প্রত্যশা ডেস্ক: সম্প্রতি কোস্টা রিকার তর্তুগুয়েরো ন্যাশনাল পার্কের উপকূলে মাছ ধরার সময় এক দল স্পোর্টস ফিশার এমন একটি হাঙরের মুখোমুখি হন, যা তারা আগে কখনো দেখেননি। হাঙরটি ছিল প্রায় ছয় ফুট লম্বা, শরীর ঝকঝকে সোনালী রঙের এবং চোখ দুটো একেবারে সাদা। আশ্চর্য হলেও ফিশাররা হাঙরটিকে ধরে রাখেননি, তবে কিছু ছবি তুলে নেন এবং পরে তা স্থানীয় বিজ্ঞানীদের হাতে তুলে দেন।
ছবি দেখে প্রথমে অনেকেই বিশ্বাসই করতে চাননি। অনেকে ভেবেছিলেন এটি কোনোভাবে এডিট করা হয়েছে। কিন্তু কোস্টা রিকার রেসকিউ সেন্টার ফর এন্ডেঞ্জার্ড মেরিন স্পিসিজের নির্বাহী পরিচালক ও ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এক্সপ্লোরার ড্যানিয়েল আরাউজ নারানজো নিশ্চিত করেন, ছবিগুলো একেবারেই আসল এবং এই অদ্ভুত রঙের পেছনে রয়েছে এক বিরল জিনগত বৈশিষ্ট্য, যার নাম আলবিনো-জ্যান্থোক্রোমিজম।
এই হাঙরের শরীরে দেখা গেছে দুটি বিরল জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের মিল:
আলবিনিজম – শরীরে মেলানিন কম থাকায় ত্বক ও চোখ হয় ফ্যাকাসে বা সাদা।
জ্যান্থোক্রোমিজম – অস্বাভাবিক হলুদ বা কমলা বর্ণ উৎপন্ন হয়।
ব্রাজিলের ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অফ রিও গ্র্যান্ড-এর গবেষক মারিয়োক্সিস মাসিয়াস বলেন, এই দুই বৈশিষ্ট্য সাধারণত আলাদা আলাদা প্রাণীতে দেখা যায়। কিন্তু একই হাঙরের মধ্যে দুটো একসাথে পাওয়া বিরল ও অবাক করার মতো। পূর্বে কিছু হাঙরে জ্যান্থিজম বা লিউসিজম দেখা গেলেও, এই সোনালী হাঙরই প্রথম প্রমাণিত উদাহরণ, যার মধ্যে দুইটি জেনেটিক বৈশিষ্ট্য একসঙ্গে রয়েছে।
১. রঙিন হলেও শিকারিদের হাত থেকে রেহাই পায়নি।
২. এই হাঙরটি ছিল নার্স শার্ক প্রজাতির।
সাধারণত তারা থাকে উষ্ণ, অগভীর জলে এবং মাটি খুঁড়ে খাবার খুঁজে নেয়। এদের গায়ের রং হয় হালকা বাদামি বা ধুসর। যা পানির তলার মাটির সঙ্গে মিশে যায়। এটাই তাদের প্রাকৃতিক ছদ্মবেশ, যা শিকার করা এবং নিজে বাঁচার জন্য দরকারি। কিন্তু সোনালী রঙের কারণে এই হাঙরের পক্ষে পরিবেশের সঙ্গে মিশে থাকা কঠিন।
তবুও বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এটি পুরোপুরি সুস্থ ও পূর্ণবয়স্ক। অর্থাৎ, রঙের কারণে তার বেঁচে থাকার ক্ষমতা কমেনি।
নারানজো মনে করেন, সম্ভবত হাঙরটি ঘোলা পানিতে অবস্থান করেই নিজের ছদ্মবেশ বজায় রেখেছে। আবার বিশেষ আচরণ বা শিকারির কম উপস্থিতি এর আরেকটি কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন হাঙর বিশেষজ্ঞ মেলিসা ক্রিস্টিনা মারকেজ। নারানজো বলেন, এই হাঙর দেখিয়ে দিয়েছে, আমরা এখনো অনেক কিছু জানি না প্রকৃতি সম্পর্কে। তার মতে, এ ধরনের খোঁজ শুধু কোস্টারিকার জন্য নয়, পুরো প্রজাতির জন্যই একটি ইতিবাচক সংকেত। মারকেজ বলেন, এই হাঙর আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা যেসব প্রাণীকে চিনি বলে মনে করি, সেগুলোর মধ্যেও বৈচিত্র্য লুকিয়ে থাকতে পারে।
সূত্র : ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক
ওআ/আপ্র/১৪/০৯/২০২৫