ঢাকা ০৩:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

বিশ্বের বৃহত্তম কঠিন জ্বালানি রকেটের দ্বিতীয় উৎক্ষেপণ চীনের

  • আপডেট সময় : ০৯:২৪:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

প্রযুক্তি ডেস্ক: দ্বিতীয়বারের মতো সফলভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সলিড-প্রোপেল্যান্ট বা কঠিন জ্বালানিচালিত রকেট উৎক্ষেপণ করেছে চীনের একটি কোম্পানি।
এ বছর ১০ অক্টোবর ইয়োলো সি বা পীতসাগরের ওপর ভাসমান এক জাহাজ থেকে ৩০ মিটার দীর্ঘ ‘গ্রাভিটি-১’ নামের রকেটটি উৎক্ষেপণ করে ‘ওরিয়েনস্পেস’ নামের কোম্পানিটি। এর আগে, একই স্থান থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এ রকেটের প্রথম উৎক্ষেপণ সম্পন্ন করেছিল ওরিয়েনস্পেস। এ সফল উৎক্ষেপণকে চীনের বেসরকারি মহাকাশ প্রযুক্তিতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট স্ল্যাশগিয়ার।

গ্রাভিটি-১ রকেটটির বিশেষত্ব হচ্ছে এর বিশাল আকার ও শক্তি। রকেটটি পুরোপুরি কঠিন জ্বালানিচালিত ও এতে রয়েছে তিনটি মূল ধাপ ও চারটি সহায়ক বুস্টার। রকেটটি উৎক্ষেপণের সময় প্রায় ছয়শ টন থ্রাস্ট তৈরি করতে পারে ও এর মোট ওজন চারশ টন।

ওরিয়েনস্পেস বলেছে, গ্রাভিটি-১ রকেটটি সর্বোচ্চ সাড়ে ছয় টন পণ্য পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে বা ৪ দশমিক ২০ টন পণ্য পৃথিবী থেকে প্রায় পাঁচশ কিলোমিটার উচ্চতায় সৌর সময়সমন্বিত কক্ষপথে পৌঁছে দিতে পারে। এ উৎক্ষেপণে গ্রাভিটি-১ রকেটটি ‘জিলিন-১’, ‘শুতিয়ান ইউসিং-১’ ও ‘শুতিয়ান ইউসিং-২’ নামের মোট তিনটি স্যাটেলাইট বহন করেছে।

অক্টোবরে এ দ্বিতীয় মিশনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে উৎক্ষেপণের আগে রকেটের উৎক্ষেপণ-পূর্ব প্রস্তুতি, কক্ষপথে যাওয়ার পথ নিয়ন্ত্রণ ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া সক্ষমতা পরীক্ষার মতো বিভিন্ন প্রক্রিয়া যাচাই করা।

রকেটের স্বল্প সময়ের মধ্যে উৎক্ষেপণ সক্ষমতা ওরিয়েনস্পেসের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটিকেই নিজেদের রকেট বিক্রিতে অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসাবে তুলে ধরতে চাইছে কোম্পনিটি।

কঠিন জ্বালানিচালিত রকেট অনেক সহজ ও দ্রুত ব্যবহার করা যায়। কঠিন জ্বালানিচালিত রকেটের কাঠামো তুলনামূলক সরল। এর তুলনায়, মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের মহাকাশ কোম্পানি স্পেসএক্স-এর বিশাল ‘স্টারশিপ’ বেশ জটিল।

সম্প্রতি নিজেদের বড় পরীক্ষামূলক মিশনে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক পেরিয়েছে স্টারশিপ। এরপরও একাধিক ব্যর্থতা রয়েছে রকেটটির, যা এর উন্নয়নকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

