ঢাকা ১২:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

বেবি পাউডারের কারণে ক্যানসার, জরিমানা ৪ কোটি ডলার

  • আপডেট সময় : ০৯:১৯:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ১০ বার পড়া হয়েছে

জনসন অ্যান্ড জনসনের বেবি পাউডার- এএফপির ফাইল ছবি

প্রত্যাশা ডেস্ক: জনসন অ্যান্ড জনসনের বেবি পাউডারের কারণে ডিম্বাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন এমন অভিযোগ তোলা দুই জনকে মোট ৪ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে কোম্পানিটিকে। ক্যালিফোর্নিয়ার একটি জুরি রায় দিয়ে জানিয়েছেন।

লস অ্যাঞ্জেলেস সুপিরিয়র কোর্টের জুরি মনিকা কেন্টকে ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার এবং ডেবোরা শুল্টজ ও তার স্বামীকে ২ কোটি ২০ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার রায় দেয়। জুরির মতে, জনসন অ্যান্ড জনসন বহু বছর ধরেই জানত যে তাদের ট্যালকভিত্তিক পণ্যগুলো বিপজ্জনক, কিন্তু ভোক্তাদের সতর্ক করতে ব্যর্থ হয়েছে।

জনসন অ্যান্ড জনসনের বৈশ্বিক লিটিগেশনবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট এরিক হাস এক বিবৃতিতে বলেন, কোম্পানি এই রায়ের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আপিল করবে এবং আমরা যেমনটা সাধারণত করে থাকি, তেমনি এই ব্যতিক্রমী প্রতিকূল রায়েও জয়ী হব বলে আশা করছি।

আদালতের নথি অনুযায়ী, কেন্টের ডিম্বাশয়ের ক্যানসার ধরা পড়ে ২০১৪ সালে। শুল্টজের ক্যানসার ধরা পড়ে ২০১৮ সালে। উভয়েই ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা এবং তারা বলেছেন, গোসলের পর ৪০ বছর ধরে তারা জনসন অ্যান্ড জনসনের বেবি পাউডার ব্যবহার করেছেন। বিচার চলাকালে তারা সাক্ষ্যে বলেন, ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের চিকিৎসায় তাদের বড় ধরনের অস্ত্রোপচার ও কেমোথেরাপির বহু ধাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।

কোর্টরুম ভিউ নেটওয়ার্কে দেখা সমাপনী বক্তব্যে, নারীদের পক্ষে আইনজীবী অ্যান্ডি বার্চফিল্ড জুরিকে বলেন, ১৯৬০-এর দশক থেকেই জনসন অ্যান্ড জনসন জানতো যে তাদের পণ্য ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে।

জনসন অ্যান্ড জনসনের পক্ষে আইনজীবী অ্যালিসন ব্রাউন বলেন, কেন্ট ও শুল্টজকে কেবল তাদের আইনজীবীরাই বলেছেন যে ট্যালকের কারণে তাদের ক্যানসার হয়েছে। কারণ এই অভিযোগের পক্ষে কোনো বড় মার্কিন স্বাস্থ্য সংস্থার সমর্থন নেই এবং এমন কোনো গবেষণাও নেই যা দেখায় যে শরীরের বাইরে থেকে ট্যালক প্রজনন অঙ্গগুলোতে পৌঁছাতে পারে।

আদালতের নথি অনুযায়ী, জনসন অ্যান্ড জনসনের বিরুদ্ধে ৬৭ হাজারের বেশি বাদীর মামলা রয়েছে, যারা বলেছেন বেবি পাউডার ও অন্যান্য ট্যালক পণ্য ব্যবহারের পর তাদের ক্যানসার হয়েছে।

