নিজস্ব প্রতিবেদক : নরসিংদীর রায়পুরায় ধানক্ষেত থেকে গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধারের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তিন সপ্তাহের আগের ওই হত্যাকা-ের ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করলে জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডিকে এমন তথ্য দেয় তারা। বিয়েতে রাজি না হওয়ায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যার পর গৃহবধূর মরদেহ ধানক্ষেতে ফেলে রেখে যাওয়া হয় বলে সিআইডিকে জানায় গ্রেপ্তাররা।
গতকাল রোববার দুপুরে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ মুক্তাধর। গৃহবধূ রুনাকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন আবদুর রাজ্জাক খান এবং খোরশেদ মিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১০ সালে সৌদিপ্রবাসী আবুল কালামের সঙ্গে রুনা আক্তারের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে তিনটি সন্তান রয়েছে। সাড়ে তিন বছর আগে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে লোন নিয়ে সৌদি আরব যান আবুল কালাম। সৌদিতে গিয়ে লোনের টাকা পরিশোধ করেননি তিনি। এমনকি রুনা ও তার সন্তানদের খাবারেরও কোনো টাকা দেয়নি। পাওনাদাররা চাপ দিলে রুনার শ্বশুরবাড়ির লোকজন বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে টাকা পরিশোধ করতে রুনাকে চাপ দিতে থাকে। একপর্যায়ে রুনা তার তিন সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যায় এবং দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতে থাকেন।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, তাদের গ্রামে আবদুর রাজ্জাক খান নামে এক পোলট্রি ব্যবসায়ী ছিলেন। তাকে রুনা মামা বলে ডাকতেন। একই গ্রামে খোরশেদ মিয়া নামে একজনের নয় মাস আগে স্ত্রী মারা যায়। আবার বিয়ে করবেন বলে আবদুর রাজ্জাককে মেয়ে দেখতে বলেন খোরশেদ মিয়া। এজন্য ৯০ হাজার টাকা দেবেন বলে অঙ্গীকার করেন। আবদুর রাজ্জাক রুনাকে খোরশেদ মিয়াকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু রুনা এই বিয়েতে রাজি ছিলেন না। সিআইডির সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর মামার বাড়ি যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন রুনা আক্তার। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। রাত আটটার দিকে পরিবারের সদস্যরা মুঠোফোনে ফোন দিয়েও বন্ধ পায়। পরদিন সকালে স্থানীয় লোকজন একটি ধানক্ষেতে রুনার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে। এ ঘটনায় গত ১৭ ডিসেম্বর নিহতের বাবা মোসলেহ উদ্দিন বাদী হয়ে রায়পুরা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। কিন্তু কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে সেই রহস্য মিলছিল না। এমন অবস্থায় ঘটনাটি ছায়া তদন্ত শুরু করে সিআইডি। হত্যাকা-ের রহস্য জানতে সিআইডি নিহতের পরিবার, ঘটনাস্থল এবং আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে। পরবর্তীতে সিআইডির এলআইসি শাখার একটি দল নেত্রকোনার কমলাকান্দা থেকে খোরশেদ মিয়া এবং নরসিংদীর রায়পুরা থেকে আবদুর রাজ্জাক খানকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে মুক্তাধর বলেন, বিয়েতে রাজি না হওয়ায় ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আবদুর রাজ্জাক এবং খোরশেদ মিয়া ধানক্ষেতে নিয়ে রুনা আক্তারকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। ঘটনা যেন ভিন্নখাতে যায় সেজন্য হত্যার পর একটি বাঁশের কঞ্চি দিয়ে একটি চোখ উপড়ে ফেলে। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছে কিনা তার তদন্তও চলছে। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান, খায়রুল আমিন, সহকারী পুলিশ সুপার মো. রাকিবুল ইসলাম এবং মোহাম্মদ শাহজাহান খান উপস্থিত ছিলেন।
বিয়েতে রাজি না হওয়ায় খুন হন গৃহবধূ রুনা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