ঢাকা ০৩:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

বোনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি: ভাই দিলেন ১০০ বই উপহার

  • আপডেট সময় : ১১:৫৩:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই ২০২৩
  • ১২০ বার পড়া হয়েছে

ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক : ভোরের পাখিদের ডাকাডাকি কেবল শুরু হয়েছে। বাবা মা দুজন চলে গেছেন কাজে। কোলের শিশুকে সারাদিন দেখাশোনার দায়িত্ব বড় ভাইয়ের। পাঁচ কিংবা ছয় বছর বয়সী ভাই কখনো কখনো রেখে খেলতে চলে যায়। এদিকে বোন সব নোংরা করে রাখে। কান্না করতে করতে কাউকে পায় না। সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ে। এসবের জন্য কতদিন যে মায়ের বকুনি পিটুনি খেতে হয়েছে ভাইকে তার ইয়ত্তা নেই। সেসব দিন এখন অতীতের খাতায় বন্দি। বোনও বড় হয়েছেন এখন। স্কুলকলেজের গ-ি পেরিয়ে ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভাই পড়ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বোনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি উপলক্ষ্যে উপহার হিসেবে ভাই দিলেন একশ বই।
বলছিলাম পবিত্রী রায় আর গোপাল রায়ের কথা। তাদের বাড়ি নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার নয়ানী বাগডোরা গ্রামে। বাবা জয়হরি রায় এবং মা সুমিত্রা রানী। দুজনেই পাথর শ্রমিকের কাজ করেন পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধায়। পবিত্রী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্স’ বিভাগে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছেন। তিনি এই ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ১৩ তম হন। ১৮ জুলাই বোনকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে নিয়ে আসেন ভাই গোপাল রায়। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্প কলার ইতিহাস বিভাগে অধ্যয়নরত। গত ২০ জুলাই একটি সংবাসংস্থার প্রতিবেদকের সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ হয়। সেদিন বিস্তারিত জানান ভাই বোন।
স্বপ্ন পূরণে গার্মেন্টস কর্মী: মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল খুব একটা ভালো না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখা কখনোই বন্ধ হয়নি পবিত্রীর। ‘মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ এর সহযোগিতায় ঢাকায় কোচিং করার সুযোগ পান। তবে নতুন জায়গায় খাপ খাওয়াতে পারছিলেন না। দুই মাস পর ভাই নিয়ে আসেন নিজের কাছে। নিজেই পড়ানো শুরু করলেন। সেবছর কোথাও ভর্তির সুযোগ হলো না পবিত্রীর। অতি দরিদ্র পরিবার তাই অন্য কোথাও পড়ালেখার খরচ চালানো বেশ মুশকিল। পবিত্রী তখন গার্মেন্টসে যান ক্যাশ বিভাগের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে। সেখানে যাওয়ার কথা ভাবতেই কান্না চলে আসে পবিত্রীর। বোনকে গোপাল বললেন, কাজ করে খেতে লজ্জা পেতে নেই। কেন আমাদের বাবা মা কাজ করে বাংলাবান্ধায় তাহলে তাদের সন্তান হয়ে আমাদের কীসের এতো লজ্জা! পরেরদিন ভোরে নিজেই মাকে ডেকে দিলো। মা রান্না করে খাইয়ে পাঠিয়ে দিলেন। টানা ১৫ দিনের ট্রেনিং করে কাজ শেখা। ট্রেনিংসহ দুই মাসে ৯ হাজার টাকা আয়। সেই টাকা দিয়ে আবার পড়ালেখা শুরু।
