ঢাকা ০৪:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫

বেগম রোকেয়া দিবস আজ

  • আপডেট সময় : ০৪:০৭:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ১ বার পড়া হয়েছে

বেগম রোকেয়া

প্রত্যাশা ডেস্ক: আজ ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস। খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক এবং নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের পায়রাবন্দ গ্রামের এক জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৩২ সালের একই দিনে মারা যান এই মহীয়সী। দিনটি প্রতিবছর বেগম রোকেয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়।

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের অবদানকে স্মরণ করে যথাযথ মর্যাদায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালিত হচ্ছে। প্রতিবারের মতো এবারও জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ৪ বিশিষ্টি নারীকে বেগম রোকেয়া পদক প্রদান করা হবে।

সকালে রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পদক প্রদান করবেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
এ বছর পদক পেতে যাচ্ছেন নারীশিক্ষা শ্রেণিতে (গবেষণা) রুভানা রাকিব, নারী অধিকার শ্রেণিতে (শ্রম অধিকার) কল্পনা আক্তার, মানবাধিকার শ্রেণিতে নাবিলা ইদ্রিস ও নারী জাগরণ শ্রেণিতে (ক্রীড়া) ঋতুপর্ণা চাকমা।

জাতীয় পুরস্কার- সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি রোকেয়া পদকের জন্য ওই চারজনের নাম চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করে। নারীশিক্ষা, নারী অধিকার, মানবাধিকার ও নারী জাগরণে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাদের চারজনকে এই পদক দেওয়া হবে।

এদিকে, নারী শিক্ষার প্রসারে রোকেয়ার অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। তিনি বলেন, ঊনবিংশ শতাব্দীতে রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থায় পিছিয়ে পড়া নারীদের ভাগ্যোন্নয়নের মূল চাবিকাঠি শিক্ষা। এ উপলব্ধি থেকে বেগম রোকেয়া নারীশিক্ষা বিস্তারে বিরাট সাহসী ভূমিকা পালন করেন। বেগম রোকেয়া নারী উন্নয়নের পথে যে যাত্রা শুরু করেছিলেন, তার ধারাবাহিকতায় নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

রোকেয়ার আদর্শ অনুসরণে নারী অধিকার ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদানের জন্য যারা পদক পেয়েছেন তিনি তাদের অভিনন্দন জানান। প্রধান উপদেষ্টা রোকেয়া দিবস-২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।

রোকেয়ার লড়াই-সংগ্রাম: রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ১৮৮০ সালের এই দিনে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দের এক নিভৃত পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন। সে সময় মুসলিম সমাজে মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর কোনো প্রচলন ছিল না। তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও পরিবারের সবার অগোচরে বড় ভাইয়ের কাছে উর্দু, বাংলা, আরবি ও ফারসি পড়া ও লেখা শেখেন।

রোকেয়ার শিক্ষা লাভ ও মূল্যবোধ গঠনে তার ভাই ও বড় বোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। পরবর্তীতে বিহারের ভাগলপুরে সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয়। স্বামীর উৎসাহে ও নিজের আগ্রহে তিনি লেখাপড়ার প্রসার ঘটান। এই মহীয়সী নারী ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

তার স্বপ্ন ছিল সমাজে নারী-পুরুষ সমান মর্যাদা আর অধিকার নিয়ে বাঁচবে। সেই স্বপ্নের কথাই তিনি লিখে গেছেন তার গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধগুলোতে। নারীশিক্ষার প্রসারে কাজ করে গেছেন আমৃত্যু। নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, তাদের ক্ষমতায়ন, মর্যাদাপূর্ণ অধিকারের জন্য লড়াইটা এই বাংলায় রোকেয়াই শুরু করেছিলেন।

রোকেয়া সাখাওয়াত ২০০৪ সালে বিবিসি বাংলার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জরিপে ষষ্ঠ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক হিসেবে পরিচিত। তার উল্লেখযোগ্য রচনা হলো-মতিচূর, সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী।

রংপুরে বিভিন্ন কর্মসূচি: রংপুরের মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দে আজ সকালে রোকেয়া সাখাওয়াতের জন্মভিটার বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, দুপুরে আলোচনা সভা এবং বিকেলে শিশু কিশোরদের চিত্রাঙ্কন, সংগীত ও নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে।

এ ছাড়াও রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে দিনব্যাপী কর্মসূচিতে রয়েছে র‌্যালি, আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর শওকাত আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করবেন কবি আব্দুল হাই শিকদার।

এতে প্রধান অতিথি থাকবেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডক্টর মাছুমা হাবিব। প্রধান আলোচক থাকবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম লুৎফর রহমান ও গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হোসেন উদ্দিন শেখর।

রোকেয়া দিবস উপলক্ষে রংপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে নারী সংগঠনগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও সংগঠন থেকে নানান কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

