নিজস্ব প্রতিবেদক : ঘূর্ণিঝড় জোয়াদের প্রভাবে শীতের আগে অবিশ্রান্ত বর্ষণে নাকাল হতে হলেও এক দিন বাদেই বৃষ্টি কমে আসার আভাস মিলেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, নি¤œচাপটি দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও দুর্বল হয়ে সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ লঘুচাপে পরিণত হবে।
গতকাল সোমবার বিকালেও বৃষ্টির বেগ না কমলেও আজ মঙ্গলবার থেকে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে বলে আভাস দেন এই আবহাওয়াবিদ। বঙ্গোসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় জোয়াদ উপকূলে পৌঁছার আগেই শক্তি হারিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। লঘুচাপে পরিণত হওয়ার পর তা এখন পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলে বৃষ্টি ঝরিয়ে যাচ্ছে।
গত রোববার রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়, সোমবার সকাল থেকে টানা বর্ষণে শিক্ষার্থী, অফিসগামী মানুষদের বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়। রাজধানীতে সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় জলজটেরও সৃষ্টি হয়। হাতিরঝিলের উলন দাসপাড়া এলাকায় সড়কে জলাবদ্ধতায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ে এইসএসসি পরীক্ষার্থীসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা। ঢাকা কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন মাঈন উদ্দিন মাহি। তার পরীক্ষা কেন্দ্র সরকারি বিজ্ঞান কলেজ। তার বাসা বনশ্রী। বৃষ্টিতে ভোগান্তির কথা জানিয়ে মাহি বলেন, “সকালে অর্ধেক ভেজা শরীর নিয়ে কেন্দ্র ঢুকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। পরীক্ষা শেষ করে বাসায় ফিরতে গিয়ে আবার ভিজতে হয়েছে। পরীক্ষা না থাকলে এত কষ্ট করে এমন দিনে বের হতাম না।”
ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী মো. কাউসারের বাসা রামপুরা। সেমিস্টার পরীক্ষা থাকায় তারও সকালে বের হতে হয়েছে। কাউসার বলেন, “সকালে বৃষ্টির কারণে গাড়ি পেতে অনেক কষ্ট হয়েছে। ৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে গাড়িতে উঠেছি। ভেজা শরীর নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি।”
মিরপুর-১০, মিরপুর-১, ৬০ ফিট এলাকা, আগারগাঁও এলাকায় সকাল থেকে জলজটের কবলে পড়ে মানুষ।
এম সরকার সকাল ৯টায় শেরেবাংলা নগর বেতারভবন সংলগ্ন ৬০ ফিট সড়কে দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরে বলেন, “মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই এই বৃষ্টিতে। একদিকে রিকশাও কম ছিল রাস্তায়, যে ক’টি সিএনজি পাওয়া গেছে, ভাড়াও হাঁকছিল কয়েকগুণ বেশি। উত্তরা যেতে এক যাত্রীকে হাজার টাকা নিয়ে সিএনজি ভাড়া করতে দেখেছি।” হাসপাতাল সংলগ্ন এ এলাকায় রোগীদেরও বেশ দুর্ভোগে পড়তে দেখা গেছে। অনেকে ভিজে একাকার হয়ে শিশু হাসাপাতালে যাচ্ছে। সায়েন্সল্যাব, গ্রিন রোড, আসাদ গেইটসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কের পাশে গণপরিবহনের জন্য ছাতা হাতে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা গেছে মানুষকে। সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, “অন্যান্য দিন খুব ভোরে মহাখালীর অফিসে রওনা হই। আজকে বৃষ্টির জন্য বাসা থেকে দেরীতে বের হয়েছি। আবার কোনো বাসও থামছে না। আর সিএনজি ভাড়াও আকাশচুম্বি।”
আরেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এস এম রাসেল বলেন, “এমন বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় বের হওয়া সমস্যা। পাশাপাশি যারা রাইড শেয়ার করেন তাদের গাড়িও পাওয়া যাচ্ছে না। সকাল থেকেই চরম বিপাকে পড়েছি।”
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এসময় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ফরিদপুরের ৭৬ মিলিমিটার। ঢাকায় বৃষ্টিপাত ছিল ৪৪ মিলিমিটার। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, “আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। পশ্চিমাঞ্চলে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। দেশের অন্যত্র দিন ও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।”
বৃষ্টি আর যানজটে রাজধানীবাসীর দুর্ভোগ চরমে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