ঢাকা ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

বিলম্বিত বইমেলার পর্দা উঠছে আজ

  • আপডেট সময় : ০২:৪৮:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ৭৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দুই সপ্তাহ পিছিয়ে, ব্যাপ্তি কমিয়ে, আজ মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলার আটত্রিশতম আসর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকাল ৩টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বইমেলার উদ্বোধন করবেন বলে গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলেনে জানিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এবারের মেলা চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে সংক্রমণের হার কমলে বইমেলার সময় বাড়তে পারে।
“করোনা মহামারীর কারণে এক সময় মনে হয়েছিল এবার হয়ত বইমেলা করতেই পারব না। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক নির্দেশনায় আশা করছি আগামীকাল বিকাল ৩টায় বইমেলা পর্দা ওঠবে। কোভিডের কারণে এবার বইমেলায় সময় অর্ধেক কমিয়ে আনা হয়েছে। ১৫ থেকে ২৮তারিখ পর্যন্ত মেলা চলবে ।
“সংক্রমণ কমলে মেলার সময় কিছুটা হলেও বাড়াতে পারব। সংক্রমণ যেভাবে কমছে, এ ধারা যদি অব্যাহত থাকে, আমরা বিশ্বাস করি, মেলার সময়সীমা খানিকটা বাড়াতে পারব। সেজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর নিদর্শনার অপেক্ষায় আছি।”
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন একুশে বইমেলা শুরুর কথা থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারী কারণে গত বছর দেড় মাস পিছিয়ে ১৮ মার্চ মেলা শুরু হয় এবং নির্ধারিত সময়ের দুদিন আগে ১২ এপ্রিল তা শেষ হয়ে যায়।
মাঝে কিছুদিন সংক্রমণ কম থাকলেও এ বছরের শুরুতে তা আবার বাড়তে শুরু করে। ফলে এবারও পিছিয়ে যায় বইমেলা।

এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এছাড়া এ বছর ভাষা আন্দোলনের সত্তর বছর পূর্তি এবং একইসঙ্গে সংবিধান প্রণয়নের পঞ্চাশ বছর পূর্তির তাৎপর্যকে ধারণ করবে বইমেলা।

একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা ও সংবিধানপ্রাপ্তির এই বিশেষ সময়ে বাঙালিত্বের চেতনা-জাগানিয়া বইমেলার আয়োজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

“আমাদের ভাষা আন্দোলনের সত্তর বছর, সংবিধান প্রণয়নের পঞ্চাশ বছর, বাংলাদেশের পঞ্চাশ- এমন ক্ষণে দাঁড়িয়ে অনেক দোষত্রুটি সত্ত্বেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি ।“

মেলার প্রস্তুতি জানিয়ে তিনি বলেন, “স্টল প্যাভেলিয়নের কাজ আজকের মধ্যেই শেষ হব, আশা করছি কাল সকালের মধ্যে বই তুলতে পারবে। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মেলার অগ্রগতি হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে বইমেলার সার্বিক তথ্য তুলে ধরেন বইমেলার সদস্য সচিব এবং বাংলা একাডেমির পরিচালক জালাল আহমেদ।

তিনি জানান, এবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ৭ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে এবার বইমেলা হবে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪২টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৩৪টি ইউনিট; মোট ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৬টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

