ঢাকা ১২:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫

বিয়ে করে ইরাকে নিয়ে বিক্রি করে দিতেন তিনি

  • আপডেট সময় : ০১:১৩:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ১১৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : লিটন মিয়া। এইচএসসি পাস করে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চাকরি নেন। অনৈতিক কর্মকা-ের কারণে সেখান থেকে চাকরিচ্যুত হন। পরবর্তীতে চলে যান ইরাকে। দেশটির রাজধানীর একটি হাসপাতালে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেন পরিচয় দিয়ে দেশে বিয়ে করতেন। এভাবে ছয়জনকে বিয়ে করে পাঁচজনকে ইরাকে নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, নিজের বউ ছাড়াও অন্তত চল্লিশজন নারীকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুরে র‌্যাবের অভিযানে আটক হয়েছেন লিটন মিয়া ও তার সহযোগী আজাদ। র‌্যাবের ভাষ্য, লিটন মিয়া নারী পাচারকারী সিন্ডিকেটের মূলহোতা। তারা দুজন সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের সদস্য। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি বিলাসবহুল প্রাইভেট করা, বিয়ার, দেশি-বিদেশি জাল টাকা, পাসপোর্ট ও বিভিন্ন সিল।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় এলিট ফোর্স র‌্যাব। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আটকদের টার্গেটে থাকত বিউটি পার্লারে কাজ জানা ও নার্সিং পেশায় নিয়োজিত নারীরা। বিদেশে সুপারশপে চাকরির প্রলোভনে তারা নারীদের পাচার করতেন। তাদের ইরাক, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে নিয়ে জিম্মি করে ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতেন। এসব দেশে তাদের একাধিক সেফহাউজ রয়েছে।
বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নারীদের মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে যাওয়ার পর সুযোগ বুঝে নারীদের বিক্রি করে দেওয়া হতো। চক্রে দশজন সদস্যের মধ্যে সাতজন ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যে আর বাকিরা দেশে এই কাজ করছিলেন। তিন থেকে চার লাখ টাকার বিনিময়ে নারীদের চাকরির আশ্বাসে মধ্যপাচ্যে নিয়ে যাওয়া হতো। মানবপাচারের প্রথম ধাপে ট্যুরিস্ট ভিসায় দুবাই এরপর ভিজিট ভিসার মাধ্যমে ইরাকে নেওয়া হতো। চক্রটি ৩০-৪০ জন নারীকে পাচার করেছে।
কে এই লিটন মিয়া? র‌্যাব বলছে, ১৯৯২ সালে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসি পাস করেন লিটন মিয়া। এরপর সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট হিসেবে চাকরি শুরু করেন। মিথ্যা প্ররোচনা ও অনৈতিক কাজের জন্য সেখান থেকে তার চাকরি চলে যায়। এরপর লিটন ইরাকে যান। এসময় নিজেকে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের একটি স্বনামধন্য হাসপাতালে চাকরি করতেন বলে পরিচয় দিতেন। পরবর্তীতে কয়েকজন মিলে ইরাকে নারী পাচার সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। গ্রেপ্তার লিটন নারীদের প্রথমে ইরাকে মেডিকেল চাকরির প্রলোভন দেখাতেন। এভাবে সখ্যতা গড়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে পাঁচ-ছয়জনকে বিয়ে করেন। অনেককে টেলিফোনে কিংবা সরাসরিও দেশে এসে বিয়ে করেছেন। এরমধ্যে লিটন ২০১৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ইটালিতে ছিলেন। এই সময়েই তিনি বিয়েগুলো করেছেন। এসব বিয়ে লিটন পাচারের উদ্দেশে করেছেন বলে দাবি র‌্যাবের। র‌্যাব জানায়, সবশেষ পাচার হওয়া এক নারী র‌্যাবকে জানিয়েছেন- তিনি ইরাকে সেফহাউজে থাকাকালে সেখানে ১৫-২০ জনকে দেখেছেন। সেফ হাউজ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর এই নারী ইরাকের একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন। পরবর্তীতে সেখান থেকে পালিয়ে দেশে ফিরে আসেন। গ্রেপ্তার লিটন মিয়া ২০১৯ সালের পর আর ইরাকে যেতে পারেননি। পরে দেশেই বালি ব্যবসাসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন।
আজাদের যে ভূমিকা ছিল : র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার আজাদ দেশেই সিন্ডিকেটটির প্রতারণার বিষয়টি দেখতেন। দেশে তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই এসব নারী-পুরুষকে পাচার করা হয়েছে। তিনি পাসপোর্ট প্রস্তুত, টাকা নেওয়া, টিকিট কেটে দেওয়া এসব বিষয় দেখতেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দেশে কোরবানির পশু পর্যাপ্ত, পাশের দেশের প্রয়োজন নেই: উপদেষ্টা

