ঢাকা ০৬:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫

বেইজিংয়ের চাপে ‘নত হবে না তাইওয়ান’

  • আপডেট সময় : ১১:৫০:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ অক্টোবর ২০২১
  • ৯৪ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তাইওয়ানকে ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে স্বশাসিত এই দ্বীপটির প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন বলেছেন, তারা বেইজিংয়ের চাপে নত হবেন না। তাইওয়ান তার গণতান্ত্রিক জীবনধারা অব্যাহত রাখবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
“আমরা যত অর্জন করবো, ততই চীনের দিক থেকে আরও বেশি চাপ আসবে,” বলেছেন তিনি। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ‘পুনরেকত্রীকরণ সম্পন্নের’ অঙ্গীকারের পরদিন গতকাল রোববার তাইওয়ানের জাতীয় দিবসে দেওয়া ভাষণে সাই এসব কথা বলেন বলে বিবিসি জানিয়েছে। তাইওয়ান নিজেদেরকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করলেও চীন দ্বীপটিকে দেখে নিজেদের ‘বিচ্ছিন্ন প্রদেশ’ হিসেবে। পুনরেকত্রীকরণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে বল প্রয়োগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়নি বেইজিং। কয়েকদিন আগেই চীন তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চলে রেকর্ড সংখ্যক জঙ্গি বিমান পাঠিয়েছে; তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করতেই এসব বিমান পাঠানো হয় বলেও ধারণা অনেক পর্যবেক্ষকের।
গতকাল রোববার সাই বলেছেন, চীন যে পথ ঠিক করে দিয়েছে, তাইওয়ানকে তা মেনে নিতে বাধ্য করা যাবে না। বেইজিংয়ের প্রস্তাবিত পথে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব নেই, বলেছেন তিনি। তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চলে চীনের সামরিক বিমানের প্রবেশে জাতীয় নিরাপত্তা ও বিমান চলাচল সংক্রান্ত নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি । সাই বলেন, “পরিস্থিতিটি ছিল গত ৭২ বছরের মধ্যে অন্য যে কোনো সঙ্কটকালের তুলনায় অনেক বেশি জটিল ও অস্থির।” তাইওয়ান ‘তাড়াহুড়ো’ করবে না, তবে নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করবে, বলেছেন তিনি। তিনি সমান সমান অবস্থানে থেকে চীনা নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাবও পুনর্ব্যক্ত করেন; বেইজিং এখন পর্যন্ত এ প্রস্তাব কানে নেয়নি।
শনিবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, পুনরেকত্রীকরণ শান্তিপূর্ণভাবেই হওয়া উচিত। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির এ শীর্ষ নেতা সতর্ক করে এও বলেছেন, বিচ্ছিন্নতাবাদ মোকাবেলায় চীনা জনগণের ‘গৌরবময় ঐতিহ্য’ আছে।
“মাতৃভূমির পুনরেকত্রীকরণের যে ঐতিহাসিক কাজ তা সম্পন্ন করতে হবে এবং অবশ্যই সম্পন্ন হবে,” বলেছেন তিনি। বিবিসি লিখেছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাইওয়ান ও চীনের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা চললেও পরিস্থিতি এখনও ১৯৯৬ সালের মতো পর্যায়ে পৌঁছায়নি। সেবার চীন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বিঘিœত করার চেষ্টায় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছিল; বেইজিংকে থামাতে যুক্তরাষ্ট্রকে ওই অঞ্চলে বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করতে হয়েছিল।
চীনের সাম্প্রতিক শক্তি প্রদর্শনে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, চীনা প্রেসিডেন্ট শি ‘তাইওয়ান নিয়ে সমঝোতা’ মেনে চলার ব্যাপারে রাজি হয়েছেন।
ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরে যে ‘এক চীন’ নীতি মেনে চলছে, বাইডেন সম্ভবত সেটিকেই ‘তাইওয়ান নিয়ে সমঝোতা’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। ওই ‘এক চীন’ নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি না দিলেও দ্বীপটির সঙ্গে তাদের অনানুষ্ঠানিক সম্পর্কের ব্যাপ্তি কম নয়। তাইওয়ান রিলেশনস অ্যাক্টের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিতই তাইপের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে, আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে দ্বীপটির পাশে থাকার অঙ্গীকারও আছে তাদের।
কয়েকদিন আগে বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভান বলেন, তাইওয়ান প্রণালীর ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষতি হয়’ এমন যে কোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ‘যুক্তরাষ্ট্র দাঁড়াবে এবং জোর গলায় কথা বলবে’।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বেইজিংয়ের চাপে ‘নত হবে না তাইওয়ান’