গল্প যখন সংগ্রামের: দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার জন্য ঢাকা,রাজশাহী আবার চট্টগ্রাম যাত্রা। মনোবল ভাঙেনি একবারের জন্যও। শত শত মাইলের দূরত্ব ক্লান্ত করেনি স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যকে। ভর্তি পরীক্ষার সময় ট্রেনে সিট পাওয়া দুষ্কর। প্রচ- ভিড় ট্রেনে। ভর্তি যুদ্ধের মতো ট্রেনে উঠতে পারা যেন আরেক যুদ্ধ! গোপাল বলেন, ও যখন চট্টগ্রাম যাবে ভর্তি পরীক্ষা দিতে সেদিন ট্রেনে খুবই ভিড়। সিট তো নেই। ট্রেনের ভিড় আর গরম সামলাতে না পেরে এক সময় বমি করে পবিত্রী। নামার আগে আগে টের পায় যাত্রীদের আওয়াজ, তখন ঘুম ভাঙ্গে। আমি তখন যেতে পারিনি ওর সঙ্গে টাকার জন্য।
উপহার হিসেবে বই: দীর্ঘ সংগ্রাম আর সাধনার পর বোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলেন। গোপাল বলছিলেন, বিষয়টি সত্যি অন্যরকম অনুভূতির। আমার বাবা-মা সহ আমার জন্য গর্বের বিষয়। তাই ভাবলাম আমি বড় ভাই হিসেবে ওকে কিছু উপহার দেওয়া উচিত যাতে সে অনুপ্রাণিত হয়। আমি নিজেও শিক্ষার্থী। বৃত্তির টাকা ও টিউশনি করিয়ে যা পাই তা আমার লেখাপড়া চলে আর আরেক ছোট বোনের পড়ালেখা চলে। পবিত্রীরও টুকটাক পড়ালেখার খরচ দিয়েছিলাম। সব মিলে আমার হাত শূন্য। কিছু ঋণীও হয়ে গেছি। বড় ভাই হিসেবে উপহার না দিলে কেমন হয় ভাবছি, পরে ভাবলাম বই উপহার দিতেই পারি। আমার কাছে সংগ্রহে শত শত বই আছে। যা বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে এসব বই পুরস্কার পেয়েছি। তাই ঠিক করলাম বোনকে যেদিন ভর্তি করাব সেদিন ওকে একশ বই উপহার দেব। করলামও তাই।
উপহার কেন বই: আসলে বিষয়টা একটু আলাদা করে ভাবলে দারুণ কিছু বিষয় আসে। এই বইগুলো আমি ‘রূপক উপহার’ হিসাবে বোনকে দিয়েছি। সেটা কি রূপক বা ম্যাজিক বেপার সেটা বোনকেই পড়ে খুঁজে বের করতে হবে। আসলে বইগুলোতো আর শুধু কাগজে মোড়ানো আর কালো কালির কোনো নেহাত বস্তু নয়। একেকটা বই একেকটা আলাদীনের প্রদীপের মতো। বোনটা আমার আলাদীনের প্রদীপের ন্যায় বইগুলো যত ঘষবে, পড়বে ওর ততই অজ্ঞতার ঝুলিতে একটা করে দৈত্য জমা হবে। সেসব দৈত্য দিয়ে কিন্তু চাইলেই ভাল কিছু করা যায়।
ভাইকে নিয়ে পবিত্রী: অভাব অনটন আমাদের নিত্য দিনের সঙ্গী। তবুও আমাদের স্বপ্ন যেন আকাশছোঁয়া! আমাদের শুধু ভাইবোনের সম্পর্ক নয়। বাবা-মা সহ আমাদের পরিবারের পাঁচ জন সদস্যদের মধ্যেই আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক, আমরা আলাদা আলাদা পাঁচটা শরীর হলেও মানসিকতায় আত্মায় আত্মায় একেবারে একাত্মা। বিষয়টা অনুভবের। বন্ধুত্বের এই বিষয়টা আমরা হৃদয়ের জিহ্বা দিয়ে স্বাদ নেই। আর দাদাকে নিয়ে তো আলাদা করে বলার নেই। যেখানে প্রতিবন্ধকতা কিংবা হতাশা অনুভব হয় সেখানেই দাদা সব ছেড়ে চলে আসে। এ ভালোবাসা বলে বোঝানো সম্ভব না।
কথাপ্রসঙ্গে গোপাল রায় জানালেন, আমি কোনোদিন বোনকে সফল হতে বলি না। আজও বলব না। কেননা একটা চোর চুরি করতে গিয়ে যদি ধরা না পরে তাহলে সেও সফল। তাই বলব বোনটা যেন আমার সার্থক হয়। সত্য ও সঠিক পথে থেকে লক্ষ্য স্থির করে স্বপ্নকে লালন করে ও যেন এগিয়ে যায় সামনে। নিজেকে নিয়েই ভাবলে শুধু হবে না, সমাজের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। সেটার মূল্য দিতে হবে। আমাদের সমাজে বাল্যবিবাহ আর যৌতুক মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি হয়ে গেছে। এখন যেন মেয়ে সন্তানের জন্ম হলেই একটা বোঝা। আমি চাইব বাল্যবিবাহ আর যৌতুক এই দুই মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি নিয়ে যেন ও লড়ে। সেদিন গোপাল রায় বোনকে বলেছিলেন, দেওয়ার মতো কিছু নেই আমার। অন্য কোনো ভাই হলে হয়ত কম্পিউটার বা স্মার্টফোন উপহার দিতো। আমি তোর অধম ভাই। তাই তোকে মাত্র ১০০ বই উপহার দিলাম। প্রতি বছর ১০০ টি করে বই উপহার দিয়ে যাব।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বোনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি: ভাই দিলেন ১০০ বই উপহার

