ঢাকা ১২:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

বিশ্বকে পরমাণু অস্ত্রের হুমকিমুক্ত রাখার আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

  • আপডেট সময় : ০২:৪৩:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ অগাস্ট ২০২২
  • ৮৩ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : বিশ্বকে পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি থেকে বাঁচাতে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সাধারণ পরিষদ হলে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি বা এনপিটির দশম পর্যালোচনা সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
গত সোমবার সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মোমেন বলেন, “আমরা আশা করি, এনপিটির দশম পর্যালোচনা সম্মেলন থেকে এমন সিদ্ধান্ত বের হয়ে আসবে, যা বিশ্বকে পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি থেকে মুক্ত করতে চুক্তিটির সার্বজনীনতা এবং বাস্তবায়নকে আরও সহজতর করবে।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে বিশ্বকে পারমাণবিক যুদ্ধের কবল থেকে মুক্তির যে আহ্বান জানিয়েছিলেন- তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এই আহ্বানকে ভিত্তি করেই পারমাণবিক অস্ত্রের সাধারণ ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পূর্ণ এবং অটল প্রতিশ্রুতির ভিত্তি তৈরি হয়েছে, যা আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাও বটে।”
মানবতার নিরাপত্তাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে মুষ্টিমেয় কয়েকটি রাষ্ট্র পারমাণবিক অস্ত্রের যে মজুদ গড়েছে, তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান মোমেন। তিনি এনপিটির তিনটি স্তম্ভ- পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ, এর বিস্তার রোধ এবং পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে কার্যকর বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। এক্ষেত্রে চুক্তির ধারা-৪ এর বৈষম্যহীন বাস্তবায়নের ওপর তিনি জোর দেন, যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন, স্বাস্থ্যসেবা এবং কৃষিসহ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশে পারমাণবিক শক্তির বিকাশ, গবেষণা, উৎপাদন এবং ব্যবহার করার জন্য সকল রাষ্ট্রের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পারমাণবিক প্রযুক্তির গবেষণায় বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং মানবজাতির স্বার্থে শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের সম্ভাবনা খুঁজে দেখার আহ্বান জানান।
কোভিড মহামারীর মধ্যেও পারমাণবিক অস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০২১ সালে ৮২ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ের কথা তুলে ধরে তিনি রাষ্ট্রগুলোকে ধ্বংসাত্মক পারমাণবিক অস্ত্রে অর্থহীন বিনিয়োগ বন্ধ করে স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, এসডিজি, শান্তি এবং স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য ব্যয় করার আহ্বান জানান। আন্তর্জাতিক এই ফোরামে ১৯৭৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর যোগ দেয় বাংলাদেশ। পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি অনুমোদনকারী প্রথম কয়েকটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক : এনপিটি রিভিউ কনফারেন্সে যোগদানের পাশাপাশি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। বৈঠকে তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন বলে বাংলাদেশ মিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন মহাসচিব। অন্যদিকে শান্তি মিশনে আরও বাংলাদেশি নিয়োগের অনুরোধ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জবাবে মহাসচিব শিগগিরই আফ্রিকার বিভিন্ন মিশনে বাংলাদেশ থেকে আরও শান্তিরক্ষী ও অস্ত্র সরঞ্জাম নেওয়ার কথা বলেন। এ ছাড়া জাতিসংঘ সদর দপ্তরের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামরিক উচ্চ পদে আরও বেশি বাংলাদেশি কর্মকর্তা নিয়োগের অনুরোধ জানান মোমেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন
বৈঠকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দান এবং অব্যাহতভাবে মানবিক সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কৃতজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন জাতিসংঘ মহাসচিব। ইউক্রেন যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গঠিত ‘গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপে’ যোগ দিতে রাজি হওয়ার জন্যও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

জাতিসংঘ মহাসচিব ছাড়াও এনপিটি কনফারেন্সে যোগ দিতে আসা স্লোভেনিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী তানজা ফাজন, হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিজিজারতো, আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী সান্তিয়াগোক্যাফিরোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বিশ্বকে পরমাণু অস্ত্রের হুমকিমুক্ত রাখার আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

