ঢাকা ০২:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫

বেসামাল চালের বাজার

  • আপডেট সময় : ০১:৩৪:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ অগাস্ট ২০২১
  • ১০০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদনের পরও বেসামাল হয়ে পড়েছে দেশের চালের বাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম ২-৪ টাকা বেড়ে গেছে। জানা গেছে, গত সপ্তাহে রাজধানীর বাজারগুলোতে মোটা পাইজাম ও স্বর্ণা চাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৪৮ টাকা। দাম বেড়ে চলতি সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা। চলতি সপ্তাহে ২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৬৫ টাকা কেজিতে। যা আগের সপ্তাহে ৫০-৫২ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। ভালোমানের ২৮ চাল ও নি¤œমানের নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৫৬-৬০ টাকা কেজিতে। একইভাবে মাঝারি ধরনের নাজির ও মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৬-৬৮ টাকা কেজি। আর ভালোমানের চিকন নাজির ও মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকা কেজিতে। এছাড়াও পাইজাম আতপ ৬৩ থেকে ৬৫ টাকা, পোলাওর চাল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চাল কেজিতে বেড়েছে দুই টাকা। এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ এবং গত বছরের তুলনায় মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি দামে। এছাড়া মাঝারি মানের চালের দাম গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। আর চিকন চালের দাম বেড়েছে প্রায় ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে অনেকই চাকরি হারিয়েছে। কমেছে অনেকের আয়ও। এই অবস্থায় চালের দাম বাড়ায় দিশেহারা বিপর্যস্ত মানুষগুলো। তেল, পেঁয়াজ ও চালের দাম বাড়ায় সবমিলে চরম অস্বস্তিতে দিন পার করছেন তারা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়তদার ও মিলারদের কাছে থেকে বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। তাই বেশি দাম বিক্রি করতে হচ্ছে। মিলাররা বলছেন, ধানের দাম হওয়ায় চালের দামও বেড়েছে। কৃষিবিদদের দাবি, এবার বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদন বেড়েছে। কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান কেনার পরও এখন মিলাররা দাম বাড়িয়েছে। আর এই অজুহাতে চালের দাম বাড়ছে। বর্তমানে ৮০ শতাংশ ধান রয়েছে মিলারদের কাছে। মিলাররাই যোগসাজশে চালের দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে চাল কিনতে আসা মুবিনুল ইসলাম বলেন, লকডাউনের কারণে এখন সবাই বাড়িতে থাকেন। তাই চাল আগের চেয়ে বেশি লাগে। তার ওপর দাম বাড়ছে। এই অবস্থায় কতদিন চলবো। চাল ব্যবসায়ী রাইসুল আমান বলেন, মোটা চালের দামও এবার বাড়ছে। গত সপ্তাহে মোটা পাইজাম চাল বিক্রি করেছি ৪৬-৪৮ টাকা কেজি। এখন সেই চাল বিক্রি করছি ৫০ থেকে ৫২ টাকা। একই দামে বিক্রি করছি গুটি স্বর্ণা চাল। দাম বাড়ছে, তাই পরিমাণেও কম কিনছে মানুষ। বাদামতলী ও বাবু বাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে এবার বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে, তাই চালের দাম বাড়ছে। তবে মিলাররা দাবি করছেন, কৃষকের ধান এখনো তাদের হাতে আসেনি। ধান রয়েছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের হাতে। আর মৌসুমি ব্যবসায়ীরা উচ্চ দামে ধান বিক্রি করছেন। তাদের কাছ থেকে এক হাজার কিংবা ১০৫০ টাকা মণ ধান কিনতে হচ্ছে মিলারদের। তাই চালও বেশি দাম বিক্রি করতে হচ্ছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, মোটা চালের কেজি ৫০ টাকা, যা গত কয়েক বছরেও হয়নি। তিনি বলেন, খোলা বাজারে কম দামে আরও বেশি চাল বিক্রি করতে হবে। যাতে ব্যবসায়ীদের ওপর একটা চাপ তৈরি হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, অবৈধভাবে কেউ চালের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে কি না তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি। ওএমএসের বরাদ্দ অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। মাঝারি ও সরু চালেরও দাম বাড়ছে। তবে এটা ওএমএসের কার্যক্রম দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। সেক্ষত্রে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আপাতত ১০ লাখ টন চাল আমদানির চিন্তা করা হচ্ছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বেসামাল চালের বাজার

