নিজস্ব প্রতিবেদক : এখন যে রোগীরা আসছেন তাদের বেশিরভাগই ডেঙ্গু শকে পরিণত হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ডা. আহমেদুল কবির। আহমেদুল কবীর বলেন, যেসব বেসরকারি হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগী ভর্তি নিচ্ছে তারা যেনও সরকারি নিয়ম মেনে রোগীদের ভর্তি করায়। কোনোভাবে রোগীকে যেন হয়রানি না করা হয়। এছাড়া তাদেরকে ডেঙ্গু মেনেজমেন্টের জন্য রোগ সম্পর্কে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। তিনি জানান, ডেঙ্গু রোগী কমছে না। এতে আক্রান্তের সংখ্যা কখন কত হবে বলা যাচ্ছে না। আজকে ১২৩ জন ভর্তি হলো, পরেরদিন তা ২০০ জনও হতে পারে। যেহেতু এটি নিয়মিত বাড়ছে কোনও রোগীকে যেন বিনা চিকিৎসায় বাড়ি ফিরে যেতে না হয় সেজন্য আমরা সরকারি হাসপাতালগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছি। তারা প্রয়োজনীয় জনশক্তি, বেড এবং লজিস্টিকস সাপোর্ট তৈরি রাখবে। তিনি আরও জানান, এবারের ডেঙ্গু রোগীরা বেশিরভাগ ডেঙ্গু শকে পরিণত হচ্ছে। এর ফলে দেখা যায় আক্রান্তের পাঁচদিন পর রোগী যখন মনে করে সে সুস্থ হয়ে যাচ্ছে তখনই তাদের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। জ্বর যখনই কমে আসছে, রোগীর রক্তচাপও কমে যাচ্ছে। সেসময়ে ভালো চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। উল্লেখ্য, সাধারণত এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ডেঙ্গু সেরে যায়। তবে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়তে পারে। এসব ক্ষেত্রে মৃত্যুও হতে পারে। এই জটিল পরিস্থিতিকেই বলে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের উপসর্গ হলো শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা হওয়া কিংবা শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যাওয়া। ত্বক শীতল হয়ে যাওয়া। ত্বকের ভেতরের অংশে রক্তক্ষরণের কারণে ত্বকের ওপর লাল ছোপ সৃষ্টি হওয়া। বমি, মল কিংবা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, প্রচ- পেটব্যথা ও অনবরত বমি হওয়া, নাক ও দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ ও অবসাদ। কখনও মস্তিষ্কের ভেতর রক্তক্ষরণ হতে পারে। এ রকম অবনতি দেখলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সরকারি হাসপাতালগুলোতে যত সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন তাদের সবাইকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। এখনও বড় কোনও চ্যালেঞ্জ দেখা দেয়নি। তবে সামনে আক্রান্তের সংখ্যা যদি বেড়ে যায়, তাদের সেবা দেওয়ার জন্য বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে আলোচনা করবে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
ঢাকার পর বেশি আক্রান্ত কক্সবাজারে
ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কক্সবাজারে সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. আহমেদুল কবির। তিনি বলেন, ঢাকার পর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কক্সবাজারে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৩৬৮ জন। মোট আক্রান্তদের মধ্যে ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত ২০ বছরের বেশি বয়সীরা। তিনি জানান, হাসপাতালে ভর্তির তিন দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৮ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ৩-৬ দিনের মধ্যে ১৮ জন, ৬-৯ দিনের মধ্যে ৬ জন এবং ৯-৩০ দিনের মধ্যে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। ড. আহমেদুল কবির জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুবরণ করছেন ৪০ থেকে ৫০ বছরের মানুষ। ডেঙ্গুতে ঢাকার বাইরেই সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে। আর এতে নারীদের মৃত্যু হার পুরুষের তুলনায় বেশি। আর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তিন দিনের মধ্যে ডেঙ্গুতে মারা যাচ্ছে আক্রান্তরা। ঢাকার বাইরে জেলার মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যাও কক্সবাজারে বেশি।
আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২২ হাজার ৫১৭ জন
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু সংক্রান্ত প্রেজেন্টেশনে বলা হয়, ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২২ হাজার ৫১৭ জন। যা গত বছর ছিল ২৮ হাজার ৪২৯ জন, ২০২০ সালে ছিল ১৪০৫ জন। তবে সবচেয়ে বেশি ছিল ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় চলতি বছরের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ হাজার ৭৬২ জন। ঢাকার বাইরে ৫ হাজার ৭৭৫ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬৪৭ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৪১৫ জন। ঢাকার বাইরে ২৩২ জন। ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু নারীর ৪৬ জন, পুরুষ ২৯ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ২০১৯ সালে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৭৯, ২০২০ মৃত্যু হয় ৭ জনের। আর ২০২১ সালে মৃত্যু হয় ১০৫ জনের। সর্বশেষ ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৭৫ জনের। ২০২০ সালে ১ লাখ ৮ হাজার ২০০ পিস ডেঙ্গু টেস্ট কিট (এনএস১) বিতরণ করা হয়েছে, ২০২১ সালে বিতরণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬০০ পিস। চলতি বছরের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত কিট বিতরণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫০ পিস।
বেশিরভাগ ডেঙ্গু রোগী শকে চলে যাচ্ছে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