প্রত্যাশা ডেস্ক : বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে সরকারি হিসেবে যত মানুষের মৃত্যু দেখানো হয়েছে প্রকৃত মৃতের সংখ্যা তার থেকেও তিনগুণ বেশি। এমন তথ্য উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক চিকিৎসাবিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘দ্য ল্যানসেট’-এর এক গবেষণায়।
সম্প্রতি ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ‘কোভিড-১৯ অ্যাকসেস মরটালিটি টিম’ ১৯১ দেশ এবং অঞ্চলের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যখন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে ‘মহামারি’ ঘোষণা করল, তখন থেকে গত দুই বছরে অন্তত ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের প্রাণ গেছে।
কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু লোকজন মারা গেছেন সংক্রমণ পরবর্তি জটিলতায়। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর শ্বাসতন্ত্র, হৃদযন্ত্র, কিডনি রোগ, বা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের জটিলতা আরও বেড়ে গিয়ে বিপুল মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কোভিড মহামারি শুরুর আগে মৃত মানুষের সংখ্যা আর কোভিড শুরু হওয়ার পরে মারা য়াওয়া মানুষের সংখ্যা তুলনা করে তার প্রেক্ষিতেই গবেষকরা বাড়তি মৃত্যুর হিসেব বের করার চেষ্টা করেছেন।
গবেষকরা এ কাজের জন্য ওয়ার্ল্ড মরটালিটি ডেটাবেজ, হিউম্যান মরটালিটি ডেটাবেজ এবং ইউরোপিয়ান স্ট্যাটিস্টিকসের মতো বিভিন্ন সরকারি ওয়েব সাইট থেকে তথ্য নিয়েছেন। দেশ ও অঞ্চলভেদে ‘অতিরিক্ত মৃত্যুর’ এই হারে পার্থক্য আছে। তবে গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যে সামগ্রিকভাবে বিশ্বে গড় মৃত্যু হার দাঁড়িয়েছে প্রতি লাখে ১২০ জন।
ল্যানসেট বলছে, এই পরিসংখ্যান এটাই প্রমাণ করে, ২০২০ সালের শুরু থেকে ২০২১ সালের শেষ পর্যন্ত কোভিড মহামারিতে প্রায় ১ কোটি ৮২ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্ত সরকারিভাবে মাত্র ৫৯ লাখ মানুষের মৃত্যুর তথ্য নথিভূক্ত হয়েছে। সমগ্র দুই বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা অতি মৃত্যুর এই হিসেব বের করেছেন। সপ্তাহ বা মাস ধরে আলাদা হিসেব তারা করেননি।
ল্যানসেন্ট জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, লাতিন আমেরিকা, ইউরোপ এবং সাব-সাহরান অফ্রিকার নি¤œ আয়ের দেশগুলোতে অতিমৃত্যু বেশি হয়েছে। ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও কোভিডে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেশি দেখা গেছে। অতিরিক্ত মৃত্যুর হারে বলিভিয়া, বুলগেরিয়া, নর্থ মেসিডোনিয়া, লেসোথো এবং ইসোয়াতিনি শীর্ষ অবস্থানে। আইসল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড এবং তাইওয়ানে অতি মৃত্যুর হার সবথেকে কম।
প্রকাশিত গবেষণা অনুসরণ করে বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যে ২০২০ ও ২০২১ সালের মধ্যে ১ লাখ ৭৩ হাজার মানুষের মৃত্যুর যে তথ্য দেখানো হয়েছে তা সরকারি হিসেবের কাছাকাছি। সরকারি নথিতে প্রতি লাখে ১৩০ জন মারা যাওয়ার হিসেব দেখানো হয়েছে।
ইন্সটিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের প্রধান লেখক ডা. হাইডং ওয়াং বলেছেন, ‘জনস্বাস্থ্য সম্পর্তিক পরিকল্পনা সাজাতে মহামারীতে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা জানাটা জরুরি। সুইডেন, ন্যাদারল্যান্ডসহ বেশ কয়টি দেশের অতি মৃত্যর প্রধান কারণ কোভিড। তবে বিশ্বের অনেক দেশের নির্ভরযোগ্য তথ্য আমাদের হাতে নেই’।
কোভিডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মৃত্যুর সংখ্যা জানা সম্ভব হলে তা পরে অন্য গবেষণায় আরও কাজে দেবে বলে মনে করেন হাইডং ওয়াং। তবে কোভিডের টিকা এবং ওষুধের কারণে আগামীতে অতি মৃত্যর হার কমে আসবে। পরিশেষে মহামারি এখনো পুরোটা শেষ হয়নি এবং সামনে ভাইরাসের নতুন কোনো বিপজ্জনক রূপের আবির্ভাব ঘটতে পারে এ ব্যাপারেও গবেষকরা সতর্ক করেছেন।
বিশ্ব করোনায় মৃত্যু সরকারি হিসেবের তিন গুণ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