কেবল চার বছরে স্টার্টআপ থেকে মহাকাশযাত্রা: ২০২০ সালের জুনে প্রতিষ্ঠিত হয় ওরিয়েনস্পেস, যেটি চীনে দ্রুত বেড়ে ওঠা গুটি কয়েক মহাকাশ কোম্পানির মধ্যে একটি। কোম্পানির লক্ষ্য মহাকাশ জয়, কম করে হলেও পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছানো। তাদের প্রথম রকেটের নাম ‘গ্রাভিটি-১’, যা চীনে ‘ইনলি-১’ নামেও পরিচিত। কোম্পানি গঠনের কেবল চার বছরের মধ্যেই ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রথম রকেট উৎক্ষেপণ সম্পন্ন করে ওরিয়েনস্পেস। এ দ্রুত অগ্রগতির পেছনের বড় কারণ হচ্ছে কঠিন জ্বালানিচালিত রকেটের ব্যবহার। কারণ কঠিন জ্বালানির রকেট তরল জ্বালানির রকেটের চেয়ে সহজ, কম যান্ত্রিক জটিলতা ও দ্রুত প্রস্তুত করা যায়। তরল জ্বালানিচালিত রকেটের ক্ষেত্রে জ্বালানি পাম্প ও পাইপলাইন প্রয়োজন, যা রকেটকে ভারী ও জটিল করে তোলে। কঠিন জ্বালানিচালিত রকেট তৈরির জন্য প্রয়োজন কেবল ইনসুলেটেড কেইস, জ্বালানি, নজল ও ইগনাইটর প্রয়োজন। তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন– জ্বালানি একবার জ্বলে গেলে কাজ বন্ধ করা যায় না এবং থ্রাস্ট বা রকেটের শক্তি নিয়ন্ত্রণের কোনো উপায় নেই।

বর্তমানে ফেসবুকে উন্নত তরল জ্বালানিচালিত রকেট তৈরি করছে ওরিয়েনস্পেস, যার নাম ‘গ্রাভিটি-২’। রকেটটি ৭০ মিটার লম্বা ও ২১.৫ টন পণ্য বহন করতে পারে। রকেটটির ইঞ্জিন এরইমধ্যে ‘স্ট্যাটিক ফায়ার টেস্ট’ সম্পন্ন করেছে। কোম্পানিটির আশা, ২০২৫ সালে রকেটটির প্রথম পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ সম্পন্ন করবে তারা। ‘গ্রাভিটি-৩’ নামের ফেসবুকে বড় এক রকেটের কাজ করছে ওরিয়েনস্পেস, যা ‘গ্রাভিটি-২’-এর বড় সংস্করণ ও কোম্পানির দাবি অনুসারে, ৬১ টন পর্যন্ত পণ্য কক্ষপথে পৌঁছে দিতে পারবে।

সানা/আপ্র/২৭/১০/২০২৫

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

প্রতিষ্ঠানের স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান ফায়ার সার্ভিস ডিজির

বিশ্বের বৃহত্তম কঠিন জ্বালানি রকেটের দ্বিতীয় উৎক্ষেপণ চীনের

আপডেট সময় : ০৯:২৪:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

প্রযুক্তি ডেস্ক: দ্বিতীয়বারের মতো সফলভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সলিড-প্রোপেল্যান্ট বা কঠিন জ্বালানিচালিত রকেট উৎক্ষেপণ করেছে চীনের একটি কোম্পানি।
এ বছর ১০ অক্টোবর ইয়োলো সি বা পীতসাগরের ওপর ভাসমান এক জাহাজ থেকে ৩০ মিটার দীর্ঘ ‘গ্রাভিটি-১’ নামের রকেটটি উৎক্ষেপণ করে ‘ওরিয়েনস্পেস’ নামের কোম্পানিটি। এর আগে, একই স্থান থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এ রকেটের প্রথম উৎক্ষেপণ সম্পন্ন করেছিল ওরিয়েনস্পেস। এ সফল উৎক্ষেপণকে চীনের বেসরকারি মহাকাশ প্রযুক্তিতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট স্ল্যাশগিয়ার।

গ্রাভিটি-১ রকেটটির বিশেষত্ব হচ্ছে এর বিশাল আকার ও শক্তি। রকেটটি পুরোপুরি কঠিন জ্বালানিচালিত ও এতে রয়েছে তিনটি মূল ধাপ ও চারটি সহায়ক বুস্টার। রকেটটি উৎক্ষেপণের সময় প্রায় ছয়শ টন থ্রাস্ট তৈরি করতে পারে ও এর মোট ওজন চারশ টন।

ওরিয়েনস্পেস বলেছে, গ্রাভিটি-১ রকেটটি সর্বোচ্চ সাড়ে ছয় টন পণ্য পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে বা ৪ দশমিক ২০ টন পণ্য পৃথিবী থেকে প্রায় পাঁচশ কিলোমিটার উচ্চতায় সৌর সময়সমন্বিত কক্ষপথে পৌঁছে দিতে পারে। এ উৎক্ষেপণে গ্রাভিটি-১ রকেটটি ‘জিলিন-১’, ‘শুতিয়ান ইউসিং-১’ ও ‘শুতিয়ান ইউসিং-২’ নামের মোট তিনটি স্যাটেলাইট বহন করেছে।

