প্রত্যাশা ডেস্ক : বাংলাদেশে গরু পাচার ৭০ শতাংশ বন্ধ হয়ে গেছে বলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আত্মশ্লাঘা বোধ করলেও বেওয়ারিশ গরু-মহিষ হয়ে উঠেছে প্রবল মাথাব্যথার কারণ। বিশেষ করে উত্তর ও মধ্য ভারতে। সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ভারতীয় রেলওয়ে। গত চার বছরে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ হারিয়েছে লক্ষাধিক গরু-মহিষ। এতে বিপুল বাড়তি অপচয় হচ্ছে রেল মন্ত্রণালয়ের অর্থ।
সংসদের বাজেট অধিবেশন চলাকালে গত শুক্রবার রেল মন্ত্রণালয় এই তথ্য পেশ করে জানিয়েছে, ২০১৯ সালের শুরু থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১ লাখ ১ হাজার ৯২৪টি ঘটনায় বেওয়ারিশ পশু ট্রেনে কাটা পড়েছে। এর ফলে ১ লাখ ৩২ হাজার ২৫টি যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেনের চলাচল ব্যাহত হয়েছে। তথ্য জানার অধিকার আইনে রেল মন্ত্রণালয় আগেই জানিয়েছিল, ডিজেল অথবা বিদ্যুৎচালিত যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল ব্যাহত হলে প্রতি মিনিটে ক্ষতি হয় প্রায় সাড়ে ২০ হাজার রুপি। পণ্যবাহী ট্রেনের ক্ষতি হয় সাড়ে ১৩ হাজার রুপির মতো। এ ছাড়া পশুচাপার মতো ঘটনায় ট্রেনের ইঞ্জিনের ক্ষতি হলে লোকসানের বহর বাড়ে। একটি ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে অন্য ট্রেন চলাচল ব্যাহত হলে ক্ষতি আরও বেশি হয়। রেল মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রধানত হিন্দি বলয় দিয়ে চলাচলকারী উত্তর রেলওয়ে ও উত্তর–মধ্য রেলওয়েতে বেওয়ারিশ পশু মারা যাওয়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি। ভারতীয় রেলের এই দুই শাখার ট্রেন প্রধানত উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান, পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, দিল্লি ও চন্ডীগড়ের মধ্যে চলাচল করে। ২০তম গবাদি পশু গণনার রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে ৫০ লাখেরও বেশি গরু-মহিষ-বলদ বেওয়ারিশ ও তাদের মাঠেঘাটে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এসব প্রাণীর অর্ধেক চরে বেড়াচ্ছে শুধু রাজস্থান ও উত্তর প্রদেশে। কেন্দ্র ও রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে গরু পাচার যথেষ্ট কমে গেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের হিসাবে, পাচার বন্ধ হয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ। গরু পাচার বন্ধ করে বাংলাদেশের মানুষকে গোমাংস খাওয়া ভুলিয়ে দিতে হবে বলে তিনি একসময় মন্তব্য করেছিলেন। তাঁর সেই লক্ষ্য পূর্ণ হয়েছে, এমন কোনো তথ্য পূর্ব প্রান্তের বন্ধু প্রতিবেশীর দিক থেকে পাওয়া না গেলেও ভারতে গোহত্যা বন্ধ হওয়া অর্থনীতির ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছে। গরুর মাংস রপ্তানির বাণিজ্য প্রবলভাবে হ্রাস হওয়া ছাড়াও প্রধানত আর্যাবর্তে এই নিষেধাজ্ঞা সৃষ্টি করেছে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা। এসব সমস্যার একটি দিক ছেড়ে দেওয়া গবাদি পশুর কারণে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হওয়া, অন্য কারণ খেতের ফসলের অপচয়। ছাড়া গরু-মহিষ খেতের ফসল খেয়ে ফেলায় গ্রামাঞ্চলে অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনে তার প্রতিফলনও ঘটছে। বয়স্ক গবাদি পশু, যারা দুধ দেয় না বা চাষের কাজে লাগে না, তাদের আমৃত্যু পোষার জন্য বিজেপিশাসিত বিভিন্ন রাজ্যে গোশালা খোলা হয়েছে। এ জন্য খরচ হচ্ছে হাজার হাজার কোটি রুপি, অর্থনীতির পরিভাষায় যা অনুৎপাদনশীল খরচ। অর্থাভাবে ও সরকারি আনুকূল্য না মেলায় বিভিন্ন রাজ্যের গোশালার মালিকেরা গরু ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এসব ছাড়া গরু-মহিষ-বলদই ট্রেন দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।
বেওয়ারিশ গরু-মহিষ নিয়ে ঝামেলায় ভারতের রেল মন্ত্রণালয়
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