আপডেট সময় : ১১:৫০:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ অক্টোবর ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তাইওয়ানকে ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে স্বশাসিত এই দ্বীপটির প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন বলেছেন, তারা বেইজিংয়ের চাপে নত হবেন না। তাইওয়ান তার গণতান্ত্রিক জীবনধারা অব্যাহত রাখবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
“আমরা যত অর্জন করবো, ততই চীনের দিক থেকে আরও বেশি চাপ আসবে,” বলেছেন তিনি। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ‘পুনরেকত্রীকরণ সম্পন্নের’ অঙ্গীকারের পরদিন গতকাল রোববার তাইওয়ানের জাতীয় দিবসে দেওয়া ভাষণে সাই এসব কথা বলেন বলে বিবিসি জানিয়েছে। তাইওয়ান নিজেদেরকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করলেও চীন দ্বীপটিকে দেখে নিজেদের ‘বিচ্ছিন্ন প্রদেশ’ হিসেবে। পুনরেকত্রীকরণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে বল প্রয়োগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়নি বেইজিং। কয়েকদিন আগেই চীন তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চলে রেকর্ড সংখ্যক জঙ্গি বিমান পাঠিয়েছে; তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করতেই এসব বিমান পাঠানো হয় বলেও ধারণা অনেক পর্যবেক্ষকের।
গতকাল রোববার সাই বলেছেন, চীন যে পথ ঠিক করে দিয়েছে, তাইওয়ানকে তা মেনে নিতে বাধ্য করা যাবে না। বেইজিংয়ের প্রস্তাবিত পথে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব নেই, বলেছেন তিনি। তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চলে চীনের সামরিক বিমানের প্রবেশে জাতীয় নিরাপত্তা ও বিমান চলাচল সংক্রান্ত নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি । সাই বলেন, “পরিস্থিতিটি ছিল গত ৭২ বছরের মধ্যে অন্য যে কোনো সঙ্কটকালের তুলনায় অনেক বেশি জটিল ও অস্থির।” তাইওয়ান ‘তাড়াহুড়ো’ করবে না, তবে নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করবে, বলেছেন তিনি। তিনি সমান সমান অবস্থানে থেকে চীনা নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাবও পুনর্ব্যক্ত করেন; বেইজিং এখন পর্যন্ত এ প্রস্তাব কানে নেয়নি।
শনিবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, পুনরেকত্রীকরণ শান্তিপূর্ণভাবেই হওয়া উচিত। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির এ শীর্ষ নেতা সতর্ক করে এও বলেছেন, বিচ্ছিন্নতাবাদ মোকাবেলায় চীনা জনগণের ‘গৌরবময় ঐতিহ্য’ আছে।
“মাতৃভূমির পুনরেকত্রীকরণের যে ঐতিহাসিক কাজ তা সম্পন্ন করতে হবে এবং অবশ্যই সম্পন্ন হবে,” বলেছেন তিনি। বিবিসি লিখেছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাইওয়ান ও চীনের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা চললেও পরিস্থিতি এখনও ১৯৯৬ সালের মতো পর্যায়ে পৌঁছায়নি। সেবার চীন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বিঘিœত করার চেষ্টায় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছিল; বেইজিংকে থামাতে যুক্তরাষ্ট্রকে ওই অঞ্চলে বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করতে হয়েছিল।
চীনের সাম্প্রতিক শক্তি প্রদর্শনে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, চীনা প্রেসিডেন্ট শি ‘তাইওয়ান নিয়ে সমঝোতা’ মেনে চলার ব্যাপারে রাজি হয়েছেন।
ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরে যে ‘এক চীন’ নীতি মেনে চলছে, বাইডেন সম্ভবত সেটিকেই ‘তাইওয়ান নিয়ে সমঝোতা’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। ওই ‘এক চীন’ নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি না দিলেও দ্বীপটির সঙ্গে তাদের অনানুষ্ঠানিক সম্পর্কের ব্যাপ্তি কম নয়। তাইওয়ান রিলেশনস অ্যাক্টের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিতই তাইপের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে, আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে দ্বীপটির পাশে থাকার অঙ্গীকারও আছে তাদের।
কয়েকদিন আগে বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভান বলেন, তাইওয়ান প্রণালীর ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষতি হয়’ এমন যে কোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ‘যুক্তরাষ্ট্র দাঁড়াবে এবং জোর গলায় কথা বলবে’।