আপডেট সময় : ০২:৪৩:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ অগাস্ট ২০২২

প্রত্যাশা ডেস্ক : বিশ্বকে পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি থেকে বাঁচাতে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সাধারণ পরিষদ হলে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি বা এনপিটির দশম পর্যালোচনা সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
গত সোমবার সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মোমেন বলেন, “আমরা আশা করি, এনপিটির দশম পর্যালোচনা সম্মেলন থেকে এমন সিদ্ধান্ত বের হয়ে আসবে, যা বিশ্বকে পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি থেকে মুক্ত করতে চুক্তিটির সার্বজনীনতা এবং বাস্তবায়নকে আরও সহজতর করবে।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে বিশ্বকে পারমাণবিক যুদ্ধের কবল থেকে মুক্তির যে আহ্বান জানিয়েছিলেন- তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এই আহ্বানকে ভিত্তি করেই পারমাণবিক অস্ত্রের সাধারণ ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পূর্ণ এবং অটল প্রতিশ্রুতির ভিত্তি তৈরি হয়েছে, যা আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাও বটে।”
মানবতার নিরাপত্তাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে মুষ্টিমেয় কয়েকটি রাষ্ট্র পারমাণবিক অস্ত্রের যে মজুদ গড়েছে, তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান মোমেন। তিনি এনপিটির তিনটি স্তম্ভ- পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ, এর বিস্তার রোধ এবং পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে কার্যকর বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। এক্ষেত্রে চুক্তির ধারা-৪ এর বৈষম্যহীন বাস্তবায়নের ওপর তিনি জোর দেন, যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন, স্বাস্থ্যসেবা এবং কৃষিসহ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশে পারমাণবিক শক্তির বিকাশ, গবেষণা, উৎপাদন এবং ব্যবহার করার জন্য সকল রাষ্ট্রের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পারমাণবিক প্রযুক্তির গবেষণায় বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং মানবজাতির স্বার্থে শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের সম্ভাবনা খুঁজে দেখার আহ্বান জানান।
কোভিড মহামারীর মধ্যেও পারমাণবিক অস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০২১ সালে ৮২ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ের কথা তুলে ধরে তিনি রাষ্ট্রগুলোকে ধ্বংসাত্মক পারমাণবিক অস্ত্রে অর্থহীন বিনিয়োগ বন্ধ করে স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, এসডিজি, শান্তি এবং স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য ব্যয় করার আহ্বান জানান। আন্তর্জাতিক এই ফোরামে ১৯৭৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর যোগ দেয় বাংলাদেশ। পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি অনুমোদনকারী প্রথম কয়েকটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক : এনপিটি রিভিউ কনফারেন্সে যোগদানের পাশাপাশি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। বৈঠকে তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন বলে বাংলাদেশ মিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন মহাসচিব। অন্যদিকে শান্তি মিশনে আরও বাংলাদেশি নিয়োগের অনুরোধ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জবাবে মহাসচিব শিগগিরই আফ্রিকার বিভিন্ন মিশনে বাংলাদেশ থেকে আরও শান্তিরক্ষী ও অস্ত্র সরঞ্জাম নেওয়ার কথা বলেন। এ ছাড়া জাতিসংঘ সদর দপ্তরের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামরিক উচ্চ পদে আরও বেশি বাংলাদেশি কর্মকর্তা নিয়োগের অনুরোধ জানান মোমেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন
বৈঠকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দান এবং অব্যাহতভাবে মানবিক সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কৃতজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন জাতিসংঘ মহাসচিব। ইউক্রেন যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গঠিত ‘গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপে’ যোগ দিতে রাজি হওয়ার জন্যও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

জাতিসংঘ মহাসচিব ছাড়াও এনপিটি কনফারেন্সে যোগ দিতে আসা স্লোভেনিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী তানজা ফাজন, হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিজিজারতো, আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী সান্তিয়াগোক্যাফিরোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।