আপডেট সময় : ১১:৫৩:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই ২০২৩

ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক : ভোরের পাখিদের ডাকাডাকি কেবল শুরু হয়েছে। বাবা মা দুজন চলে গেছেন কাজে। কোলের শিশুকে সারাদিন দেখাশোনার দায়িত্ব বড় ভাইয়ের। পাঁচ কিংবা ছয় বছর বয়সী ভাই কখনো কখনো রেখে খেলতে চলে যায়। এদিকে বোন সব নোংরা করে রাখে। কান্না করতে করতে কাউকে পায় না। সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ে। এসবের জন্য কতদিন যে মায়ের বকুনি পিটুনি খেতে হয়েছে ভাইকে তার ইয়ত্তা নেই। সেসব দিন এখন অতীতের খাতায় বন্দি। বোনও বড় হয়েছেন এখন। স্কুলকলেজের গ-ি পেরিয়ে ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভাই পড়ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বোনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি উপলক্ষ্যে উপহার হিসেবে ভাই দিলেন একশ বই।
বলছিলাম পবিত্রী রায় আর গোপাল রায়ের কথা। তাদের বাড়ি নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার নয়ানী বাগডোরা গ্রামে। বাবা জয়হরি রায় এবং মা সুমিত্রা রানী। দুজনেই পাথর শ্রমিকের কাজ করেন পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধায়। পবিত্রী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্স’ বিভাগে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছেন। তিনি এই ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ১৩ তম হন। ১৮ জুলাই বোনকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে নিয়ে আসেন ভাই গোপাল রায়। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্প কলার ইতিহাস বিভাগে অধ্যয়নরত। গত ২০ জুলাই একটি সংবাসংস্থার প্রতিবেদকের সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ হয়। সেদিন বিস্তারিত জানান ভাই বোন।
স্বপ্ন পূরণে গার্মেন্টস কর্মী: মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল খুব একটা ভালো না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখা কখনোই বন্ধ হয়নি পবিত্রীর। ‘মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ এর সহযোগিতায় ঢাকায় কোচিং করার সুযোগ পান। তবে নতুন জায়গায় খাপ খাওয়াতে পারছিলেন না। দুই মাস পর ভাই নিয়ে আসেন নিজের কাছে। নিজেই পড়ানো শুরু করলেন। সেবছর কোথাও ভর্তির সুযোগ হলো না পবিত্রীর। অতি দরিদ্র পরিবার তাই অন্য কোথাও পড়ালেখার খরচ চালানো বেশ মুশকিল। পবিত্রী তখন গার্মেন্টসে যান ক্যাশ বিভাগের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে। সেখানে যাওয়ার কথা ভাবতেই কান্না চলে আসে পবিত্রীর। বোনকে গোপাল বললেন, কাজ করে খেতে লজ্জা পেতে নেই। কেন আমাদের বাবা মা কাজ করে বাংলাবান্ধায় তাহলে তাদের সন্তান হয়ে আমাদের কীসের এতো লজ্জা! পরেরদিন ভোরে নিজেই মাকে ডেকে দিলো। মা রান্না করে খাইয়ে পাঠিয়ে দিলেন। টানা ১৫ দিনের ট্রেনিং করে কাজ শেখা। ট্রেনিংসহ দুই মাসে ৯ হাজার টাকা আয়। সেই টাকা দিয়ে আবার পড়ালেখা শুরু।
