প্রত্যাশা ডেস্ক : করোনাভাইরাস মহামারি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ভারতে। বিশ্বে গত একদিনে দশ হাজারের কম মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চার হাজারের বেশি মৃত্যু হয়েছে শুধু ভারতেই। বিশ্বে করোনার চিত্র কিছুটি নমনীয় হলেও ভারতে এর মাত্রা ভয়াবহ।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, গত একদিনে ভারতে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৯২ জনের। একই সময়ে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৮৬০ জনের। যুক্তরাষ্ট্রের পর করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ভারত। এশিয়ার মধ্যেও করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশটি। ভারতে এখন পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২ কোটি ৪৯ লাখ ৬৪ হাজার ৯২৫ জন। মারা গেছেন ২ লাখ ৭৪ হাজার ৪১১ জন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতে করোনাভাইরাসের আসল চিত্র প্রকাশ্যে আসছে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কয়েকদিন ধরে শত শত লাশ নদীতে ভেসে থাকতে দেখা গেছে। গঙ্গার তীরে মাটিচাপা দেয়া কয়েক হাজার লাশের সন্ধান মিলেছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, বেশ কয়েকদিন ধরেই উত্তরপ্রদেশে গঙ্গায় বহু লাশ ভাসতে দেখা গিয়েছে। এরপর গঙ্গারপাড়ে মিলেছে মাটিচাপা দেয়া কয়েক হাজার লাশ। এসব লাশ করোনা আক্রান্তদের বলে মনে করা হচ্ছে। প্লাস্টিকে মুড়ে এসব লাশ মাটিচাপা দেয়া হয়েছে। শুধু উত্তরপ্রদেশের উন্নাওতেই মিলেছে ৮০০টি কবর। এখন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি কবরের সন্ধান মিলেছে। কয়েকদিন থেকে নদীতে শত শত লাশ ভাসতে দেখা গেছে। এসব লাশের অধিকাংশ অর্ধদগ্ধ৷ তবে এত লাশ নদীতে কীভাবে এলো তার হদিশ মিলছে না। অনেকে মনে করছেন, মহামারিতে মৃত মানুষদের সৎকার করতে না পেরে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, লাশ পোড়ানোর মতো জ্বালানি না থাকায় তা ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। ঠিক একই কারণে চরের বালুতে পুতে রাখা হচ্ছে মৃতদেহ।
দ্বিতীয় ঢেউয়ে ২৪৪ চিকিৎসকের মৃত্যু : ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমেছে। কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা চার হাজারেরও বেশি। স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ব্যাপক হারে চাপ বেড়েছে। আর এই চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। প্রতিনিয়ত প্রাণও হারাচ্ছেন তারা। ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে বলেছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর থেকে ভারতে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৪৪ জন চিকিৎসক। তাদের মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ ৫০ জনেরও মৃত্যু হয়েছে। তবে কোন দিন এই রেকর্ড মৃত্যু হয়েছে, তা বলা হয়নি বিবৃতিতে।
এবার মৃতদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ হলেন- ডা. আনাস মুজাহিদ। দিল্লির সরকারি জিটিবি হাসপাতালে জুনিয়র রেসিডেন্ট ছিলেন ২৫ বছরের আনাস। করোনা ধরা পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ইন্ট্রাক্রেনিয়াল হ্যামরেজ (স্কালের মধ্যে ব্লিডিং) হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রাণ হারান এই তরুণ।
করোনাভাইরাসে মৃত চিকিৎসকদের মধ্যে প্রবীণতম হলেন- ভারতের বিশাখাপত্তনমের অধ্যাপক সত্যমূর্তি। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ৬৯ জন চিকিৎসক মারা গেছে বিহারে। উত্তরপ্রদেশ (৩৩), দিল্লি (২৬)। অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে জানানো হয়, ভারতে করোনার প্রথম ধাক্কায় (গত বছর) প্রাণ হারিয়েছিলেন ৭৩০ জন চিকিৎসক। মৃতদের মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ কোভিড-১৯ টিকা নিয়েছিলেন। কেন চিকিৎসকরাই নেননি টিকা? সেই প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।
বিশ্বে কমলেও ভারতে বেড়েছে করোনায় মৃত্যু
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