নিজস্ব প্রতিবেদক : আমি বিশ্ব নেতাদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে পাঁচদফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছি।’ গতকাল বুধবার সরকারি বাসভবন গণভবনে সাম্প্রতিক জলবায়ু সম্মেলন ও ফ্রান্স সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে গত ৩১ অক্টোবর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো যান। পরে সেখান থেকে লন্ডন ও প্যারিস সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশে ফেরেন ১৪ নভেম্বর।
প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি সম্মেলনে প্রধান কার্বন নির্গমণকারী দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমনের জন্য আনুপাতিক হারে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুত অর্থায়ন নিশ্চিত করা, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট সমস্যার সমাধানে একযোগে কাজ করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলার কথা বলেছেন। সরকার প্রধান বলেন, বিশ্বের সরকার প্রধানদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশের দাবি-দাওয়া তুলে ধরে বক্তব্য দিয়েছি। সিভিএফ-এর সভাপতি হিসেবে একটি ক্লাইমেট ইমার্জেন্সি প্যাক্ট গঠনের প্রয়াসের কথাও তুলে ধরি। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে আলোচনায় দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পরিধি ও গভীরতা আরও বাড়বে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এ ছাড়া বাণিজ্য নীতি, রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও আলোচনায় উঠে আসে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এই বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রশংসা করে জলবায়ু অভিযোজনে অর্থ ছাড়ের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য রুশনারা আলী ও লর্ড নিতেশ গারিয়ার আমন্ত্রণে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশ অ্যাট ৫০, আ রেসিলিয়েন্ট ডেলটা’ শীর্ষক একটি কি-নোট উপস্থাপন করেন বলে জানান। লন্ডনের প্রকাশনা সংস্থা টেইলর এড ফ্রান্সিস কর্তৃক ইংরেজিতে অনুদিত ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অফ ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য ন্যাশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ এবং ‘মুজিব অ্যান ইনট্রোডাকশন’ বই দুটির মোড়ক উম্মোচন করেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। এরপর প্রধানমন্ত্রী ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কূটনৈতিক আলাপের প্রসঙ্গে বলেন। প্রতিরক্ষা ও অর্থনীতিসহ অন্যান্য খাতে দুই দেশের কার্যক্রম বাড়ানোর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি। ফ্রান্সের ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে তাদেরকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। ইউনেস্কো সদর দফতরে সৃজনশীল অর্থনীতির জন্য ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানেও যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি মুজিববর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের প্রেক্ষিতে এই পুরস্কার প্রবর্তন সবচেয়ে উপযুক্ত সম্মান। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।’
আর কত টাকা ভর্তুকি দেব: জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, সারসহ বিভিন্ন খাত মিলিয়ে সরকারকে বছরে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখেছেন- আর কত টাকা ভর্তুকি সরকার দিতে পারবে?
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে সরকারপ্রধানের এমন মন্তব্য আসে। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাসের ভাড়া বেড়েছে এবং বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে জানিয়ে একজন সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ডিজেলের দাম কমানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের আছে কি না। উত্তর দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশেকে বিদেশ থেকে ডিজেল কিনে আনতে হয়। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে বলেই দেশেও দাম বাড়াতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও অনেক খাতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। কেবল জ্বালানি তেলেই ২৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা কত টাকা ভর্তুকি দেব? বাজেটের সব টাকা তাহলে ভর্তুকিতে দিয়ে দেব। তাহলে কিন্তু সব উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে।” শেখ হাসিনা বলেন, “জনগণের প্রতি দায়িত্ব সম্পর্ক আমরা সবসময় সচেতন। করোনার মধ্যে এমন কোনো শ্রেণিপেশার মানুষ নাই, যাদের আমরা নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করি নাই। একবার না বার বার দিয়েছি।” তিনি বলেন, “আমাদের উপায়টা কী? উপার্জনটা কী? আমাদের কী সম্পদ আছে? উন্নত দেশে যান, খাদ্যের জন্য হাহাকার। সুপারমারকেট খালি, খোদ লন্ডনের কথা বলছি। আমাদের দেশে তো খাদ্যের অভাব হয় নাই।” কর না দেওয়া এবং কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “ট্যাক্সটা ফাঁকি দেওয়ার দিকেই সবার নজর। তাহলে টাকাটা আসবে কোথা থেকে? তাহলে কি দেউলিয়া হয়ে যেতে হবে?” গ্যাসের সঙ্কট মেটাতে সরকার এলএনজি আমদানি করছে এবং সেখানেও বড় অংকের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, খাবারের যাতে কষ্ট না হয়, সেদিকে আমাদের নজর আছে।”
