নিজস্ব প্রতিবেদক: চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রে তাদের বাধা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ আয়োজিত ডিক্যাব টকে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এ কথা বলেন।
চীনের কম্যুনিস্ট পার্টির প্রথা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা জানিয়ে ইয়াও ওয়েন বলেন, গত ১০ বছরে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগকে ব্যহত এবং প্রতিরোধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এখন আমরা পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন করেছি এবং দলগুলোও চীনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে চায়। আমি মনে করি, দুই পক্ষের মধ্যে দৃঢ় ইচ্ছা রয়েছে যোগাযোগ অব্যহত রাখার বিষয়ে। গত বছরগুলোতে কে চীনকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগে বাধা দিয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সবাই জানি, গত ১০ বছরে কি অবস্থা ছিল। আপনারা বুঝতে পারেন, আমরা কেন এ ধরনের অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিলাম। চীনের রাষ্ট্রদূত জানান, সম্প্রতি বিএনপি ও জামায়োতে ইসলামির একটি উচ্চ পর্যায়ের দল চীন সফর করেছে। সেটি সফল ছিল। এটি দ্বিপক্ষীয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যোগাযোগ রক্ষায় একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছে। ইয়াও ওয়েন বলেন, আমার ধারণা, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভিন্ন ধরনের মতামত থাকতে পারে, কিন্তু চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিষয়ে তাদের মতামত একই। সব প্রধান দলগুলো বাংলাদেশ-চীন ভালো সম্পর্ক রাখার পক্ষে।
মার্কিন শুল্ক আলোচনা: রাষ্ট্রদূত মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুতি নিয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, সেটির বিষয়ে বাংলাদেশও তাদের অবস্থান তৈরি করেছে। আমি একজন বিদেশি কূটনীতিক হিসেবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান হলো, আমরা পাল্টা শুল্কের বিরোধিতা করি। আমরা মনে করি, এটি প্রভাব বলয় রাখার জন্য একপক্ষের একটি উদ্যোগ। এটি বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য ভালো নয়, এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতিকে খাটো করছে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে খাটো করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘চীন ঠেকাও’ উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি বিশ্বাস করি, এটি সম্ভব নয়। পৃথিবীর ১০০টিরও বেশি দেশের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার হলো চীন এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। একটি চুক্তির মাধ্যমে আমাদের প্রভাব খাটো করা যাবে না।
তিস্তা প্রকল্প: অন্তর্বর্তী সরকার তিস্তা প্রকল্পে চীনের কোম্পানিগুলোকে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। আমরা অপেক্ষা করছি বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কাছে এই প্রকল্পের জন্য সহযোগিতার প্রস্তাব করার। আমাদের অবস্থান হলো, বাংলাদেশ যদি চায় চীন এই প্রকল্পে সহায়তা করতে প্রস্তুত।
মাসে ৪০-৫০ বাংলাদেশি রোগী চিকিৎসা নিতে চীন যাচ্ছে: ডিক্যাব টকে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানিয়েছেন, প্রতি মাসে গড়ে ৪০-৫০ জন বাংলাদেশি রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে চীন যাচ্ছে। আগে বাংলাদেশিদের চিকিৎসার জন্য পাঁচটি হাসপাতাল নির্ধারণ করা হলেও এখন চীনের সব হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নেওয়া যাচ্ছে। মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত চীনে চিকিৎসা নিতে যাওয়াদের পরিসংখ্যান জানতে চাওয়া হয় ইয়াও ওয়েনের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ঠিক কতজন বাংলাদেশি চীনে চিকিৎসা নিতে গেছেন এই মুহূর্তে আমি বলতে পারব না। তবে প্রতি মাসে গড়ে ৪০-৫০ জন বাংলাদেশি রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে চীন যাচ্ছে। সংখ্যাটি খুব বেশি নয়। আগে বাংলাদেশির চিকিৎসার জন্য পাঁচটি হাসপাতাল নির্ধারণ করা হলেও এখন চীনের সব হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নেওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশে হাসপাতাল স্থাপন করবে চীন।
দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশিদের দেশের বাইরে সবচেয়ে স্বস্তির গন্তব্য ভারত। গত বছরের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর প্রতিবেশী দেশটিতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী। এরপর দেশটির সঙ্গে পুরোনো সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়, যার প্রভাবে বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়ায় কড়াকড়ি আরোপ করে ভারত। ভারত সীমিত পরিসরে চিকিৎসা ভিসা দিলেও তাতে অস্থিরতা দূর হচ্ছে না। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত মার্চে চীনের তিনটি সরকারি এবং একটি বেসরকারি হাসপাতাল বাংলাদেশিদের চিকিৎসার জন্য ঠিক করে দেওয়া হয়। পরে আরো একটি হাসপাতাল যুক্ত করা হয়। উল্লেখ্য, গত ১০ মার্চ বাংলাদেশি রোগীদের প্রথম দল কুনমিং যায়।