সানা/আপ্র/০৯/১২/২০২৫

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বেগম রোকেয়া দিবস আজ

আপডেট সময় : ০৪:০৭:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: আজ ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস। খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক এবং নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের পায়রাবন্দ গ্রামের এক জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৩২ সালের একই দিনে মারা যান এই মহীয়সী। দিনটি প্রতিবছর বেগম রোকেয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়।

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের অবদানকে স্মরণ করে যথাযথ মর্যাদায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালিত হচ্ছে। প্রতিবারের মতো এবারও জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ৪ বিশিষ্টি নারীকে বেগম রোকেয়া পদক প্রদান করা হবে।

সকালে রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পদক প্রদান করবেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
এ বছর পদক পেতে যাচ্ছেন নারীশিক্ষা শ্রেণিতে (গবেষণা) রুভানা রাকিব, নারী অধিকার শ্রেণিতে (শ্রম অধিকার) কল্পনা আক্তার, মানবাধিকার শ্রেণিতে নাবিলা ইদ্রিস ও নারী জাগরণ শ্রেণিতে (ক্রীড়া) ঋতুপর্ণা চাকমা।

জাতীয় পুরস্কার- সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি রোকেয়া পদকের জন্য ওই চারজনের নাম চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করে। নারীশিক্ষা, নারী অধিকার, মানবাধিকার ও নারী জাগরণে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাদের চারজনকে এই পদক দেওয়া হবে।

এদিকে, নারী শিক্ষার প্রসারে রোকেয়ার অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। তিনি বলেন, ঊনবিংশ শতাব্দীতে রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থায় পিছিয়ে পড়া নারীদের ভাগ্যোন্নয়নের মূল চাবিকাঠি শিক্ষা। এ উপলব্ধি থেকে বেগম রোকেয়া নারীশিক্ষা বিস্তারে বিরাট সাহসী ভূমিকা পালন করেন। বেগম রোকেয়া নারী উন্নয়নের পথে যে যাত্রা শুরু করেছিলেন, তার ধারাবাহিকতায় নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

রোকেয়ার আদর্শ অনুসরণে নারী অধিকার ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদানের জন্য যারা পদক পেয়েছেন তিনি তাদের অভিনন্দন জানান। প্রধান উপদেষ্টা রোকেয়া দিবস-২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।

রোকেয়ার লড়াই-সংগ্রাম: রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ১৮৮০ সালের এই দিনে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দের এক নিভৃত পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন। সে সময় মুসলিম সমাজে মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর কোনো প্রচলন ছিল না। তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও পরিবারের সবার অগোচরে বড় ভাইয়ের কাছে উর্দু, বাংলা, আরবি ও ফারসি পড়া ও লেখা শেখেন।

রোকেয়ার শিক্ষা লাভ ও মূল্যবোধ গঠনে তার ভাই ও বড় বোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। পরবর্তীতে বিহারের ভাগলপুরে সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয়। স্বামীর উৎসাহে ও নিজের আগ্রহে তিনি লেখাপড়ার প্রসার ঘটান। এই মহীয়সী নারী ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

তার স্বপ্ন ছিল সমাজে নারী-পুরুষ সমান মর্যাদা আর অধিকার নিয়ে বাঁচবে। সেই স্বপ্নের কথাই তিনি লিখে গেছেন তার গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধগুলোতে। নারীশিক্ষার প্রসারে কাজ করে গেছেন আমৃত্যু। নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, তাদের ক্ষমতায়ন, মর্যাদাপূর্ণ অধিকারের জন্য লড়াইটা এই বাংলায় রোকেয়াই শুরু করেছিলেন।

রোকেয়া সাখাওয়াত ২০০৪ সালে বিবিসি বাংলার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জরিপে ষষ্ঠ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক হিসেবে পরিচিত। তার উল্লেখযোগ্য রচনা হলো-মতিচূর, সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী।

রংপুরে বিভিন্ন কর্মসূচি: রংপুরের মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দে আজ সকালে রোকেয়া সাখাওয়াতের জন্মভিটার বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, দুপুরে আলোচনা সভা এবং বিকেলে শিশু কিশোরদের চিত্রাঙ্কন, সংগীত ও নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে।

এ ছাড়াও রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে দিনব্যাপী কর্মসূচিতে রয়েছে র‌্যালি, আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর শওকাত আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করবেন কবি আব্দুল হাই শিকদার।

এতে প্রধান অতিথি থাকবেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডক্টর মাছুমা হাবিব। প্রধান আলোচক থাকবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম লুৎফর রহমান ও গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হোসেন উদ্দিন শেখর।

রোকেয়া দিবস উপলক্ষে রংপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে নারী সংগঠনগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও সংগঠন থেকে নানান কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

সানা/আপ্র/০৯/১২/২০২৫