ঢাকা ০৬:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৈরাগে ভালবাসা

  • আপডেট সময় : ১১:৫৮:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ জুন ২০২২
  • ১৪৪ বার পড়া হয়েছে

ফারজানা কাশেমী আইনজীবী : রুপ কানুয়া কেস, ভারতবর্ষ এর জন্য এক আলোকবর্তিকা। এই কেসের সিদ্বান্ত থেকে এক যুগান্তকারী দিক-নির্দেশনা প্রতিষ্ঠিত হয়। যেখানে সুস্পষ্টভাবে সহমরণ প্রথা আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ হয়।
এই কেসের প্রেক্ষাপটে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর-এর অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর মাতৃসম ভাবীকে এই কুপ্রথাতে বলি হতে হয়েছিল। তাই তিনি এই নিষ্ঠুর প্রথাগত নিয়মের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। যেখানে জয় হয়েছিল মানবিকতার, ছিন্ন করেছিল পাশবিকতার জঞ্জাল, বেড়াজাল। মানুষ তার ভালবাসার মানুষের জন্য যুদ্ধে নামে, তাই তার হাজারো চেষ্টা তাকে জয়ের মালা উপহার দেয়।
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রিন্স দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সারদা দেবীর সন্তান। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির কৃত্তিমান গুণিজন। সংগীত, তলোয়ার চালানো, ছবি আঁকা, সাহিত্য রচনা, ইস্টিমার-এর প্রচলন, নীল চাষের ব্যবসা, জমিদরি চালানো সব বিষয়ে তাঁর ব্যাপক বিচরণ ছিল। তাঁর রচনা করা বহু সাহিত্য এখন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে। তাঁর আঁকা লালন সম্রাট-এর একমাত্র চিত্রকর্ম ও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে। অধীনস্থ কর্মচারির কন্যা কাদম্বিনীর প্রেমে মগ্ন হয়েছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। কাদম্বিনীর সাথে তাঁর বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল। তাঁর সকল কর্মে এই নারীর অবদান স্বীকৃত ছিল। কিন্তু কর্মচারির কন্যা বিধায় তাঁকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান প্রদানে অনীহা লক্ষণীয়। সন্তানহীনতা, অবহেলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বৈরাগে একদিন কাদম্বিনী আতœহত্যা করেছিলেন। ৩৫ বছর বয়সে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর স্ত্রী বিয়োগ হয়েছিল। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করেননি। স্ত্রীর মত্যুর পর তাঁর সকল কাজে ভরাডুবি নেমেছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর জীবন ও সাহিত্য রচনায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর অবদান স্বীকৃত। কথিত আছে, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর এর স্বয়ং পশ্চাৎপদতায় গিরীশ চন্দ্র সেন এর বাংলা নাটকে আবির্ভাব হয়েছিল।
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের এক জন্মদিনে তাঁর মেজ দাদা ও মেজ বৌঠানের দেয়া উপহারে তাঁর কিছুটা অভিমান হয়েছিল। যেখানে তিনি ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলেছিলেন- শুধু এই টুকুই কি তার প্রাপ্য! ৫৯ বছর বয়সে তিনি দেহ ত্যাগ করেছিলেন।
কেউ ভালবাসার জন্য যুদ্ধ জয় করে। কেউ ভালবাসায় নিজের গন্তব্যে পৌঁছায়। আবার কেউ ভালবেসে কুল কিনারা হারায়। কেউবা উদাসীনতায় ভালবাসা হারায়। এক জীবনের এই ধ্রুব সত্য অস্বীকারে কাউকে আবার চরম মূল্য দিতে হয়। তাই পরম যতেœ এই জাদুর পরশ আগলে রাখতে হয়….
বৈরাগে ভালবাসা যেনো অসীম প্রান্তর-এর সমতুল্য। বিরহে প্রাপ্তি তাই হয়ত শূন্য। যতেœ থাকুক ভালবাসা। হারিয়ে যাওয়া ভালবাসা খুঁজে পাওয়া যায় না…নদীর জলে ভালবাসা খোঁজার কোন অর্থ কি হয়….?

