ঢাকা ০৪:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫

বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে জননেত্রীর অবদান

  • আপডেট সময় : ১১:৪৯:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • ৯০ বার পড়া হয়েছে

মিতি সানজানা : জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে বর্তমান সরকার ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণে এক যুগান্তকারী এবং ঐতিহাসিক মাইলফলক উন্মোচিত হয়। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা প্রথমবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে তথ্য সংগ্রহের সময় ব্যক্তির লিঙ্গ পরিচয় হিসেবে ‘নারী’ ও ‘পুরুষের’ পাশাপাশি ‘হিজড়া’ হিসেবে চিহ্নিত করার সুযোগ থাকবে। পাসপোর্টেও তাদের লিঙ্গ পরিচয় হবে ‘হিজড়া’।” ক্রোমোজম বা হরমনে ত্রুটির কারণে কারও লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণে জটিলতা দেখা দিলে বা দৈহিক লিঙ্গ পরিচয়ের সঙ্গে আচরণগত মিল না থাকলে তাদের চিহ্নিত করা হয় হিজড়া হিসেবে। হিজড়া জনগোষ্ঠীর শারীরিক ত্রুটি, ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য সম্পূর্ণরূপে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। এটির ওপর তাদের কোনো হাত নেই। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে আমরা এ সত্য ভুলে যাই। এই বৈচিত্র্য সমাজ স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করতে পারে না। সমাজ ভুলে যায় তারাও মানুষ। বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় এ ধরনের ব্যক্তিদের ‘নিচু’ দৃষ্টিতে দেখা হয় বলে পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র- সব জায়গায়ই তাদের হতে হয় নিগৃহীত, অধিকারবঞ্চিত। এ কারণেই অনেকেই অন্য হিজড়াদের সঙ্গে গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করেন।
বাংলাদেশে যারা তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য বা হিজড়া রয়েছেন তারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হিসেবে শিক্ষা, চিকিৎসা ও আবাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যর শিকার হয়ে আসছিলেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সময়ে তাদের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও তথ্য সংগ্রহের সময় তাদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে সরকার এর দেওয়া নানাবিধ সুবিধা তাদের কাছে পৌঁছায় না। হিজড়া ও লৈঙ্গিক বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য, জীবনমান উন্নয়ন ও মানবাধিকার নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দিতে সরকার ২০১৩ সালের নভেম্বরে হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা প্রণয়ন করে। পরে ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি হিজড়াদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে গেজেটে এই জনগোষ্ঠীকে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
ফলে হিজড়া সম্প্রদায় লিঙ্গ পরিচয়ের ক্ষেত্রে নারী বা পুরুষের বাইরে নিজেদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ বা ‘হিজড়া’ লেখার সুযোগ হয়। জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উদ্যোগে রাষ্ট্রীয়ভাবে তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে হিজড়াদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং নাগরিকত্বের সনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট করার বাধা দূর হয়। ১৯২০ সালের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠা ১৯তম সংবিধান সংশোধন এর মধ্য দিয়ে আমেরিকায় নারীদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সেখানে বাংলাদেশের মতো একটি দেশে এই জনগোষ্ঠীকে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া পৃথিবীর ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। ঝউএঝ- মোট ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা ও ১৬৯টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা এর একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যমাত্রা হলা অভীষ্ট ১৬ যেখানে টেকসই উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভু্ক্িতমূলক সমাজ তৈরি করার কথা বলা হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে সব সময় তার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। শুধু তাই নয় তিনি সেসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি শুধু একজন রাষ্ট্র নায়ক হিসেবে নয়, বরং দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য ভালোবাসা এবং আবেগের জায়গা না থাকলে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়। শুধু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সবার অধিকার সুনিশ্চিত করার মাধ্যমে বৈষম্যহীন সমাজ গঠিত হবে এবং তারই মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন ত্বরান্বিত হবে সেটি আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
লেখক: সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং অধিকারকর্মী।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে জননেত্রীর অবদান

