প্রত্যাশা ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নিউ ইয়র্কের মেয়র জোহরান মামদানির সাক্ষাৎ কোনো জটিলতা ছাড়াই শেষ হলো। সামনাসামনি না এসেই দুজন যেভাবে তীব্র বাক্যবাণে একে অপরকে নাস্তানাবুদ করার খেলায় নেমেছিলেন। তবে শুক্রবার (২১ নভেম্বর) মুখোমুখি হয়ে বরং পরস্পরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ওভাল অফিসে শুক্রবার দু’জনই নিউ ইয়র্ক সিটির জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট মোকাবিলায় যৌথ আগ্রহের কথা বারবার উল্লেখ করেন। তারা হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন, এমনকি মামদানি তার বিরুদ্ধে নির্বাচনি প্রচারে করা আক্রমণাত্মক মন্তব্য নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে ট্রাম্পকেও হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়। গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেওয়া মামদানিকে এর আগে ‘স্বৈরাচার’ বলেছিলেন ট্রাম্প। আর বৈঠকের আগেই ট্রাম্পের মুখপাত্র মামদানির হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণে বিরক্ত হয়ে ‘একজন কমিউনিস্টের আগমন’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। তাই, তাদের নমনীয়তা দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিস্মিত হয়েছেন। তবে এটি ইঙ্গিত দেয় যে দু’জনই উপলব্ধি করছেন-নিউ ইয়র্কের সংকট সমাধান তাদের রাজনৈতিক সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রাম্পের মুখে মামদানির প্রশংসা: ব্যক্তিগত বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে দু’জনের বোঝাপড়ার ছাপ স্পষ্ট ছিল। ট্রাম্পের ডান পাশে হাত জোড় করে দাঁড়ান মামদানি, আর ট্রাম্প রেজলিউট ডেস্কের পেছনে আরামদায়ক ভঙ্গিতে বসে থাকেন। ট্রাম্প কোনো আক্রমণাত্মক মন্তব্য না করে বরং মামদানিকে একাধিকবার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, মামদানি একজন সত্যিকারের ভালো মেয়র হবেন বলে তিনি আশা করেন। পরে তিনি আরো বলেন, তিনি খুব ভালো কাজ করতে পারবেন বলে তার দৃঢ় বিশ্বাস।
ব্যয় সংকট নিয়ে দুশ্চিন্তা: দু’জনের একই সুরের অন্যতম কারণ হলো নিউ ইয়র্কের ব্যয়সংকট মোকাবিলায় তাদের অভিন্ন অগ্রাধিকার। ২০২৪ সালের ভোটারদের ক্রয়ক্ষমতা–সংকট ও মূল্যস্ফীতির ক্ষোভকে কেন্দ্র করে ট্রাম্প পুনর্র্নিবাচিত হন। অন্যদিকে, মামদানি তার পুরো নির্বাচনী প্রচারে জোর দেন আবাসন সংকট ও বাড়িভাড়া বৃদ্ধির সমস্যায়। মামদানি জানান, তিনি ও ট্রাম্প আলোচনা করেছেন কীভাবে নিউ ইয়র্কবাসীর এই সংকট সমাধান করা যায়। মধ্যপ্রাচ্য শান্তি বা মতাদর্শগত ভিন্নমত নিয়ে প্রশ্ন এলে মামদানি আবারো ব্যয়ের সংকটে ফিরে আসেন। আইনশৃঙ্খলা ও অভিবাসন নিয়েও তাদের কিছু মিল পাওয়া যায়। মামদানি বলেন, নিউ ইয়র্কে ফেডারেল অভিবাসন অভিযানের বিষয়ে জনগণের উদ্বেগ তিনি ট্রাম্পকে জানিয়েছেন। ট্রাম্প জানান, তারা অপরাধ মোকাবিলাকে অভিবাসনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। মামদানি মেয়র হলে তিনি নিউ ইয়র্কে থাকতে নিরাপদ বোধ করবেন বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
রিপাবলিকানদের কৌশলে জটিলতা: এই সৌহার্দ্যমূলক দৃশ্য ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে মামদানিকে ডেমোক্র্যাটদের ‘দুর্বলের প্রতীক’ হিসেবে ব্যবহার করার রিপাবলিকান পরিকল্পনাকে জটিল করতে পারে। রিপাবলিকানরা তাকে ‘অ্যান্টি-পুলিশ’, ‘অ্যান্টি-ক্যাপিটালিস্ট’ ও ‘অ্যান্টি-ইসরায়েল’ হিসেবে তুলে ধরার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ওভাল অফিসে দুই পক্ষের এই বন্ধুসুলভ আচরণ সেই কৌশলকে দুর্বল করতে পারে। ট্রাম্প বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন মামদানি অনেক রক্ষণশীল মানুষকে বিস্মিত করবেন।
জিহাদ ও ফ্যাসিবাদ ইস্যু এড়িয়ে যাওয়া: নির্বাচনকালীন দু’জনই একে অন্যের বিরুদ্ধে কঠোর রাজনৈতিক মন্তব্য করেছিলেন। এক সাংবাদিক তাদের সেই পুরোনো মন্তব্যের কথা মনে করিয়ে দিলে দু’জনই বিষয়টি একপাশে রেখে আবারো প্রশংসামূলক সুরে ফিরে যান। ট্রাম্প এমনকি মামদানিকে সুযোগ দেন প্রেসিডেন্টকে ‘ফ্যাসিস্ট’ মনে করেন কি না-এ প্রশ্নের উত্তর দিতে। হাসতে হাসতে ট্রাম্প বলেন, ঠিক আছে, চাইলে ‘হ্যাঁ’ বলুন, ব্যাখ্যা করার চেয়ে সেটা সহজ। হবু মেয়রকে নিয়ে শুক্রবার ট্রাম্পের সবচেয়ে কঠোর মন্তব্য ছিল, ‘মামদানির কিছু মতামত একটু বাড়াবাড়ি’।
সম্মেলনের এক পর্যায়ে, নিউ ইয়র্কের রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান এলিস স্টেফানিকের দাবি উদ্ধৃত করে একজন সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেন, ট্রাম্প কি এখন একজন ‘জিহাদির’ পাশে দাঁড়িয়ে আছেন বলে মনে করেন কিনা। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলেন, না, আমি তা মনে করি না। প্রেসিডেন্ট বলেন, প্রচারণায় অনেক কথাই বলা হয়। তবে তিনি খুব যোগ্য একজন মানুষ। মামদানি ও ট্রাম্পের একটি মিল হলো, তারা দু’জনেই নিউ ইয়র্কের মানুষ-বিশেষত কুইন্সের সঙ্গে তাদের সংযোগ রয়েছে। ট্রাম্পের শৈশব কেটেছে জ্যামাইকা এস্টেটসে, আর মামদানি থাকেন অ্যাস্টোরিয়ায়। মামদানির ভাষায়, নিউ ইয়র্ক শহর নিয়ে তাদের ছিল সামাজিক ভালোবাসা। ট্রাম্পও নিজের ছোটবেলার শহর নিয়ে সস্নেহ ভঙ্গিতে কথা বলেন। তিনি বলেন, এই শহর অসাধারণ হতে পারে-যদি মামদানি সাফল্য অর্জন করে, আমি খুব খুশি হবো।
সানা/আপ্র/২২/১১/২০২৫





