কোম্পানিটি বলে আসছে, তাদের পণ্য নিরাপদ, এতে অ্যাসবেস্টস নেই এবং এটি ক্যানসার সৃষ্টি করে না। জনসন অ্যান্ড জনসন ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ট্যালকভিত্তিক বেবি পাউডার বিক্রি বন্ধ করে কর্নস্টার্চভিত্তিক পণ্যে রূপান্তর করে। জনসন অ্যান্ড জনসন দেউলিয়া আইনের আশ্রয় নিয়ে এই মামলা নিষ্পত্তির চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সেই প্রস্তাব ফেডারেল আদালত তিনবার প্রত্যাখ্যান করেছে-সর্বশেষ এপ্রিল মাসে। দেউলিয়া কার্যক্রমের কারণে অধিকাংশ মামলা স্থগিত ছিল।

দেউলিয়া হওয়ার চেষ্টার আগে, ট্যালক-সংক্রান্ত বিচারে জনসন অ্যান্ড জনসনের ফলাফল মিশ্র ছিল। কিছু মামলায় জুরিরা ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের জন্য বেবি পাউডারকে দায়ী করে সর্বোচ্চ ৪৬৯ কোটি ডলার পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল। তবে কোম্পানিটি কিছু মামলায় পুরোপুরি জয়ী হয়েছে এবং কিছু রায় আপিলে কমে গেছে।

বেশিরভাগ মামলা ডিম্বাশয়ের ক্যানসার সংক্রান্ত। ট্যালকের কারণে মেসোথেলিওমা নামের বিরল ও প্রাণঘাতী ক্যানসার হয়েছে-এমন অভিযোগ তুলনামূলকভাবে কম। কোম্পানিটি এর আগে এসব দাবির কিছু নিষ্পত্তি করলেও দেশব্যাপী কোনো সমঝোতায় পৌঁছায়নি। ফলে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অঙ্গরাজ্যের আদালতে বহু মেসোথেলিওমা মামলা বিচারাধীন রয়েছে। গত এক বছরে মেসোথেলিওমা মামলায় জনসন অ্যান্ড জনসনের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি বড় রায় এসেছে, যার মধ্যে গত অক্টোবরে লস অ্যাঞ্জেলেসে ৯০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্ষতিপূরণের একটি রায় রয়েছে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

সানা/আপ্র/১৩/১২/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বেবি পাউডারের কারণে ক্যানসার, জরিমানা ৪ কোটি ডলার

আপডেট সময় : ০৯:১৯:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: জনসন অ্যান্ড জনসনের বেবি পাউডারের কারণে ডিম্বাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন এমন অভিযোগ তোলা দুই জনকে মোট ৪ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে কোম্পানিটিকে। ক্যালিফোর্নিয়ার একটি জুরি রায় দিয়ে জানিয়েছেন।

লস অ্যাঞ্জেলেস সুপিরিয়র কোর্টের জুরি মনিকা কেন্টকে ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার এবং ডেবোরা শুল্টজ ও তার স্বামীকে ২ কোটি ২০ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার রায় দেয়। জুরির মতে, জনসন অ্যান্ড জনসন বহু বছর ধরেই জানত যে তাদের ট্যালকভিত্তিক পণ্যগুলো বিপজ্জনক, কিন্তু ভোক্তাদের সতর্ক করতে ব্যর্থ হয়েছে।

জনসন অ্যান্ড জনসনের বৈশ্বিক লিটিগেশনবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট এরিক হাস এক বিবৃতিতে বলেন, কোম্পানি এই রায়ের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আপিল করবে এবং আমরা যেমনটা সাধারণত করে থাকি, তেমনি এই ব্যতিক্রমী প্রতিকূল রায়েও জয়ী হব বলে আশা করছি।

আদালতের নথি অনুযায়ী, কেন্টের ডিম্বাশয়ের ক্যানসার ধরা পড়ে ২০১৪ সালে। শুল্টজের ক্যানসার ধরা পড়ে ২০১৮ সালে। উভয়েই ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা এবং তারা বলেছেন, গোসলের পর ৪০ বছর ধরে তারা জনসন অ্যান্ড জনসনের বেবি পাউডার ব্যবহার করেছেন। বিচার চলাকালে তারা সাক্ষ্যে বলেন, ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের চিকিৎসায় তাদের বড় ধরনের অস্ত্রোপচার ও কেমোথেরাপির বহু ধাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।