আপডেট সময় : ১১:৪৯:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

মিতি সানজানা : জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে বর্তমান সরকার ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণে এক যুগান্তকারী এবং ঐতিহাসিক মাইলফলক উন্মোচিত হয়। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা প্রথমবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে তথ্য সংগ্রহের সময় ব্যক্তির লিঙ্গ পরিচয় হিসেবে ‘নারী’ ও ‘পুরুষের’ পাশাপাশি ‘হিজড়া’ হিসেবে চিহ্নিত করার সুযোগ থাকবে। পাসপোর্টেও তাদের লিঙ্গ পরিচয় হবে ‘হিজড়া’।” ক্রোমোজম বা হরমনে ত্রুটির কারণে কারও লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণে জটিলতা দেখা দিলে বা দৈহিক লিঙ্গ পরিচয়ের সঙ্গে আচরণগত মিল না থাকলে তাদের চিহ্নিত করা হয় হিজড়া হিসেবে। হিজড়া জনগোষ্ঠীর শারীরিক ত্রুটি, ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য সম্পূর্ণরূপে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। এটির ওপর তাদের কোনো হাত নেই। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে আমরা এ সত্য ভুলে যাই। এই বৈচিত্র্য সমাজ স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করতে পারে না। সমাজ ভুলে যায় তারাও মানুষ। বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় এ ধরনের ব্যক্তিদের ‘নিচু’ দৃষ্টিতে দেখা হয় বলে পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র- সব জায়গায়ই তাদের হতে হয় নিগৃহীত, অধিকারবঞ্চিত। এ কারণেই অনেকেই অন্য হিজড়াদের সঙ্গে গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করেন।
বাংলাদেশে যারা তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য বা হিজড়া রয়েছেন তারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হিসেবে শিক্ষা, চিকিৎসা ও আবাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যর শিকার হয়ে আসছিলেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সময়ে তাদের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও তথ্য সংগ্রহের সময় তাদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে সরকার এর দেওয়া নানাবিধ সুবিধা তাদের কাছে পৌঁছায় না। হিজড়া ও লৈঙ্গিক বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য, জীবনমান উন্নয়ন ও মানবাধিকার নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দিতে সরকার ২০১৩ সালের নভেম্বরে হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা প্রণয়ন করে। পরে ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি হিজড়াদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে গেজেটে এই জনগোষ্ঠীকে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
ফলে হিজড়া সম্প্রদায় লিঙ্গ পরিচয়ের ক্ষেত্রে নারী বা পুরুষের বাইরে নিজেদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ বা ‘হিজড়া’ লেখার সুযোগ হয়। জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উদ্যোগে রাষ্ট্রীয়ভাবে তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে হিজড়াদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং নাগরিকত্বের সনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট করার বাধা দূর হয়। ১৯২০ সালের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠা ১৯তম সংবিধান সংশোধন এর মধ্য দিয়ে আমেরিকায় নারীদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সেখানে বাংলাদেশের মতো একটি দেশে এই জনগোষ্ঠীকে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া পৃথিবীর ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। ঝউএঝ- মোট ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা ও ১৬৯টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা এর একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যমাত্রা হলা অভীষ্ট ১৬ যেখানে টেকসই উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভু্ক্িতমূলক সমাজ তৈরি করার কথা বলা হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে সব সময় তার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। শুধু তাই নয় তিনি সেসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি শুধু একজন রাষ্ট্র নায়ক হিসেবে নয়, বরং দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য ভালোবাসা এবং আবেগের জায়গা না থাকলে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়। শুধু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সবার অধিকার সুনিশ্চিত করার মাধ্যমে বৈষম্যহীন সমাজ গঠিত হবে এবং তারই মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন ত্বরান্বিত হবে সেটি আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
লেখক: সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং অধিকারকর্মী।