ঢাকা ১১:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫

বোরো ধান উঠলেও কমছে না চালের দাম

  • আপডেট সময় : ১২:২১:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ মে ২০২২
  • ৯০ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : বোরো ধান উঠতে শুরু করলে বাজারে সব চালের দামই কমে আসে, বলছিলেন ঢাকার কারওয়ান বাজারে চালের পাইকারি বিক্রেতা মোহাম্মদ রাসেল। কিন্তু এবার তেমনটা দেখছেন না তিনি। তাতে তার শঙ্কা, চালের দাম এবার আরও বাড়তে পারে। একটি সংবাদসংস্থার এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।
মহামারীর মধ্যে ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর সারাবিশ্বে পণ্য বাজারে যে অস্থিরতা চলছে, তার মধ্যে দেশে অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত ধান থেকে তৈরি হওয়া চালের দাম বাড়তে দেখা যাচ্ছে। যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি, সার, গমসহ অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতির মধ্যে দেশীয় জোগাননির্ভর ধান-চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এখনই সরকারকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশে বোরো ধান কাটা শেষে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহও চলছে চলতি মে মাসে। ২৭ টাকা কেজি দরে ধান কেনা হচ্ছে এবার।
কারওয়ানবাজারের জনতা রাইস এজেন্সির মালিক মোহাম্মদ রাসেল বলেন, “নতুন ধান আসলে সাধারণত চালের দাম কমে থাকে। মিনিকেট ৫০ কেজির বস্তা ২৭০০ থেকে ২৮০০ টাকার মধ্যে নামে। কিন্তু এবার মিনিকেটের দাম কমেনি। আপাত দৃষ্টিতে দাম স্থিতিশীল দেখা গেলেও নতুন মওসুম বিবেচনায় দাম কেজিতে ৩/৪ টাকা বেড়েছে।”
কারওয়ান বাজারের আরেক বিক্রেতা বাচ্চু মিয়া জানান, চলতি মে মাসের শুরুতে যখন নতুন মিনিকেট চাল বাজারে আসে, তখন দাম ছিল প্রতি কেজি ৫৭ টাকা। এই ১৫ দিনের মধ্যেই দাম উঠে গেছে ৬০ টাকায়। বিআর আটাশ চাল কয়েক দিনের জন্য প্রতি কেজি পাইকারিতে ৪২ টাকায় নেমেছিল। এখন আবার সেটা ৪৭ টাকায় উঠেছে। খুচরায় ৫০ টাকা থেকে ৫২ টাকা।
কারওয়ান বাজারে কুষ্টিয়ার রশিদ মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে বস্তা ২৯৫০ টাকায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মোজাম্মেল ও মনজুর ব্র্যান্ডের চাল বিক্রি হচ্ছে ৩১৫০ টাকায়। মাঝারি চাল (বিআর আটাশ) বস্তা ২২০০ থেকে ২২৫০ টাকায়, আমন মওসুমের পাইজাম ২১০০ টাকা থেকে ২১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার খুচরা দোকানে চালের দাম আরও বেশি। যেমন মিরপুরে উত্তর পীরেরবাগের একটি মুদি দোকানে মিনিকেট চাল প্রতি কেজি ৬৮ টাকায়, বিআর আটাশ চাল প্রতি কেজি ৫২ টাকায় এবং পাইজাম ৪৮ টাকা থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বিক্রেতা রাসেল বলেন, “বৈশাখ মাসে সরু চালের দাম আরও কমে আসা উচিৎ ছিল। প্রতি বছরই দাম কমে থাকে। এখন যেই দাম তাতে সামনে আরও বাড়ার আশঙ্কা আছে।” সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে সরু চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা থেকে ৬৮ টাকায়। এক বছর আগে ৩১ মে তারিখে প্রতি কেজি সরু চালের দাম ছিল ৫৮ টাকা থেকে ৬৫ টাকা।
ভোক্তা অধিকার রক্ষার নাগরিক সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান শঙ্কা করছেন, অন্য সব পণ্যের প্রভাবে চালের দামও ঊর্ধ্বমুখী। তিনি বলেন, “আজকাল পৃথিবীর কোথাও একটা ঘটনা ঘটলে সবাই জেনে যায়। বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাওয়া ও মূল্যবৃদ্ধির আভাস দিয়েছে। ইউক্রেইনের যুদ্ধে গমের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া, ভারত গমের রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া এসব মিলিয়ে একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
“সেই আশঙ্কা থেকে কৃষকরা ভালো দাম পাওয়ার আশায় ধান-চাল ধরে রাখছে। সেই আশঙ্কা থেকেই বাজার চড়তে শুরু করেছে। এর পাশাপাশি গমের দামও চালের দামকে প্রভাবিত করছ। সয়াবিন তেল পাম তেল যেমনিভাবে সরিষার তেলের বাজার চাঙা করেছে।”
তার কথারই প্রতিধ্বনি পাওয়া যায় দিনাজপুরের চালকল ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শহীদুল ইসলাম পাটোয়ারী মোহনের কথায়।

