নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর উত্তরার খিলক্ষেত থেকে আব্দুল্লাহপুর সড়কে চলমান আছে এমআরটি প্রকল্পের কাজ। এ কাজ চালু থাকায় রাস্তার ব্যাপকতা কমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে জ্যামে অপেক্ষমান গাড়িতে থাকা ব্যক্তিদের হাত থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে যাচ্ছে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন। শুধু গণপরিবহন নয়, যানজটে প্রাইভেট কার এমনকি মোটরসাইকেলে থাকা যাত্রীদের ব্যাগও টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এতে ঘটছে আহতের মতো ঘটনা। এ ছাড়া ওই অংশে পথচারীদের কাছ থেকেও ছিনতাই করে নিয়ে যাচ্ছে টাকাপয়সা। ছিনতাই চক্রের সদস্যরা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ঘটাচ্ছে এমন কর্মকা-। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ভিডিও এবং ছিনতাইকারীদের তৎপরতার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।
এসব ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানায় বাড়ছে অভিযোগের সংখ্যাও। খিলক্ষেত থেকে আব্দুল্লাহপুর এলাকা পর্যন্ত ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো অবহিত হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, এ বিষয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে একটি সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত সড়কটিতে চলছে এমআরটি প্রকল্পের কাজ। এ কারণে সড়ক অনেকটাই সংকীর্ণ হয়ে গেছে। সড়কে গাড়ির চাপ থাকায় বিভিন্ন সময় যানজট তৈরি হয়। জ্যামে আটকে থাকা যানবাহনগুলোকে টার্গেট করে বেশ কয়েকটি ছিনতাইকারী গ্রুপ তৎপর রয়েছে। যদিও ছিনতাইয়ের শিকার হলেও অনেকেই থানায় অভিযোগ করেন না। আর যারা অভিযোগ করেন, সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে ছিনতাইকারীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারী চক্রের ১৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির লালবাগ থানার গোয়েন্দা বিভাগ। এ বিষয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীর মহাখালী, আমতলী, কাকলী, বনানী, ঢাকা গেট, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর, উত্তরা, জসিম উদ্দিন, আব্দুল্লাহপুর এবং টঙ্গী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ছিনতাকারী চক্রের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। তাদের দলনেতা মিজান, জয়, বাবু ও শরীফের নেতৃত্বে বাস, প্রাইভেট কার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রীদের কাছ থেকে থাবা ও ছোঁ মেরে মোবাইল ফোন, ব্যাগ ও গলার চেইনসহ মূল্যবান মালামাল কেড়ে নেয়। পরে চোরাই এসব মোবাইল ফোন উত্তরখান থানা এলাকার দোবাদিয়া সাইনবোর্ড বিসমিল্লাহ মোবাইল সার্ভিসিং নামক একটি দোকানে বিক্রি করে। তারা আরও জানান, চারটি ভাগে ভাগ হয়ে রাজধানীর বনানী থেকে টঙ্গী পর্যন্ত তৎপর রয়েছে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা। জ্যামে আটকে থাকায় বাস-প্রাইভেট কারের জানালার পাশে বসে থাকা মানুষের মোবাইল ফোন তাদের টার্গেট। এ ছাড়া প্রাইভেট কার কিংবা বাসের জানালার পাশে থাকা নারীদের কানের দুল কিংবা গলার চেইন টান দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। চক্রের বেশির ভাগ সদস্যই মাদকাসক্ত। তাদের দলনেতাকে তারা মহাজন বলে ডাকে। ছিনতাই করা মোবাইল ফোন, স্বর্ণের চেইন বা ব্যাগে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র তারা মহাজনের কাছে বিক্রি করে। পরে মহাজন বা দলনেতা এসব জিনিস টঙ্গীর বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, এসব ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা যখন গ্রেফতার হয়, তখন আদালত থেকে জামিন পেয়ে যায়। আর কারাগারে থাকা অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের খরচ বহন করা হয়। রাজধানীর বনানী থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ১৭টি স্পটে ছিনতাইকারী চক্রগুলো তৎপর রয়েছে। খিলক্ষেত থেকে আব্দুল্লাহপুর মোড় পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার সড়কটি পড়েছে খিলক্ষেত থানা, উত্তরা পূর্ব থানা ও উত্তরা পশ্চিম থানায়। এসব থানার প্রধান সড়কে ছিনতাইয়ের অভিযোগে থানায় অভিযোগ করতে আসছেন অনেকেই।
উত্তরার বাসিন্দা সুমন সরকার বলেন, ‘আমার অফিস বনানীতে। প্রতিদিনই আমাকে উত্তরা থেকে যানজট ঠেলে গণপরিবহনে করে অফিসে যেতে হয়। বাসের জানালার পাশে বসলে অনেকটাই আতঙ্কগ্রস্ত থাকি। কেউ যদি বাইরে থেকে মোবাইল কিংবা ব্যাগ টান দেওয়ার চেষ্টা চালায়, এতে যেকোনও সময় আহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফেসবুকে বেশ কয়েকটি ভিডিও দেখেছি, কয়েক দিন আগে একটি ভিডিও দেখলাম ধারালো অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ছিনতাইকারীরা।’
উত্তরার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন শিহাব হোসেন। তিনি প্রতিদিন মিরপুরে যান অফিস করতে এবং সন্ধ্যার পর বাসায় ফেরেন। অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে যে বাসে ছিলাম, সামনের সিটের জানালার পাশে এক যাত্রী বসেছিলেন। ছিনতাইকারী তার মোবাইল ফোনটি টান দিয়ে নিয়ে যায়। উত্তরা ও এয়ারপোর্ট রোডে সব সময় জ্যাম লেগে থাকে। গাড়িগুলো আস্তে আস্তে চলে। এই সুযোগে ছিনতাই বেড়েছে। খুব ভয়ে চলাচল করতে হয়।’
উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়াসিন গাজী বলেন, ‘প্রতিদিনই উত্তরায় এয়ারপোর্ট আব্দুল্লাহপুর রোডে ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন, এমন অনেকেই অভিযোগ করছেন। অভিযোগ পেয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। গত এক সপ্তাহে ছিনতাই চক্রের সাত থেকে আট সদস্যকে আমরা গ্রেফতার করেছি।’
উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার ক্রাইম মোর্শেদ আলম বলেন, ‘উত্তরা এয়ারপোর্ট আব্দুল্লাহপুর রোডে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এমআরটি প্রকল্পের কারণে রাস্তা সরু হয়ে গেছে। গাড়ির চাপ বেশি থাকায় যানজট লেগেই থাকছে এই রাস্তাটিতে। গাড়ির ধীরগতির কারণে ছিনতাই চক্রগুলো তৎপর, তা লক্ষ্য করতে পারছি। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিরোধে আমরা প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছি। ছিনতাই চক্রের অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং হবে।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, ‘যখনই আমরা বিভিন্ন এলাকা থেকে ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করছি, তখনই দেখতে পাচ্ছি বেশির ভাগই মাদকাসক্ত। মাদকের লোভ দেখিয়ে একটি চক্র স্বল্প টাকার বিনিময়ে তাদের ছিনতাইকাজে ব্যবহার করছে। এসব চক্রের পেছনে আরও কারা কারা জড়িত, এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
বিমানবন্দর সড়কে অহরহ ছিনতাই
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