গল্প যখন সংগ্রামের: দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার জন্য ঢাকা,রাজশাহী আবার চট্টগ্রাম যাত্রা। মনোবল ভাঙেনি একবারের জন্যও। শত শত মাইলের দূরত্ব ক্লান্ত করেনি স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যকে। ভর্তি পরীক্ষার সময় ট্রেনে সিট পাওয়া দুষ্কর। প্রচ- ভিড় ট্রেনে। ভর্তি যুদ্ধের মতো ট্রেনে উঠতে পারা যেন আরেক যুদ্ধ! গোপাল বলেন, ও যখন চট্টগ্রাম যাবে ভর্তি পরীক্ষা দিতে সেদিন ট্রেনে খুবই ভিড়। সিট তো নেই। ট্রেনের ভিড় আর গরম সামলাতে না পেরে এক সময় বমি করে পবিত্রী। নামার আগে আগে টের পায় যাত্রীদের আওয়াজ, তখন ঘুম ভাঙ্গে। আমি তখন যেতে পারিনি ওর সঙ্গে টাকার জন্য।
উপহার হিসেবে বই: দীর্ঘ সংগ্রাম আর সাধনার পর বোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলেন। গোপাল বলছিলেন, বিষয়টি সত্যি অন্যরকম অনুভূতির। আমার বাবা-মা সহ আমার জন্য গর্বের বিষয়। তাই ভাবলাম আমি বড় ভাই হিসেবে ওকে কিছু উপহার দেওয়া উচিত যাতে সে অনুপ্রাণিত হয়। আমি নিজেও শিক্ষার্থী। বৃত্তির টাকা ও টিউশনি করিয়ে যা পাই তা আমার লেখাপড়া চলে আর আরেক ছোট বোনের পড়ালেখা চলে। পবিত্রীরও টুকটাক পড়ালেখার খরচ দিয়েছিলাম। সব মিলে আমার হাত শূন্য। কিছু ঋণীও হয়ে গেছি। বড় ভাই হিসেবে উপহার না দিলে কেমন হয় ভাবছি, পরে ভাবলাম বই উপহার দিতেই পারি। আমার কাছে সংগ্রহে শত শত বই আছে। যা বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে এসব বই পুরস্কার পেয়েছি। তাই ঠিক করলাম বোনকে যেদিন ভর্তি করাব সেদিন ওকে একশ বই উপহার দেব। করলামও তাই।
উপহার কেন বই: আসলে বিষয়টা একটু আলাদা করে ভাবলে দারুণ কিছু বিষয় আসে। এই বইগুলো আমি ‘রূপক উপহার’ হিসাবে বোনকে দিয়েছি। সেটা কি রূপক বা ম্যাজিক বেপার সেটা বোনকেই পড়ে খুঁজে বের করতে হবে। আসলে বইগুলোতো আর শুধু কাগজে মোড়ানো আর কালো কালির কোনো নেহাত বস্তু নয়। একেকটা বই একেকটা আলাদীনের প্রদীপের মতো। বোনটা আমার আলাদীনের প্রদীপের ন্যায় বইগুলো যত ঘষবে, পড়বে ওর ততই অজ্ঞতার ঝুলিতে একটা করে দৈত্য জমা হবে। সেসব দৈত্য দিয়ে কিন্তু চাইলেই ভাল কিছু করা যায়।
ভাইকে নিয়ে পবিত্রী: অভাব অনটন আমাদের নিত্য দিনের সঙ্গী। তবুও আমাদের স্বপ্ন যেন আকাশছোঁয়া! আমাদের শুধু ভাইবোনের সম্পর্ক নয়। বাবা-মা সহ আমাদের পরিবারের পাঁচ জন সদস্যদের মধ্যেই আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক, আমরা আলাদা আলাদা পাঁচটা শরীর হলেও মানসিকতায় আত্মায় আত্মায় একেবারে একাত্মা। বিষয়টা অনুভবের। বন্ধুত্বের এই বিষয়টা আমরা হৃদয়ের জিহ্বা দিয়ে স্বাদ নেই। আর দাদাকে নিয়ে তো আলাদা করে বলার নেই। যেখানে প্রতিবন্ধকতা কিংবা হতাশা অনুভব হয় সেখানেই দাদা সব ছেড়ে চলে আসে। এ ভালোবাসা বলে বোঝানো সম্ভব না।
কথাপ্রসঙ্গে গোপাল রায় জানালেন, আমি কোনোদিন বোনকে সফল হতে বলি না। আজও বলব না। কেননা একটা চোর চুরি করতে গিয়ে যদি ধরা না পরে তাহলে সেও সফল। তাই বলব বোনটা যেন আমার সার্থক হয়। সত্য ও সঠিক পথে থেকে লক্ষ্য স্থির করে স্বপ্নকে লালন করে ও যেন এগিয়ে যায় সামনে। নিজেকে নিয়েই ভাবলে শুধু হবে না, সমাজের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। সেটার মূল্য দিতে হবে। আমাদের সমাজে বাল্যবিবাহ আর যৌতুক মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি হয়ে গেছে। এখন যেন মেয়ে সন্তানের জন্ম হলেই একটা বোঝা। আমি চাইব বাল্যবিবাহ আর যৌতুক এই দুই মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি নিয়ে যেন ও লড়ে। সেদিন গোপাল রায় বোনকে বলেছিলেন, দেওয়ার মতো কিছু নেই আমার। অন্য কোনো ভাই হলে হয়ত কম্পিউটার বা স্মার্টফোন উপহার দিতো। আমি তোর অধম ভাই। তাই তোকে মাত্র ১০০ বই উপহার দিলাম। প্রতি বছর ১০০ টি করে বই উপহার দিয়ে যাব।