ক্রিকেট দলের খেলা নিয়ে হতাশ না হওয়ার পরামশর্ : টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের হেরে যাওয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ না করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আপনারা এতো হতাশ হন কেন? আমি এই হতাশা আর দেখতে চাই না। গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণ-পরবর্তী দেশে ফিরে এ সংবাদ সম্মেলন করছেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের খেলা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, কয়েকটা খেলা তো তারা (ক্রিকেট দল) চমৎকার খেলেছে। কখন যে ব্যাটে বলে ঠিক মতো লাগবে, ছক্কা হবে তাতো বলা যায় না। সবসময় সব অংক মেলে না। এটাও বাস্তব কথা। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমরা যেটা আশা করেছিলাম, আমাদের খেলোয়াড়রা তা খেলতে পারেনি। তাই বলে আমি কিন্তু আমাদের ছেলেদের কখনও হতাশ করিনি। আমি তাদের বলি, আরও ভালো খেল। আরও মনোযোগী হও, আরও অনুশীলন করো। করোনার কারণে তারা অনুশীলন করতে পারেনি। তারপরও বাংলাদেশ আজ বিশ্বকাপে খেলছে, বেশ কয়েকটি দেশকে হারাতে পেরেছে, এটাই তো বড় কথা। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি চাচ্ছি তাদের আরও বেশি অনুশীলন করানো। আরও ভালো যেন খেলতে পারে সে ব্যবস্থা করা। সুতরাং কথায় কথায় এত হতাশ হওয়া তো ঠিক নয়। এটাই আমাদের একটা মানসিক সমস্যা হয়ে গেছে। একটুতেই হতাশ। বেশি হতাশ হওয়া যাবে না। মাঝামাঝি থাকতে হবে। আগামীতে নিশ্চয়ই (ক্রিকেটাররা) ভালো করবে। নতুন প্রজন্ম আসছে, তারা ভালো করছে।
চেয়ারম্যান প্রতীক দিচ্ছি দেখেই মারামারি তা কিন্তু না : ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে সহিংসতার জন্য বিএনপিকে দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “মুশকিল হচ্ছে এখানে আমরা শুধু চেয়ারম্যান পদে প্রতীক দিচ্ছি, কিন্তু মেম্বার পদে কোনো প্রতীক নেই। তাদের কোনো প্রতীক থাকে না। আপনারা যদি ঘটনাগুলো দেখেন, মেম্বারদের মধ্যেও গোলমাল, তাদের মধ্যেও কাটাকাটি। শুধু যে চেয়ারম্যান প্রতীক দিচ্ছি দেখেই মারামারি তা কিন্তু না।”
এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সংঘাত-সহিংসতায় এরইমধ্যে ৪৬ জনের প্রাণহানি ঘটার বিষয়টি তুলে ধরে একজন সাংবাদিক বলেন, অনেক ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় সহিংসতা বাড়ছে বলে কেউ কেউ মত দিচ্ছেন। এ অবস্থায় দলীয় প্রতীক বরাদ্দ না করে আওয়ামী লীগ প্রার্থিতা উন্মুক্ত করার মত পদক্ষেপ নেবে কি না।
উত্তর দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচনী সহিংসতা অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে, তবে এটা ঠিক, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতা আগেও হয়েছে। এখনও হোক সেটা চাই না। একটা হানাহানি, ভোট দিতে গিয়ে মানুষের প্রাণ যাবে এটা কখনও গ্রহণযোগ্য নয়।” বিএনপিসহ বিভিন্ন দল দলীয়ভাবে নির্বাচন না করলেও তাদের নেতারা যে অনেক জায়গায় স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছে, সে বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “তৃণমূলে দেখা যায় একজনকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে, অনেকের আকাঙ্ক্ষা থাকে। নির্বাচন তো সবাই করছে, আমরা যেমন আওয়ামী লীগের নামে করছি, বিএনপি নাম ছাড়া করছে, অন্যান্য দলও করছে। এই যে হানাহানি মারামারি, কোথায় কোথায়, কাদের মধ্যে হচ্ছে- সেটা আপনারা দেখেন। আমাদের দলের মধ্যে যেগুলো হবে, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকতে দিয়েছি এটাই কি বেশি নয়: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আমার অথরিটিতে বাসায় থাকতে দিয়েছি। বাকিটা আইনের ব্যাপার। অমানবিক একজনকে আমি মানবতা দেখিয়ে বাসায় থাকতে দিয়েছি। আমার কাছে আর কত চান।’
বিকালে সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে জানতে চাইলে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে হয় এই প্রশ্ন করার জন্য আপনাদের লজ্জা হওয়া দরকার। যারা আমার বাপ-মা, ভাই, আমার ছোট রাসেলকে পর্যন্ত হত্যা করিয়েছে। তারপরও আমরা অমানুষ না। অমানুষ না দেখেই তাকে (খালেদা জিয়া) তার বাসায় থাকার ব্যবস্থাটুকু আমার এক্সিকিউটিভ অথরিটিতে, আমার হাতে যতটুকু আছে, সেটুকু দিয়ে তার বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘গ্রেনেড হামলার পর আমাদের এতজন আহত। ২২ জন মারা গেছে। একদিনও পার্লামেন্টে সেটার ওপর আলোচনা করতে দেয়নি। যে এত বড় অমানবিক-তাকেও আমরা মানবতা দেখিয়েছি।’