কোর্টরুম ভিউ নেটওয়ার্কে দেখা সমাপনী বক্তব্যে, নারীদের পক্ষে আইনজীবী অ্যান্ডি বার্চফিল্ড জুরিকে বলেন, ১৯৬০-এর দশক থেকেই জনসন অ্যান্ড জনসন জানতো যে তাদের পণ্য ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে।

জনসন অ্যান্ড জনসনের পক্ষে আইনজীবী অ্যালিসন ব্রাউন বলেন, কেন্ট ও শুল্টজকে কেবল তাদের আইনজীবীরাই বলেছেন যে ট্যালকের কারণে তাদের ক্যানসার হয়েছে। কারণ এই অভিযোগের পক্ষে কোনো বড় মার্কিন স্বাস্থ্য সংস্থার সমর্থন নেই এবং এমন কোনো গবেষণাও নেই যা দেখায় যে শরীরের বাইরে থেকে ট্যালক প্রজনন অঙ্গগুলোতে পৌঁছাতে পারে।

আদালতের নথি অনুযায়ী, জনসন অ্যান্ড জনসনের বিরুদ্ধে ৬৭ হাজারের বেশি বাদীর মামলা রয়েছে, যারা বলেছেন বেবি পাউডার ও অন্যান্য ট্যালক পণ্য ব্যবহারের পর তাদের ক্যানসার হয়েছে।

কোম্পানিটি বলে আসছে, তাদের পণ্য নিরাপদ, এতে অ্যাসবেস্টস নেই এবং এটি ক্যানসার সৃষ্টি করে না। জনসন অ্যান্ড জনসন ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ট্যালকভিত্তিক বেবি পাউডার বিক্রি বন্ধ করে কর্নস্টার্চভিত্তিক পণ্যে রূপান্তর করে। জনসন অ্যান্ড জনসন দেউলিয়া আইনের আশ্রয় নিয়ে এই মামলা নিষ্পত্তির চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সেই প্রস্তাব ফেডারেল আদালত তিনবার প্রত্যাখ্যান করেছে-সর্বশেষ এপ্রিল মাসে। দেউলিয়া কার্যক্রমের কারণে অধিকাংশ মামলা স্থগিত ছিল।

দেউলিয়া হওয়ার চেষ্টার আগে, ট্যালক-সংক্রান্ত বিচারে জনসন অ্যান্ড জনসনের ফলাফল মিশ্র ছিল। কিছু মামলায় জুরিরা ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের জন্য বেবি পাউডারকে দায়ী করে সর্বোচ্চ ৪৬৯ কোটি ডলার পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল। তবে কোম্পানিটি কিছু মামলায় পুরোপুরি জয়ী হয়েছে এবং কিছু রায় আপিলে কমে গেছে।

বেশিরভাগ মামলা ডিম্বাশয়ের ক্যানসার সংক্রান্ত। ট্যালকের কারণে মেসোথেলিওমা নামের বিরল ও প্রাণঘাতী ক্যানসার হয়েছে-এমন অভিযোগ তুলনামূলকভাবে কম। কোম্পানিটি এর আগে এসব দাবির কিছু নিষ্পত্তি করলেও দেশব্যাপী কোনো সমঝোতায় পৌঁছায়নি। ফলে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অঙ্গরাজ্যের আদালতে বহু মেসোথেলিওমা মামলা বিচারাধীন রয়েছে। গত এক বছরে মেসোথেলিওমা মামলায় জনসন অ্যান্ড জনসনের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি বড় রায় এসেছে, যার মধ্যে গত অক্টোবরে লস অ্যাঞ্জেলেসে ৯০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্ষতিপূরণের একটি রায় রয়েছে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

সানা/আপ্র/১৩/১২/২০২৫