ঢাকা ১১:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

‘বিশ্বকে নতুন একটি এন্টিবায়োটিক দিলো বাংলাদেশ, সারা বিশ্বে তোলপাড়’

  • আপডেট সময় : ১০:১৩:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ জুন ২০২১
  • ১১১ বার পড়া হয়েছে

অধ্যাপক ড. মুনীর উদ্দিন আহমদ : ইদানীং লক্ষ করছি একটি ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং তার অনলাইন সংস্করণ ‘বিশ্বকে নতুন একটি এন্টিবায়োটিক দিলো বাংলাদেশ’, সারা বিশ্বে তোলপাড়’- শীর্ষক সংবাদ পরিবেশন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। সংবাদটি প্রথম মিডিয়ায় প্রচারিত হওয়ার পর অনেকেই এ ব্যাপারে আমার মতামত জানতে চেয়েছে। এতদিন লিখিনি। কারণ বিষয়টি নিয়ে আমাকে প্রথমে জানতে হবে। এ গবেষণা কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট গবেষকদের দুজনকে আমি খুব ঘনিষ্ঠভাবে চিনি। ভিন্ন বিভাগের হলেও দুজনই আমার অনুজ প্রিয় সহকর্মী ছিলেন। তাঁরা দুজনই খুব উঁচুমানের নামকরা গবেষক। মিডিয়াতে যে সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে, তার বিষয়বস্তুর সাথে গবেষকদের আদৌ সরাসরি কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা নিয়ে আমি সন্দিহান। কারণ গবেষণা কাজ ও তার ফলাফলের সাথে মিডিয়ার বক্তব্যের অনেক গরমিল পরিলক্ষিত হচ্ছে। মিডিয়ার ভাষা ও বক্তব্যগুলো বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।
গবেষকদের আরও গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে পাট থেকে উদ্ভাবিত (আসলে পাট থেকে উদ্ভাবিত কি?) হোমিকরসিন (ঐড়সরপড়ৎপরহ) নিরাপদ ও কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে বাজারজাত হলে তা হবে একটি যুগান্তকারী ঘটনা।
কিন্তু হোমিকরসিনকে অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে আখ্যায়িত করার আগে এখনো যে অনেক কাজ বাকি। কোনো যৌগ কোনো ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে কার্যকর হলেই তাকে অনুমোদনপ্রাপ্ত অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে আখ্যায়িত করা ঠিক নয়। কোনো যৌগ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর হলেও সেই কম্পাউন্ড বা যৌগ অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে স্বীকৃতি নাও পেতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক বা ওষুধ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য আরও বহু শর্ত রয়েছে। কোনো ওষুধকে ওষুধ হিসেবে বাজারজাত করার আগে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে হয়। ছোট থেকে বড় অনেক প্রাণীর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে নিরাপদ ও কার্যকর মনে হলে মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাতে হয়। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে উত্তীর্ণ হলে তখন রেগুলেটরি অথরিটির অনুমোদন সাপেক্ষে ওষুধটি বাজারজাত করার সুযোগ পায় উদ্ভাবক-উদ্যোক্তারা।
হোমিকরসিন কি অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে এতগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পার হয়ে বাজারজাতকরণের জন্য রেগুলেটরি অথরিটির অনুমোদন পেয়েছে? মনে হয় পায়নি। কিন্তু পেতে পারে। পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনাকে আমরা ওষুধ বিশেষজ্ঞরা মনেপ্রাণে ধারণ করি।
আমাদের নতুন অ্যান্টিবায়োটিক দরকার। ভীষণ দরকার। যে হারে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকগুলো রেজিস্ট্যান্ট হয়ে গেছে বা যাচ্ছে, তাতে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কৃত না হলে মানবসভ্যতা ভবিষ্যতে বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে-এতে সন্দেহ নেই। তাই আমরা হোমিকরসিনের উদ্ভাবক গবেষকদের ঐকান্তিক সাফল্য কামনা করি। হোমিকরসিন অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে বাজারজাত হলে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হব। কারণ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স নিয়ে আমিই মনে হয় সবচেয়ে বেশি চিন্তিত এবং এ নিয়ে প্রতিনিয়ত লেখালেখিও করছি। তবে মিডিয়ার অতিরঞ্জন ও বাড়াবাড়ি বন্ধ হওয়া দরকার। কোনো সংবাদ (বিশেষ করে গবেষণাভিত্তিক) পরিবেশনের পূর্বে তা যাচাই-বাছাই করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা প্রকৃত সাংবাদিকের কাজ।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ফার্মেসি বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি, ঢাকা