বাংলাদেশে ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট হবে: দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের লক্ষ্যে ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে দলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।
১৬ নভেম্বর টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনের টানা চারবারের সংসদ সদস্য, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. একাব্বর হোসেন মারা যাওয়ায় সংসদের রীতি অনুযায়ী শোক প্রস্তাব আনার পর তার জীবনের ওপর আলোচনার পর সংসদ মুলতবি হয়। তবে প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়। আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহামারি করোনা আবির্ভাবের পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও উৎপাদনের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাকসিন নিয়ে অধিকতর গবেষণা ও উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘মহামারি করোনাভাইরাসসহ বিভিন্ন ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন উৎপাদনের লক্ষ্যে দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা এবং ভ্যাকসিন নীতিমালা প্রণয়নের পরিকল্পনা বর্তমান সরকারের রয়েছে।’ ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট এবং ভ্যাকসিন নীতিমালা প্রণীত হলে যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে, সেই তথ্যও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।
আমাকে ‘জুয়েল ইন দ্য ক্রাউন’ অভিহিত করা হয়েছে : এ কে এম রহমতুল্লাহর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৫-২০২০ সময়কালে এসডিজি অর্জনে সর্বোচ্চ সাফল্যের জন্য আমাকে “এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড” প্রদান করা হয়। ওই সম্মাননা প্রদানকালে করোনা মহামারির এই কঠিন সময়ে বাংলাদেশ ও বিশ্ব অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকার জন্য আমাকে ‘জুয়েল ইন দ্য ক্রাউন’ বলে অভিহিত করা হয়।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারিতে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকোচন, ভ্যাকসিন বৈষম্য প্রভৃতি বিশ্বের অনেক দেশেরই উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করেছে। কিন্তু এই মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশ যে অবিচলভাবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে—এই পুরস্কার তারই বিশ্ব স্বীকৃতি। এই পুরস্কার শত প্রতিকূলতার মাঝেও বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে যেমন বিশ্বদরবারে তুলে ধরেছে, তেমনি বাংলাদেশের সক্ষমতার ওপর বিশ্ববাসীর আস্থা দৃঢ়তর করেছে। বাংলাদেশের জনগণই এই পুরস্কারের প্রকৃত অংশীদার।’ স্বাধীনতা অর্জন থেকে আজকের যত অর্জন, সবই হয়েছে দেশের মানুষের সমর্থন ও ভালোবাসার জন্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এই পদক দেশের জনগণকে উৎসর্গ করেন।
পদ্মা সেতুর ভৌত অগ্রগতি ৮৮.৭৫ শতাংশ : জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ভায়াডাক্টসহ ৯.৮৩ কি.মি. দৈর্ঘ্যের বাংলাদেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। অক্টোবর, ২০২১ পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত কাজ ৮৮.৭৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। জুন, ২০২২ সালের মধ্যে স্বপ্নের এই সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। পদ্মা সেতু নির্মিত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত ও সহজতর হবে। এটি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গেও যুক্ত হবে, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হবে।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে সাবওয়ে (আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো) নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চলছে। অক্টোবর পর্যন্ত সমীক্ষা প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। সম্ভাব্যতা সমীক্ষার মাধ্যমে এলাইনমেন্ট চূড়ান্ত করে যথাসময়ে সাবওয়ে বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে বলে আশা করা যায়।’ কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নির্মাণকাজ অক্টোবর ২০২১ পর্যন্ত ৭৪.৩৩ শতাংশ বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
