ঢাকা ১০:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৮ অগাস্ট ২০২৫

বিশ্বজিৎ হত্যার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আরেক পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

  • আপডেট সময় : ০১:৪৯:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ জুলাই ২০২২
  • ১০৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুরান ঢাকার দর্জি বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত পলাতক এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। রাজধানীর চামেলীবাগ থেকে গতকাল সোমবার রাতে আসামি মো. কামরুল হাসানকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয় বলে র‌্যাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অবরোধের মধ্যে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে ছাত্রলীগের একটি মিছিল থেকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করা হয় দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎকে। পরে স্থানীয়রা তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় অজ্ঞাত ২৫ জনকে আসামি করে সূত্রাপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ।
র‌্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কামরুল জানায়, ঘটনার দিন বিশ্বজিৎকে প্রতিপক্ষ দলের সদস্য ভেবে তারা ধাওয়া করেন। পরে মামলার এজাহারে নাম থাকা আসামিরা তাকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। “বিশ্বজিৎ আহত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে তারা ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।”
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে এই হত্যা মামলায় ২১ আসামির মধ্যে আটজনকে মৃত্যুদ- এবং ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয় আদালত। এদের মধ্যে দুই আসামির মৃত্যুদ- বহাল রাখে হাইকোর্ট। ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট হাইকোর্টের ওই আদেশে বাকি ছয়জনের মধ্যে চারজনকে যাবজ্জীবন এবং দুজনকে খালাস দেওয়া হয়। এছাড়া যাবজ্জীবন দ- পাওয়া ১৩ আসামির দু’জন খালাস পান, অপর ১১ জনের যাবজ্জীবন বহাল থাকে। হত্যাকা-ের ঘটনায় মামলার পরই কামরুল পালিয়ে যায় জানিয়ে র‌্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “কামরুল হাসান পার্শ্ববর্তী দেশে তার নানার বাড়ির আত্মীয়ের আশ্রয়ে আত্মগোপন করেন।”
বছর খানেক পরই তিনি দেশে ফিরে আসেন জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “২০১৩ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশে ফিরে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় সে তার স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস করতে শুরু করে।”
এ সময় সে জীবিকার সন্ধানে বিভিন্ন জনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। প্রথমে ছদ্মনামে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেন কামরুল। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এরপর তার সঙ্গে প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের মূলহোতা খোকন ও সোহেলের সাথে পরিচয় হয়। তারা তাকে প্রলুব্ধ করে যে, প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে সে ঘরে বসেই প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারবে। “এভাবে সে ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের নামে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছে প্রশ্ন বিক্রি করে পঞ্চাশ লাখেরও বেশি টাকা উপার্জন করেন।”
এই টাকা দিয়ে কক্সবাজার সদর এলাকায় হোটেল ব্যবসা চালু করে কামরুল। পরে করোনাভাইরাস মহামারীতে লকডাউনের সময় লোকসানের কারণে সেই ব্যবসা বন্ধ করে দেন। র‌্যাব জানায়, ১৯৯৪ সালে পিতার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কামরুলরা স্বপরিবারে ঢাকায় বসবাস করত। পরে তারা গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া চলে যায়। তারা তিন বোন এক ভাই, তাদের মধ্যে কামরুল সবার ছোট। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি এবং একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন কামরুল। ২০০৫ সালে ঢাকার একটি কলেজে একাউন্টিং সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। ২০১১ সালে নিজের সহপাঠীকে বিয়ে করেন কামরুল। মামলার নথি অনুযায়ী, কামরুল হাসানের বাবার নাম আব্দুল কাইয়ূম, মা- সুফিয়া খাতুন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানায় নারায়ণপুরের মধ্যপাড়ায় তাদের বাড়ি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বিশ্বজিৎ হত্যার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আরেক পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

আপডেট সময় : ০১:৪৯:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ জুলাই ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুরান ঢাকার দর্জি বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত পলাতক এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। রাজধানীর চামেলীবাগ থেকে গতকাল সোমবার রাতে আসামি মো. কামরুল হাসানকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয় বলে র‌্যাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অবরোধের মধ্যে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে ছাত্রলীগের একটি মিছিল থেকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করা হয় দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎকে। পরে স্থানীয়রা তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় অজ্ঞাত ২৫ জনকে আসামি করে সূত্রাপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ।
র‌্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কামরুল জানায়, ঘটনার দিন বিশ্বজিৎকে প্রতিপক্ষ দলের সদস্য ভেবে তারা ধাওয়া করেন। পরে মামলার এজাহারে নাম থাকা আসামিরা তাকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। “বিশ্বজিৎ আহত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে তারা ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।”
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে এই হত্যা মামলায় ২১ আসামির মধ্যে আটজনকে মৃত্যুদ- এবং ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয় আদালত। এদের মধ্যে দুই আসামির মৃত্যুদ- বহাল রাখে হাইকোর্ট। ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট হাইকোর্টের ওই আদেশে বাকি ছয়জনের মধ্যে চারজনকে যাবজ্জীবন এবং দুজনকে খালাস দেওয়া হয়। এছাড়া যাবজ্জীবন দ- পাওয়া ১৩ আসামির দু’জন খালাস পান, অপর ১১ জনের যাবজ্জীবন বহাল থাকে। হত্যাকা-ের ঘটনায় মামলার পরই কামরুল পালিয়ে যায় জানিয়ে র‌্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “কামরুল হাসান পার্শ্ববর্তী দেশে তার নানার বাড়ির আত্মীয়ের আশ্রয়ে আত্মগোপন করেন।”
বছর খানেক পরই তিনি দেশে ফিরে আসেন জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “২০১৩ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশে ফিরে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় সে তার স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস করতে শুরু করে।”
এ সময় সে জীবিকার সন্ধানে বিভিন্ন জনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। প্রথমে ছদ্মনামে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেন কামরুল। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এরপর তার সঙ্গে প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের মূলহোতা খোকন ও সোহেলের সাথে পরিচয় হয়। তারা তাকে প্রলুব্ধ করে যে, প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে সে ঘরে বসেই প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারবে। “এভাবে সে ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের নামে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছে প্রশ্ন বিক্রি করে পঞ্চাশ লাখেরও বেশি টাকা উপার্জন করেন।”
এই টাকা দিয়ে কক্সবাজার সদর এলাকায় হোটেল ব্যবসা চালু করে কামরুল। পরে করোনাভাইরাস মহামারীতে লকডাউনের সময় লোকসানের কারণে সেই ব্যবসা বন্ধ করে দেন। র‌্যাব জানায়, ১৯৯৪ সালে পিতার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কামরুলরা স্বপরিবারে ঢাকায় বসবাস করত। পরে তারা গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া চলে যায়। তারা তিন বোন এক ভাই, তাদের মধ্যে কামরুল সবার ছোট। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি এবং একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন কামরুল। ২০০৫ সালে ঢাকার একটি কলেজে একাউন্টিং সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। ২০১১ সালে নিজের সহপাঠীকে বিয়ে করেন কামরুল। মামলার নথি অনুযায়ী, কামরুল হাসানের বাবার নাম আব্দুল কাইয়ূম, মা- সুফিয়া খাতুন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানায় নারায়ণপুরের মধ্যপাড়ায় তাদের বাড়ি।