ঢাকা ০৫:২৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বেতন যেত অনলাইন জুয়ায়, টাকার লোভে মালিককেই খুন

  • আপডেট সময় : ০১:৩৩:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ মার্চ ২০২২
  • ১৩৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : গাড়িচালক হৃদয় ব্যাপারীর (৩৪) বেতনের টাকা একেবারে কম ছিল না। তবে পুরো টাকাই উড়াতেন অনলাইন জুয়ায়। এ কারণে পরিবার চালাতে নজর পড়ে মালিক আফরোজা সুলতানার (৩১) টাকা ও স্বর্ণালংকারে। লোভে পড়ে শেষ পর্যন্ত বাসায় ঢুকে তাঁকে গলা কেটে হত্যা করেন হৃদয়। আফরোজা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ছিলেন।
গতকাল বুধবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর মধ্যবাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে হৃদয়কে গ্রেপ্তার করে ডিবি। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও লুট করা স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়।
হাফিজ আক্তার আরও বলেন, ১৩ মার্চ সন্ধ্যা পৌনে ছয়টা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে রাজধানীর মধ্যবাড্ডার গুদারাঘাটের ১০ নম্বর রোডের একটি বাড়ির দ্বিতীয় তলায় সেভেন রিংস সিমেন্ট কোম্পানির এমআইএস শাখার উপব্যবস্থাপক আফরোজাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। ঘটনার সময় আফরোজার স্বামী আইয়ান ফাহাদ কর্মস্থলে ছিলেন। ছয় মাস আগে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। ওই ঘটনায় গুলশান থানায় করা হত্যা মামলা থানা–পুলিশের পাশাপাশি ডিবি গুলশান বিভাগ ছায়া তদন্ত করে।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবি গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গুদারাঘাট এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হত্যাকারী হৃদয়কে শনাক্ত করতে সক্ষম হন তাঁরা। গ্রেপ্তারের পর হৃদয় হত্যার কথা স্বীকার করেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন, আফরোজা সুলতানা মাসিক ১৭ হাজার টাকা বেতনে ব্যক্তিগত গাড়িচালক হিসেবে চাকরি দেন তাঁকে। তিনি মাঝেমধ্যেই তাঁকে নিয়ে ব্যাংকে টাকা জমা দিতেন। এ ছাড়া অফরোজার স্বর্ণালংকারও ছিল অনেক। এদিকে হৃদয় অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ায় যা আয় করতেন, তা জুয়ায় খরচ হয়ে যেত। এরপর আফরোজা ও তাঁর স্বামীর কাছ থেকে টাকা ঋণ নিলেও তিন মাস ধরে ঘরভাড়া দিতে পারছিলেন না। তিন শিশুসন্তানসহ তাঁর পাঁচ সদস্যের পরিবার চলানোও সম্ভব হচ্ছিল না।
ডিবির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে হৃদয় বলেন, হঠাৎ তার লোভ জাগে আফরোজাকে খুন করলে টাকা ও স্বর্ণালংকার পাওয়া যাবে। এ টাকা দিয়ে তিনি অন্যত্র স্বাচ্ছন্দ্যে পরিবার নিয়ে চলতে পারবেন। এরপর হৃদয় আফরোজাকে খুন করার পরিকল্পনা ও দিনক্ষণ ঠিক করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় আফরোজা বাসায় একা থাকবেন জেনে নিয়ে সেই দিনটিই বেছে নেন হৃদয়। মশিউর রহমান বলেন, আফরোজার স্বর্ণালংকার তাঁর মায়ের বাসায় এবং টাকা রাখতেন ব্যাংকে। হৃদয় আফরোজার বাসায় সামান্য কিছু স্বর্ণালংকার পেয়েছিলেন। এছাড়া তাঁকে হত্যার পর ভয়ে পেয়ে অল্পকিছু টাকা নিয়ে পালিয়ে যান হৃদয়। তিনি বলেন, হৃদয়কে ২০১৫ সালে চাকরি দেন আফরোজা। এর আগেও তাঁকে একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করেন হৃদয়। একবার খাবারে বিষ মেশালেও তা গরম করার সময় গন্ধ পেয়ে খাননি আফরোজা। আরেকবার ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ বাথরুমে জামা–কাপড় ধোয়ার সময় পানি খাওয়ার গ্লাস দিয়ে আফরোজার মাথায় আঘাত করলে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। পরে হাত–পা বেঁধে তাঁকে হত্যা করেন হৃদয়। ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, আজ ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে হৃদয়কে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়েছে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বেতন যেত অনলাইন জুয়ায়, টাকার লোভে মালিককেই খুন

