ঢাকা ০৮:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫

বিষণ্ননতার কিছু ওষুধে মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধির আশঙ্কা

  • আপডেট সময় : ০৭:০১:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ১ বার পড়া হয়েছে

প্রযুক্তি ডেস্ক: বিষণ্ননতার কিছু ওষুধ মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াতে পারে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় সতর্ক করেছেন গবেষকরা।
‘রাটগার্স ইউনিভার্সিটি’ ও ‘কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি’র গবেষকদের নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে, বিষণ্ননতার চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে নতুন ধরনের অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ ব্যবহারের সঙ্গে মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকির গুরুতর সম্পর্ক রয়েছে।

গবেষণায় উঠে এসেছে, যারা বিষণ্ননতার চিকিৎসার জন্য মূল ওষুধের পাশাপাশি যারা অ্যান্টিসাইকোটিক না নিয়ে অন্য কোনো ‘অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট’ বা বিষণ্ননতা কমানোর ওষুধ বেছে নেন তাদের তুলানায় অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ যোগ করা ব্যক্তিদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
গবেষক টোবিয়াস গেরহার্ড ও তার দলের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘প্লস ওয়ান’-এ।

বিষণ্ননতা সাধারণ এক মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেক মানুষ ‘অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বা বিষণ্ননতা কমানোর ওষুধ খেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই প্রথম ওষুধটি ঠিকমতো কাজ করে না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা ওষুধ বদলে বা আগের ওষুধের কার্যকারিতা বাড়াতে আরেকটি ওষুধ যোগ করেন।

এ বিষয়টিকে বলা হয় ‘অগমেন্টেশন’ বা ওষুধের কার্যকারিতা বাড়ানোর প্রক্রিয়া। এতে সাধারণত মূল ওষুধের সঙ্গে ‘অ্যারিপিপ্রাজল’, ‘কুয়েটিয়াপাইন’ বা ‘ওলানজাপাইন’-এর দ্বিতীয় আরেকটি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বা অ্যান্টিসাইকোটিক জাতীয় ওষুধ যোগ করেন চিকিৎসকরা।
অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ মাঝেমধ্যে উপকারী হলেও এগুলোর কিছু গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এসব ওষুধ মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় তা গবেষকরা জানেন। ফলে গবেষকরা জানতে চেয়েছেন, এ একই ঝুঁকি বিষণ্ননতায় ভোগা তরুণ বা মধ্যবয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের বেলায়ও প্রযোজ্য কি না। এজন্য ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ‘মেডিকএইড’-এর আওতাভুক্ত ২৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী প্রায় ৪০ হাজার মানুষের স্বাস্থ্যের তথ্য বিশ্লেষণ করেছে গবেষণা দলটি। এ সময়কালে কোন কোন রোগী মারা গিয়েছেন তা জানার জন্য ‘ন্যাশনাল ডেথ ইনডেক্স’-এর তথ্যও ব্যবহার করেছেন তারা।

দুই ধরনের রোগীর দলের মধ্যে তুলনা করেছেন গবেষকরা, যেখানে একদল রোগী প্রথম অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টে কাজ না হওয়ায় নতুন অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ যোগ করেছিলেন এবং অন্য দলটি বিকল্প হিসেবে দ্বিতীয় আরেকটি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ সেবন করেছিলেন। গবেষণার ফলাফলে পার্থক্য ছিল বেশ উদ্বেগজনক। যারা অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ খেয়েছিলেন তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি দ্বিতীয় অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট গ্রহণকারীদের তুলনায় ৪৫ শতাংশ বেশি। যারা এক বছর ধরে অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ সেবন করেছেন তাদের ২৬৫ জনের মৃত্যুর বিপরীতে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট গ্রহণকারী কেবল একজনের মৃত্যু হয়েছে।
গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, বিষণ্ননতার জন্য অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ দেওয়ার সময় চিকিৎসকদের অনেক বেশি সাবধান হওয়া উচিত। এসব ওষুধ মোটেও ঝুঁকিমুক্ত নয় এবং এগুলোর সুফলও অনেক ক্ষেত্রে খুব সামান্য।

চিকিৎসার নির্দেশিকা অনুসারে, নতুন ওষুধ শুরুর আগে রোগীদের প্রথমে নির্দিষ্ট এক অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধের পূর্ণ কোর্স শেষ করা উচিত। তবে বাস্তবে দেখা যায়, প্রথম ওষুধের কোর্স শেষ হওয়ার আগেই রোগীদের অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।

