প্রত্যাশা ডেস্ক: ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। শুক্রবার সকালে ভোটগণনা শুরু হতেই স্পষ্ট হয় রাজনৈতিক সমীকরণের নতুন রেখাচিত্র। সকাল ৮টা থেকে গণনা শুরু হওয়ার পর পোস্টাল ব্যালটেই ভাগ্যের দরজা খুলে যায় বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের। প্রথম এক ঘণ্টাতেই স্পষ্ট হয়ে যায় বিহারে ফের ক্ষমতায় ফিরছে নীতিশ-বিজেপির জোট।
বিহার বিধানসভার আসন সংখ্যা ২৪৩। সরকার গঠনের জন্য ম্যাজিক ফিগার ১২২। তবে গণনায় শুরু থেকেই সামগ্রিকভাবে আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের ‘মহাগঠবন্ধন’ বা মহাজোটের তুলনায় বেশ কিছুটা এগিয়ে বিজেপির নেতৃত্বধীন জোট— এনডিএ।
প্রতিবেদন লেখার সময় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২৪৩টি আসনের মধ্যে ২০২টি আসনে জিতে এগিয়ে রয়েছে এনডিএ। অন্যদিকে মহাজোট পেয়েছে মাত্র ৩৪টি আর অন্যান্য দলগুলো পেয়েছে বাকি ৭টি আসন।
যদিও মঙ্গলবার দ্বিতীয় ধাপে ভোটগ্রহণ শেষে প্রায় সবকয়টি বুথফেরত জরিপে এনডিএ-র পাঁচটি দল (জেডিইউ, বিজেপি, লোক জনশক্তি পার্টি রামবিলাস, হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা এবং রাষ্ট্রীয় লোক মোর্চা) মিলে অনায়াসে সেই জাদুসংখ্যা ছুঁয়ে ফেলবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে ‘মহাগঠবন্ধন’ বা মহাজোট ১০০টির বেশি আসন পেতে পারে বলেও জানিয়েছিল কয়েকটি জরিপ। তবে সেই সংখ্যা থেকে বহু দূরে রয়েছে আরজেডি-কংগ্রেস।
এদিকে এনডিএর ভেতরেও চলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। প্রাথমিক ফলে চমক দেখিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের জেডি (ইউ)। এরইমধ্যে দলটি এগিয়ে রয়েছে ৭৯টি আসনে যা ২০২০ সালের ৪৩ আসনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে বিজেপির রাজ্য প্রতিনিধি তরঙ্গের সঙ্গে নীতিশ কুমার তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে আশা করছেন নেতারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্য বছরের তুলনায় এবারের নির্বাচনী ফলে স্পষ্ট পরিবর্তনের ছাপই ভোটারদের ভিন্নধর্মী রাজনৈতিক চিন্তাধারা তুলে ধরেছে। এবারও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও নীতিশ কুমারের ‘রাজনৈতিক সমন্বয় এবং উন্নয়ন-কেন্দ্রিক’ প্রচার বহু ভোটারের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত নানা স্তরের ভোটাররা কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি ও সহযোগী দলের মধ্যে এই নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখেছেন। বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের ইতিহাসে গত ২০ বছরে কোন জোট এত ভোট শেয়ার পায়নি।
হিসাব পাল্টে দিয়েছে নারী ভোটাররা
বিহারের নারীরা তুলনামূলকভাবে ভোটাধিকারের বিষয়ে অসেচতন হিসেবে পরিচিতি পেলেও এবারের নির্বাচন ছিল ব্যতিক্রম। নারী ভোটারদের অংশগ্রহণ বিশেষভাবে নজর কেড়েছে। বেশ কিছু কেন্দ্রে পুরুষের তুলনায় নারী ভোটারদের সংখ্যা উল্লেখজনক হারে বেশি ছিল। সড়ক, বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ জল, নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ দৈনিক চাহিদা ও সমস্যার সমাধানে সরকারের উদ্যোগ এবং ‘নারী-কেন্দ্রিক নীতির’ সুফল নারী ভোটারদের বড় অংশকে এনডিএ’র দিকে টেনে এনেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নারী ভোটই এবারের এনডিএ শিবিরের প্রধান ভরসা হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে, এনডিএর প্রধান বিরোধী মহাগঠবন্ধনের ফলাফলে হতাশ দলের নেতা-কর্মীরা। গত নির্বাচনে বৃহত্তম দল হিসেবে তালিকাবদ্ধ হওয়া আরজেডি এবার তৃতীয় স্থানে নেমে এসেছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই দলের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে ভোটাররা সংযোগ স্থাপন করতে পারেনি। দলটি বেকারত্ব নিরসন, দুর্নীতিরোধ ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার ইস্যু সামনে আনলেও তা ভোটারদের মধ্যে খুব বেশি সাড়া ফেলতে পারেনি।
সবমিলিয়ে এবারের নির্বাচনের ফলাফল এনডিএ-এর বড় জয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে তাদের সামনে চ্যালেঞ্জও কম নয়। শক্তিশালী বিরোধী দলের চাপে এই আস্থা ধরে রাখা, নারী ও প্রান্তিক মানুষের চাহিদা পূরণ করা এবং নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করাই দলটির মূল পরীক্ষা।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
ওআ/আপ্র/১৪/১১/২০২৫

