মেলায় ৩৫টি প্যাভিলিয়ন থাকবে। বাংলা একাডেমির ৩টি প্যাভিলিয়ন, শিশুকিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য একটি এবং সাহিত্য মাসিক উত্তরাধিকারের একটি স্টল থাকবে।
এবারও শিশুচত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। তবে কোভিড পরিস্থিতির কারণে প্রথম দিকে ‘শিশুপ্রহর’ হবে না। এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এম্ফিথিয়েটারের পূর্ব দিকে, মেলার মূল প্রাঙ্গণে। সেখানে ১২৭টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবারের গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত ১০৭টি বই। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। অমর একুশে বইমেলা ২০২২-এর প্রচার কার্যক্রমের জন্য একাডেমিতে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদীতে একটি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুটি তথ্যকেন্দ্র থাকবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও এবার নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে।
মেলার সময়সূচি : ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
মেলায় প্রবেশ পথ : বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে চারটি প্রবেশ পথ এবং বের হওয়ার তিনটি পথ থাকবে। বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে। মেলায় প্রবেশের জন্য গতবারের মত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্বে রমনা প্রান্তে একটি প্রবেশ পথ এবং পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া উদ্যানে প্রবেশ ও প্রস্থানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটক ও বাংলা একাডেমির বিপরীত পাশ দিয়ে আরও দুটি করে পথ থাকবে। মাস্ক ছাড়া মেলায় প্রবেশ করা যাবে না। শরীরের তাপমাত্রা মেপে, গাত স্যানিটাইজ করে তবেই ঢুকতে হবে মেলায়।
বইমেলার প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে আর্চওয়ে থাকবে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য পুরো এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইমেলা পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে।
মেলায় নতুন সংযোজন : প্রতিবছর যেসব আনুষ্ঠানিকতা ও আয়োজন বইমেলায় থাকে, যেমন, গ্রন্থ উন্মোচন, লেখক বলছি মঞ্চ, নতুন বইয়ের স্টল, শিশু চত্বর, পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, পর্যাপ্ত প্রবেশ ও বাহির পথ, আশ্রয় কেন্দ্র, পার্কিং ব্যবস্থা, ব্রেস্ট ফিডিং জোন, নামাজ ঘর, টয়লেট ব্যবস্থা, হুইল চেয়ার, ফুডকোর্ট- তার সবই থাকবে। তার সঙ্গে এবার নতুন কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। এবছর মেলার বিন্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। গতবার প্যাভিলিয়নগুলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মধ্যমাঠে রাখা হয়েছিল। এই বিন্যাস বেশ সমালোচনার জন্ম দেয়। এবার প্যাভিলিয়নগুলো উদ্যানের সকল প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। লিটল ম্যাগাজিনের স্টলগুলোকে এবার উদ্যানের এম্ফিথিয়েটারের পূর্বদিকে উদ্যানের মূল প্রাঙ্গণে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ বাস্তবায়ন কমিটি একটি প্যাভিলিয়ন নিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও স্বাধীনতার মর্মবাণী সবার মাঝে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু-গ্রন্থভুক্ত হস্তলিপি বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যবহার করা হয়েছে। কোভিড-প্রটোকল মানা এবার সবার জন্য বাধ্যমূলক করা হয়েছে। মেলায় প্রবেশে টিকা সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যারা টিকা নেননি, তাদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পুরস্কার : অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২২ সালে প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হবে। শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য তিনটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাবে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’।
এছাড়া ২০২২ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ বইয়ের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে। অন্যদের মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল মনসুর, বাংলা একাডেমির সচিব এইচ এম লোকমান, বিকাশের চিফ মার্কেটিং অফিসার মীর নওবত আলী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বিলম্বিত বইমেলার পর্দা উঠছে আজ

আপডেট সময় : ০২:৪৮:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দুই সপ্তাহ পিছিয়ে, ব্যাপ্তি কমিয়ে, আজ মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলার আটত্রিশতম আসর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকাল ৩টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বইমেলার উদ্বোধন করবেন বলে গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলেনে জানিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এবারের মেলা চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে সংক্রমণের হার কমলে বইমেলার সময় বাড়তে পারে।
“করোনা মহামারীর কারণে এক সময় মনে হয়েছিল এবার হয়ত বইমেলা করতেই পারব না। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক নির্দেশনায় আশা করছি আগামীকাল বিকাল ৩টায় বইমেলা পর্দা ওঠবে। কোভিডের কারণে এবার বইমেলায় সময় অর্ধেক কমিয়ে আনা হয়েছে। ১৫ থেকে ২৮তারিখ পর্যন্ত মেলা চলবে ।
“সংক্রমণ কমলে মেলার সময় কিছুটা হলেও বাড়াতে পারব। সংক্রমণ যেভাবে কমছে, এ ধারা যদি অব্যাহত থাকে, আমরা বিশ্বাস করি, মেলার সময়সীমা খানিকটা বাড়াতে পারব। সেজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর নিদর্শনার অপেক্ষায় আছি।”
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন একুশে বইমেলা শুরুর কথা থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারী কারণে গত বছর দেড় মাস পিছিয়ে ১৮ মার্চ মেলা শুরু হয় এবং নির্ধারিত সময়ের দুদিন আগে ১২ এপ্রিল তা শেষ হয়ে যায়।
মাঝে কিছুদিন সংক্রমণ কম থাকলেও এ বছরের শুরুতে তা আবার বাড়তে শুরু করে। ফলে এবারও পিছিয়ে যায় বইমেলা।

এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এছাড়া এ বছর ভাষা আন্দোলনের সত্তর বছর পূর্তি এবং একইসঙ্গে সংবিধান প্রণয়নের পঞ্চাশ বছর পূর্তির তাৎপর্যকে ধারণ করবে বইমেলা।

একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা ও সংবিধানপ্রাপ্তির এই বিশেষ সময়ে বাঙালিত্বের চেতনা-জাগানিয়া বইমেলার আয়োজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

