ক্রীড়া ডেস্ক: অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগেই আন্দ্রে রাসেল জানিয়েছিলেন, সিরিজের প্রথম দুই টি-টোয়েন্টি ম্যাচই তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শেষ ম্যাচ। জ্যামাইকায় তার বিদায়বেলায় গার্ড অব অনার দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ-অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা। ডাগআউট থেকে সিঁড়ি বেয়ে নেমে ক্রিকেটারদের মাঝখান দিয়ে হেঁটে যান তার সামনে রাখা জ্যামাইকান পতাকায় মোড়ানো স্মারক ব্যাট-বলের দিকে।
রাসেলের বিদায়বেলায় উপস্থিত ছিলেন জ্যামাইকার ক্রীড়ামন্ত্রী অলিভিয়া গ্রেঞ্জ। তবে বিদায়বেলায় নিজের আবেগ ধরে রাখা যে খুব কঠিন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি শেষে পুরস্কার বিতরণীর সময় কথা বলতে গিয়ে এই ক্যারিবীয় ক্রিকেটারের কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেকে জড়িয়ে ধরেন রাসেল। এমন এক সময় তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেন; যেখানে সাত-আট মাস পরই (২০২৬-এর ফেব্রুয়ারি-মার্চে) ভারত-শ্রীলঙ্কায় হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
বিশ্বকাপের এত আগে অবসর নেওয়ার ব্যাখ্যায় রাসেল বলেন, ‘এখনই থেমে যাওয়ার সময় এসেছে বলে মনে করেছি। এখান থেকেই ছেলেরা এগিয়ে নেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটকে। দলে কয়েকজন দারুণ ক্রিকেটার আছে। রোমারিও শেফার্ড অনেক আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলছে। রাদারফোর্ড, আলজারি জোসেফ এবং জেসন হোল্ডারের মতো ক্রিকেটারও আছে।’
২০১০ সালে গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন রাসেল। ক্রিকেটের রাজকীয় সংস্করণে একটা ম্যাচই তিনি খেলেছেন। ঘরের মাঠ জ্যামাইকায় আজ ১৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন রাসেল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড (সিডব্লিউআই), ভক্ত-সমর্থক, পরিবারের সামনে খেলতে পেরে রাসেল নিজেকে ধন্য মনে করছেন। ক্যারিবীয় এই ক্রিকেটার বলেন, ‘স্যাবাইনা পার্কে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানতে পেরেছি। স্থানীয় দর্শক, পরিবার ও বন্ধুদের সামনে খেলার সুযোগ করে দেওয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ। আপনাদের সমর্থন পেয়ে কৃতজ্ঞ।’
নিঃসঙ্গ যোদ্ধা হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছিলেন রাসেল। ক্যারিয়ারের অনেক মনে রাখার মতো ইনিংসের মধ্যে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ২০ বলে ৪৩ রানের অপরাজিত ইনিংসকে কদিন আগে বেছে নিয়েছিলেন। ৯ বছর আগে তার ঝোড়ো ইনিংস মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। আজ বিদায়বেলায় স্মরণ করলেন ২০১২ ও ২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুটি বিশ্বকাপ জয়ের মুহূর্ত। রাসেল বলেন,‘আমার মনে পড়ছে দুইবার বিশ্বকাপ জয়ের পর পতাকা কতটা উঁচুতে উড়েছিল।’
জ্যামাইকায় প্রথম ৬ ওভারের আগেই অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও মিচেল মার্শকে আউট করে অস্ট্রেলিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল ওয়েষ্ট ইন্ডিজ। তবে সেই চাপ সামলে ২৮ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটে জিতেছে অজিরা। ক্যারিবীয় ফিল্ডাররা তিনটি ক্যাচ মিস করেছেন। রাসেলের হাত থেকেও একটি ক্যাচ ফস্কে গেছে। ‘জীবন’ পাওয়ার পর দুই অজি ব্যাটার জশ ইংলিস-ক্যামেরন গ্রিন তৃতীয় উইকেটে ১৩১ রানের অবিচ্ছিন্ন রেকর্ড জুটি গড়েন। রাসেলের বিদায় জয়ে রাঙাতে না পারার হতাশা নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক শাই হোপ বলেন, ‘ম্যাচটা কঠিন ছিল। প্রস্তুতি ভালো ছিল। শুরুটাও দারুণ ছিল। কিন্তু এটাই বাস্তবতা। এর জন্য শুধু নিজেদেরই দায়ী করতে পারি।’
১৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ১ টেস্ট, ৫৬ ওয়ানডে ও ৮৬ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন রাসেল। ১৪৩ ম্যাচে ৭ ফিফটিতে ২১৫৮ রান করেছেন। যেখানে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে তার স্ট্রাইকরেট ১৩০.২২ ও ১৬৩.৭৯। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আজ দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ১৫ বলে ২ চার ও ৪ ছক্কায় খেলেছেন ৩৬ রানের ইনিংস।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