ঢাকা ০৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশ সবসময় প্রস্তুত: প্রধানমন্ত্রী

  • আপডেট সময় : ০২:২৪:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ৮২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে জানিয়ে এ কার্যক্রমে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, “শান্তি সহায়তা কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ আজ বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত। এটি আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা যে, বাংলাদেশ সর্বদা বিশ্ব শান্তি বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
“১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘ মিশনসহ বিশ্বের যে কোনো দেশে শান্তি রক্ষায় কাজ করতে সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।”
গতকাল সোমবার সকালে ‘৪৬তম ইন্দোপ্যাসিফিক আর্মিস ম্যানেজমেন্ট সেমিনার ২০২২’ (আইপিএএমএস) এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি অনুষ্ঠাসেন যুক্ত হন।
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া সবাইকে স্বাগত জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বন্ধুত্ব, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আইপিএএমএস সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। “আমি মনে করি, এই ধরনের ফোরামের মাধ্যমে সাধারণ স্বার্থের বিষয়গুলো উঠে আসে এবং কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলোর সমাধান সহজ হয়। ২৭টি দেশ নিয়ে আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক সেমিনারের সহ-আয়োজক হওয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য গর্বের।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনো দেশের সেনাবাহিনী সেই দেশের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার অন্যতম নিয়ামক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিকশিত হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে নিরাপত্তা ও গতিশীলতা দিন দিন পরিবর্তিত হচ্ছে এবং জটিল হচ্ছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “যে কোনো সংঘাত বা সংকট বিশ্বের প্রতিটি জাতিকে প্রভাবিত করে। এটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীল উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। “উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তা বিশ্বের প্রায় সব দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত বিষয়। এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটি দেশগুলোকে টেকসই উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী সহযোগিতার দিকে নিয়ে গেছে। যোগাযোগ, সংলাপ ও শীর্ষ বৈঠকের জন্য বেসামরিক ও সামরিক কূটনৈতিক যোগাযোগের পথ প্রশস্ত করেছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি দেখতে পাচ্ছি যে, আইপিএএমএস একটি অনুরূপ বহুজাতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারে, যাতে এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করে। “আমি বিশ্বাস করি, জ্যেষ্ঠ সামরিক নেতাদের অবশ্যই এ ধরনের ফোরামের মাধ্যমে কথা বলতে হবে, যোগাযোগ করতে হবে এবং তাদের পরস্পরের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে হবে।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুপক্ষীয়বাদে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন জানিয়ে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির সারমর্ম জানিয়ে বলেছিলেন- ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’। “বৈদেশিক নীতিতে বাংলাদেশ সবসময় বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। এটি আমাদের একটি জাতি হিসাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছে এবং ধীরে ধীরে জাতি হিসেবে আমাদের সঠিক মর্যাদা দাবি করার সক্ষমতা দিয়েছে।”
মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রেহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ ১২ লাখেরও বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে। তাদের নিজেদের দুর্দশা ছাড়াও দীর্ঘ সময় তাদের উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।” শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশের’। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার স্বপ্ন পূরণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। “বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার ৫১তম বছরে পা দিয়েছে এবং গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। দারিদ্র্য হ্রাস, খাদ্য ও শক্তি নিরাপত্তা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লিঙ্গ সমতা, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাসে সাফল্য পেয়েছে।”
প্রযুক্তির বিকাশে অপরাধের সঙ্গে পুলিশের ‘চ্যালেঞ্জও’ বেড়েছে: প্রধানমন্ত্রী : বর্তমানে যোগাযোগ ও প্রযুক্তির বিকাশে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি তা মোকাবিলা করা পুলিশের জন্যও ‘চ্যালেঞ্জিং’ হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিশ্বায়নের এই যুগে সহিংস চরমপন্থা ও আন্তর্জাতিকভাবে সংগঠিত অপরাধগুলো জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য একটি ‘বিশাল হুমকি’।
“সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উন্নত প্রযুক্তি ও নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা এ ধরনের অপরাধী নেটওয়ার্কগুলোকে শক্তিশালী করেছে। সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, মুদ্রা জালিয়াতি ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের মত নতুন চ্যালেঞ্জের উদ্ভব হচ্ছে। “তাদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ গোটা বিশ্বে সুদূরপ্রসারী অস্থিতিশীল প্রভাব ফেলে। এই প্রেক্ষাপটে পুলিশিং কার্যক্রম চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে।”
