ঢাকা ১২:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট

  • আপডেট সময় : ০৫:৫৪:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ২৭ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ সংবাদদাতা : বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলও নেই মুদি দোকানে। বাধ্য হয়ে সুপারশপ থেকে দুই লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনলাম। টাকা সীমিত থাকায় আর কিছু কিনতে পারিনি’, বলছিলেন পুরান ঢাকার কলতাবাজারের বাসিন্দা মনি বেগম (৪২)। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর রোজা এলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। ভেবেছিলাম অন্তর্বর্তী সরকার সব সিন্ডিকেট ভেঙে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। কিন্তু গত ছয় মাসে সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি তারা। প্রয়োজনীয় কোনও জিনিসপত্রের দাম এখনও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। চালের দাম বেড়েই চলেছে। এখন আবার তেলের সংকট দেখা দিয়েছে।’

এদিকে রাজধানীর পুরান ঢাকাসহ একাধিক বাজারের মুদি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, সয়াবিন তেলের সংকটে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই। বেশিরভাগ মুদি দোকানে বোতলজাত ভোজ্যতেল নেই। তবে সুপারশপগুলোতে কম-বেশি তেল পাওয়া যাচ্ছে। ভোক্তাদের অভিযোগ, রমজানে বেশি দামে বিক্রির জন্য সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন ব্যবসায়ীরা। অনেক দোকানি শুধু নিয়মিত ও পরিচিত ক্রেতাদের কাছে তেল বিক্রি করছেন। এক-দুই লিটারের বোতলজাত তেল দোকানিরা মজুত করেছেন অতিরিক্ত মুনাফার আশায়। এতে সয়াবিন তেলের সংকটে অনেকেই সূর্যমুখী ও রাইস ব্র্যান তেল নিয়ে বাসায় ফিরছেন। জানা গেছে, বাজার থেকে বাড়তি মুনাফা হাতিয়ে নিতে মিল পর্যায় থেকে তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে সিন্ডিকেট। সেখান থেকে ডিলারের কাছে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এতে খুচরা বাজারে সরবরাহ কমেছে। তাই বাড়তি দামেও চাহিদামতো তেল পাচ্ছেন না ক্রেতা-বিক্রেতারা। এমনকি সংকট দেখিয়ে অতিরিক্ত দাম নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা জানান, সংকট দেখিয়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েল লিটার প্রতি পাঁচ থেকে আট টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বর্তমানে খোলা পাম অয়েল ১৬৫ এবং সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে যেসব দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়, সেসব ব্যবসায়ীরা লিটার প্রতি ১৮০-১৮৫ টাকা ধরে বিক্রি করছেন। নয়াবাজারে তেল কিনতে এসেছেন মো. আশরাফ। তিনি বলেন, ‘দুই লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পুরো বাজার ঘুরেছি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর পেয়েছি। তাও গায়ের মূল্য থেকে পাঁচ টাকা বাড়তি দিয়ে কিনতে হচ্ছে।’ একই বাজারে তেল কিনতে আসা সাহেলা বেগম বলেন, ‘বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বেশি হওয়ায় রাইস ব্র্যান তেল কিনেছি।’ পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে তেল কিনতে আসা সায়েম হোসেন বলেন, ‘এলাকার দোকানে তেমন তেল নেই।

দোকানিরা রোজায় চড়া দামে বিক্রির আশায় মজুত করেছে।’ বেশ কয়েকদিন ধরেই সয়াবিন তেল নিয়ে এমন ভোগান্তির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার কারণ এবং সংকটের বিষয়ে বিভিন্ন তেল কোম্পানির ডিলাররা বলেন, কোম্পানি থেকে আমাদের আগের মতো তেল সরবরাহ করছে না। স্বাভাবিকভাবে যেখানে একজন ডিলারের চাহিদা ১০০ কার্টন, সেখানে কোম্পানি অর্ধেক তেলও দিচ্ছেনা। এ কারণে বাজারে তেলের সরবরাহ কম। আর এই সুযোগে খুচরা বিক্রেতারা নির্দিষ্ট দামের চেয়ে একটু বেশি দামে বিক্রি করছে। সয়াবিন তেলের সংকটের বিষয়ে রাফিত মিয়াজী নামে এক পাইকারি তেলের ব্যবসায়ী বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থির। দেশে ডলার সংকট এখনও চলমান। আমদানিকারকরা আগের মতো ভোজ্যতেল আমদানি করছেন না।

বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দামও আগের চেয়ে বেড়েছে। এসব কারণে ভোজ্যতেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী।’ এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘দেশের ইতিহাসে পাম অয়েলের দাম এবারের মতো আর বাড়েনি। এটাই সর্বোচ্চ দাম। মূলত উৎপাদন সংকট, বায়োডিজেলে পাম অয়েল ব্যবহারের পরিমাণ পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধিজনিত কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির বুকিং রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে গেছে। এসব কারণে ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না।’