আপডেট সময় : ০১:৩৪:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ অগাস্ট ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদনের পরও বেসামাল হয়ে পড়েছে দেশের চালের বাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম ২-৪ টাকা বেড়ে গেছে। জানা গেছে, গত সপ্তাহে রাজধানীর বাজারগুলোতে মোটা পাইজাম ও স্বর্ণা চাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৪৮ টাকা। দাম বেড়ে চলতি সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা। চলতি সপ্তাহে ২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৬৫ টাকা কেজিতে। যা আগের সপ্তাহে ৫০-৫২ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। ভালোমানের ২৮ চাল ও নি¤œমানের নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৫৬-৬০ টাকা কেজিতে। একইভাবে মাঝারি ধরনের নাজির ও মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৬-৬৮ টাকা কেজি। আর ভালোমানের চিকন নাজির ও মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকা কেজিতে। এছাড়াও পাইজাম আতপ ৬৩ থেকে ৬৫ টাকা, পোলাওর চাল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চাল কেজিতে বেড়েছে দুই টাকা। এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ এবং গত বছরের তুলনায় মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি দামে। এছাড়া মাঝারি মানের চালের দাম গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। আর চিকন চালের দাম বেড়েছে প্রায় ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে অনেকই চাকরি হারিয়েছে। কমেছে অনেকের আয়ও। এই অবস্থায় চালের দাম বাড়ায় দিশেহারা বিপর্যস্ত মানুষগুলো। তেল, পেঁয়াজ ও চালের দাম বাড়ায় সবমিলে চরম অস্বস্তিতে দিন পার করছেন তারা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়তদার ও মিলারদের কাছে থেকে বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। তাই বেশি দাম বিক্রি করতে হচ্ছে। মিলাররা বলছেন, ধানের দাম হওয়ায় চালের দামও বেড়েছে। কৃষিবিদদের দাবি, এবার বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদন বেড়েছে। কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান কেনার পরও এখন মিলাররা দাম বাড়িয়েছে। আর এই অজুহাতে চালের দাম বাড়ছে। বর্তমানে ৮০ শতাংশ ধান রয়েছে মিলারদের কাছে। মিলাররাই যোগসাজশে চালের দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে চাল কিনতে আসা মুবিনুল ইসলাম বলেন, লকডাউনের কারণে এখন সবাই বাড়িতে থাকেন। তাই চাল আগের চেয়ে বেশি লাগে। তার ওপর দাম বাড়ছে। এই অবস্থায় কতদিন চলবো। চাল ব্যবসায়ী রাইসুল আমান বলেন, মোটা চালের দামও এবার বাড়ছে। গত সপ্তাহে মোটা পাইজাম চাল বিক্রি করেছি ৪৬-৪৮ টাকা কেজি। এখন সেই চাল বিক্রি করছি ৫০ থেকে ৫২ টাকা। একই দামে বিক্রি করছি গুটি স্বর্ণা চাল। দাম বাড়ছে, তাই পরিমাণেও কম কিনছে মানুষ। বাদামতলী ও বাবু বাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে এবার বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে, তাই চালের দাম বাড়ছে। তবে মিলাররা দাবি করছেন, কৃষকের ধান এখনো তাদের হাতে আসেনি। ধান রয়েছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের হাতে। আর মৌসুমি ব্যবসায়ীরা উচ্চ দামে ধান বিক্রি করছেন। তাদের কাছ থেকে এক হাজার কিংবা ১০৫০ টাকা মণ ধান কিনতে হচ্ছে মিলারদের। তাই চালও বেশি দাম বিক্রি করতে হচ্ছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, মোটা চালের কেজি ৫০ টাকা, যা গত কয়েক বছরেও হয়নি। তিনি বলেন, খোলা বাজারে কম দামে আরও বেশি চাল বিক্রি করতে হবে। যাতে ব্যবসায়ীদের ওপর একটা চাপ তৈরি হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, অবৈধভাবে কেউ চালের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে কি না তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি। ওএমএসের বরাদ্দ অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। মাঝারি ও সরু চালেরও দাম বাড়ছে। তবে এটা ওএমএসের কার্যক্রম দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। সেক্ষত্রে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আপাতত ১০ লাখ টন চাল আমদানির চিন্তা করা হচ্ছে।