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বৈরাগে ভালবাসা

আপডেট সময় : ১১:৫৮:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ জুন ২০২২

ফারজানা কাশেমী আইনজীবী : রুপ কানুয়া কেস, ভারতবর্ষ এর জন্য এক আলোকবর্তিকা। এই কেসের সিদ্বান্ত থেকে এক যুগান্তকারী দিক-নির্দেশনা প্রতিষ্ঠিত হয়। যেখানে সুস্পষ্টভাবে সহমরণ প্রথা আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ হয়।
এই কেসের প্রেক্ষাপটে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর-এর অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর মাতৃসম ভাবীকে এই কুপ্রথাতে বলি হতে হয়েছিল। তাই তিনি এই নিষ্ঠুর প্রথাগত নিয়মের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। যেখানে জয় হয়েছিল মানবিকতার, ছিন্ন করেছিল পাশবিকতার জঞ্জাল, বেড়াজাল। মানুষ তার ভালবাসার মানুষের জন্য যুদ্ধে নামে, তাই তার হাজারো চেষ্টা তাকে জয়ের মালা উপহার দেয়।
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রিন্স দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সারদা দেবীর সন্তান। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির কৃত্তিমান গুণিজন। সংগীত, তলোয়ার চালানো, ছবি আঁকা, সাহিত্য রচনা, ইস্টিমার-এর প্রচলন, নীল চাষের ব্যবসা, জমিদরি চালানো সব বিষয়ে তাঁর ব্যাপক বিচরণ ছিল। তাঁর রচনা করা বহু সাহিত্য এখন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে। তাঁর আঁকা লালন সম্রাট-এর একমাত্র চিত্রকর্ম ও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে। অধীনস্থ কর্মচারির কন্যা কাদম্বিনীর প্রেমে মগ্ন হয়েছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। কাদম্বিনীর সাথে তাঁর বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল। তাঁর সকল কর্মে এই নারীর অবদান স্বীকৃত ছিল। কিন্তু কর্মচারির কন্যা বিধায় তাঁকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান প্রদানে অনীহা লক্ষণীয়। সন্তানহীনতা, অবহেলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বৈরাগে একদিন কাদম্বিনী আতœহত্যা করেছিলেন। ৩৫ বছর বয়সে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর স্ত্রী বিয়োগ হয়েছিল। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করেননি। স্ত্রীর মত্যুর পর তাঁর সকল কাজে ভরাডুবি নেমেছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর জীবন ও সাহিত্য রচনায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর অবদান স্বীকৃত। কথিত আছে, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর এর স্বয়ং পশ্চাৎপদতায় গিরীশ চন্দ্র সেন এর বাংলা নাটকে আবির্ভাব হয়েছিল।
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের এক জন্মদিনে তাঁর মেজ দাদা ও মেজ বৌঠানের দেয়া উপহারে তাঁর কিছুটা অভিমান হয়েছিল। যেখানে তিনি ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলেছিলেন- শুধু এই টুকুই কি তার প্রাপ্য! ৫৯ বছর বয়সে তিনি দেহ ত্যাগ করেছিলেন।
কেউ ভালবাসার জন্য যুদ্ধ জয় করে। কেউ ভালবাসায় নিজের গন্তব্যে পৌঁছায়। আবার কেউ ভালবেসে কুল কিনারা হারায়। কেউবা উদাসীনতায় ভালবাসা হারায়। এক জীবনের এই ধ্রুব সত্য অস্বীকারে কাউকে আবার চরম মূল্য দিতে হয়। তাই পরম যতেœ এই জাদুর পরশ আগলে রাখতে হয়….
বৈরাগে ভালবাসা যেনো অসীম প্রান্তর-এর সমতুল্য। বিরহে প্রাপ্তি তাই হয়ত শূন্য। যতেœ থাকুক ভালবাসা। হারিয়ে যাওয়া ভালবাসা খুঁজে পাওয়া যায় না…নদীর জলে ভালবাসা খোঁজার কোন অর্থ কি হয়….?