ঢাকা ০৩:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

বিশ্বজুড়ে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে তরুণ-তরুণীদের অখুশিপ্রবণতা

  • আপডেট সময় : ০৭:৫৮:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে অখুশি থাকার প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে- যুক্তরাষ্ট্রসহ ধনী, শিল্পোন্নত দেশগুলোয় এই সংকট সবচেয়ে প্রকট হলেও এটি এখন বৈশ্বিক রূপ নিয়েছে। বিশ্ব সুখ সূচকে (২০২৫) যুক্তরাষ্ট্র তার ইতিহাসের সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। গবেষকরা বলছেন, এর পেছনে মূল ভূমিকা রাখছে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক হারে বাড়তে থাকা অসন্তোষ ও মানসিক অস্থিরতা। তবে এই প্রতিবেদনের পদ্ধতি নিয়ে কিছুটা সংশয় আছে বিশেষজ্ঞদের। একটি মাত্র জীবন-সন্তুষ্টি প্রশ্নের ভিত্তিতে বৈশ্বিক সুখ তুলনা করা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও কোনো একটি দেশের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনগুলো বিশ্লেষণ করা অনেক বেশি অর্থবহ। এ বিষয় নিয়েই এবারের লাইফস্টাইল পাতার প্রধান ফিচার

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে চালানো গ্লোবাল ফ্লারিশিং স্টাডি (জিএফএস) হলো একটি বৃহৎ ও দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা। এতে ২২টি দেশের দুই লাখের বেশি মানুষের ওপর পাঁচ বছরব্যাপী জরিপ চালানো হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণ-তরুণীদের মানসিক অস্থিরতা এবং সুখের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোতে; যেমন যুক্তরাষ্ট্র। তবে এটি শুধু কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের সমস্যা নয়, বরং বিশ্বব্যাপী এক সাধারণ প্রবণতা হয়ে উঠছে।

সুখের ইউ-আকৃতি ও তরুণ-তরুণীদের হতাশার নতুন রূপ: গবেষক ডেভিড ব্লাঞ্চফ্লাওয়ার ও অ্যান্ড্রু জে অসওয়াল্ড দেখান- জীবনের শুরুতে মানুষ খুশি থাকে, মধ্যবয়সে এসে সুখ কমে যায়। এরপর আবার তা বাড়তে থাকে। এই চিত্রকে বলা হয় ‘ইউ-আকৃতির সুখ।’ একটি বহুল স্বীকৃত একটি তত্ত্ব। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এই ইউ-আকারের ধারণা আর খাটছে না। তরুণ-তরুণীদের মানসিক সমস্যা এখন এতাই প্রকট যে জীবনের শুরুতে তাদের সুখের সূচক নিচু অবস্থান থেকে শুরু করে, বহু বছর তা একইভাবে থেকে যায়। অন্যদিকে ৫০ বছর পার হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে সেই মান উন্নত হতে থাকে।

গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণ-তরুণীদের এই মনঃকষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ হলো প্রকৃত সামাজিক সম্পর্কের অভাব। প্রযুক্তিনির্ভর যোগাযোগব্যবস্থায় বেড়ে ওঠা এই প্রজন্ম বাস্তব জীবনে বন্ধু ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে আশার কথা হলো, যেসব তরুণ-তরুণীদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো, তাদের ক্ষেত্রে এখনো ঐতিহ্যগত ইউ-আকৃতি লক্ষ করা যায়। বাস্তব জীবনে মানুষের সঙ্গে মুখোমুখি সম্পর্কই তরুণ-তরুণীদের মানসিক সুস্থতার বড় হাতিয়ার।

ধনী দেশগুলোর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো ধর্মীয় অনুশীলনের ঘাটতি। যুক্তরাষ্ট্রে ‘ননস’ অর্থাৎ যারা কোনো ধর্ম মানে না; তাদের হার ২০০৭ সালে ছিল ১৬ শতাংশ, এখন তা বেড়ে ২৯ শতাংশে পৌঁছেছে। ধর্মীয়ভাবে সক্রিয় মানুষদের ফ্লারিশিং স্কোর গড়ে ৮ শতাংশ বেশি। এই পার্থক্য ধনী ও ধর্মহীন দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি।