তিনি বলেন, “এখন কেবল ধান নয়; দেশে উৎপাদিত সব কৃষিপণ্যের দামই বেশি। গত বছর যে সরিষাদানা প্রতি কেজি ৪৫ টাকা ছিল, এবার সেটা ৯০ টাকায় পৌঁছে গেছে। গত বছর যেই গম প্রতি কেজি ২১ টাকায় কিনেছি এবার সেটা ৪০ টাকায় উঠেছে।”
মোহন মনে করেন, সরু চালের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণেই বাজারে বছর বছর এর দাম বাড়ছে। এর ধারাবাহিকতায় চলতি বছর সরু চালের উৎস বিআর ২৮, বিআর ২৯, জিরা শাইল, বিআর ৩৮, বিআর ১৬, বিআর ৩৬ ধানের দাম ঊর্ধমুখী। এখনই এসব ধান প্রতি কেজি ৩০ টাকা থেকে ৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও কয়েক বছর আগে মওসুমের শুরুতে এসব ধান প্রতি কেজি ২৬ টাকায় বিক্রি হত।
ধানের দাম আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করে তিনি বলেন, “এখনও ধানের বেচাকেনা পুরোদমে শুরু হয়নি। তবে এবার ধানের দাম অনেক ঊর্ধমুখী থাকবে বলেই আমার মনে হয়। আর ধানের দাম বেড়ে গেলে চালের দামও বাড়তে থাকবে। নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, নওগাঁয় চলতি মৌসুমের নতুন বোরো ধান হাট বাজারে উঠলেও চালের দাম কমেনি। বরং গত ১৫ দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। জেলা চাল কল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, জেলায় ঈদের পর থেকে বোরো ধানের কাটা-মাড়াই শুরু হয়। বর্তমানে ভেজা ধান প্রতি মণ এক হাজার টাকা থেকে ১১০০ টাকা এবং শুকনো ধান প্রতি মণ ১১৫০ টাকা থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধানের এই মুল্য বৃদ্ধির কারণে জেলার পাইকারি বাজারে চালের দামও ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। ধানের দাম বাড়তে থাকলে চালের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানান ফরহাদ হোসেন চকদার। কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, দেশের বৃহৎ চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজা নগরে হঠাৎ করে সব রকম চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা করে বাড়ছে। কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন সাধু বলেন, “চলতি মওসুম হচ্ছে চিকন ধানের মওসুম। অথচ এই সময়ে প্রতি মণ ধানে ১০০ টাকা করে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর যেই ধান প্রতিমণ ১২৫০ টাকা ছিল এখন সেটা ১৩৫০ টাকা মনে কিনতে হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে যে চিকন চাল মিল গেইটে কেজিপ্রতি ৫৮/৫৯ টাকা ছিলো এখন সেই চাল মিল গেটেই বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকায়।”
মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে অন্য সময়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হলেও এবার কৃষকরা লাভবান হচ্ছে বলেও মনে করেন ক্যাব চেয়ারম্যান গোলাম রহমান। তবে বাজার যেন নিয়ন্ত্রণহারা না হয়, সেজন্য সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি। “সরকারের গুদামে পর্যাপ্ত মজুদ রাখতে হবে, বিদেশ থেকেও আমদানি করতে হবে। তবে ভবিষ্যতে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে হয়ত খুব বেশি সমস্যা হবে না। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় খুব বেশি শঙ্কিত বা প্যানিকড হয়ে যাওয়ার কারণ নেই।”