সানা/আপ্র/২৭/১২/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

বিষণ্ননতার কিছু ওষুধে মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধির আশঙ্কা

আপডেট সময় : ০৭:০১:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রযুক্তি ডেস্ক: বিষণ্ননতার কিছু ওষুধ মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াতে পারে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় সতর্ক করেছেন গবেষকরা।
‘রাটগার্স ইউনিভার্সিটি’ ও ‘কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি’র গবেষকদের নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে, বিষণ্ননতার চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে নতুন ধরনের অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ ব্যবহারের সঙ্গে মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকির গুরুতর সম্পর্ক রয়েছে।

গবেষণায় উঠে এসেছে, যারা বিষণ্ননতার চিকিৎসার জন্য মূল ওষুধের পাশাপাশি যারা অ্যান্টিসাইকোটিক না নিয়ে অন্য কোনো ‘অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট’ বা বিষণ্ননতা কমানোর ওষুধ বেছে নেন তাদের তুলানায় অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ যোগ করা ব্যক্তিদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
গবেষক টোবিয়াস গেরহার্ড ও তার দলের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘প্লস ওয়ান’-এ।

বিষণ্ননতা সাধারণ এক মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেক মানুষ ‘অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বা বিষণ্ননতা কমানোর ওষুধ খেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই প্রথম ওষুধটি ঠিকমতো কাজ করে না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা ওষুধ বদলে বা আগের ওষুধের কার্যকারিতা বাড়াতে আরেকটি ওষুধ যোগ করেন।

এ বিষয়টিকে বলা হয় ‘অগমেন্টেশন’ বা ওষুধের কার্যকারিতা বাড়ানোর প্রক্রিয়া। এতে সাধারণত মূল ওষুধের সঙ্গে ‘অ্যারিপিপ্রাজল’, ‘কুয়েটিয়াপাইন’ বা ‘ওলানজাপাইন’-এর দ্বিতীয় আরেকটি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বা অ্যান্টিসাইকোটিক জাতীয় ওষুধ যোগ করেন চিকিৎসকরা।
অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ মাঝেমধ্যে উপকারী হলেও এগুলোর কিছু গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এসব ওষুধ মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় তা গবেষকরা জানেন। ফলে গবেষকরা জানতে চেয়েছেন, এ একই ঝুঁকি বিষণ্ননতায় ভোগা তরুণ বা মধ্যবয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের বেলায়ও প্রযোজ্য কি না। এজন্য ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ‘মেডিকএইড’-এর আওতাভুক্ত ২৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী প্রায় ৪০ হাজার মানুষের স্বাস্থ্যের তথ্য বিশ্লেষণ করেছে গবেষণা দলটি। এ সময়কালে কোন কোন রোগী মারা গিয়েছেন তা জানার জন্য ‘ন্যাশনাল ডেথ ইনডেক্স’-এর তথ্যও ব্যবহার করেছেন তারা।

দুই ধরনের রোগীর দলের মধ্যে তুলনা করেছেন গবেষকরা, যেখানে একদল রোগী প্রথম অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টে কাজ না হওয়ায় নতুন অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ যোগ করেছিলেন এবং অন্য দলটি বিকল্প হিসেবে দ্বিতীয় আরেকটি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ সেবন করেছিলেন। গবেষণার ফলাফলে পার্থক্য ছিল বেশ উদ্বেগজনক। যারা অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ খেয়েছিলেন তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি দ্বিতীয় অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট গ্রহণকারীদের তুলনায় ৪৫ শতাংশ বেশি। যারা এক বছর ধরে অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ সেবন করেছেন তাদের ২৬৫ জনের মৃত্যুর বিপরীতে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট গ্রহণকারী কেবল একজনের মৃত্যু হয়েছে।
গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, বিষণ্ননতার জন্য অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ দেওয়ার সময় চিকিৎসকদের অনেক বেশি সাবধান হওয়া উচিত। এসব ওষুধ মোটেও ঝুঁকিমুক্ত নয় এবং এগুলোর সুফলও অনেক ক্ষেত্রে খুব সামান্য।

চিকিৎসার নির্দেশিকা অনুসারে, নতুন ওষুধ শুরুর আগে রোগীদের প্রথমে নির্দিষ্ট এক অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধের পূর্ণ কোর্স শেষ করা উচিত। তবে বাস্তবে দেখা যায়, প্রথম ওষুধের কোর্স শেষ হওয়ার আগেই রোগীদের অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।

সানা/আপ্র/২৭/১২/২০২৫