প্রত্যাশা ডেস্ক: ভারতের আসাম ও মেঘালয় সীমান্তের ছোট শহর বার্নিহাট বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর। এই শহরের স্থানীয় বাসিন্দারা এখন তীব্র শ্বাসকষ্ট ও ত্বকের সমস্যায় ভুগছেন। সরকারি তথ্য অনুসারে, ওই অঞ্চলে শ্বাসযন্ত্রজনিত সংক্রমণের রোগীর সংখ্যা ২০২২ সালের ২ হাজার ৮২ থেকে ২০২৪ সালে বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৬৮১।
বার্নিহাট শহরের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডা. জে মারাক জানান, আমরা প্রতিদিন যেসব রোগী দেখি, তাদের ৯০ শতাংশই কাশি বা অন্য কোনো শ্বাসজনিত সমস্যায় আক্রান্ত।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিষাক্ত বায়ু শুধু শ্বাসজনিত রোগই নয়, ত্বকে র্যাশ, চোখে জ্বালা, ফসল নষ্ট হওয়া এবং কাপড় বাইরে শুকাতে না পারার মতো সমস্যাও তৈরি করছে।
নীয় কৃষক দিলদার হোসেন বলেন, সবকিছুতেই ধুলা আর কালি জমে থাকে।
অথচ উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তে অবস্থিত শহরটি সাধারণত সবুজ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার মার্চে ২০২৪ সালের সবচেয়ে দূষিত শহর ও দেশের তালিকা যখন প্রকাশ করে, তখন দেখা যায়, সেই তালিকায় দূষিত শহরের ক্ষেত্রে বার্নিহাট এক নম্বরে আছে।
আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বার্নিহাটে বার্ষিক গড় পিএম ২.৫ ঘনমাত্রা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১২৮.২ মাইক্রোগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মানের চেয়ে ২৫ গুণ বেশি। পিএম ২.৫ হলো এমন কণিকা যেগুলোর ব্যাস ২.৫ মাইক্রোন বা তার কম। এগুলো ফুসফুসে প্রবেশ করে মারাত্মক রোগ ও হৃদরোগের কারণ হতে পারে। ডাক্তারের ভাষ্য অনুযায়ী, দূষণের উচ্চমাত্রায় আক্রান্ত হয়ে নানা রোগে ভুগছেন স্থানীয়রা।
সমালোচকরা বলছেন, বার্নিহাটের অবস্থা ভারতের বৃহত্তর দূষণ সংকটের প্রতিফলন-যেখানে শুধু রাজধানী দিল্লি নয়, ছোট ছোট শহরগুলোও দ্রুত শিল্পায়নের ফলে পরিবেশগত সুরক্ষা হারাচ্ছে। উল্লেখ্য বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানী শহর হলো দিল্লি।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে সাধারণত শীতকালে দূষণ বেড়ে যায়, কিন্তু বার্নিহাটে সারা বছরই বাতাসের মান খারাপ থাকে।
শহরটিতে প্রায় ৮০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে-যার অনেকগুলোই অত্যন্ত দূষণকারী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারী যানবাহনের ধোঁয়া এবং শহরটির ‘বাটি-আকৃতির ভৌগোলিক গঠন’ দূষণ আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এছাড়া মেঘালয়ের পাহাড় ও আসামের সমতলের মাঝখানে এই শহরটি অবস্থিত। ফলে দূষণ ছড়িয়ে পড়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন আসামের দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের চেয়ারম্যান অরূপ কুমার মিশ্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেঘালয় সরকারের এক কর্মকর্তা বলেন, শহরটি দুই রাজ্যের সীমান্তে হওয়ায় সমস্যার সমাধান করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক রাজ্য অন্য রাজ্যের ওপর দায় চাপানোর প্রবণতা দেখা যায়। তবে মার্চ মাসে আইকিউএয়ারের প্রতিবেদন প্রকাশের পর আসাম ও মেঘালয় যৌথ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং একসঙ্গে কাজ করে বার্নিহাটের দূষণ মোকাবিলার চেষ্টা করছে। সূত্র: রয়টার্স