নিষ্ঠাবান রাজনীতিকের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করি: দেশে নিষ্ঠাবান রাজনীতিকের প্রয়োজনীয়তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টাঙ্গাইল-৭ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সদ্যপ্রয়াত একাব্বর হোসেনকে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব দেওয়ার মতো একজন করে গড়ে তুলছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো আদর্শিক, সৎ ও নিষ্ঠাবান যারা রয়েছে তাদের মধ্যে একাব্বরও একজন ছিল। আমাদের পরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেওয়া ও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য যাদের তৈরি করছিলাম, তাদের একজনকে হারালাম। এই মৃত্যুতে দেশ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। দুর্ভাগ্য তাকে হারালাম। বুধবার সংসদ সদস্য একাব্বর হোসেনের মৃত্যুতে সংসদে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। সংসদের বৈঠকের শুরুতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরে সর্বসম্মতক্রমে তা গ্রহণ করা হয়। এর আগে সংসদ নেতা শেখ হাসিনাসহ সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেন।
চলমান সংসদের কোন সংসদ সদস্য মারা গেলে সংসদের বৈঠকে শোক প্রস্তাব ওঠানোর পর তা নিয়ে আলোচনা করেন সংসদ সদস্যরা। ওইদিন সংসদের অন্য কার্যক্রম স্থগিত রেখে বৈঠক মুলতবি করা হয়।
একাব্বর হোসেনকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নে নিষ্ঠাবান রাজনীতিক কতটা প্রয়োজন তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করি। একাব্বর হোসেন ছিলেন এমন একজন নিষ্ঠাবান, সৎ ও নিবেদিত প্রাণ। একাব্বর থাকলে এদেশের রাজনীতিতে অনেক অবদান রাখতে পারত। কারণ‑ তার সততা ও একনিষ্ঠতা ও দেশপ্রেম, একজন রাজনীতিবিদের মধ্যে যা সব থেকে বেশি প্রয়োজন। নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলী তার ছিল। তিনি বলেন, আমাদেরকে আবারও সেই শোকপ্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রতিদিনই তার চিকিৎসার খবর নিচ্ছিলাম। গতকাল খবর পেলাম তার আবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। তখনই আমার সন্দেহ হলো আর বোধহয় ফিরে আসবে না। সেই ঘটনাটাই ঘটলো।
মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমরা সংসদের ২০ জন সদস্যকে হারিয়েছি। বলতে গেলে প্রতিবারই সংসদ শুরু করতে হতো শোকপ্রস্তাব নিয়ে। কিন্তু শোকপ্রস্তাব এবার নেওয়া হলেও কোনও এমপির মৃত্যুর জন্য আলোচনা করার দরকার হয়নি বলে আশ্বস্ত ছিলাম, স্বস্তি নিয়ে অধিবেশন শুরু করলাম ঠিকই কিন্তু ভয়াবহ আঘাতটা এলো। তিনি বলেন, একটি সংসদে এতজন মানুষের মৃত্যু, সত্যিই যেন অস্বাভাবিক ঘটনা আমাদের জীবনে ঘটে গেল। যারা দেশের মানুষের জন্য কাজ করছে-তারাই যেন একে একে চলে যাচ্ছে।
চলতি সংসদের মারা গেলেন যারা : বক্তব্যের শুরুতে চলতি সংসদের যেসব এমপি মারা গেছেন তার তালিকা তুলে ধরেন সংসদ নেতা। চলতি সংসদের যারা মারা গেছেন তারা হলেন- কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের এমপি রুশেমা বেগম (মহিলা আসন-৩৪), দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা এইচ এম এরশাদ, চট্টগ্রাম-৮ আসনের মঈনউদ্দীন খান বাদল, গাইবান্ধা-৩ আসনের মো. ইউনুস আলী সরকার, বাগেরহাট-৪ আসনের মোজাম্মেল হোসেন, বগুড়া-১ আসনের আবদুল মান্নান, যশোর-৬ আসনের ইসমাত আরা সাদেক, পাবনা-৪ আসনের শামসুর রহমান শরীফ, ঢাকা-৫ আসনের হাবিবুর রহমান মোল্লা, সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, ঢাকা-১৮ আসনের সাহারা খাতুন, নওগাঁ-৬ আসনের ইসরাফিল আলম, সিলেট-৩ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। ঢাকা-১৪ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হক, কুমিল্লা-৫ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন খসরু, কুমিল্লা-৭ আসনের অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের হাসিবুর রহমান স্বপন, জাপার সংরক্ষিত আসনের এমপি মাসুদা এম রশীদ ও টাঙ্গাইল-৭ আসনের একাব্বর হোসেন।
বাংলাদেশে খাদ্যের হাহাকার নেই : সংসদে সংসদ নেতা বলেন, কোভিড-১৯ থেকে বাংলাদেশকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রেখে দেশের মানুষের জীবনযাত্রা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি, সারা বিশ্ব এটা মনে করে; তারা আমাদের বলে। বিশ্বের অবস্থা দেখলেও উপলব্ধি করতে পারি, অনেক উন্নত দেশেও খাদ্যের অভাব, দুর্ভিক্ষ অবস্থা। বাজারে জিনিস পাওয়া যায় না। সুপার মার্কেটগুলো খালি। লন্ডনে গিয়ে শুনতে হচ্ছে সুপার মার্কেটে অনেক কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। সাপ্লাই নেই। খাবার জিনিস পর্যন্ত পাওয়া যায় না। সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গ্রামে পর্যন্ত খাদ্যের হাহাকারটা নেই।
বিশ্ব নেতাদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছি : প্রধানমন্ত্রী
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