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

‘বিশ্বকে নতুন একটি এন্টিবায়োটিক দিলো বাংলাদেশ, সারা বিশ্বে তোলপাড়’

আপডেট সময় : ১০:১৩:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ জুন ২০২১

অধ্যাপক ড. মুনীর উদ্দিন আহমদ : ইদানীং লক্ষ করছি একটি ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং তার অনলাইন সংস্করণ ‘বিশ্বকে নতুন একটি এন্টিবায়োটিক দিলো বাংলাদেশ’, সারা বিশ্বে তোলপাড়’- শীর্ষক সংবাদ পরিবেশন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। সংবাদটি প্রথম মিডিয়ায় প্রচারিত হওয়ার পর অনেকেই এ ব্যাপারে আমার মতামত জানতে চেয়েছে। এতদিন লিখিনি। কারণ বিষয়টি নিয়ে আমাকে প্রথমে জানতে হবে। এ গবেষণা কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট গবেষকদের দুজনকে আমি খুব ঘনিষ্ঠভাবে চিনি। ভিন্ন বিভাগের হলেও দুজনই আমার অনুজ প্রিয় সহকর্মী ছিলেন। তাঁরা দুজনই খুব উঁচুমানের নামকরা গবেষক। মিডিয়াতে যে সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে, তার বিষয়বস্তুর সাথে গবেষকদের আদৌ সরাসরি কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা নিয়ে আমি সন্দিহান। কারণ গবেষণা কাজ ও তার ফলাফলের সাথে মিডিয়ার বক্তব্যের অনেক গরমিল পরিলক্ষিত হচ্ছে। মিডিয়ার ভাষা ও বক্তব্যগুলো বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।
গবেষকদের আরও গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে পাট থেকে উদ্ভাবিত (আসলে পাট থেকে উদ্ভাবিত কি?) হোমিকরসিন (ঐড়সরপড়ৎপরহ) নিরাপদ ও কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে বাজারজাত হলে তা হবে একটি যুগান্তকারী ঘটনা।
কিন্তু হোমিকরসিনকে অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে আখ্যায়িত করার আগে এখনো যে অনেক কাজ বাকি। কোনো যৌগ কোনো ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে কার্যকর হলেই তাকে অনুমোদনপ্রাপ্ত অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে আখ্যায়িত করা ঠিক নয়। কোনো যৌগ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর হলেও সেই কম্পাউন্ড বা যৌগ অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে স্বীকৃতি নাও পেতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক বা ওষুধ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য আরও বহু শর্ত রয়েছে। কোনো ওষুধকে ওষুধ হিসেবে বাজারজাত করার আগে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে হয়। ছোট থেকে বড় অনেক প্রাণীর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে নিরাপদ ও কার্যকর মনে হলে মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাতে হয়। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে উত্তীর্ণ হলে তখন রেগুলেটরি অথরিটির অনুমোদন সাপেক্ষে ওষুধটি বাজারজাত করার সুযোগ পায় উদ্ভাবক-উদ্যোক্তারা।
হোমিকরসিন কি অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে এতগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পার হয়ে বাজারজাতকরণের জন্য রেগুলেটরি অথরিটির অনুমোদন পেয়েছে? মনে হয় পায়নি। কিন্তু পেতে পারে। পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনাকে আমরা ওষুধ বিশেষজ্ঞরা মনেপ্রাণে ধারণ করি।
আমাদের নতুন অ্যান্টিবায়োটিক দরকার। ভীষণ দরকার। যে হারে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকগুলো রেজিস্ট্যান্ট হয়ে গেছে বা যাচ্ছে, তাতে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কৃত না হলে মানবসভ্যতা ভবিষ্যতে বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে-এতে সন্দেহ নেই। তাই আমরা হোমিকরসিনের উদ্ভাবক গবেষকদের ঐকান্তিক সাফল্য কামনা করি। হোমিকরসিন অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে বাজারজাত হলে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হব। কারণ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স নিয়ে আমিই মনে হয় সবচেয়ে বেশি চিন্তিত এবং এ নিয়ে প্রতিনিয়ত লেখালেখিও করছি। তবে মিডিয়ার অতিরঞ্জন ও বাড়াবাড়ি বন্ধ হওয়া দরকার। কোনো সংবাদ (বিশেষ করে গবেষণাভিত্তিক) পরিবেশনের পূর্বে তা যাচাই-বাছাই করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা প্রকৃত সাংবাদিকের কাজ।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ফার্মেসি বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি, ঢাকা