আপডেট সময় : ০১:৩৩:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ মার্চ ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : গাড়িচালক হৃদয় ব্যাপারীর (৩৪) বেতনের টাকা একেবারে কম ছিল না। তবে পুরো টাকাই উড়াতেন অনলাইন জুয়ায়। এ কারণে পরিবার চালাতে নজর পড়ে মালিক আফরোজা সুলতানার (৩১) টাকা ও স্বর্ণালংকারে। লোভে পড়ে শেষ পর্যন্ত বাসায় ঢুকে তাঁকে গলা কেটে হত্যা করেন হৃদয়। আফরোজা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ছিলেন।
গতকাল বুধবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর মধ্যবাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে হৃদয়কে গ্রেপ্তার করে ডিবি। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও লুট করা স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়।
হাফিজ আক্তার আরও বলেন, ১৩ মার্চ সন্ধ্যা পৌনে ছয়টা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে রাজধানীর মধ্যবাড্ডার গুদারাঘাটের ১০ নম্বর রোডের একটি বাড়ির দ্বিতীয় তলায় সেভেন রিংস সিমেন্ট কোম্পানির এমআইএস শাখার উপব্যবস্থাপক আফরোজাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। ঘটনার সময় আফরোজার স্বামী আইয়ান ফাহাদ কর্মস্থলে ছিলেন। ছয় মাস আগে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। ওই ঘটনায় গুলশান থানায় করা হত্যা মামলা থানা–পুলিশের পাশাপাশি ডিবি গুলশান বিভাগ ছায়া তদন্ত করে।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবি গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গুদারাঘাট এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হত্যাকারী হৃদয়কে শনাক্ত করতে সক্ষম হন তাঁরা। গ্রেপ্তারের পর হৃদয় হত্যার কথা স্বীকার করেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন, আফরোজা সুলতানা মাসিক ১৭ হাজার টাকা বেতনে ব্যক্তিগত গাড়িচালক হিসেবে চাকরি দেন তাঁকে। তিনি মাঝেমধ্যেই তাঁকে নিয়ে ব্যাংকে টাকা জমা দিতেন। এ ছাড়া অফরোজার স্বর্ণালংকারও ছিল অনেক। এদিকে হৃদয় অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ায় যা আয় করতেন, তা জুয়ায় খরচ হয়ে যেত। এরপর আফরোজা ও তাঁর স্বামীর কাছ থেকে টাকা ঋণ নিলেও তিন মাস ধরে ঘরভাড়া দিতে পারছিলেন না। তিন শিশুসন্তানসহ তাঁর পাঁচ সদস্যের পরিবার চলানোও সম্ভব হচ্ছিল না।
ডিবির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে হৃদয় বলেন, হঠাৎ তার লোভ জাগে আফরোজাকে খুন করলে টাকা ও স্বর্ণালংকার পাওয়া যাবে। এ টাকা দিয়ে তিনি অন্যত্র স্বাচ্ছন্দ্যে পরিবার নিয়ে চলতে পারবেন। এরপর হৃদয় আফরোজাকে খুন করার পরিকল্পনা ও দিনক্ষণ ঠিক করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় আফরোজা বাসায় একা থাকবেন জেনে নিয়ে সেই দিনটিই বেছে নেন হৃদয়। মশিউর রহমান বলেন, আফরোজার স্বর্ণালংকার তাঁর মায়ের বাসায় এবং টাকা রাখতেন ব্যাংকে। হৃদয় আফরোজার বাসায় সামান্য কিছু স্বর্ণালংকার পেয়েছিলেন। এছাড়া তাঁকে হত্যার পর ভয়ে পেয়ে অল্পকিছু টাকা নিয়ে পালিয়ে যান হৃদয়। তিনি বলেন, হৃদয়কে ২০১৫ সালে চাকরি দেন আফরোজা। এর আগেও তাঁকে একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করেন হৃদয়। একবার খাবারে বিষ মেশালেও তা গরম করার সময় গন্ধ পেয়ে খাননি আফরোজা। আরেকবার ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ বাথরুমে জামা–কাপড় ধোয়ার সময় পানি খাওয়ার গ্লাস দিয়ে আফরোজার মাথায় আঘাত করলে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। পরে হাত–পা বেঁধে তাঁকে হত্যা করেন হৃদয়। ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, আজ ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে হৃদয়কে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়েছে।