নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে তা ভয়াবহ রূপ নিয়ে এ হত্যাকাণ্ডে রূপ নেয়। আমরা জানতে পেরেছি, যারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত এবং যিনি মারা গেছেন, তারা আগে একসঙ্গে কাজ করতেন। পরবর্তীকালে আলাদা হয়ে গেলে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। আর সে দ্বন্দ্বের জেরেই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে,-বলেন ডিসি জসীম।
গ্রেফতার ৫ জন, রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত নয়: সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের পরদিন ১০ জুলাই ভুক্তভোগী সোহাগের বড় বোন কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর-৭)। এরপর ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনার মাধ্যমে সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করা হয়। এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে— যাদের মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব ও তিনজনকে করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিসি বলেন, অপরাধের তদন্তে রাজনৈতিক পরিচয় মুখ্য নয়। আমরা এখন পর্যন্ত নির্ভরযোগ্যভাবে নিশ্চিত হতে পারিনি, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত কিনা।
চাঁদাবাজির কোনো তথ্য পুলিশ পায়নি বলে জানিয়েছেন ডিসি জসীম। তিনি বলেন, এটি ছিল একান্তই ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক চাঁদাবাজি বা সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রের সংশ্লিষ্টতার তথ্য নেই।
প্রকাশ্যে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডে পুলিশি টহল বা আগাম ব্যবস্থা ছিল কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে ডিসি বলেন, ঘটনার মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই পুলিশ সেখানে পৌঁছায় এবং তাৎক্ষণিকভাবে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি।
গত ১০ মার্চ একইদিন চকবাজারে একটি কোকারিজ মার্কেট দখল দিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি এবং বাবু বাজার ব্রিজের নিচে ফুটপাত দখল নিয়ে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিল। ওই ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা গেলে হয়তো মিটফোর্ডের ঘটনা ঘটতো না। এমন প্রশ্নের উত্তরে লালবাগের ডিসি জসীম উদ্দিন বলেন, ‘ওই দুইটা ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। একটি ঘটনায় চারজন ও আরেকটি ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আমরা এসব বিষয়কে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চাই না। এখন কারও যদি রাজনৈতিক পরিচয় থাকে সেটা ভিন্ন বিষয়। তবে আমরা দেখছি কারা অপরাধী, সে কি অপরাধ করেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটি আলোচনায় বলেছি, পুরান ঢাকার ব্যবসায়িক এলাকায় হয় চাঁদাবাজরা থাকবে, না হয় লালবাগের ডিসি থাকবে? আমরা কোনো চাঁদাবাজ বা সন্ত্রাসীদের ছাড় দেবো না।’