নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউনের পঞ্চম দিনে রাজধানীর সড়কগুলোতে বেড়েছে গাড়ির চাপ। সেই সঙ্গে বেড়েছে লোক চলাচলও। যদিও লকডাউনে জরুরি পরিষেবা ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। সরেজমিনে দেখো গেছে, লকডাউনের পঞ্চম দিনে রাজধানীর সড়কগুলোতে বেড়েছে গাড়ির চাপ। সেইসঙ্গে বেড়েছে লোক চলাচল এবং রিকশাও। অবাধে ঘোরাফেরা করছে মানুষ। অনেকের মুখেও থাকছে না মাস্ক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি টের পেলে যে যার মত সরে পড়ছেন। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেকপোস্ট রয়েছে। সব গাড়ি থামিয়ে অহেতুক ঘোরাঘুরি করছে কি না তা যাচাই ও কাগজপত্র চেক করা হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে দেখা যায় যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারা ব্যক্তিগত গাড়িগুলোকে ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে, জরিমানাও করা হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্টগুলোতে মানুষকে নানা অজুহাতও দিতে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে পথচারী চয়নের সাথে কথা হয়। বাইরে বে হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ তিন দিন বাসার বাইরে বের হই না। বাসার বাজার শেষ হয়ে গেছে, তাই বাজারে যাচ্ছি। অন্য একজনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ওষুধ কিনতে বাইরে বের হয়েছি। অনেকই আবার কথা বলতে রাজি হননি। তাদের বাইরে বের হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে পাশ কাটিয়ে চলে যান। এদিকে ১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত সরকারঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউনে সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ রাখার কথা বলা হলেও বেশ কিছু অফিস খোলা রয়েছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করেন তারা কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বের হয়েছেন। সেক্ষেত্রে কেউ ব্যক্তিগত গাড়িতে বা অন্যের গাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রজ্ঞাপনে বলা ছিল, কোনো ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তায় নামবে না। প্রয়োজনে অফিস কর্তৃপক্ষ কর্মীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করবে। মূলত এই বিষয়টি মাথায় রেখেই পুলিশ গাড়িগুলোকে কঠোরভাবে চেক করছে।
পাড়া-মহল্লায় উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি, চলছে লুকোচুরি : দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউনের পঞ্চম দিনে সোমবার রাজধানীতে নানা অজুহাতে লোক চলাচল অনেক বেড়েছে। অলিতে-গলিতে ছলছে আড্ডা। স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। বিশেষ করে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান, রাস্তার মোড়ে অপ্রয়োজনে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে মানুষজনকে। খোলা রয়েছে প্রজ্ঞাপনে বন্ধ রাখতে বলা চায়ের দোকান, সেলুন, হার্ডওয়্যারসহ বিভিন্ন দোকানপাট। প্রধান সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি দেখামাত্র ঝপাঝপ দোকান বন্ধ করে সটকে পড়ছে গলির ভেতর। লোকজন দৌড়ে আড়ালে সরে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আবার বের হয়ে মেতে উঠছে আড্ডায়।
গতকাল সোমবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এ চিত্র দেখা যায়। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ, ঢাকা উদ্যান, নবোদয় হাউজিং, নবীনগর হাউজিংসহ বিভিন্ন এলাকার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কঠোর বিধিনিষেধের (লকডাউন) তোয়াক্কা না করে অবাধে চলাফেরা করছে মানুষ। মানা হচ্ছে না কোনো স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব। সরকারের দেয়া প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জরুরি পরিষেবা ব্যতীত সব দোকানপাট বন্ধ রাখার কথা বলা হলেও খোলা রাখা হয়েছে সব ধরনের দোকানপাট। এদিকে প্রজ্ঞাপনে খাবারের দোকান খোলা থাকলেও সেখানে বসে খাবার খাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও কেউই মানছেন না সে নিয়ম। সাধারণত খেটে খাওয়া দিনমজুর শ্রেণির মানুষেরা ভিড় করছেন হোটেলগুলোতে। অলি-গলিতে চায়ের দোকানে চলছে আড্ডা। বেশিরভাগ মানুষের মুখেই থাকছে না মাস্ক। বেড়েছে রাস্তাঘাটে মানুষের চলাফেরা। সেইসঙ্গে নিজস্ব পরিবহন ও রিকশার চাপ চোখে পড়ার মতো। ভ্যানের উপর চলছে সবজি ও নানান ফল বিক্রি আর সেখানেও ভিড় জমাচ্ছেন মানুষ। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। খোলা রয়েছে জরুরি সেবার বাইরে থাকা সেলুন, হার্ডওয়্যার, ইলেকট্রনিক, ভাঙ্গারি দোকান, টেইলার্স, লন্ড্রিসহ বিভিন্ন দোকান। কোথাও কোথাও আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর চোখ ফাকি দিতে চলছে পাহারা। অনেক দোকানের এক সাটার খোলা, আবার অনেক সাটার নামিয়ে ভেতরে একজন বাইরে একজন দাঁড়িয়ে কেনাবেচা করছেন। পাশাপাশি পুলিশ আসছে কিনা সেটিও দেখছেন। পুলিশের গাড়ি আসলে বাইরে থাকা ব্যক্তি দোকানের সাটারে তালা লাগিয়ে সটকে পড়ছেন। এভাবেই দিনভর চলছে লুকোচুরি খেলা।
বেড়েছে গাড়ি ও লোক চলাচল
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