ঢাকা ১২:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস, সংকটে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ

  • আপডেট সময় : ০৮:৪৩:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ^ব্যাংক বলেছে আগামী দিনগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসবে, যা গত অক্টোবরে করা পূর্বাভাসের চেয়ে ০ দশমিক ৪ শতাংশ কম। আগামী বছরে এটি ৬ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। বিশ্বব্যাংকের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিকে টেকসইভাবে এগিয়ে নিতে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। কারণ, এ অঞ্চলে কর আদায়ের হার উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় তুলনামূলক বেশি হলেও প্রকৃত কর আদায়ের হার অনেক কম। বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিস্কা ওহন্সোর্জ বলেন, নি¤œ রাজস্বই দক্ষিণ এশিয়ার আর্থিক দুর্বলতার মূল কারণ। এটি বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। গতকাল বুধবার (২৩ এপ্রিল) প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট: ট্যাক্সিং টাইমস’-এ এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

সংস্থাটি মনে করছে, দেশগুলো যদি অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় বাড়াতে পারে, তবেই তাদের ভঙ্গুর আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা এবং ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক ধাক্কাগুলো সামাল দেওয়া সম্ভব। তবে, বিশ্ব অর্থনীতির গভীর অনিশ্চয়তা এবং দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ আর্থিক দুর্বলতার কারণে এই পূর্বাভাস বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝুঁকি বিদ্যমান বলে জানায় সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান কর্মকর্তা মার্টিন রেইজার এই প্রসঙ্গে বলেন, গত এক দশকে একের পর এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক সুরক্ষাকে দুর্বল করে দিয়েছে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে টিকে থাকতে হলে দেশগুলোকে তাদের ভঙ্গুর আর্থিক কাঠামো, কৃষিখাতের পশ্চাৎপদতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের মতো দুর্বলতাগুলো মোকাবিলা করার জন্য সুনির্দিষ্ট সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে করের হার উন্নয়নশীল বিশ্বের গড় হারের চেয়ে বেশি হলেও, সরকারের রাজস্ব আয় সেই তুলনায় বেশ কম। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলের দেশগুলোর গড় রাজস্ব আয় ছিল জিডিপির মাত্র ১৮ শতাংশ, যেখানে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে এই হার ২৪ শতাংশ। বিশেষ করে ভোগ কর থেকে রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। তবে কর্পোরেট ও ব্যক্তিগত আয়করের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের ঘাটতি দেখা যায়। বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদদের ধারণা, বিদ্যমান করের হার অনুযায়ীও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে জিডিপির ১ থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত রাজস্ব কম আদায় হচ্ছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির ব্যাপকতা এবং বৃহৎ কৃষি খাতকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়ার পরেও রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ফাঁকি রয়ে গেছে, যা কার্যকর করনীতি ও প্রশাসনের প্রয়োজনীয়তাকেই তুলে ধরে।

প্রতিবেদনে কর রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কর ফাঁকি রোধ করা, কর আইনকে সরলীকরণ করা, কর আদায়ে কঠোরতা আনা এবং কর পরিপালনের প্রক্রিয়া সহজ করা। এছাড়া, বিভিন্ন ধরনের কর ছাড়ের পরিমাণ কমানো, কর ব্যবস্থাকে সহজ ও একীভূত করে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে লেনদেন করার প্রবণতা কমানো এবং আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে করদাতা শনাক্তকরণ ও কর আদায় প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য দূষণ মূল্য নির্ধারণের মতো পদক্ষেপ গ্রহণেরও সুপারিশ করেছে বিশ্বব্যাংক।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস, সংকটে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ

আপডেট সময় : ০৮:৪৩:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ^ব্যাংক বলেছে আগামী দিনগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসবে, যা গত অক্টোবরে করা পূর্বাভাসের চেয়ে ০ দশমিক ৪ শতাংশ কম। আগামী বছরে এটি ৬ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। বিশ্বব্যাংকের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিকে টেকসইভাবে এগিয়ে নিতে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। কারণ, এ অঞ্চলে কর আদায়ের হার উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় তুলনামূলক বেশি হলেও প্রকৃত কর আদায়ের হার অনেক কম। বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিস্কা ওহন্সোর্জ বলেন, নি¤œ রাজস্বই দক্ষিণ এশিয়ার আর্থিক দুর্বলতার মূল কারণ। এটি বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। গতকাল বুধবার (২৩ এপ্রিল) প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট: ট্যাক্সিং টাইমস’-এ এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

সংস্থাটি মনে করছে, দেশগুলো যদি অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় বাড়াতে পারে, তবেই তাদের ভঙ্গুর আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা এবং ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক ধাক্কাগুলো সামাল দেওয়া সম্ভব। তবে, বিশ্ব অর্থনীতির গভীর অনিশ্চয়তা এবং দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ আর্থিক দুর্বলতার কারণে এই পূর্বাভাস বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝুঁকি বিদ্যমান বলে জানায় সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান কর্মকর্তা মার্টিন রেইজার এই প্রসঙ্গে বলেন, গত এক দশকে একের পর এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক সুরক্ষাকে দুর্বল করে দিয়েছে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে টিকে থাকতে হলে দেশগুলোকে তাদের ভঙ্গুর আর্থিক কাঠামো, কৃষিখাতের পশ্চাৎপদতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের মতো দুর্বলতাগুলো মোকাবিলা করার জন্য সুনির্দিষ্ট সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে করের হার উন্নয়নশীল বিশ্বের গড় হারের চেয়ে বেশি হলেও, সরকারের রাজস্ব আয় সেই তুলনায় বেশ কম। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলের দেশগুলোর গড় রাজস্ব আয় ছিল জিডিপির মাত্র ১৮ শতাংশ, যেখানে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে এই হার ২৪ শতাংশ। বিশেষ করে ভোগ কর থেকে রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। তবে কর্পোরেট ও ব্যক্তিগত আয়করের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের ঘাটতি দেখা যায়। বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদদের ধারণা, বিদ্যমান করের হার অনুযায়ীও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে জিডিপির ১ থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত রাজস্ব কম আদায় হচ্ছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির ব্যাপকতা এবং বৃহৎ কৃষি খাতকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়ার পরেও রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ফাঁকি রয়ে গেছে, যা কার্যকর করনীতি ও প্রশাসনের প্রয়োজনীয়তাকেই তুলে ধরে।

প্রতিবেদনে কর রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কর ফাঁকি রোধ করা, কর আইনকে সরলীকরণ করা, কর আদায়ে কঠোরতা আনা এবং কর পরিপালনের প্রক্রিয়া সহজ করা। এছাড়া, বিভিন্ন ধরনের কর ছাড়ের পরিমাণ কমানো, কর ব্যবস্থাকে সহজ ও একীভূত করে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে লেনদেন করার প্রবণতা কমানো এবং আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে করদাতা শনাক্তকরণ ও কর আদায় প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য দূষণ মূল্য নির্ধারণের মতো পদক্ষেপ গ্রহণেরও সুপারিশ করেছে বিশ্বব্যাংক।