আইনজীবী ফারজানা কাশেমী : কিছুদিন আগে প্রকাশিত এক সত্য ঘটনায় আমাদের অনেককেই আলোড়িত করেছিল। বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদের পর সন্তানের জিম্মা এক আইনগত পদক্ষেপ। আইনের সুস্পষ্ট বিধান ও নিদের্শনা অনুসারে কোন বিবাহিত দম্পতির বিচ্ছেদের পর তাদের সন্তানদের নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত জিম্মাদার হলো তাদের মা। বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া এই ধরনের সন্তানদের আইনগত অভিভাবক হন তাদের মা। কোন কারণে মা যদি আইনগত অভিভাবক হতে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত হন, তার অবর্তমানে কে বা কারা আইনগত অভিভাবক হবেন, সে বিষয়ে আইনে স্পষ্টত নিদের্শনা আছে।
জনশ্রুত হয়েছে যে, এক বিবাহিত দম্পতির দাম্পত্য জীবন অবসানের পর তাদের সন্তানদের জিম্মার প্রশ্নে বাবা, মা দু’জনই তাদের কন্যা সন্তানের জিম্মা নিতে অস্বীকার করেছিলেন। সেই সময়ে কন্যা সন্তানটির মানসিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা কতটা ধুসর হয়েছিল তা চিন্তাতীত। দিনান্তে কন্যা পৌছেঁছে পরিণত বয়সে। আজ তার বাবা, মা বয়সের কাছে নতজানু অসহায় বৃদ্ধ। যেন জীবনের ভারে নুয়ে পড়েছেন। সেদিন তার বাবা, মা পুত্র সন্তানের দায়িত্ব নিলেও কন্যার দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃত জানিয়েছিলেন। বাবা, মায়ের বৃদ্ধ, বয়স্ক অবস্থায় পুত্র আজ সুপুত্রের পরিচয় দেয়নি। তাই সেই বাবা-মায়ের ঠিকানা আজ বৃদ্ধাশ্রম। এবার সেই কন্যাটি বাবা-মায়ের সুকন্যার পরিচয় দিলো। কন্যাটি বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রম থেকে নিজ আশ্রয়ে তুলে নিলো। পরম শ্রদ্ধায়, ভালবাসায় নিজেকে ভাগ্যবতী ভেবে বাবা-মাকে নিজ ছায়ায় ফিরিয়ে এনেছে। দুঃখভারাক্রান্ত কন্যা ব্যথিত অন্তরে বলেছিল, বাবা-মা তো, তারা মুখ ফিরাতে পারলেও আমি পারিনি। এমন অসংখ্য কন্যা আমাদের ঘরে ঘরে। পরিবর্তিত সময়েও অনেক কন্যাশিশু নিজ পরিবারে নিগৃহীত-বঞ্চিত-শোষিত। কন্যা সন্তানের প্রতি স্থুল রুচির পরিচয়ে প্রকারান্তরে পুত্রকে বৈষম্যের বটমূল শিখায় পরিবার। তাই এইসব পুত্রই তার নিজ বোন, মা ও পরিণত বয়সে নিজ স্ত্রীর সাথে হেয় আচরণ করে। সেই পুত্র কিশোর বেলায় ইভটিজিং-এর মতো গর্হিত আচরণ করে। আবার কখনো কারো প্রাণ নাশের কারণ হয়। যা এক বিরাট সামাজিক সমস্যা। আমরা কেউই এমন সংকটাপন্ন সমাজ-ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে জীবন-যাপন করতে চাইনা; তা উচিতও নয়।
সুতরাং, সমান গুরুত্ব নিয়ে প্রতিটি শিশু বড় হোক। বৈষম্যমূলক আচরণ নয়; মানবিক মূল্যবোধে পরিবার-পরিজন সবাই প্রত্যেক শিশুর প্রতি যতœশীল হোক। কন্যা বা পুত্র নয়, সন্তান হিসেবে প্রতিটি শিশু লালিত-পালিত হোক। তারপরও পাশবিক আচরণ রোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশের নিষেধাজ্ঞার সুস্পষ্ট নীতিমালা কার্যকর হোক।
বৈষম্যহীন হোক শিশুদের আবাসভূমি
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