আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ৮ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। বৈধ নথিপত্র ছাড়াই বসবাসের অভিযোগে দিল্লি পুলিশ তাদের আটক করে এবং পরে এফআরআরও অফিসের মাধ্যমে তাদের ফেরত পাঠিয়েছে।
মূলত অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করা বাংলাদেশিদের খুঁজতে সম্প্রতি মাঠে নেমেছে দিল্লি প্রশাসন। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, কোনও বৈধ নথি ছাড়াই জাতীয় রাজধানীতে বসবাসকারী আটজন অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীকে চিহ্নিত করার পর তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পরবর্তীতে নির্বাসিত করা হয়েছে।
রাজধানী দিল্লিতে বাংলাদেশি নাগরিকসহ অবৈধভাবে অভিবাসীদের থাকার বিষয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ রোধে দিল্লি পুলিশ সম্প্রতি দক্ষিণ-পশ্চিম জেলাজুড়ে পরিচয় যাচাই-বাছাইকরণ অভিযান এবং যৌথ পরিদর্শনসহ একাধিক অভিযান পরিচালনা করছে।
ইন্ডিয়া টুডে বলছে, দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লি পুলিশের জারি করা এটিই প্রথম কোনও আনুষ্ঠানিক নির্বাসন আদেশ। শহরে অননুমোদিত এবং অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত এবং নির্বাসনে পাঠাতে বিশেষ অভিযান শুরু করা হবে বলে দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সচিবালয় ঘোষণা দেওয়ার দুই সপ্তাহ পরে এই পদক্ষেপ সামনে এলো।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, বিশেষ করে গত আগস্টে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর বাংলাদেশি অভিবাসীদের ‘ব্যাপক ঢেউ’ মোকাবিলায় স্থানীয় থানা এবং বিশেষ ইউনিটের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি বিশেষ দলকে পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান চালানোর জন্য এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে।
পরিচয় যাচাই-বাছাইকরণের অভিযান চলাকালীন ডোর-টু-ডোর গিয়ে এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় এবং এসময় প্রায় ৪০০ পরিবারের তথ্য যাচাই এবং তাদের নথি সংগ্রহ করা হয়েছিল। এমনকি যাচাইকরণের অংশ হিসেবে বিভিন্ন নথি পশ্চিমবঙ্গে তাদের নিজ নিজ ঠিকানায় যাচাইয়ের জন্যও পাঠানো হয়েছিল। সন্দেহভাজনদের তথ্য ম্যানুয়ালি যাচাইয়ের জন্য একটি বিশেষ দলও গঠন করা হয়েছে এবং তাদের পশ্চিমবঙ্গে পাঠানো হয়েছে।
অভিযানের সময় আট বাংলাদেশী নাগরিককে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হয় এবং ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসের (এফআরআরও) মাধ্যমে বহিষ্কার করা হয়। নির্বাসিতদের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিক সামসুল শেখ স্বীকার করেছেন, ঢাকায় তার বাসা ছিল এবং ঘন বনের মধ্য দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। এরপর ভারতে কিছুদিন থাকার পর তিনি আবারও বাংলাদেশে ফিরে যান এবং স্ত্রী পরিনা বেগমকে তাদের ছয় সন্তানসহ ভারতে নিয়ে আসেন।
তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, তারা বাংলাদেশি এবং সন্দেহ এড়াতে তারা তাদের বাংলাদেশি আইডি ধ্বংস করে ফেলে।
১৩ বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার: অন্যদিকে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং বৈধ নথি ছাড়া বসবাসের অভিযোগে এক ডজনেরও বেশি বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মহারাষ্ট্র পুলিশের সন্ত্রাস-বিরোধী স্কোয়াড (এটিএস) রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এই বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তার করেছে। শনিবার ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বৈধ নথিপত্র ছাড়াই ভারতে বসবাসের অভিযোগে বাংলাদেশি সাতজন পুরুষ ও ছয়জন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজ্যের থানে, নভি মুম্বাই এবং সোলাপুরে স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে অভিযান চালিয়েছে এটিএস।
স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, বেআইনি প্রবেশের সুযোগ রয়েছে সন্দেহজনক এমন নির্দিষ্ট কিছু রুট ও এলাকায় গত ২৪ ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক তদন্তে দেখা দেখা যায়, গ্রেপ্তারকৃত বাংলাদেশিরা আধার কার্ডসহ জাল নথি ব্যবহার করে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। পুলিশ বলছে, ওই বাংলাদেশিরা ভারতের ফরেনার্স আইন-১৯৪৬, পাসপোর্ট (ভারতে প্রবেশ) আইন-১৯৫০ এবং পাসপোর্ট বিধি-১৯৬৭ লঙ্ঘন করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
মহারাষ্ট্র পুলিশের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আইনি ব্যবস্থাকে পাস কাটিয়ে জাল নথির অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এই ধরনের কর্মকাণ্ড ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’
পুলিশ বলেছে, গ্রেপ্তারকৃতরা স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় জাল পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছিলেন বলে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ বর্তমানে এই জাল নথি তৈরির নেটওয়ার্কের খোঁজ করছে। থানের স্থানীয় পুলিশ এই মামলার তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে। সূত্র: পিটিআই।