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম নিয়ে ফের আপিল শুনবেন সর্বোচ্চ আদালত

বোরো ধান উঠলেও কমছে না চালের দাম

আপডেট সময় : ১২:২১:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ মে ২০২২

প্রত্যাশা ডেস্ক : বোরো ধান উঠতে শুরু করলে বাজারে সব চালের দামই কমে আসে, বলছিলেন ঢাকার কারওয়ান বাজারে চালের পাইকারি বিক্রেতা মোহাম্মদ রাসেল। কিন্তু এবার তেমনটা দেখছেন না তিনি। তাতে তার শঙ্কা, চালের দাম এবার আরও বাড়তে পারে। একটি সংবাদসংস্থার এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।
মহামারীর মধ্যে ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর সারাবিশ্বে পণ্য বাজারে যে অস্থিরতা চলছে, তার মধ্যে দেশে অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত ধান থেকে তৈরি হওয়া চালের দাম বাড়তে দেখা যাচ্ছে। যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি, সার, গমসহ অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতির মধ্যে দেশীয় জোগাননির্ভর ধান-চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এখনই সরকারকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশে বোরো ধান কাটা শেষে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহও চলছে চলতি মে মাসে। ২৭ টাকা কেজি দরে ধান কেনা হচ্ছে এবার।
কারওয়ানবাজারের জনতা রাইস এজেন্সির মালিক মোহাম্মদ রাসেল বলেন, “নতুন ধান আসলে সাধারণত চালের দাম কমে থাকে। মিনিকেট ৫০ কেজির বস্তা ২৭০০ থেকে ২৮০০ টাকার মধ্যে নামে। কিন্তু এবার মিনিকেটের দাম কমেনি। আপাত দৃষ্টিতে দাম স্থিতিশীল দেখা গেলেও নতুন মওসুম বিবেচনায় দাম কেজিতে ৩/৪ টাকা বেড়েছে।”
কারওয়ান বাজারের আরেক বিক্রেতা বাচ্চু মিয়া জানান, চলতি মে মাসের শুরুতে যখন নতুন মিনিকেট চাল বাজারে আসে, তখন দাম ছিল প্রতি কেজি ৫৭ টাকা। এই ১৫ দিনের মধ্যেই দাম উঠে গেছে ৬০ টাকায়। বিআর আটাশ চাল কয়েক দিনের জন্য প্রতি কেজি পাইকারিতে ৪২ টাকায় নেমেছিল। এখন আবার সেটা ৪৭ টাকায় উঠেছে। খুচরায় ৫০ টাকা থেকে ৫২ টাকা।
কারওয়ান বাজারে কুষ্টিয়ার রশিদ মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে বস্তা ২৯৫০ টাকায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মোজাম্মেল ও মনজুর ব্র্যান্ডের চাল বিক্রি হচ্ছে ৩১৫০ টাকায়। মাঝারি চাল (বিআর আটাশ) বস্তা ২২০০ থেকে ২২৫০ টাকায়, আমন মওসুমের পাইজাম ২১০০ টাকা থেকে ২১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার খুচরা দোকানে চালের দাম আরও বেশি। যেমন মিরপুরে উত্তর পীরেরবাগের একটি মুদি দোকানে মিনিকেট চাল প্রতি কেজি ৬৮ টাকায়, বিআর আটাশ চাল প্রতি কেজি ৫২ টাকায় এবং পাইজাম ৪৮ টাকা থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বিক্রেতা রাসেল বলেন, “বৈশাখ মাসে সরু চালের দাম আরও কমে আসা উচিৎ ছিল। প্রতি বছরই দাম কমে থাকে। এখন যেই দাম তাতে সামনে আরও বাড়ার আশঙ্কা আছে।” সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে সরু চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা থেকে ৬৮ টাকায়। এক বছর আগে ৩১ মে তারিখে প্রতি কেজি সরু চালের দাম ছিল ৫৮ টাকা থেকে ৬৫ টাকা।
ভোক্তা অধিকার রক্ষার নাগরিক সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান শঙ্কা করছেন, অন্য সব পণ্যের প্রভাবে চালের দামও ঊর্ধ্বমুখী। তিনি বলেন, “আজকাল পৃথিবীর কোথাও একটা ঘটনা ঘটলে সবাই জেনে যায়। বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাওয়া ও মূল্যবৃদ্ধির আভাস দিয়েছে। ইউক্রেইনের যুদ্ধে গমের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া, ভারত গমের রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া এসব মিলিয়ে একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
“সেই আশঙ্কা থেকে কৃষকরা ভালো দাম পাওয়ার আশায় ধান-চাল ধরে রাখছে। সেই আশঙ্কা থেকেই বাজার চড়তে শুরু করেছে। এর পাশাপাশি গমের দামও চালের দামকে প্রভাবিত করছ। সয়াবিন তেল পাম তেল যেমনিভাবে সরিষার তেলের বাজার চাঙা করেছে।”
তার কথারই প্রতিধ্বনি পাওয়া যায় দিনাজপুরের চালকল ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শহীদুল ইসলাম পাটোয়ারী মোহনের কথায়।

