নারী ও শিশু ডেস্ক: সারা পৃথিবীতেই মোটের ওপর মেয়েশিশুর চেয়ে ছেলেশিশু বেশি জন্মায়। তবে প্রতি বছর জন্মানো শিশুর মধ্যে গড়ে ছেলেশিশুর সংখ্যাটা মেয়েশিশুর চেয়ে বেশি হয়। ব্রিটেনে ১৮৩৮ সাল থেকে শিশু জন্মের তথ্য রেকর্ড করা হচ্ছে। ঐ সময় থেকেই সেখানে প্রতি বছর ছেলেশিশুর সংখ্যা মেয়েশিশুর সংখ্যার তুলনায় বেশি।
এক তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা গেছে, ব্রিটেনে ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৫ ছেলেশিশুর জন্ম হয়েছে; যেখানে মেয়েশিশুর সংখ্যা তিন লাখ আট হাজার ৭১টি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক হিসাব মতে, সদ্য জন্মানো শিশুদের মধ্যে ‘প্রাকৃতিক’ জেন্ডার অনুপাত হলো ১০৫ ছেলের বিপরীতে ১০০ মেয়েশিশুর জন্ম হচ্ছে। সারা পৃথিবীতেই এ অনুপাত মোটামুটি একই।
কী কারণে ছেলেশিশু বেশি জন্মায় তার কারণ খুঁজতে নানা ধরনের গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। এ বিষয়ে নানা ধরনের তত্ত্ব রয়েছে। এই তত্ত্বগুলোর প্রথমটি হচ্ছে বিবর্তনবাদ তত্ত্ব। এই তত্ত্ব অনুযায়ী পুরুষ হিসেবে বেড়ে ওঠাটা একটা বিপজ্জনক ব্যাপার। কারণ মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মৃত্যু ঝুঁকি বেশি থাকে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড স্টাইনজালৎস বলছেন, যে কোনো স্থান কাল পাত্রেই পুরুষের মারা যাবার ঝুঁকি নারীর চেয়ে বেশি। এই বিবর্তনের নিয়মেই পুরুষ শিশুর জন্ম বেশি হচ্ছে; যাতে শেষ পর্যন্ত পরিণত বয়সে নারী ও পুরুষের সংখ্যায় একটা সমতা থাকে।
দ্বিতীয় তত্ত্বটি হচ্ছে নিষিক্তকরণে ক্রোমোজোমের প্রকৃতি। নারীর ডিম্বাণুকে নিষিক্তকারী শুক্রাণুটি যদি ‘ওয়াই’ ক্রোমোজোম বহন করে তাহলে সন্তান হবে ছেলে। আর সেই শুক্রাণুটি যদি ‘এক্স’ ক্রোমোজোম বহন করে তাহলে সন্তান হবে মেয়ে। ওয়াই ক্রোমোজোমবাহী পুরুষ শুক্রাণুটি দ্রুত ছুটতে সক্ষম। অন্যদিকে এক্স ক্রোমোজোমবাহী শুক্রাণুটি ধীর গতিতে ছোটে। এই প্রক্রিয়ায় নারীর ঋতুচক্রের সময় কোনো দম্পতি কতবার মিলিত হচ্ছেন এবং কতদিন বিরতি দিচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করে সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে।
নারীর ডিম্বস্ফোটনের ঠিক আগে বা পরে যৌনমিলন হলে যে শুক্রাণুগুলো দ্রুত ছুটতে পারে তারাই ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হতে পারে এবং ছেলে সন্তানের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এর বিপরীতা হলে অর্থাৎ ওভুলেশনের কয়েক দিন আগে একাধিকবার যৌনমিলন হওয়ার পর কয়েক দিন বিরতি দিলে কন্যা সন্তানের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বিজ্ঞানীরা অবশ্য মনে করেন এসব ‘পরিকল্পনা’ করে যৌনমিলন করেও ফলাফলে বিশেষ কোনো পার্থক্য হয় না।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মা-বাবা যদি মানসিক চাপে থাকেন তাহলে মেয়েশিশু জন্মের সম্ভাবনা বাড়ে। অন্যদিকে যুদ্ধ বা সংঘাতের মধ্যে যে বাবা-মা বাস করছেন তাদের ছেলে সন্তান বেশি হতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলেন, কিছু গবেষণায় আভাস পাওয়া গেছে যে গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে কন্যা ভ্রূণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি। কিন্তু অন্য কিছু জরিপে দেখা গেছে, গর্ভাবস্থার শেষ দিকে পুরুষ ভ্রূণ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে এবং এর ফলে মৃত শিশুর জন্ম হতে পারে। বিজ্ঞানীদের মতে আসলে গর্ভকালীন সময়ে ঠিক কী ঘটে এবং কেন ঘটে তা নির্ভুলভাবে বলা খুবই কঠিন। মোটের ওপর, আমরা এটাই দেখি যে ছেলে ভ্রূণই পরিণত অবস্থা পর্যন্ত বেশি পৌঁছায় এবং ছেলেশিশুর জন্মই বেশি হয়।