অক্টোবরে এ দ্বিতীয় মিশনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে উৎক্ষেপণের আগে রকেটের উৎক্ষেপণ-পূর্ব প্রস্তুতি, কক্ষপথে যাওয়ার পথ নিয়ন্ত্রণ ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া সক্ষমতা পরীক্ষার মতো বিভিন্ন প্রক্রিয়া যাচাই করা।

রকেটের স্বল্প সময়ের মধ্যে উৎক্ষেপণ সক্ষমতা ওরিয়েনস্পেসের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটিকেই নিজেদের রকেট বিক্রিতে অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসাবে তুলে ধরতে চাইছে কোম্পনিটি।

কঠিন জ্বালানিচালিত রকেট অনেক সহজ ও দ্রুত ব্যবহার করা যায়। কঠিন জ্বালানিচালিত রকেটের কাঠামো তুলনামূলক সরল। এর তুলনায়, মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের মহাকাশ কোম্পানি স্পেসএক্স-এর বিশাল ‘স্টারশিপ’ বেশ জটিল।

সম্প্রতি নিজেদের বড় পরীক্ষামূলক মিশনে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক পেরিয়েছে স্টারশিপ। এরপরও একাধিক ব্যর্থতা রয়েছে রকেটটির, যা এর উন্নয়নকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

কেবল চার বছরে স্টার্টআপ থেকে মহাকাশযাত্রা: ২০২০ সালের জুনে প্রতিষ্ঠিত হয় ওরিয়েনস্পেস, যেটি চীনে দ্রুত বেড়ে ওঠা গুটি কয়েক মহাকাশ কোম্পানির মধ্যে একটি। কোম্পানির লক্ষ্য মহাকাশ জয়, কম করে হলেও পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছানো। তাদের প্রথম রকেটের নাম ‘গ্রাভিটি-১’, যা চীনে ‘ইনলি-১’ নামেও পরিচিত। কোম্পানি গঠনের কেবল চার বছরের মধ্যেই ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রথম রকেট উৎক্ষেপণ সম্পন্ন করে ওরিয়েনস্পেস। এ দ্রুত অগ্রগতির পেছনের বড় কারণ হচ্ছে কঠিন জ্বালানিচালিত রকেটের ব্যবহার। কারণ কঠিন জ্বালানির রকেট তরল জ্বালানির রকেটের চেয়ে সহজ, কম যান্ত্রিক জটিলতা ও দ্রুত প্রস্তুত করা যায়। তরল জ্বালানিচালিত রকেটের ক্ষেত্রে জ্বালানি পাম্প ও পাইপলাইন প্রয়োজন, যা রকেটকে ভারী ও জটিল করে তোলে। কঠিন জ্বালানিচালিত রকেট তৈরির জন্য প্রয়োজন কেবল ইনসুলেটেড কেইস, জ্বালানি, নজল ও ইগনাইটর প্রয়োজন। তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন– জ্বালানি একবার জ্বলে গেলে কাজ বন্ধ করা যায় না এবং থ্রাস্ট বা রকেটের শক্তি নিয়ন্ত্রণের কোনো উপায় নেই।

বর্তমানে ফেসবুকে উন্নত তরল জ্বালানিচালিত রকেট তৈরি করছে ওরিয়েনস্পেস, যার নাম ‘গ্রাভিটি-২’। রকেটটি ৭০ মিটার লম্বা ও ২১.৫ টন পণ্য বহন করতে পারে। রকেটটির ইঞ্জিন এরইমধ্যে ‘স্ট্যাটিক ফায়ার টেস্ট’ সম্পন্ন করেছে। কোম্পানিটির আশা, ২০২৫ সালে রকেটটির প্রথম পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ সম্পন্ন করবে তারা। ‘গ্রাভিটি-৩’ নামের ফেসবুকে বড় এক রকেটের কাজ করছে ওরিয়েনস্পেস, যা ‘গ্রাভিটি-২’-এর বড় সংস্করণ ও কোম্পানির দাবি অনুসারে, ৬১ টন পর্যন্ত পণ্য কক্ষপথে পৌঁছে দিতে পারবে।

সানা/আপ্র/২৭/১০/২০২৫