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

আইন-বিবেক অনুযায়ী ডিসিদের কাজ করার নির্দেশনা আইন উপদেষ্টার

বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট

আপডেট সময় : ০৫:৫৪:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বিশেষ সংবাদদাতা : বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলও নেই মুদি দোকানে। বাধ্য হয়ে সুপারশপ থেকে দুই লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনলাম। টাকা সীমিত থাকায় আর কিছু কিনতে পারিনি’, বলছিলেন পুরান ঢাকার কলতাবাজারের বাসিন্দা মনি বেগম (৪২)। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর রোজা এলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। ভেবেছিলাম অন্তর্বর্তী সরকার সব সিন্ডিকেট ভেঙে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। কিন্তু গত ছয় মাসে সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি তারা। প্রয়োজনীয় কোনও জিনিসপত্রের দাম এখনও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। চালের দাম বেড়েই চলেছে। এখন আবার তেলের সংকট দেখা দিয়েছে।’

এদিকে রাজধানীর পুরান ঢাকাসহ একাধিক বাজারের মুদি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, সয়াবিন তেলের সংকটে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই। বেশিরভাগ মুদি দোকানে বোতলজাত ভোজ্যতেল নেই। তবে সুপারশপগুলোতে কম-বেশি তেল পাওয়া যাচ্ছে। ভোক্তাদের অভিযোগ, রমজানে বেশি দামে বিক্রির জন্য সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন ব্যবসায়ীরা। অনেক দোকানি শুধু নিয়মিত ও পরিচিত ক্রেতাদের কাছে তেল বিক্রি করছেন। এক-দুই লিটারের বোতলজাত তেল দোকানিরা মজুত করেছেন অতিরিক্ত মুনাফার আশায়। এতে সয়াবিন তেলের সংকটে অনেকেই সূর্যমুখী ও রাইস ব্র্যান তেল নিয়ে বাসায় ফিরছেন। জানা গেছে, বাজার থেকে বাড়তি মুনাফা হাতিয়ে নিতে মিল পর্যায় থেকে তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে সিন্ডিকেট। সেখান থেকে ডিলারের কাছে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এতে খুচরা বাজারে সরবরাহ কমেছে। তাই বাড়তি দামেও চাহিদামতো তেল পাচ্ছেন না ক্রেতা-বিক্রেতারা। এমনকি সংকট দেখিয়ে অতিরিক্ত দাম নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা জানান, সংকট দেখিয়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েল লিটার প্রতি পাঁচ থেকে আট টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বর্তমানে খোলা পাম অয়েল ১৬৫ এবং সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে যেসব দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়, সেসব ব্যবসায়ীরা লিটার প্রতি ১৮০-১৮৫ টাকা ধরে বিক্রি করছেন। নয়াবাজারে তেল কিনতে এসেছেন মো. আশরাফ। তিনি বলেন, ‘দুই লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পুরো বাজার ঘুরেছি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর পেয়েছি। তাও গায়ের মূল্য থেকে পাঁচ টাকা বাড়তি দিয়ে কিনতে হচ্ছে।’ একই বাজারে তেল কিনতে আসা সাহেলা বেগম বলেন, ‘বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বেশি হওয়ায় রাইস ব্র্যান তেল কিনেছি।’ পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে তেল কিনতে আসা সায়েম হোসেন বলেন, ‘এলাকার দোকানে তেমন তেল নেই।

দোকানিরা রোজায় চড়া দামে বিক্রির আশায় মজুত করেছে।’ বেশ কয়েকদিন ধরেই সয়াবিন তেল নিয়ে এমন ভোগান্তির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার কারণ এবং সংকটের বিষয়ে বিভিন্ন তেল কোম্পানির ডিলাররা বলেন, কোম্পানি থেকে আমাদের আগের মতো তেল সরবরাহ করছে না। স্বাভাবিকভাবে যেখানে একজন ডিলারের চাহিদা ১০০ কার্টন, সেখানে কোম্পানি অর্ধেক তেলও দিচ্ছেনা। এ কারণে বাজারে তেলের সরবরাহ কম। আর এই সুযোগে খুচরা বিক্রেতারা নির্দিষ্ট দামের চেয়ে একটু বেশি দামে বিক্রি করছে। সয়াবিন তেলের সংকটের বিষয়ে রাফিত মিয়াজী নামে এক পাইকারি তেলের ব্যবসায়ী বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থির। দেশে ডলার সংকট এখনও চলমান। আমদানিকারকরা আগের মতো ভোজ্যতেল আমদানি করছেন না।

বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দামও আগের চেয়ে বেড়েছে। এসব কারণে ভোজ্যতেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী।’ এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘দেশের ইতিহাসে পাম অয়েলের দাম এবারের মতো আর বাড়েনি। এটাই সর্বোচ্চ দাম। মূলত উৎপাদন সংকট, বায়োডিজেলে পাম অয়েল ব্যবহারের পরিমাণ পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধিজনিত কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির বুকিং রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে গেছে। এসব কারণে ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না।’