“আমাদের ভাষা আন্দোলনের সত্তর বছর, সংবিধান প্রণয়নের পঞ্চাশ বছর, বাংলাদেশের পঞ্চাশ- এমন ক্ষণে দাঁড়িয়ে অনেক দোষত্রুটি সত্ত্বেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি ।“

মেলার প্রস্তুতি জানিয়ে তিনি বলেন, “স্টল প্যাভেলিয়নের কাজ আজকের মধ্যেই শেষ হব, আশা করছি কাল সকালের মধ্যে বই তুলতে পারবে। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মেলার অগ্রগতি হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে বইমেলার সার্বিক তথ্য তুলে ধরেন বইমেলার সদস্য সচিব এবং বাংলা একাডেমির পরিচালক জালাল আহমেদ।

তিনি জানান, এবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ৭ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে এবার বইমেলা হবে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪২টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৩৪টি ইউনিট; মোট ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৬টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

মেলায় ৩৫টি প্যাভিলিয়ন থাকবে। বাংলা একাডেমির ৩টি প্যাভিলিয়ন, শিশুকিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য একটি এবং সাহিত্য মাসিক উত্তরাধিকারের একটি স্টল থাকবে।
এবারও শিশুচত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। তবে কোভিড পরিস্থিতির কারণে প্রথম দিকে ‘শিশুপ্রহর’ হবে না। এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এম্ফিথিয়েটারের পূর্ব দিকে, মেলার মূল প্রাঙ্গণে। সেখানে ১২৭টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবারের গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত ১০৭টি বই। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। অমর একুশে বইমেলা ২০২২-এর প্রচার কার্যক্রমের জন্য একাডেমিতে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদীতে একটি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুটি তথ্যকেন্দ্র থাকবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও এবার নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে।
মেলার সময়সূচি : ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
মেলায় প্রবেশ পথ : বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে চারটি প্রবেশ পথ এবং বের হওয়ার তিনটি পথ থাকবে। বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে। মেলায় প্রবেশের জন্য গতবারের মত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্বে রমনা প্রান্তে একটি প্রবেশ পথ এবং পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া উদ্যানে প্রবেশ ও প্রস্থানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটক ও বাংলা একাডেমির বিপরীত পাশ দিয়ে আরও দুটি করে পথ থাকবে। মাস্ক ছাড়া মেলায় প্রবেশ করা যাবে না। শরীরের তাপমাত্রা মেপে, গাত স্যানিটাইজ করে তবেই ঢুকতে হবে মেলায়।
বইমেলার প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে আর্চওয়ে থাকবে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য পুরো এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইমেলা পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে।
মেলায় নতুন সংযোজন : প্রতিবছর যেসব আনুষ্ঠানিকতা ও আয়োজন বইমেলায় থাকে, যেমন, গ্রন্থ উন্মোচন, লেখক বলছি মঞ্চ, নতুন বইয়ের স্টল, শিশু চত্বর, পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, পর্যাপ্ত প্রবেশ ও বাহির পথ, আশ্রয় কেন্দ্র, পার্কিং ব্যবস্থা, ব্রেস্ট ফিডিং জোন, নামাজ ঘর, টয়লেট ব্যবস্থা, হুইল চেয়ার, ফুডকোর্ট- তার সবই থাকবে। তার সঙ্গে এবার নতুন কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। এবছর মেলার বিন্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। গতবার প্যাভিলিয়নগুলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মধ্যমাঠে রাখা হয়েছিল। এই বিন্যাস বেশ সমালোচনার জন্ম দেয়। এবার প্যাভিলিয়নগুলো উদ্যানের সকল প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। লিটল ম্যাগাজিনের স্টলগুলোকে এবার উদ্যানের এম্ফিথিয়েটারের পূর্বদিকে উদ্যানের মূল প্রাঙ্গণে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ বাস্তবায়ন কমিটি একটি প্যাভিলিয়ন নিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও স্বাধীনতার মর্মবাণী সবার মাঝে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু-গ্রন্থভুক্ত হস্তলিপি বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যবহার করা হয়েছে। কোভিড-প্রটোকল মানা এবার সবার জন্য বাধ্যমূলক করা হয়েছে। মেলায় প্রবেশে টিকা সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যারা টিকা নেননি, তাদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পুরস্কার : অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২২ সালে প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হবে। শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য তিনটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাবে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’।
এছাড়া ২০২২ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ বইয়ের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে। অন্যদের মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল মনসুর, বাংলা একাডেমির সচিব এইচ এম লোকমান, বিকাশের চিফ মার্কেটিং অফিসার মীর নওবত আলী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।