ফিএফএসের গবেষণায় আরও বলা হচ্ছে, জিডিপি যত বেশি, মানুষের জীবনে অর্থবোধ বা জীবনের উদ্দেশ্য তত কম। ধনী দেশগুলোর মানুষেরা নিজেদের দৈনন্দিন কাজকে অর্থবোধপূর্ণ মনে করেন না।

‘সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স’-এ প্রকাশিত এক গবেষণাতেও একই ধারা লক্ষ করা গেছে- ধনী দেশের মানুষ জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে বেশি অনিশ্চিত। এই তথ্যগুলো দেখায়, আর্থিক সাফল্য মানেই মানসিক সুখ নয়; বরং অর্থ যত বাড়ছে, মানসিক শূন্যতা তত গভীর হচ্ছে।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তরুণ-তরুণীদের তিনটি বাস্তবমুখী পরামর্শ দিয়েছেন গবেষক ও লেখক আর্থার সি ব্রুকস। সেগুলো হলো-

পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদলে বাস্তব জীবনে সময় কাটান। সামনাসামনি সম্পর্ক গড়ে তোলাই সবচেয়ে কার্যকর।

আত্মিক অনুশীলন: এটি ধর্মীয় না-ও হতে পারে। তবে কোনো দর্শন, চর্চা বা অভিজ্ঞতা যা আপনাকে জীবনের গভীরতায় পৌঁছাতে সাহায্য করে, সেটাই জরুরি।

অর্থ নয়, খুঁজতে হবে জীবনের অর্থ: বস্তুগত আরাম প্রয়োজন, তবে তা হৃদয়ের গভীর চাহিদা পূরণ করে না। অর্থের বদলে জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে নিন। তথ্যসূত্র: দ্য আটলান্টিক।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনবহুল এলাকায় যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন

বিশ্বজুড়ে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে তরুণ-তরুণীদের অখুশিপ্রবণতা

আপডেট সময় : ০৭:৫৮:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫

বিশ্বজুড়ে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে অখুশি থাকার প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে- যুক্তরাষ্ট্রসহ ধনী, শিল্পোন্নত দেশগুলোয় এই সংকট সবচেয়ে প্রকট হলেও এটি এখন বৈশ্বিক রূপ নিয়েছে। বিশ্ব সুখ সূচকে (২০২৫) যুক্তরাষ্ট্র তার ইতিহাসের সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। গবেষকরা বলছেন, এর পেছনে মূল ভূমিকা রাখছে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক হারে বাড়তে থাকা অসন্তোষ ও মানসিক অস্থিরতা। তবে এই প্রতিবেদনের পদ্ধতি নিয়ে কিছুটা সংশয় আছে বিশেষজ্ঞদের। একটি মাত্র জীবন-সন্তুষ্টি প্রশ্নের ভিত্তিতে বৈশ্বিক সুখ তুলনা করা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও কোনো একটি দেশের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনগুলো বিশ্লেষণ করা অনেক বেশি অর্থবহ। এ বিষয় নিয়েই এবারের লাইফস্টাইল পাতার প্রধান ফিচার

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে চালানো গ্লোবাল ফ্লারিশিং স্টাডি (জিএফএস) হলো একটি বৃহৎ ও দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা। এতে ২২টি দেশের দুই লাখের বেশি মানুষের ওপর পাঁচ বছরব্যাপী জরিপ চালানো হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণ-তরুণীদের মানসিক অস্থিরতা এবং সুখের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোতে; যেমন যুক্তরাষ্ট্র। তবে এটি শুধু কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের সমস্যা নয়, বরং বিশ্বব্যাপী এক সাধারণ প্রবণতা হয়ে উঠছে।