বিয়ে করে ইরাকে নিয়ে বিক্রি করে দিতেন তিনি

আপডেট সময় : ০১:১৩:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : লিটন মিয়া। এইচএসসি পাস করে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চাকরি নেন। অনৈতিক কর্মকা-ের কারণে সেখান থেকে চাকরিচ্যুত হন। পরবর্তীতে চলে যান ইরাকে। দেশটির রাজধানীর একটি হাসপাতালে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেন পরিচয় দিয়ে দেশে বিয়ে করতেন। এভাবে ছয়জনকে বিয়ে করে পাঁচজনকে ইরাকে নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, নিজের বউ ছাড়াও অন্তত চল্লিশজন নারীকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুরে র‌্যাবের অভিযানে আটক হয়েছেন লিটন মিয়া ও তার সহযোগী আজাদ। র‌্যাবের ভাষ্য, লিটন মিয়া নারী পাচারকারী সিন্ডিকেটের মূলহোতা। তারা দুজন সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের সদস্য। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি বিলাসবহুল প্রাইভেট করা, বিয়ার, দেশি-বিদেশি জাল টাকা, পাসপোর্ট ও বিভিন্ন সিল।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় এলিট ফোর্স র‌্যাব। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আটকদের টার্গেটে থাকত বিউটি পার্লারে কাজ জানা ও নার্সিং পেশায় নিয়োজিত নারীরা। বিদেশে সুপারশপে চাকরির প্রলোভনে তারা নারীদের পাচার করতেন। তাদের ইরাক, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে নিয়ে জিম্মি করে ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতেন। এসব দেশে তাদের একাধিক সেফহাউজ রয়েছে।
বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নারীদের মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে যাওয়ার পর সুযোগ বুঝে নারীদের বিক্রি করে দেওয়া হতো। চক্রে দশজন সদস্যের মধ্যে সাতজন ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যে আর বাকিরা দেশে এই কাজ করছিলেন। তিন থেকে চার লাখ টাকার বিনিময়ে নারীদের চাকরির আশ্বাসে মধ্যপাচ্যে নিয়ে যাওয়া হতো। মানবপাচারের প্রথম ধাপে ট্যুরিস্ট ভিসায় দুবাই এরপর ভিজিট ভিসার মাধ্যমে ইরাকে নেওয়া হতো। চক্রটি ৩০-৪০ জন নারীকে পাচার করেছে।
কে এই লিটন মিয়া? র‌্যাব বলছে, ১৯৯২ সালে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসি পাস করেন লিটন মিয়া। এরপর সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট হিসেবে চাকরি শুরু করেন। মিথ্যা প্ররোচনা ও অনৈতিক কাজের জন্য সেখান থেকে তার চাকরি চলে যায়। এরপর লিটন ইরাকে যান। এসময় নিজেকে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের একটি স্বনামধন্য হাসপাতালে চাকরি করতেন বলে পরিচয় দিতেন। পরবর্তীতে কয়েকজন মিলে ইরাকে নারী পাচার সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। গ্রেপ্তার লিটন নারীদের প্রথমে ইরাকে মেডিকেল চাকরির প্রলোভন দেখাতেন। এভাবে সখ্যতা গড়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে পাঁচ-ছয়জনকে বিয়ে করেন। অনেককে টেলিফোনে কিংবা সরাসরিও দেশে এসে বিয়ে করেছেন। এরমধ্যে লিটন ২০১৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ইটালিতে ছিলেন। এই সময়েই তিনি বিয়েগুলো করেছেন। এসব বিয়ে লিটন পাচারের উদ্দেশে করেছেন বলে দাবি র‌্যাবের। র‌্যাব জানায়, সবশেষ পাচার হওয়া এক নারী র‌্যাবকে জানিয়েছেন- তিনি ইরাকে সেফহাউজে থাকাকালে সেখানে ১৫-২০ জনকে দেখেছেন। সেফ হাউজ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর এই নারী ইরাকের একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন। পরবর্তীতে সেখান থেকে পালিয়ে দেশে ফিরে আসেন। গ্রেপ্তার লিটন মিয়া ২০১৯ সালের পর আর ইরাকে যেতে পারেননি। পরে দেশেই বালি ব্যবসাসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন।
আজাদের যে ভূমিকা ছিল : র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার আজাদ দেশেই সিন্ডিকেটটির প্রতারণার বিষয়টি দেখতেন। দেশে তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই এসব নারী-পুরুষকে পাচার করা হয়েছে। তিনি পাসপোর্ট প্রস্তুত, টাকা নেওয়া, টিকিট কেটে দেওয়া এসব বিষয় দেখতেন।