বিশেষ সংবাদদাতা : সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে কিছুটা ছন্দপতনের পর ফের ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিএনপি। এবার সরকার পতনের এক দফা নিয়ে বিরতিহীন কর্মসূচির পথে হাঁটছে দলটি। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ১২ জুলাই চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। ওই মাসে এক দফা দাবিতে বেশ কয়েকটি কর্মসূচিও পালন করে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো। গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশ মুখে অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আন্দোলন অনেকটা হোঁচট খায়। এরপর দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার সহধর্মিনী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে আদালত সাজার রায় ঘোষণা করলে এর প্রতিবাদে রাজপথে কিছুদিন সক্রিয় থাকে দলটি। এরপর ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু কর্মসূচি করে দলটি।
বিশেষ করে পহেলা সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালিতে লক্ষাধিক নেতাকর্মীর সমাগমে বিএনপির নীতিনির্ধারণী মহলের মনে এনে দেয় স্বস্তি। এরই মধ্যে বিএনপির মহাসচিবসহ দলটির বেশ কয়েকজন শীর্ষনেতা দেশের বাইরে থাকায় এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি দলটি। তবে, এবার সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলনের চতুর্মুখী প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক জোটগুলো। তফসিল ঘোষণার আগেই আন্দোলনের সফল পরিণতি দেখতে চান সবাই। এজন্য দাবি আদায়ে মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে কঠোর কর্মসূচি চান নেতাকর্মীরা। এক দফার আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে ইতিমধ্যে ছক তৈরি করেছে বিএনপি। এবার গ্যাপ দিয়ে নয়, বিরতিহীনভাবে চলবে আন্দোলনের কর্মসূচি।
বিএনপির শীর্ষ নেত্বত্বের ভাবনায় এবার জয় ছাড়া বিকল্প নেই। তাইতো একদিকে ঝুঁকি, অন্যদিকে লক্ষ্য অর্জনের চ্যালেঞ্জ নিয়েই প্রস্তুত করা হচ্ছে চূড়ান্ত আন্দোলনের ছক। সেই আন্দোলনে কর্মীদের নির্বাচন পর্যন্ত উজ্জীবিত রাখাই এই মুহূর্তে দলটির মূল লক্ষ্য। গত মঙ্গলবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ বৈঠকের আগে আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে স্কাইপিতে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কথা বলেন বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও। ইতিমধ্যে এক দফা দাবিতে আগামীকাল শনিবার রাজধানীতে গণমিছিলের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। আগামী তিন সপ্তাহে প্রতি শুক্র ও শনিবার মানববন্ধন, পদযাত্রা, গণমিছিল ও সমাবেশের মতো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। এই কর্মসূচি হতে পারে একইসঙ্গে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে। আর সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে কর্মসূচির ধরনে পরিবর্তন আসবে। সেই সময় ঢাকায় ফের মহাসমাবেশ, গণসমাবেশ বা বড় ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে বিএনপির একটি সূত্র সংবাদ মাধ্যমকে জানায়।
তারেক রহমানের এক ঘনিষ্ঠজন ও সাবেক ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘বিগত এক মাসে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ব্যর্থতা কোথায় তা চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আগামীতে যাতে কোনো রকম গাফিলতির অবস্থান না থাকে সে বিষয়ে দায়িত্বশীল নেতাদের দেওয়া হয়েছে সতর্কবার্তা।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমার বিশ্বাস এ সরকারের পতন ছাড়া জাতির আর কোনো বিকল্প নেই। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের নানান আচরণ বিশেষ করে ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া, বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া, এ থেকে রক্ষা পেতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, এর কোনো বিকল্প নেই।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমরা রাজপথে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। আমরা দলীয় প্রোগ্রাম করলেও প্রতিটি কর্মসূচিতেই এক দফা দাবির কথা উল্লেখ থাকে। আমরা আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে আছি। অচিরেই তা চূড়ান্ত রূপ নেবে। এবার যে কর্মসূচি দেওয়া হবে, তা সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘যে সরকার গায়ের জোরে ১৫ বছর ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে আছে তাকে ছড়ানো কঠিন কাজ। কারণ, প্রশাসনসহ সব রাষ্ট্রযন্ত্রকে আজ দলীয় কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর আন্দোলনে বিরতি পরবর্তীতে অনেক শক্তি যোগায়। আগামী শনিবার থেকে সরকার পতনের আন্দোলন কর্মসূচি শুরু হচ্ছে, তাতে আর বিরতি থাকবে না। সরকার পতনের মাধ্যমেই এই আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটবে।’
ডাকসুর সাবেক জিএস ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, ‘মানুষ আজ তাদের অধিকার ফিরে চায়। সরকার পুরো দেশকেই দলীয়করণ করে ফেলেছে। আজ বিচারপতি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দলীয় কর্মীদের ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। দেশের অর্থনীতি আজ কঙ্কালে পরিণত হয়েছে। এসব অন্যায় অবিচারের কারণে দেশে একটি গণঅভ্যুত্থানের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এ লক্ষ্যে কঠিনতর আন্দোলনের দিকে ধাবিত হচ্ছি, যেখান থেকে চূড়ান্ত ফলাফল না আসা পর্যন্ত কোনো বিরতি থাকবে না।’