সুখের ইউ-আকৃতি ও তরুণ-তরুণীদের হতাশার নতুন রূপ: গবেষক ডেভিড ব্লাঞ্চফ্লাওয়ার ও অ্যান্ড্রু জে অসওয়াল্ড দেখান- জীবনের শুরুতে মানুষ খুশি থাকে, মধ্যবয়সে এসে সুখ কমে যায়। এরপর আবার তা বাড়তে থাকে। এই চিত্রকে বলা হয় ‘ইউ-আকৃতির সুখ।’ একটি বহুল স্বীকৃত একটি তত্ত্ব। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এই ইউ-আকারের ধারণা আর খাটছে না। তরুণ-তরুণীদের মানসিক সমস্যা এখন এতাই প্রকট যে জীবনের শুরুতে তাদের সুখের সূচক নিচু অবস্থান থেকে শুরু করে, বহু বছর তা একইভাবে থেকে যায়। অন্যদিকে ৫০ বছর পার হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে সেই মান উন্নত হতে থাকে।

গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণ-তরুণীদের এই মনঃকষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ হলো প্রকৃত সামাজিক সম্পর্কের অভাব। প্রযুক্তিনির্ভর যোগাযোগব্যবস্থায় বেড়ে ওঠা এই প্রজন্ম বাস্তব জীবনে বন্ধু ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে আশার কথা হলো, যেসব তরুণ-তরুণীদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো, তাদের ক্ষেত্রে এখনো ঐতিহ্যগত ইউ-আকৃতি লক্ষ করা যায়। বাস্তব জীবনে মানুষের সঙ্গে মুখোমুখি সম্পর্কই তরুণ-তরুণীদের মানসিক সুস্থতার বড় হাতিয়ার।

ধনী দেশগুলোর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো ধর্মীয় অনুশীলনের ঘাটতি। যুক্তরাষ্ট্রে ‘ননস’ অর্থাৎ যারা কোনো ধর্ম মানে না; তাদের হার ২০০৭ সালে ছিল ১৬ শতাংশ, এখন তা বেড়ে ২৯ শতাংশে পৌঁছেছে। ধর্মীয়ভাবে সক্রিয় মানুষদের ফ্লারিশিং স্কোর গড়ে ৮ শতাংশ বেশি। এই পার্থক্য ধনী ও ধর্মহীন দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি।

ফিএফএসের গবেষণায় আরও বলা হচ্ছে, জিডিপি যত বেশি, মানুষের জীবনে অর্থবোধ বা জীবনের উদ্দেশ্য তত কম। ধনী দেশগুলোর মানুষেরা নিজেদের দৈনন্দিন কাজকে অর্থবোধপূর্ণ মনে করেন না।

‘সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স’-এ প্রকাশিত এক গবেষণাতেও একই ধারা লক্ষ করা গেছে- ধনী দেশের মানুষ জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে বেশি অনিশ্চিত। এই তথ্যগুলো দেখায়, আর্থিক সাফল্য মানেই মানসিক সুখ নয়; বরং অর্থ যত বাড়ছে, মানসিক শূন্যতা তত গভীর হচ্ছে।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তরুণ-তরুণীদের তিনটি বাস্তবমুখী পরামর্শ দিয়েছেন গবেষক ও লেখক আর্থার সি ব্রুকস। সেগুলো হলো-

পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদলে বাস্তব জীবনে সময় কাটান। সামনাসামনি সম্পর্ক গড়ে তোলাই সবচেয়ে কার্যকর।

আত্মিক অনুশীলন: এটি ধর্মীয় না-ও হতে পারে। তবে কোনো দর্শন, চর্চা বা অভিজ্ঞতা যা আপনাকে জীবনের গভীরতায় পৌঁছাতে সাহায্য করে, সেটাই জরুরি।

অর্থ নয়, খুঁজতে হবে জীবনের অর্থ: বস্তুগত আরাম প্রয়োজন, তবে তা হৃদয়ের গভীর চাহিদা পূরণ করে না। অর্থের বদলে জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে নিন। তথ্যসূত্র: দ্য আটলান্টিক।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