গতকাল সোমবার ‘একাদশ বার্ষিক আন্তর্জাতিক পুলিশ অ্যাকাডেমি অ্যাসোসিয়েশন সম্মেলন’ (ইন্টারপা) এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি। প্রযুক্তির বিকাশে যে অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে তা এককভাবে কোনো জাতি ‘সমাধান করতে পারে না’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এসব বিপদ মোকাবেলায় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা সুসংহত করার বিকল্প নেই। সরকারপ্রধান বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, মহাদেশজুড়ে পুলিশ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের পেশাদারদের সমন্বয়ে ইন্টারপা’র এই অনন্য সম্মেলন অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সর্বোত্তম চর্চাগুলো পরস্পরের শেয়ার করার ক্ষেত্রে সহযোগিতার নতুন পথ উন্মোচন করবে। “পুলিশিংয়ের ডিজিটালাইজেশন সন্ত্রাসবাদ, সহিংস চরমপন্থা এবং অন্যান্য প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি দুর্দান্ত উপায় হতে পারে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “এখানে আমি গর্বের সাথে বলতে চাই, বাংলাদেশ পুলিশ সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থাকে সফলভাবে মোকাবেলায় তাদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। আমাদের সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের জন্য পুলিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুণগত পরিবর্তন এসেছে। আগামী দিনে এই গতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব।” পুলিশ অ্যাকাডেমি অ্যাসোসিয়েশন সম্মেলনটি সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতার একটি কার্যকর ক্ষেত্র তৈরি করে সাধারণ ঐক্যমতে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেবে বলে আশা শেখ হাসিনার। তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, সদস্য দেশগুলোর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে উন্নত প্রযুক্তি, দক্ষতা, গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার ও সমন্বয় বিশ্বজুড়ে চরমপন্থা ও আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি নির্ভর অপরাধ দমনে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। “এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য সহযোগিতা বাড়াতে আমাদের অবশ্যই একটি সমন্বয় তৈরি করতে হবে।”
সরকারপ্রধান বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক নিরাপত্তাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি সাধন হয়েছে। আমরা এসডিজি’র সফল বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। সীমান্তবর্তী এবং প্রান্তিক এলাকার মানুষও ক্রমবর্ধমান তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা পাচ্ছে।
“দক্ষ, সেবামুখী এবং আইসিটিবান্ধব সেবার মাধ্যমে প্রান্তিক জনগণসহ সকলের কাছে তথ্যপ্রযুক্তি সহজলভ্য করে দেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ রূপান্তরের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।” বাংলাদেশ যে ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে একটি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে, সে কথা তুরে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা গর্ব করে বলতে চাই, বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে নিজেকে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ তুলে ধরেছে। বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে যুক্ত হয়েছি। এই উল্লেখযোগ্য অর্জন প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের ক্রমাগত সাফল্যের সাক্ষ্য দেয়।”

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

আবু সাঈদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে গণঅভ্যুত্থানের সূচনা

বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশ সবসময় প্রস্তুত: প্রধানমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০২:২৪:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে জানিয়ে এ কার্যক্রমে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, “শান্তি সহায়তা কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ আজ বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত। এটি আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা যে, বাংলাদেশ সর্বদা বিশ্ব শান্তি বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
“১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘ মিশনসহ বিশ্বের যে কোনো দেশে শান্তি রক্ষায় কাজ করতে সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।”
গতকাল সোমবার সকালে ‘৪৬তম ইন্দোপ্যাসিফিক আর্মিস ম্যানেজমেন্ট সেমিনার ২০২২’ (আইপিএএমএস) এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি অনুষ্ঠাসেন যুক্ত হন।
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া সবাইকে স্বাগত জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বন্ধুত্ব, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আইপিএএমএস সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। “আমি মনে করি, এই ধরনের ফোরামের মাধ্যমে সাধারণ স্বার্থের বিষয়গুলো উঠে আসে এবং কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলোর সমাধান সহজ হয়। ২৭টি দেশ নিয়ে আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক সেমিনারের সহ-আয়োজক হওয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য গর্বের।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনো দেশের সেনাবাহিনী সেই দেশের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার অন্যতম নিয়ামক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিকশিত হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে নিরাপত্তা ও গতিশীলতা দিন দিন পরিবর্তিত হচ্ছে এবং জটিল হচ্ছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “যে কোনো সংঘাত বা সংকট বিশ্বের প্রতিটি জাতিকে প্রভাবিত করে। এটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীল উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। “উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তা বিশ্বের প্রায় সব দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত বিষয়। এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটি দেশগুলোকে টেকসই উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী সহযোগিতার দিকে নিয়ে গেছে। যোগাযোগ, সংলাপ ও শীর্ষ বৈঠকের জন্য বেসামরিক ও সামরিক কূটনৈতিক যোগাযোগের পথ প্রশস্ত করেছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি দেখতে পাচ্ছি যে, আইপিএএমএস একটি অনুরূপ বহুজাতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারে, যাতে এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করে। “আমি বিশ্বাস করি, জ্যেষ্ঠ সামরিক নেতাদের অবশ্যই এ ধরনের ফোরামের মাধ্যমে কথা বলতে হবে, যোগাযোগ করতে হবে এবং তাদের পরস্পরের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে হবে।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুপক্ষীয়বাদে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন জানিয়ে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির সারমর্ম জানিয়ে বলেছিলেন- ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’। “বৈদেশিক নীতিতে বাংলাদেশ সবসময় বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। এটি আমাদের একটি জাতি হিসাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছে এবং ধীরে ধীরে জাতি হিসেবে আমাদের সঠিক মর্যাদা দাবি করার সক্ষমতা দিয়েছে।”
মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রেহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ ১২ লাখেরও বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে। তাদের নিজেদের দুর্দশা ছাড়াও দীর্ঘ সময় তাদের উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।” শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশের’। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার স্বপ্ন পূরণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। “বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার ৫১তম বছরে পা দিয়েছে এবং গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। দারিদ্র্য হ্রাস, খাদ্য ও শক্তি নিরাপত্তা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লিঙ্গ সমতা, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাসে সাফল্য পেয়েছে।”
প্রযুক্তির বিকাশে অপরাধের সঙ্গে পুলিশের ‘চ্যালেঞ্জও’ বেড়েছে: প্রধানমন্ত্রী : বর্তমানে যোগাযোগ ও প্রযুক্তির বিকাশে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি তা মোকাবিলা করা পুলিশের জন্যও ‘চ্যালেঞ্জিং’ হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিশ্বায়নের এই যুগে সহিংস চরমপন্থা ও আন্তর্জাতিকভাবে সংগঠিত অপরাধগুলো জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য একটি ‘বিশাল হুমকি’।
“সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উন্নত প্রযুক্তি ও নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা এ ধরনের অপরাধী নেটওয়ার্কগুলোকে শক্তিশালী করেছে। সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, মুদ্রা জালিয়াতি ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের মত নতুন চ্যালেঞ্জের উদ্ভব হচ্ছে। “তাদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ গোটা বিশ্বে সুদূরপ্রসারী অস্থিতিশীল প্রভাব ফেলে। এই প্রেক্ষাপটে পুলিশিং কার্যক্রম চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে।”
গতকাল সোমবার ‘একাদশ বার্ষিক আন্তর্জাতিক পুলিশ অ্যাকাডেমি অ্যাসোসিয়েশন সম্মেলন’ (ইন্টারপা) এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি। প্রযুক্তির বিকাশে যে অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে তা এককভাবে কোনো জাতি ‘সমাধান করতে পারে না’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এসব বিপদ মোকাবেলায় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা সুসংহত করার বিকল্প নেই। সরকারপ্রধান বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, মহাদেশজুড়ে পুলিশ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের পেশাদারদের সমন্বয়ে ইন্টারপা’র এই অনন্য সম্মেলন অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সর্বোত্তম চর্চাগুলো পরস্পরের শেয়ার করার ক্ষেত্রে সহযোগিতার নতুন পথ উন্মোচন করবে। “পুলিশিংয়ের ডিজিটালাইজেশন সন্ত্রাসবাদ, সহিংস চরমপন্থা এবং অন্যান্য প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি দুর্দান্ত উপায় হতে পারে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “এখানে আমি গর্বের সাথে বলতে চাই, বাংলাদেশ পুলিশ সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থাকে সফলভাবে মোকাবেলায় তাদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। আমাদের সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের জন্য পুলিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুণগত পরিবর্তন এসেছে। আগামী দিনে এই গতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব।” পুলিশ অ্যাকাডেমি অ্যাসোসিয়েশন সম্মেলনটি সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতার একটি কার্যকর ক্ষেত্র তৈরি করে সাধারণ ঐক্যমতে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেবে বলে আশা শেখ হাসিনার। তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, সদস্য দেশগুলোর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে উন্নত প্রযুক্তি, দক্ষতা, গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার ও সমন্বয় বিশ্বজুড়ে চরমপন্থা ও আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি নির্ভর অপরাধ দমনে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। “এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য সহযোগিতা বাড়াতে আমাদের অবশ্যই একটি সমন্বয় তৈরি করতে হবে।”
সরকারপ্রধান বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক নিরাপত্তাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি সাধন হয়েছে। আমরা এসডিজি’র সফল বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। সীমান্তবর্তী এবং প্রান্তিক এলাকার মানুষও ক্রমবর্ধমান তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা পাচ্ছে।
“দক্ষ, সেবামুখী এবং আইসিটিবান্ধব সেবার মাধ্যমে প্রান্তিক জনগণসহ সকলের কাছে তথ্যপ্রযুক্তি সহজলভ্য করে দেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ রূপান্তরের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।” বাংলাদেশ যে ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে একটি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে, সে কথা তুরে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা গর্ব করে বলতে চাই, বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে নিজেকে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ তুলে ধরেছে। বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে যুক্ত হয়েছি। এই উল্লেখযোগ্য অর্জন প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের ক্রমাগত সাফল্যের সাক্ষ্য দেয়।”