তিনি বলেন, “এখন কেবল ধান নয়; দেশে উৎপাদিত সব কৃষিপণ্যের দামই বেশি। গত বছর যে সরিষাদানা প্রতি কেজি ৪৫ টাকা ছিল, এবার সেটা ৯০ টাকায় পৌঁছে গেছে। গত বছর যেই গম প্রতি কেজি ২১ টাকায় কিনেছি এবার সেটা ৪০ টাকায় উঠেছে।”
মোহন মনে করেন, সরু চালের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণেই বাজারে বছর বছর এর দাম বাড়ছে। এর ধারাবাহিকতায় চলতি বছর সরু চালের উৎস বিআর ২৮, বিআর ২৯, জিরা শাইল, বিআর ৩৮, বিআর ১৬, বিআর ৩৬ ধানের দাম ঊর্ধমুখী। এখনই এসব ধান প্রতি কেজি ৩০ টাকা থেকে ৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও কয়েক বছর আগে মওসুমের শুরুতে এসব ধান প্রতি কেজি ২৬ টাকায় বিক্রি হত।
ধানের দাম আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করে তিনি বলেন, “এখনও ধানের বেচাকেনা পুরোদমে শুরু হয়নি। তবে এবার ধানের দাম অনেক ঊর্ধমুখী থাকবে বলেই আমার মনে হয়। আর ধানের দাম বেড়ে গেলে চালের দামও বাড়তে থাকবে। নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, নওগাঁয় চলতি মৌসুমের নতুন বোরো ধান হাট বাজারে উঠলেও চালের দাম কমেনি। বরং গত ১৫ দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। জেলা চাল কল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, জেলায় ঈদের পর থেকে বোরো ধানের কাটা-মাড়াই শুরু হয়। বর্তমানে ভেজা ধান প্রতি মণ এক হাজার টাকা থেকে ১১০০ টাকা এবং শুকনো ধান প্রতি মণ ১১৫০ টাকা থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধানের এই মুল্য বৃদ্ধির কারণে জেলার পাইকারি বাজারে চালের দামও ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। ধানের দাম বাড়তে থাকলে চালের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানান ফরহাদ হোসেন চকদার। কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, দেশের বৃহৎ চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজা নগরে হঠাৎ করে সব রকম চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা করে বাড়ছে। কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন সাধু বলেন, “চলতি মওসুম হচ্ছে চিকন ধানের মওসুম। অথচ এই সময়ে প্রতি মণ ধানে ১০০ টাকা করে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর যেই ধান প্রতিমণ ১২৫০ টাকা ছিল এখন সেটা ১৩৫০ টাকা মনে কিনতে হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে যে চিকন চাল মিল গেইটে কেজিপ্রতি ৫৮/৫৯ টাকা ছিলো এখন সেই চাল মিল গেটেই বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকায়।”
মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে অন্য সময়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হলেও এবার কৃষকরা লাভবান হচ্ছে বলেও মনে করেন ক্যাব চেয়ারম্যান গোলাম রহমান। তবে বাজার যেন নিয়ন্ত্রণহারা না হয়, সেজন্য সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি। “সরকারের গুদামে পর্যাপ্ত মজুদ রাখতে হবে, বিদেশ থেকেও আমদানি করতে হবে। তবে ভবিষ্যতে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে হয়ত খুব বেশি সমস্যা হবে না। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় খুব বেশি শঙ্কিত বা প্যানিকড হয়ে যাওয়ার কারণ নেই।”